এলবার্ট আইনস্টাইন তার পড়ার ঘরের দেয়ালে কেবল তিনজনের ছবি ঝুলিয়ে রেখেছিলেন – আইজ্যাক নিউটন, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল, আর তৃতীয় জন – যাকে নিয়ে আজ আমাদের গল্প – মাইকেল ফ্যারাডে। মহান বিজ্ঞানী রাদারফোর্ডকে চেনেন তো? তিনি মাইকেল ফ্যারাডেকে নিয়ে বলেছিলেন, “তার আবিষ্কারগুলোর মাত্রা আর ব্যাপকতা, বিজ্ঞান আর শিল্পকারখানার জগতে সেগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করলেই বোঝা যায় – এই লোকটাকে যত বড় সম্মানই দেয়া হোক না কেন, সেটা যথেষ্ট নয়।”
ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিজ্ঞানী, আবিষ্কারক মাইকেল ফ্যারাডের জীবনীতে সবাইকে স্বাগতম। শুরুতেই এক নজরে দেখে নিই সাধারণ কিছু তথ্য –
জন্ম – ২২শে সেপ্টেম্বর, ১৭৯১, জন্মস্থান – লন্ডন, ইংল্যান্ড
শৈশব – কী অদ্ভুত কষ্টে আর সমস্যায় যে কেটেছে এই লোকটার শৈশব!
স্ত্রী – সারাহ বার্নার্ড
সন্তান – নেই
ঝোঁক – পদার্থ (বিশেষ করে তাড়িৎ-চৌম্বক), রসায়ন
আবিষ্কার – ওরে বাবা! এখানে লিখে শেষ করা যাবে না। পাবেন নিচের দিকে, গল্পে গল্পে আসবে। শুধু একটা জিনিস বলে রাখি, তার কাজের মাহাত্ম্য বোঝানোর জন্য – আধানের একক ফ্যারাডে (অবশ্য এখন কুলম্ব ব্যবহার করা হয়), আধান সংরক্ষণ ক্ষমতার একক ফ্যারাড (Farad, ফ্যারাডে নয়), এক মোল ইলেকট্রনে আধানের পরিমাণকে বলে ফ্যারাডে ধ্রুবক বা Faraday Constant.
পুরষ্কার – Royal Medal (দুইবার), Copley Medal (দুইবার), Rumford Medal, Albert Medal
মৃত্যু – ২৫শে আগস্ট, ১৮৬৭, মৃত্যুস্থল – ইংল্যান্ড
এই লোকটার আবিষ্কারগুলোর গুরুত্ব এতো বেশি যে, বিজ্ঞানভিত্তিক অনুষ্ঠান “কসমস”-এর (২০১৪ সালের) সিকুয়েলে গোটা একটা পর্ব উৎসর্গ করা হয়েছিলো তার জন্য। এই পোস্টে সেই পর্বটি থেকে অনেক গল্পই থাকবে।
শৈশবের তিক্ত অভিজ্ঞতা
ফ্যারাডের উচ্চারণে সমস্যা ছিলো। তিনি “র” উচ্চারণ করতে পারতেন না। এটা নিয়ে সবখানে হাসাহাসি হতো, স্কুলেও। তিনি বেশিদূর পড়াশোনা করেননি, সামান্য যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ শেখা পর্যন্তই ছিলো তার গণিতবিদ্যার দৌড়! তার পরিবারও ছিলো দরিদ্র। চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। স্কুলেও আর গেলেন না, পড়াশোনাও করলেন না। তাকে লেগে পড়তে হলো জীবিকার কাজে, মাত্র ১৩ কি ১৪ বছর বয়সে! স্থানীয় একটা বই বাঁধাই করার প্রতিষ্ঠানে কিশোর ফ্যারাডে যোগ দিলেন। বস্তুত, এখানেই তিনি নিজেকে স্বশিক্ষিত করেছিলেন। দিনের বেলায় বই বাঁধাই করতেন, রাতের বেলায় বই পড়তেন বসে বসে।
