“ঋতুচক্র” হল এমন এক প্রক্রিয়া যা মূলত প্রজননে সক্ষম একজন পূর্ণবয়ষ্কা নারীর মধ্যে হরমোন এবং প্রজনন টিস্যুর পরিবর্তন ঘটায়। এটা কোন স্বাধীন মানসিক প্রক্রিয়া নয়, যেহেতু বিবর্তনের চেয়ে আলাদা কোনো নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই।
বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে, প্রজননের উদ্দেশ্যে জরায়ুর যখন পরিবর্তন হতে থাকে, সেই সময় জরায়ুর অনির্দিষ্ট রক্ষণাবেক্ষণে উল্টো ফলাফল আসার সম্ভাবনা বিদ্যমান। তাই ধারণা করা হয়, এন্ডোমেট্রিয়ামে বর্ধিত কোষীয় পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ব্লাস্টোসিস্টের যখন দৃঢ়তা বাড়তে থাকে, সেই সময় উৎপন্ন এক উপজাত হলো ঋতুচক্রে উৎপন্ন ঋতুস্রাব।
বিভিন্ন প্রজাতিতে ঋতুচক্র
প্রাইমেটদের মধ্যে, মানুষ, বনমানুষ, ওল্ড ওয়ার্ল্ড বানর, এবং অন্যান্য ক্যাটারাইনদের (Catarrhines) মধ্যে ঋতুচক্রের উপস্থিতি দেখা যায়। অন্যদিকে, লেমুরের মত স্ট্রেপ্সিরাইনিসদের (Strepsirrhines) মধ্যে তা অনুপস্থিত। ওল্ড ওয়ার্ল্ড বানরদের (উদাহরণস্বরূপঃ রেসাস বানর) ঋতুচক্রের সূচনা হয় ৪ বছর বয়সে, যেখানে গরিলা, ওরাং ওটাং এর মত গ্রেট এপদের ঋতুচক্রের সূচনা হয় ৮-১০ বছর বয়সে।
ঋতুচক্রের ব্যাপ্তিও প্রজাতিভেদে ভিন্ন। ওরাং ওটাংদের ক্ষেত্রে এর ব্যাপ্তি প্রায় ২৯ দিন, গরিলাদের প্রায় ৩০ দিন, এবং শিম্পাঞ্জিদের প্রায় ৩৭ দিন। তবে ঋতুকালে মানুষ ব্যাতীত অন্যান্য প্রাণীর রক্তপাত হয় খুবই সামান্য। এছাড়াও, গর্ভধারণের সময় যৌন আচরণে ঋতুচক্রের ব্যপ্তি এবং হরমোনাল অবস্থার দৃঢ় প্রভাব পড়ে।
বাদুড়ের ঋতুচক্র অবশ্য প্রাইমেটদের তুলনায় অস্পষ্ট। চার ধরণের বাদুড় প্রজাতির মধ্যে ঋতুচক্রের উপস্থিতি দেখা গেছে। এছাড়াও, এমন এক ছোট স্তন্যপায়ী যা শুধু আফ্রিকায় দেখা যায়, Elephant Shrew, তাতেও ঋতুচক্রের উপস্থিতি দেখা গেছে।
অন্যান্য স্তন্যপায়ী, যেমন কুকুর এবং Tree Shrew, এদের মাঝে মাঝে রক্তপাত হয়, তবে তা ঋতুচক্র নয়। কুকুরদের রক্তপাত হয় যোনি থেকে, জরায়ু থেকে নয়, এবং প্রোজেস্টেরনের প্রতিসারণের সময় নয়। অন্যদিকে, Tree Shrew এর রক্তপাত জরায়ু থেকে হলেও তা হয় এই প্রজাতির কেবলমাত্র এক সুনির্দিষ্ট ধাপে, যাকে বলা হয় সিউডোপ্রেগন্যান্সি (Pseudopregnancy)।
সুতরাং, সর্বগ্রাহ্য ধারণামতে, ঋতুচক্র কেবল উচ্চতর প্রাইমেট, Elephant Shrew এবং কিছু বাদুড়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ; যদিও পুরো ব্যাপারটি অনুধাবনের জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন। যেমন, পরীক্ষামূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ইঁদুর (যাতে প্রাকৃতিক অবস্থায় ঋতূচক্র প্রদর্শিত নয়) কৃত্রিম উপায়ে ঋতুবতী হতে সক্ষম।
ঋতুচক্রে বিবর্তনতত্ত্ব
গত কয়েক বছরে, একাডেমিক কম্যুনিটি ঋতুচক্রের বিবর্তন সম্পর্কিত কিছু শক্তিশালী থিওরি প্রদান করে। তাদের একটি হলো, ঋতুচক্র বিবর্তিত হয়েছে আক্রান্ত এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুর প্রতিসারণ এবং জরায়ুতে নিরাপদ কোষ স্থাপনের মাধ্যমে জরায়ু এবং ডিম্বনালীকে শুক্রাণু-বাহিত প্যাথোজেন থেকে রক্ষা করার জন্য।
আরেকটি ধারণা হলো, ব্যর্থ প্রজননে জরায়ুজ এন্ড্রোমেট্রিয়াম ঝরে পড়ে বা পুনরায় শোষিত হয়, কারণ প্রজননে প্রয়োজনীয় বিপাকীয়ভাবে সক্রিয় ধাপে এন্ডোমেট্রিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের চেয়ে চক্রাকার প্রত্যাবৃত্তি এবং পুনরুদ্ধারে শক্তি খরচ কম হয়। অতএব, এ ধারণা মতে, মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির অতিরিক্ত রক্তপাতকে ক্যাটারাইনদের পূর্ণবয়ষ্কা নারীদেহের তুলনায় বড় আকারের জরায়ু এবং ছোট ছোট রক্তের শিরার বিন্যাসের জন্য দায়ী করা যায়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে যে ঋতুচক্র হল স্বতঃস্ফূর্ত Decidualization (হরমোনের প্রভাবে এন্ডোমেট্রিয়ামে সৃষ্ট এক ধরণের পরিবর্তন) এর একটি যান্ত্রিক পরিণাম, যা এই ঘটনা এবং প্রজাতিদের মধ্যে ঋতুচক্রের বিন্যাসের মধ্যেকার আন্তঃসম্পর্ক দ্বারা সমর্থিত।
স্বতঃস্ফূর্ত Decidualization এর বিবর্তন ঘটেছে উচ্চতর প্রাইমেট, কিছু বাদুড় এবং Elephant Shrew তে; এর কারণ হল মা এবং ভ্রূণের মধ্যবর্তী এক দ্বন্দ্ব যা হয় দুইটি সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রভাবকের মাধ্যমেঃ আক্রমণাত্মক ভ্রূণ এবং ক্ষতিকারক ভ্রূণ। প্রক্রিয়াটি ঋতুবতী প্রজাতিতে স্থায়ী হয়ে গেছে, নারীদের ভ্রূণ থেকে আগত কোনো সংকেত ছাড়াই গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত হবার সুযোগ করে দিতে।