মহাকালের কথা

– ১ : শুরু –

বয়স কতো তোমার? ৫ বছর, ১০ বছর, ১৮, নাকি ২০ পেরিয়ে আরো সামনে এগিয়ে চলেছো? ক্লাসে অংক করতে গিয়ে এমন অংক কি করেছো কখনো, যেখানে বয়েসের অনুপাত বের করতে হয়? কিংবা তোমার বয়েসের সাথে তোমার দাদুর বয়েসের অনুপাত কত, এমন কিছু?

হ্যাঁ, এমনসব অংকে একটা হিসেব এইরকম যে,
ধরো তোমার দাদু যদি হয় ৮০ বছরের, আর তুমি যদি ১০ বছরের হও তবে দাদুর বয়েসের ৮ভাগের ১ ভাগ হচ্ছে তোমার বয়েস। তাহলে জন্ম থেকে এখন অব্দি তোমার পুরো জীবনকে ৮বার পাশাপাশি রেখে যোগ করলে তবেই দাদুর বয়েস পাবে।

দেখা যাচ্ছে তোমার দাদু তোমার থেকে বয়েসে অনেক বড়ো আর পুরনো। বাব্বাহ্‌! সে তো অনেক বছর…
তোমার দাদুর থেকে আরও পুরনো কিছু আছে কি? তোমাদের বাড়িটি কদ্দিনের পুরনো? ১০, ৫০, নাকি ১০০ বছর, নাকি তারও বেশি; সে তো বহুকাল। আমার এই ২০ বছরের জীবন যেন সেখানে সামান্য!

এবার মনে করো যে, যা তুমি দেখ নি, তা কেমন ছিল, তা কি তুমি বলতে পারবে? যেমন ধরো তা কতো বছরের পুরনো, এমনকিছু?

হুম্‌… বলা যায় বৈকি। জঙ্গলে যারা কাঠ কাটতে যায় তারা কাদার মধ্যে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে বলে দেয়, বাঘটি কখন এখান দিয়ে গিয়েছে, কোন দিকে গিয়েছে, এটি পুরুষ নাকি মেয়ে, ছোট নাকি বড়, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে দেখা গেল যে, কিছু চিহ্ন ভালো করে ঘেঁটে দেখলে নানান সব তথ্য বেরিয়ে আসে, এমনকি সময়ের তথ্যও বেরিয়ে আসে।

যদি তুমি এসব তথ্য বের করার কিছু ব্যাপার জানতে পারো তবে তুমিও নানান জিনিসের বয়স বের করতে পারবে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা যারা পুরনো সব জিনিস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন তারা এসব জানেন। তাই তারা হাজার বছরের পুরনো বাড়ি খুঁজে পান। যেখানে অনেক আগের দিনের মানুষ দিন কাটাতো।

কিন্তু এই যে আমাদের চারপাশের যা কিছু তার মধ্যে সব থেকে পুরাতন ঘটনা কোনটি?

ঐ যে বলেছি কিছু চিহ্ন দেখে বলে দেয়া যায় যে, জিনিস কতো পুরনো, কিংবা ঘটনা কতো আগে ঘটেছে। তেমন ভাবেই আমরা জেনেছি আমাদের পৃথিবীর বয়স, আমাদের সবথেকে কাছের নক্ষত্র সূর্যের বয়স। আমাদের সৌর জগতের বয়স, ছায়াপথ আর সব সব কিছুর বয়স। সর্বোপরি আমাদের মহাবিশ্বের বয়স জেনেছি।

কিন্তু সে কতো কাল আগের কথা, সেই ঘটনার সাক্ষী হিসেবে কে ছিলো তখন? না কেউ ছিলো না। তবে এ সম্পর্কে জানার উপায়টা হচ্ছে আমাদের আশপাশকে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ আর এক যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ক্রমিক পুঙ্খানুপুঙ্খ কার্যপদ্ধতি, যাকে আমরা বলি বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতি।

তো এভাবে গবেষণা করে আমরা জেনেছি যে, পৃথিবী ৪৫০,০০,০০,০০০ (সাড়ে চারশ কোটি) বছরের পুরনো।