বই বাঁধাইয়ের কারখানা থেকে রয়েল ইন্সটিটিউট
লন্ডনের বিখ্যাত রয়্যাল ইন্সটিটিউশনে তিনি একবার আবিষ্কারক হামফ্রে ডেভি’র বিজ্ঞান প্রদর্শনীর অনুষ্ঠান দেখতে গেলেন। সবাই যখন অনুষ্ঠান উপভোগে মত্ত, ফ্যারাডে তখন নোট নিতে ব্যস্ত। পুরো অনুষ্ঠানের কথাগুলোই লিখে ফেললেন তিনি! নিজে থেকে এতো এতো নোট যুক্ত করলেন যে শেষ পর্যন্ত বইটার পৃষ্ঠা সংখ্যা দাঁড়ালো ৩০০! বই বাঁধাইয়ের অভিজ্ঞতা তো ছিলোই! সেটাকে কাজে লাগিয়ে, নোটগুলোকে একটা বইয়ের মত বানিয়ে সেটা পাঠিয়ে দিলেন স্যার ডেভি’কে। হামফ্রে ডেভি মুগ্ধ হলেন ফ্যারাডের স্মৃতিশক্তি দেখে। এমন সময় তার গবেষণাগারের একটা দুর্ঘটনায় তিনি সাময়িকভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গবেষণায় অক্ষম হয়ে গেলেন। লেখালেখি করা তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিলো না। তখন, তিনি ফ্যারাডেকে ডেকে পাঠালেন, নিজের এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার জন্য। দিনের বেলায়, রয়েল ইন্সটিটিউটে স্যার ডেভির গবেষণাগারে সাহায্য করতেন ফ্যারাডে। সাহায্য বলতে বিশেষ করে গবেষণার নোট নেয়া, এটা সেটা এগিয়ে দেয়া, পরিষ্কার করা, আগে থেকে দেখিয়ে দেয়া নিরীক্ষাগুলোর প্রস্তুতি করা ইত্যাদি।
ডেভির স্ত্রী ফ্যারাডেকে অবজ্ঞা-অবহেলা করতেন। তখনকার সমাজটাই এমন ছিলো যে অর্থনৈতিকভাবে নিচু স্তরের মানুষকে হেয় করা হতো। ডেভি যখন ফ্যারাডেকে নিয়ে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ভ্রমণে দূর-দূরান্তে (এমনকি অন্য দেশে) যেতেন, তখন ডেভির স্ত্রী তাকে ঘোড়ার গাড়ির ভেতরে বসতে দিতেন না। তিনি ফ্যারাডেকে অন্যান্য চাকরদের সাথে খাওয়াদাওয়া করাতেন। এতো অপমান করতেন যে মাঝে মাঝে ফ্যারাডের ইচ্ছে হতো, একা একা আবার ইংল্যান্ডে চলে যেতে।
কর্মচারী থেকে আবিষ্কারক
অবশ্য স্যার হামফ্রে ডেভি নিজে খারাপ ব্যবহার করতেন না ফ্যারাডের সাথে। এমনকি নিজের লেখালেখির মধ্যে তিনি ফ্যারাডের অবদানের কৃতজ্ঞতাও স্বীকার করতেন।
