সুন্দরবন, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, আর বঙ্গোপসাগরের গা ঘেঁষে অবস্থিত। এর বিস্তার বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এলাকাতে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির সহ নানা প্রজাতির চমৎকার প্রাণী আর উদ্ভিদ দিয়ে সমৃদ্ধ।
আমাদের আলোচ্য বড় বিড়ালটি তার শিকারের ক্ষমতার জন্য কুখ্যাত। বাঘের এলাকায় এবং আশেপাশে বসবাসকারী মানুষেরা বাঘের আক্রমণের ভয়ে তটস্থ থাকে। কেনেথ এন্ডারসন নামের একজন শিকারী এবং লেখক আবিষ্কার করেছিলেন যে, নরখাদক বাঘ শিকার করার দক্ষতা আর ধৈর্য অসাধারণ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে এরা, শুধু এটুকু নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্যে যে তার শিকার একা এবং সম্পূর্ণ নিরস্ত্র।
১৯৭৫ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে আনুমানিক ৫২১ জন বাঘের আক্রমণে নিহত হয়। বড় বিড়ালের এরকম আক্রমণ প্রদর্শন তার অন্যান্য আত্মীয়ের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। সুন্দরবনের বাঘের এই পাল্টে যাওয়া আচরণের জন্যে বেশ কিছু কারণ দায়ী।
(১) ক্রমবর্ধমান জোয়ার আর পানিতে লবণাক্তের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বাঘ নোনা জল পানে বাধ্য হয় যা তাদের অস্বস্তিকর এবং আক্রমণাত্মক করে তোলে।
(২) জোয়ারের সময় পানির স্তর ২০ ফুট পর্যন্ত ওঠে। নিজের এলাকা চিহ্নিত করার জন্য বাঘ যে মূত্র ছেটায়, সেটা এই পানিতে ভেসে যায়। এটা তার আগ্রাসী মনোভাবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
(৩) ঘূর্ণিঝড়ের পর, বাঘ মানুষের লাশ খেয়ে জীবনধারণ করে। এটা তাদেরকে নরমাংসের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
(৪) এখানে বাঘেদের প্রধান খাদ্যের উৎস হচ্ছে হরিণ। সেটার ঘাটতি দেখা দিলে তাদেরকে বিকল্প খাদ্য উৎসের জন্য অনুসন্ধান করতে হয়। স্থানীয় মানুষ কাঠ কাটার জন্যে, মাছ ধরার জন্য, মধু সংগ্রহের জন্যে বনে যাতায়াত করে। বাঘের জন্যে তারা খুব সহজ টার্গেট, এবং অনেকেই বাঘের শিকারে পরিণত হয়।
তারপরেও, বাঘের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হচ্ছে মানুষকে এড়ানো। এবং এটাই সত্যি যে ১০০০ বাঘের মধ্যে মাত্র ৩টা বাঘ নরখাদকে পরিণত হয়। জিম করবেট, বিখ্যাত শিকারী, প্রকৃতিবাদী, এবং সংরক্ষণবাদী বলেন, “একটা বাঘ তার চারপাশের পরিস্থিতির চাপে পড়ে অপরিচিত খাদ্য গ্রহণে বাধ্য হয়। এই চাপ সাধারণত ১০টা ঘটনার মধ্যে ৯ বারই হয় আহত অবস্থায়, আর ১ বার হয় বৃদ্ধ অবস্থায়। বাঘ জঙ্গলের শাসক; ওদেরকে শ্রদ্ধা করতে হবে, ওদেরকে একটু বুঝতে হবে। বৈধ অনুমতি ছাড়া মূল এলাকায় মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মূল এলাকা বলতে বনের একদম ঘন আর গভীর জায়গাটা বোঝাচ্ছি, যেখানে বাঘেরা প্রচুর সংখ্যায় বসবাস করে। ছোটো হলেও বাঘের আবাসস্থলের উপর মানুষের জারিজুরি কমানোর ব্যাপারে এটা একটা সঠিক পদক্ষেপ।
References:
Original Post – RB, The Earth Story
অনুবাদ – ফারহানা ইসলাম, ফরহাদ হোসেন মাসুম
Source: 1, 2, 3.
Video: 1, 2