আমরা আকাশের সবথেকে দূরতম উজ্জ্বল জিনিসের থেকে আসা আলোর বর্ণালীকে নিরীক্ষণ করেছি। আর তরঙ্গের নানান পরীক্ষণে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, মহাবিশ্বের শুরুটা হয় আজ থেকে ১৩৮০,০০,০০,০০০ (এক হাজার তিনশ আশি কোটি) বছর আগে। তো সময়ের সেই পথ-চলা থেকে এখন অব্দি নানান ঘটনার সমারহ জমে উঠেছে। এতো এতো ঘটনাকে একবারে বোঝানো এক বড্ড চ্যালেঞ্জের ব্যাপার বৈকি!

তবে এর এক চমৎকার সমাধান আছে।

মনে কর তুমি তোমার গ্রাম বা মহল্লার নকশাটি কাগজে আঁকবে, তো সেই নকশা আঁকতে তোমার এলাকার সমান বড়ো বিশাল এক কাগজ না এনে তুমি তোমার খাতার পৃষ্ঠাতেই তা আঁকতে পারো। সেক্ষেত্রে তোমাকে কিছু অনুপাত ধরে নিতে হবে। যেমনঃ পৃষ্ঠার এক ইঞ্চি = ২০ মিটারকে বোঝাবে, এরকম।

চেষ্টা করলে আমরা মহাবিশ্বের শুরুর সময় থেকে এই পুরো এক হাজার তিনশ আশি কোটি বছরকেও স্বল্প সময়ের অনুপাতে বোঝাতে পারি। যেমন ধরো ১ বছর = ১৩৮০,০০,০০,০০০বছর।

কিন্তু এটা কি ভেবে দেখেছো যে, যদি আমরা সময়ের এমন অনুপাতে সকল ঘটনাকে সাজাই তবে তোমার আমার জীবনের সময় সেখানে কতোখানি হবে? এই হিসেব করার আগে চলো আমাদের সেই মহাজাগতিক ১ বছরের অনুপাত অনুসারে এর দিন, ঘণ্টা, মিনিট সব সাজিয়ে নেয়া যাকঃ

১ মহাজাগতিক বছর = ১৩৮০,০০,০০,০০০ বছর।

১ মাস = (১৩৮০,০০,০০,০০০ বছর ÷ ১২ মাস=) ১১৫,০০,০০,০০০ বছর।

১ দিন = (১৩৮০,০০,০০,০০০ বছর ÷ ৩৬৫ দিন=) ৩,৭৮,০৮,২২০ বছর প্রায়।
গণনার সুবিধার্থে আমরা ধরে নিচ্ছি ৩,৭৮,০০,০০০ বছর প্রতি দিনে।

১ সপ্তাহ = (৩,৭৮,০৮,২২০ বছর × ৭ দিন=) ২৬,৪৬,৫৭,৫৩৪ বছর প্রায়।

১ ঘণ্টা = (১৩৮০,০০,০০,০০০ বছর ÷ ৮,৭৬০ ঘণ্টা প্রতি বছরে=) ১৫,৭৫,৩৪২ বছর প্রায়।
আমরা ধরে নিচ্ছি ১৫,৮০,০০০ বছর প্রতি ঘন্টাতে।

১ মিনিট = (১৩৮০,০০,০০,০০০ বছর ÷ ৫,২৫,৬০০ মিনিট প্রতি বছরে=) ২৬,২৫৬ বছর প্রায়।
আমরা ধরে নিচ্ছি ৩০,০০০ বছর প্রতি মিনিটে।

১ সেকেন্ড = (১৩৮০,০০,০০,০০০ বছর ÷ ৩,১৫,৩৬,০০০ সেকেন্ড প্রতি বছরে=) ৪৩৮ বছর প্রায়।
আমরা ধরে নিচ্ছি ৫০০ বছর প্রতি সেকেন্ডে।