কোনো ধাতব বস্তুতে বিদ্যুৎ চালনা করলে সেটা একটা অস্থায়ী চুম্বকে পরিণত হয়। এটা তখনকার বিজ্ঞানীদের জানা ছিলো না। হামফ্রে ডেভি এবং তার সহ-গবেষক বিদ্যুতায়িত বস্তুর এই চৌম্বকক্ষেত্র ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে খাবি খাচ্ছিলেন। এই ধর্মটাকে কাজে লাগিয়ে কোনো ধাতব দণ্ডকে ক্রমাগত ঘোরানো যায় কিনা, সেই চিন্তা করছিলেন। তখন মাইকেল ফ্যারাডে, গবেষণাগারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কর্মী, সারা দিন রাত এটা নিয়ে ভাবতে লাগলেন। তিনি এটা সেটা নিয়ে টুকটাক প্রচেষ্টা চালাতে লাগলেন। এবং একদিন, সত্যি সত্যি তিনি বিদ্যুৎকে কাজে লাগিয়ে একটা ধাতব বস্তুকে ঘোরাতে সক্ষম হলেন। এই প্রথমবারের মত কেউ বিদ্যুৎকে যান্ত্রিক শক্তিতে পরিণত করলো। আবিষ্কৃত হলো ইলেকট্রিক মোটরের মূলনীতি।
আজ আমরা আশেপাশে যত যন্ত্রকে বিদ্যুৎ দিয়ে চলতে দেখছি, সেটার সূত্রপাত হয়েছিলো মাইকেল ফ্যারাডের এই গবেষণার হাত ধরে। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আবিষ্কারগুলোর কথা বলতে গেলে এটা একদম ওপরের দিকে থাকবে। তখনই মানুষ এটার আশু গুরুত্বের কথা বুঝতে পেরেছিলো। মাইকেল ফ্যারাডে প্রায় রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন। ১৮২৪ সালে, মাত্র ৩২ বছর বয়সে, তাকে রয়েল সোসাইটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হলো। এটা একটা স্বীকৃতি ছিলো যে, ফ্যারাডে নিজ যোগ্যতায় একজন বিজ্ঞানী হয়ে উঠেছেন। পরের বছর তাকে রয়েল ইন্সটিটিউটের গবেষণাগারের পরিচালক বানিয়ে দেয়া হলো।
একটি কাঁচের বিস্কিট
নিজের অধীনের এই খ্যাতি হামফ্রে ডেভি হয়তো খুব একটা ভালো চোখে দেখেননি। তিনি ফ্যারাডেকে ধরিয়ে দিলেন একটা কাজ, যেটা ফ্যারাডে কখনোই পেরে ওঠেননি। কাঁচ জিনিসটা তখন অনেক মূল্যবান ছিলো। অপটিকস (optics) এর জগতে তোলপাড় হচ্ছিলো, শুধুমাত্র উন্নতমানের কাঁচের কারণে। আর এই কাঁচ যারা আবিষ্কার করেছিলো, তারা সেই আবিষ্কারের সূত্র লুকিয়ে রেখেছিলো সবার কাছ থেকে। তাদের বানানো কাঁচ গবেষণা করে সেই সূত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করলেন ফ্যারাডে। এবং চার বছর ধরে চেষ্টা করার পর রণে ভঙ্গ দিলেন, যখন হামফ্রে ডেভি মারা গেলেন। নিজের ব্যর্থতার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে, ঘরের তাকে একটি কাঁচের বিস্কিট রেখে দিলেন তিনি। চার বছরের ব্যর্থতার এই স্মৃতিচিহ্ন একদিন চরম একটা আবিষ্কারের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু সেই কাহিনী আরো পরে!