আচ্ছা বেশ, তো ধরি তোমার বয়স ২০ বছর, আর মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০,০০,০০,০০০ বছর।
১ সেকেন্ডকে ৫০০ বছর ধরলে তোমার বয়স এক সেকেন্ডের ২৫ ভাগের ১ ভাগ বা মহাবিশ্বের বয়েসের একশ ভাগের ০.০০০০০০১৪৪৯২৭৫৪ ভাগ (% বা শতাংশ)।
ভাবো একবার ……
তোমার চোখের পলক ফেলতে কতোটুকু সময় লাগে, তা জানো? ১ সেকেন্ডের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ সময়। তার মানে আমাদের সাজানো মহাজাগতিক বছরে দাঁড়িয়ে তোমার চোখের এক পলকে ১০০ বছর। মানুষ জন্মায়, বড়ো হয়, বিয়ে করে, সুখ-দুঃখের ভেলায় ভেসে সংসার করে আর টুপ করে মরে যায় চক্ষের পলকে। তুচ্ছ জীবন। ক্ষণিকের!

– ২ : মহাজাগতিক পঞ্জিকা –

না, আমরা অংক করতে বসি নি…
আমরা মহাকালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের এক ঝলক দেখতে চলেছি। এতক্ষণ যা তুমি জানলে, এই হচ্ছে মহাকাল, যাকে মহাসমুদ্রের সাথে তুলনা করা যায়।

সময়ের গতিকে একটি নির্দিষ্ট ছকে ফেলে আমরা বছর-মাস-দিন… এসবের হিসেব করি। মাঝে মাঝে একটি নির্দিষ্ট অতিক্রান্ত সময়কে আলাদা নাম দিয়ে তাকে উদযাপন করি। ঠিক যেমন আমরা একটি নির্দিষ্ট অতিক্রান্ত সময়কে বছর ধরি। আর তোমার জন্মের পর থেকে বারবার একটি নির্দিষ্ট তারিখকে তোমার জন্মদিন বলে তোমরা বাড়ির লোকেরা সকলে মিলে উদযাপন করো আর কেক ছোঁড়াছুঁড়ি হয়।

কিন্তু মহাকাল!
সে তো অকুল মহা সমুদ্র!
এক শতাব্দী সেখানে হয়তো, শিশিরের মত ক্ষুদ্র!
তবুও সে শিশির কণা হয় হাসি-কান্না-অশ্রুশিক্ত –প্রাপ্তির…।

আমাদের মহাজাগতিক ১ বছরকে একটা নাম দেয়া যাক। জ্যোতিঃপদার্থবিদ Carl Edward Sagan (কার্ল এডওয়ার্ড সেগান) প্রথম এরকম একটা ধারণা তার বিখ্যাত বই The Dragons of Eden (দ্য ড্রাগনস অব ইডেন) এবং টেলিভিশিন সিরিজ Cosmos: A Personal Voyage (কসমস: অ্যা পারসোনাল ভয়াজ)-এ প্রকাশ করেন। ইনি এরকম মহাজাগতিক বর্ষপঞ্জিকে কসমিক ক্যালেন্ডার (Cosmic Calendar) নাম দেন।
আমরা নাম দিলাম- মহাজাগতিক পঞ্জিকা।

পৃথিবী-মহাশূন্য আর মহাবিশ্ব এর সব সবকিছুর শুরুটা হয়েছিলো এক মুহুর্তের মধ্য দিয়ে, যাকে বলা হয় The Big Bang (বিগ ব্যাং)। মানে হচ্ছে এক বৃহৎ বিস্ফোরণ। তো এই Big Bang দিয়েই জানুয়ারির ১ম দিনে আমাদের কসমিক ক্যালেন্ডার শুরু হলো।

সব কিছুর শুরু এখান থেকেই, আমাদের জানা অদ্যাবধি সকল ইতিহাস পুরো বছর জুড়ে সাজানো থাকবে, আর এ ক্যালেন্ডারের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যরাতের শেষ মুহুর্তটি বর্তমান সময়কে বোঝাবে, যেখানে তুমি আমি আমরা সকলে আছি। তো এবার অতীতের পরম সূচনা লগ্নে, সেই প্রথম ক্ষণটিতে যাওয়া যাক।

– ৩ : জানুয়ারির দিনগুলো –

১লা জানুয়ারি, রাত ১২টা, প্রথম সেকেন্ড, প্রথম মুহুর্ত
আজ থেকে ১৩৮০,০০,০০,০০০ (এক হাজার তিনশ আশি কোটি) বছর আগে, The Big Bang.

Cosmic Background Radiation দিগ্বিদিকে ছড়িয়ে পড়লো। এই মূহূর্তটা হচ্ছে আমাদের জানা সবচেয়ে সুদূর অতীত। আমাদের সমগ্র মহাবিশ্বের উদ্ভব একটি ক্ষুদ্র পরমাণুর মত বিন্দু থেকে, যাকে সুপার এটম বলা হয়। তখনই শুরু হলো Time (কাল) এবং Space (স্থান)। এই মহাজাগতিক অগ্নিগর্ভ থেকে বিস্ফোরণ শুরু হলো, মহাবিশ্ব প্রসারিত হতে থাকলো, তৈরি হতে শুরু করলো সকল শক্তি আর পদার্থ।

আমি জানি যে, এটা উদ্ভট শোনাচ্ছে, কিন্তু এর পেছনে বেশ দৃঢ় পর্যবেক্ষণলব্ধ প্রমাণাদি আছে যা বৃহৎ বিস্ফোরণের পক্ষে সমর্থন যোগায়। আর এই প্রমাণাদির মধ্যে আছে মহাবিশ্বের হিলিয়ামের পরিমাণ এবং রেডিও তরঙ্গের সেই শব্দ আর তেজ যা বিস্ফোরণের অবশিষ্টাংশ হয়ে এখনো রয়ে গেছে।

যাই হোক, প্রসারিত হতে হতে মহাবিশ্ব আস্তে আস্তে শীতল হতে থাকলো। প্রথম ২০ কোটি বছর কেবলই অন্ধকার ছিলো। অভিকর্ষের ফলে গ্যাসগুলো স্থানে স্থানে ঘন হচ্ছিলো, আর উত্তপ্ত হচ্ছিলো। তারপর একদিন, প্রথম নক্ষত্র তার আলোকের ঝলক নিয়ে উপস্থিত হলো, জানুয়ারির ১০ তারিখে।

১৩ই জানুয়ারিতে, এই নক্ষত্রগুলো একটা কলোনীর মত জোট বাঁধতে শুরু করলো, আর তার মাধ্যমেই তৈরি হলো প্রথম দিকের ছোটো ছোটো ছায়াপথ। প্রবল টানে এ ছায়াপথগুলো পরস্পরের সাথে ধাক্কা খেলো আর মিলে যেতে থাকলো যতক্ষণ না পর্যন্ত সুবিশাল কিছু একটা তৈরি হচ্ছে, আর সেই সুবিশাল জিনিসগুলোর মধ্যে আমাদের এই আকাশ-গঙ্গা (Milky Way Galaxy) ছায়াপথটিও আছে।

– ৪ : লক্ষ কোটি তারার মেলা –

১৫ই মার্চ , আজ থেকে প্রায় ১১০০,০০,০০,০০০(১১শ কোটি) বছর আগে ,

আমাদের আকাশ-গঙ্গা ছায়াপথ দৃশ্যমান হতে থাকে। এইসব সুবিশাল ছায়াপথে লক্ষ কোটি তারার মেলা। এর মধ্যে আমাদের সূর্য কোনটা? না, সে এখনো জন্মায় নি। সে পরে অন্যসব নক্ষত্রের ছাইয়ের গর্ভ থেকে জেগে উঠবে।
সেই জমাট গ্যাস-ধুলার মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে ক্যামেরার ফ্ল্যাশের মতো আলোর ঝিলিক দেখা যেতে লাগলো। এর একেকটা সুপারনোভা, একেকটা দানবীয় নক্ষত্রের মৃত্যুর প্রবল ঝলক। যে নক্ষত্রের মৃত্যু হল তা আবার জন্মাবে ঠিক এমনই এক স্থানে।