বার্ষিক সায়েন্স লেকচারের আয়োজন
স্যার হামফ্রে ডেভি মারা যাওয়ার পর গবেষণাগারের পরিচালকের পদে আসীন হলেন মাইকেল ফ্যারাডে। জীবন তাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে এলো! নতুন এই ক্ষমতা পেয়ে তিনি অত্যন্ত চমৎকার একটা কাজ করলেন। তরুণদের জন্য বার্ষিক সায়েন্স লেকচারের আয়োজন করলেন রয়েল ইন্সটিটিউটে।
প্রথম সেই আয়োজন হয়েছিলো ১৮২৫ সালে, এবং আজও সেটা চলছে। এই আয়োজনে বাচ্চাদের সামনে গল্পের ছলে বক্তৃতা দিয়েছেন ইতিহাসের বিখ্যাত সব ব্যক্তিরা। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ১৯৭৩ সালে এসেছিলেন ডেভিড এটেনবরো, ১৯৭৭ সালে এসেছিলেন কার্ল সেগান, আর ১৯৯১ সালে এসেছিলেন রিচার্ড ডকিন্স।
জেনারেটর আবিষ্কার
জেনারেটরের মূলনীতি (গতিশক্তি থেকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রুপান্তর) আবিষ্কার করলেন মাইকেল ফ্যারাডে।
একটা তারের কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে চুম্বককে আনা-নেওয়া করার মাধ্যমেই অসম্পূর্ণ বর্তনীকে সম্পূর্ণ করলেন। সোজা বাংলায় (!), “he invented the switch”. অর্থাৎ, বিদ্যুতের শক্তিকে সাধারণের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার কাজে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিলেন তিনি।
স্মরণশক্তি আর বিষণ্ণতা সংক্রান্ত সমস্যা
৪৯ বছর বয়সে ফ্যারাডে স্মৃতিশক্তিজনিত অসুস্থতার মুখোমুখি হলেন। তার স্মরণশক্তি দুর্বল হয়ে পড়লো। অনেক সময় অনেক কিছু তিনি মনে করতে পারতেন না। এজন্য তার মধ্যে প্রচণ্ড বিষণ্নতা তৈরি হলো। হবারই কথা! তিনি একজন বিজ্ঞানী, মস্তিষ্ক তার হাতিয়ার। আর সেই হাতিয়ারই কিনা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছিলো। ফ্যারাডে কি এখানেই দমে যাবেন?
তিনি সম্পূর্ণ সেরে ওঠেননি কখনোই। কিন্তু তার সবচেয়ে মহান আবিষ্কারগুলো, যেগুলো আমরা এখনো পড়ি, সেগুলো কিন্তু আরো পরের কথা!
তিন শক্তির বন্ধন
ইতোপূর্বে আমরা জানলাম যে, ফ্যারাডে বিদ্যুৎ আর চৌম্বক বলের মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করেছিলেন। এই দুটো বল (force) মিলে হচ্ছে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বা তাড়িত-চৌম্বক বল। কিন্তু এই দুই বল কি অন্য কোনোকিছুর সাথে সম্পর্কিত? তিনি তিন ধরনের শক্তির (energy) মধ্যে সম্পর্ক আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে চাইলেন। তৃতীয় শক্তিটার নাম ছিলো আলো। তিনি দেখতে চাইলেন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বল প্রয়োগ করে পোলারাইজড আলোকরশ্মিকে বাঁকিয়ে দেয়া যায় কিনা। তিনি একের পর এক পরীক্ষা করলেন। তিনি দেখলেন, সাধারণ বায়ু বা শূন্য মাধ্যমে চলা আলোকে বাঁকানো যাচ্ছে না। তাই তিনি আর অনেক অনেক মাধ্যম ব্যবহার করলেন। আলোকে সেগুলোর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করে চৌম্বকক্ষেত্র দিয়ে বাঁকাতে চাইলেন, কিন্তু পারলেন না। বিভিন্ন গ্যাস নিয়ে চেষ্টা করলেন, তরল (এমনকি অ্যাসিড) নিয়ে চেষ্টা করলেন; পারলেন না। অনেকটা বেপরোয়া হয়ে, মাধ্যমের জায়গায় বসিয়ে দিলেন নিজের ব্যর্থতার স্মৃতিচিহ্নটিকে, সেই কাঁচের বিস্কিটটিকে। মনে আছে তো সেটার কথা? যাই হোক, সেটার মধ্যে দিয়ে গমন করে আলো তার গতিপথ পালটে নিলো! এই পরীক্ষার ফলাফল কেন মানবজাতির জন্য মহা গুরুত্বপূর্ণ?