এ হচ্ছে নক্ষত্রের আঁতুড়ঘর।

মৃত নক্ষত্রের গ্যাস আর ছাই-ধুলোর দানবীয় মেঘপুঞ্জ থেকে নক্ষত্রগুলো অনেকটা বৃষ্টির ফোঁটার মতো ঘনীভূত হতে থাকে। এগুলো এখন এতোটাই উত্তপ্ত যে, পরমাণুগুলোর মধ্যকার Nuclei (নিউক্লিয়াস বা মূল কেন্দ্রস্থল) একে অন্যের সাথে একদম গভীরভাবে গলে মিশে গেলো আর তৈরি করলো আমাদের নিঃশ্বাসের উপযোগী অক্সিজেন, আমাদের পেশীর মধ্যে থাকা কার্বন, আমাদের হাড়ে থাকা ক্যালসিয়াম, আমাদের রক্তে থাকা লৌহ, ইত্যাদি। অর্থাৎ, তোমার শরীরের সব কিছু আগে থেকেই রান্না করা হয়েছিলো অতীতের ধ্বংস হয়ে যাওয়া নক্ষত্রগুলোর অন্তঃস্থলে।

তুমি, আমি, আমরা প্রত্যেকে– নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে গড়া।

তাই সেগান বলেছিলেন, “We are star stuff.”

নক্ষত্রের এই ধ্বংসাবশেষ ঘুরেফিরে প্রক্রিয়াজাত আর সমৃদ্ধ হতে থাকলো বারংবার, আর সৃষ্টি-ধ্বংস-পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় জন্ম জন্মান্তর ধরে তা আমাদের কাছে বয়ে এলো।

আমাদের সূর্যের জন্ম লগ্ন আর কতো দূর? সে এক দীর্ঘ সময়। সে আরো ৬শ কোটি বছর ধরে অনুজ্জ্বল রয়ে যাবে।

– ৫ : আমাদের ঠিকানা –

৩১শে আগষ্ট , আজ থেকে প্রায় ৪৫৭,০০,০০,০০০ (৪শ ৫৭কোটি) বছর আগে ,

আমাদের সূর্যের জন্ম হলো। পৃথিবী, চন্দ্র সহ অন্যান্য গ্রহগুলো ঠিক পরপরই গঠিত হলো।

আমাদের সৌরজগতের আর সব কিছুর মতই পৃথিবীর গঠন হলো গ্যাস-ধুলোর এক চাকতি থেকে। আর ওরা সবাই নবীন সূর্যের চারপাশের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে থাকলো। বারংবার আঘাত আর সংঘর্ষে ধ্বংসস্তুপ দিয়ে তৈরি গোলকের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকলো। এই সময়, এর প্রথম ১শ কোটি বছরে পৃথিবী খেলো এক প্রচণ্ড ধাক্কা। ধাক্কাটি ছিলো এক বিশাল গোল আগন্তুকের সাথে।

ধাক্কার ফলে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষের টুকরোগুলো কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে ধাক্কা খেলো আর জমাত বাঁধতে থাকলো, যতক্ষণ না পর্যন্ত চাঁদ গঠনের জন্য এক গোলক গঠিত হচ্ছে। চাঁদ হচ্ছে এমন বহু বহু পাথরের সংঘর্ষ আর দৌরাত্ম্যের যুগের এক যথাযথ সাক্ষী আর ভুক্তভোগী।

যদি তুমি বহুকাল আগের সেই পৃথিবীতে দাঁড়াতে, আর যদি চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ওর দিকে মনের কাব্যিকতা মাখানো দৃষ্টি দিয়ে চাইতে, তবে তখনকার চাঁদ তার শত শত গুণ বেশি ঔজ্জ্বল্য দিয়ে তোমার সাধের কাব্যরসকে শুকিয়ে ফেলতে সিকিটুকুও কার্পণ্য করতো না।

বর্তমানে চাঁদটা পৃথিবীর যতো কাছে, তার চেয়ে ১০ভাগের ১ভাগ পরিমাণ কাছে ছিলো তখন। পরম ঘনিষ্ঠতার অভিকর্ষের টানে পৃথিবী তার নবীন চাঁদকে নিজের কাছাকাছি রেখেছিলো।

পৃথিবী ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হতে থাকলো, সাগর জেগে উঠতে লাগলো। তখন ঢেউগুলো ছিলো হাজারো গুণ বেশি উঁচু। যুগযুগান্তর ধরে চাঁদ পৃথিবীর সাগরের বুকে জোয়ার-ভাটার লীলাখেলা চালালো; আর সাথে সাথে পৃথিবী চাঁদকে দূরেও ঠেলে দিতে থাকলো।

”অপরিণত শৈশব”এ পৃথিবী ছিলো উত্তপ্ত, গলিত আর এক বিষাক্ত জায়গা যেখানে আমাদের চেনাজানা মনোরম পরিবেশ বলে কিচ্ছুটি নেই। ধরিত্রী যতোই শীতল হয়, এই প্রথম কোনোকিছু জমাট বেঁধে প্রথম পাথর গঠন করতে শুরু করলো অক্টোবরের ২য় দিনে
বর্তমানে পৃথিবীতে পাওয়া সবচেয়ে পুরাতন পাথরের বয়স ৪০০,০০,০০,০০০(৪শ কোটি বছর), যা মহাজাগতিক পঞ্জিকার ১৬ই সেপ্টেম্বরে গঠিত হয়।

– ৬ : প্রাণের কথা –

এবার সময় প্রাণের উদ্ভবের!



২১শে সেপ্টেম্বর , আজ থেকে প্রায় ৩৮০,০০,০০,০০০ (৩শ ৮০কোটি) বছর আগে,
আমাদের এই ক্ষুদ্র দুনিয়ায় প্রাণের উদ্ভব হয় ।
প্রথম জীবন (প্রোক্যারিওট-Prokaryotes).

মহাসাগরের অতলে কোনো লাভা-টিউবের থেকে নির্গত ছাই-লাভা-ক্যামিক্যালের সাথে সমুদ্রের পানি জায়গায় জায়গায় ক্যামিক্যালের-সুপের মত হয়ে ওঠে। হয়তো সেখান থেকেই প্রাণ তার যাত্রা শুরু করে।
তবে আমরা এখনো সঠিক জানি না কীভাবে প্রাণ তার যাত্রা শুরু করেছিলো। আমরা যদ্দূর জেনেছি, হয়তো এটা এই আকাশ-গঙ্গা ছায়াপথেরই অন্য কোনো অংশ থেকে এসে থাকবে।
প্রাণের উৎপত্তি (The Origin of Life) বিজ্ঞানের সব থেকে বড়ো অমীমাংসিত রহস্যগুলোর একটি।

তো এভাবেই বিকশিত হতে থাকে জলের মধ্যে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক প্রাণ। আর এর নানান ধরণের জৈব-রাসায়নিক উপাদানগুলো প্রস্তুত হতে থাকে পরবর্তীতে সবচেয়ে জটিল সব কর্মকাণ্ডের জন্য।

আমাদের জানা সবচেয়ে পুরাতন জীবাশ্মগুলো কিন্তু এখনকার ব্যাকটেরিয়া আর নীল-সবুজ শৈবালের চেয়ে খুব বেশি একটা জটিল ছিলোনা। সেই জীবাশ্মগুলো হাজির হতে থাকলো আমাদের পঞ্জিকার অক্টোবরের ৯ তারিখে। এই প্রাথমিক জীব-গঠন পুনরুৎপাদিত হলো থাকে নিজেকে বিভাজন করতে সক্ষম কোষের দ্বারা। যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তার কিন্তু নভেম্বরের ১ তারিখের আগে আসেনি।

যাই হোক, ১২ অক্টোবর , আজ থেকে প্রায় ৩০০,০০,০০,০০০ (৩শ কোটি) বছর আগে, একদম প্রাথমিক পর্যায়ের সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করতে সক্ষম উদ্ভিদের জন্ম হলো।