এই কারণে যে, এর মাধ্যমেই আমরা প্রকৃতির উপাদানগুলো যে আসলে একে অপরের সাথে কতটা গভীরভাবে সংযুক্ত, সেটা বুঝতে পারলাম। ব্রহ্মাণ্ডের আদি শক্তিগুলোর মধ্যে যে কী লীলাখেলা চলে, তা তিনি দেখিয়ে দিলেন। এই আবিষ্কারটাই আইনস্টাইন, হাবল, লেমিত্রের আবিষ্কারগুলোর পথ সুগম করে দিয়েছিলো।
চৌম্বকক্ষেত্র এবং চৌম্বক বলরেখার আবিষ্কার
কেন চুম্বক জিনিসটা সবসময় উত্তর-দক্ষিণ হয়ে থাকে – এটা নিয়ে মানুষ ভেবেছে সবসময়ই। লোহার গুঁড়াকে চুম্বকের ওপর ছড়িয়ে দিলে যে এমন একটা আকৃতি ধারণ করে, এটাও জানা ছিলো।
কিন্তু কেন এমন হয়, কেউ জানতো না। ফ্যারাডে জানতেন, ইলেকট্রিসিটি প্রবাহিত করলে তারও চুম্বকে পরিণত হয়। তিনি সেটাকে দিয়ে একই পরীক্ষা করলেন। ফলাফল আসলো এরকম।
এবার তিনি বুঝতে পারলেন, চুম্বক জিনিসটা সবসময়েই নিজের চারপাশে একটা ক্ষেত্র তৈরি করে। প্রথমে তিনি এটাকে চৌম্বক বলরেখা (magnetic lines of force), পরবর্তীতে শুধু বলরেখা (lines of force), এবং আরো পরে চৌম্বকক্ষেত্র (magnetic field) বলা শুরু করলেন।
তিনি এমন এক প্রশ্নের সমাধান দিলেন যা আইজ্যাক নিউটনকেও হতবাক করে দিয়েছিলো। নিউটন মহাকর্ষের সূত্র দিয়েছিলেন; কিন্তু তিনি জানতেন না, এতো দূর থেকেও স্পর্শ না করেই মহাকর্ষ কিভাবে কাজ করে? ফ্যারাডে বললেন, ওদের মহাকর্ষের ক্ষেত্র কিন্তু ঠিকই একে অপরকে স্পর্শ করে। এজন্যেই চুম্বক, পৃথিবী নামক দানবীয় চুম্বকের বলরেখা দ্বারা প্রভাবিত হয়, এজন্যেই সে উত্তর-দক্ষিণে মুখ করে থাকে।
জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল, পুরনো অতীতের ভূত
নিজের আবিষ্কারটাকে তিনি সবার কাছে প্রচার করলেন। কিন্তু সেটার পেছনে কোনো গাণিতিক ব্যাখ্যা দিতে পারলেন না। কারণ, সেই যে ছোটোবেলায় তিনি দারিদ্র্যে ভুগেছিলেন, ঐ যে তিনি স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন। গণিতের জটিলতা তিনি কখনোই বুঝে উঠতে পারেননি। তাই প্রায় সবাই ফ্যারাডের কথাগুলোকে প্রমাণ হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানালো। কেউ কেউ খোঁচা মারতেও ছাড়লো না। এমন সময় তার সাহায্যে এগিয়ে এলেন মোটামুটি সুপরিচিত একজন তরুণ গণিতবিদ, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল।
তিনি মনে করলেন, ফ্যারাডের এই আবিষ্কার নিঃসন্দেহে চোখ ধাঁধানো। তিনি বসে গেলেন, এই চৌম্বকক্ষেত্রের বিস্তারটাকে একটা গাণিতিক রুপ দেয়ার জন্য। লিখে ফেললেন, On Physical Lines of Force.
সেটার পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে দিলেন মাইকেল ফ্যারাডের কাছে। ঠিক যেভাবে, সূদূর অতীতে স্যার হামফ্রে ডেভির কাছে তারই কাজ নিয়ে একটা বই পাঠিয়েছিলেন ফ্যারাডে। ম্যাক্সওয়েল যে ফ্যারাডের অতীত, ফ্যারাডের ভূত!
আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি, কী ভয়াবহ আবেগময় একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো তখন ফ্যারাডের মনে। কী চিন্তা করছিলেন তখন তিনি? তিনি কি কেঁদে ফেলেছিলেন? তিনি কি তার ভুলোমনের বিষণ্ণতা কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গিয়ে প্রশান্তি পেয়েছিলেন?
এই আবিষ্কারটার আরো ব্যাপকতার কথা শুনবেন? খুব শীঘ্রই ম্যাক্সওয়েল দেখলেন যে এই ক্ষেত্রটা স্থির নয়, বরং সবসময়েই ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিটি মুহূর্তে। সেই ছড়িয়ে পড়া প্রবাহটাকে কাজে লাগিয়েই আজ আমরা যেকোনো কিছু সরাসরি সম্প্রচার করি, তথ্য বিনিময় করি ইন্টারনেট দিয়ে। আপনি যে আমার লেখা পড়ছেন, সেটাও ঐ প্রবাহটাকে কাজে লাগিয়েই আপনার কাছে পৌঁছাচ্ছে। একটু চিন্তা করুন তো, মাইকেল ফ্যারাডে নামের এই লোকটা না জন্মালে কী হতো? বিদ্যুৎ, মোটর, অন্যান্য মেশিন হয়তো আবিষ্কার হতো একসময় না একসময়, কিন্তু আপনি বা আমি হয়তো পেতাম না।
মৃত্যু
জীবিত থাকা অবস্থায় মাইকেল ফ্যারাডেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো যে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবি (Westminster Abbey)-তে তার কবর দেয়া হবে। সেখানে ব্রিটেনের রাজা-রাণীদের কবর দেয়া হয়। সেখানে আইজ্যাক নিউটনের মত বিজ্ঞানীর মৃতদেহ রাখা আছে। তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। ৭৫ বছর বয়সে, ১৮৬৭ সালের আগস্টের ২৫ তারিখে, মারা যাওয়ার পর তাকে লন্ডনের হাইগেইট সেমেটারিতে কবর দেয়া হয়। সেখানে স্ত্রী সারাহ এবং তার কবর পাশাপাশি।
মাইকেল ফ্যারাডে, আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
সূত্র এবং অন্যান্য –
১) ফ্যারাডের নামে কী কী নামকরণ করা হয়েছে
২) বিবিসি বায়োগ্রাফি
৩) বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবনী – মাইকেল ফ্যারাডে
৪) ফ্যারাডের উইকি পেইজ
.
ধন্যবাদ
apnader ei magazine er hard copy ki Bangladesh a pawa jay??? online a pdf download kora gele link ta den plz…
হ্যাঁ, অবশ্যই পাওয়া যায়। এখানে দেখুন, https://bigganjatra.org/magazine_volume01_published/
আর্টিকেলগুলো আমাদের সাইটে আপলোড করে দেয়া হবে একে একে। সব একসাথে পেতে হলে ওপরের লিংকে হার্ড কপি অর্ডার করতে হবে।
খুব ভাল হয়েছে লেখাটা। তড়িৎ প্রবাহকে কেন ঢেউ ঢেউ দিয়ে বোঝানো হয় বুঝিনি কখনো আগে। এক মোল ইলেকট্রন কতটুকু যদি বুঝিয়ে বলতেন। মাইকেল ফ্যারাডের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ করছি।
অ্যাভোগেড্রো সংখ্যক ইলেকট্রনকে এক মোল ইলেকট্রন বলে।
এগিয়ে যান,দোয়া রয়ল ।
Thanks for sharing an informative article about Michael Faraday.
Thanks for sharing. Try to Keep updating this blog. If I want to write like these types of, How can I reach you?
This is a very informative article, thnx for sharing.
শুকরিয়া ভাই। 🙂