২৯ অক্টোবর , প্রায় ২৪০,০০,০০,০০০ (২শ ৪০কোটি) বছর আগে, বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন যুক্ত হতে শুরু করে।

নভেম্বরের ৮ তারিখ, প্রাণ শ্বাস নিতে করতে শুরু করে, নড়তে শুরু করে, খেতে শুরু করে, আর পারিপার্শ্বিকতায় সাড়া দিতে শুরু করে। এই প্রাথমিক পর্যায়ের অণুজীবদের কাছে আমরা অনেক ঋণী।
আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা। এরা বংশ বিস্তারের উপায় হিসেবে প্রথমবারের মতো যৌনতাকে বেছে নিয়েছিলো।

৯ নভেম্বর , প্রায় ২০০,০০,০০,০০০ (২শ কোটি) বছর আগে,
জটিল কোষ (ইউক্যারিয়ট-eukaryotes) .
Nuclei আর eukaryotes নিয়ে প্রথম দিক্‌কার কোষ হাজির হয় এবং অবিলম্বেই এরা বিকশিত হতে শুরু করে ।

– ৭ : ডিসেম্বরে ঘটনার ঘনঘটা –

ডিসেম্বর মাস

আমাদের ক্যালেন্ডারের ডিসেম্বর মাসটি সবথেকে ব্যাস্ত মাস , এতোটাই ব্যাস্ত আর গাদাগাদি যে এ মাসটিকে দিনে দিনে ভাগ করে বোঝাতে হবে । এবার এমন ঘটনা ঘটতে চলেছে যা পৃথিবীর গতি বাড়িয়ে দেবে , আর তা হচ্ছে সবথেকে গুরুত্বপুর্ন এই অক্সিজেনের আবির্ভাব । অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলে জায়গা নিতে থাকে , আর পৃথিবী প্রাণের জন্য আরো অনুকূল হতে থাকে ডিসেম্বরের ১ম দিনটিথেকে ।

৫ ডিসেম্বর, আজ থেকে প্রায় ১০০,০০,০০,০০০ (১শ কোটি) বছরআগে ,
প্রথম বহুকোষী জীবনের আবির্ভাব হয়।
বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনকে সাথে নিয়ে জীবন বিকশিত হতে থাকে একদম জোর কদমে।

প্রথম কেঁচো উপস্থিত হয় ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে।

১৪ ডিসেম্বর , প্রায় ৬৭,০০,০০,০০০ (৬৭ কোটি) বছরআগে সরল প্রাণীরা ব্যপক হারে বিকাশ লাভ করতে শুরু করে।

প্রায় ৫৫,০০,০০,০০০ (৫৫ কোটি) বছর আগে আর্থ্রোপোডা, পোকামাকড়দের পূর্বপুরুষ, Arachnids – এরা বিকশিত হতে থাকে।

১৭ ডিসেম্বর , আজ থেকে প্রায় ৫০,০০,০০,০০০ (৫০ কোটি) বছর আগে মাছ এবং আদি-উভচর (amphibians)-রাআবির্ভূত হতে থাকে

Paleozoic যুগ আর Cambrian সময়কাল ১৭ই ডিসেম্বরে শুরু হয় ।
এ ছিলো সেই সময়কাল, যখন জীবনের নানান বৈচিত্র্যে সাগর যেন ফেটে পড়ছিলো; যাতে ছিলো ক্ষুদ্র থেকে অতি বৃহদাকার প্রাণী আর নানান উদ্ভিদ।
প্রথম অমেরুদণ্ডীরাও এই একই দিনে চলে এলো। পরের দিন, ১৮ তারিখে প্ল্যাঙ্কটনরা মহাসাগরে গঠিত হলো, আর ট্রেলোবাইটরা (এক ধরনের আর্থ্রোপোডা) সবচেয়ে প্রাচুর্যময় জীবনের গঠন পেলো।

১৯শে ডিসেম্বরে শুরু হলো মাছেদের যুগ অর্ডোভিসিয়ান। ঠিক এরই কোনো সময়ে প্রথম মেরুদণ্ডী প্রাণীদের আর কঙ্কালের কাঠামো নিয়ে বেড়ে ওঠা প্রাণীদেরও পৃথিবীতে দেখা যেতে লাগলো। আসতে থাকলো মেরুদণ্ডী প্রাণীরা।




Tiktaalik (টিকটাআলিক মাছ) প্রাণীটি ছিলো এ জীববৈচিত্র্যের প্রথম অগ্রগামী যারা জল ছেড়ে স্থলে উঠে আসার ঝুঁকিটি নিয়েছিলো। নিঃসন্দেহে, এই স্থলে উঠে আসার মাধ্যমেই এটি ভিন গ্রহ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটি প্রথমবার অর্জন করেছিলো।

২০ ডিসেম্বর , আজ থেকে প্রায় ৪৫,০০,০০,০০০ (৪৫ কোটি) বছর আগে …
উদ্ভিদসকল জমির ওপরে তাদের বিস্তারলাভ করতে শুরু করলো। রসনালীতে পরিপূর্ণ এই উদ্ভিদগুলো তখন পর্যন্ত প্রাথমিক উদ্ভিদদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিকশিত ছিলো।

পরদিন ২১ ডিসেম্বর , প্রায় ৪০,০০,০০,০০০ (৪০ কোটি) বছর আগে …
পোকামাকড়বীজ আসলো আর জন্তুরা উপনিবেশে বাস করা শুরু করলো।

২২ ডিসেম্বর , প্রায় ৩৬,০০,০০,০০০ (৩৬ কোটি) বছর আগে …
উভচরেরা (Amphibians) আর পাখনাওয়ালা পোকারা এলো।

২৩ ডিসেম্বর , প্রায় ৩০,০০,০০,০০০ (৩০ কোটি) বছর আগে …
এ দিনটি স্মরণীয় হয়ে রইলো প্রথম সরীসৃপের আগমনের জন্য।

একেবারে প্রথম ডাইনোসর এলো ডিসেম্বরের ২৪ তারিখে, কিন্তু ক্যালেন্ডারে তাদের আধিপত্য বেশ অল্পক্ষণের জন্যই।

এর ২ দিন পর ২৬ ডিসেম্বর , প্রায় ২০,০০,০০,০০০ (৪০ কোটি) বছর আগে স্তন্যপায়ীরা এলো, এবং প্রথম পাখি এলো ডিসেম্বরের ২৭ তারিখে প্রায় ১৫,০০,০০,০০০ (১৫ কোটি) বছর আগে

২৮ ডিসেম্বর , প্রায় ১৩,০০,০০,০০০ (১৩ কোটি) বছরআগেপৃথিবীর বুকে ফুটলো প্রথম ফুল ।

আদিম বনভূমি যতোই জন্ম-বৃদ্ধি ও মরে যেতে থাকলো, ততোই এগুলো ভূপৃষ্ঠের নীচে চাপা পড়তে থাকলো, আর এই মৃতদেহের জীবাশ্ম ততোই কয়লায় পরিণত হতে থাকলো। এর ৩০ কোটি বছর পর, আজ আমরা মানুষেরা শক্তি উৎপাদনে ঐসব কয়লার অধিকাংশই পুড়িয়ে ফেলছি আর তার সাথে আমাদের সভ্যতাকে দূষণ আর বিপর্যয়ের বিপদের মুখে ফেলে দিচ্ছি।

৩০শে ডিসেম্বরের সকাল ৬টা ২৪ মিনিট, আজ থেকে প্রায় ৬,৫০,০০,০০০ (সাড়ে ৬ কোটি) বছর আগের কথা …
এক বিশাল গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হেনে ডাইনোসরদের জন্য চরম দুর্ভাগ্য বয়ে আনলো। এখন আমরা এই আঘাত হানার স্থানটিকে ক্যারিবিয়ান সাগর বলে থাকি।
১০ কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে, ডাইনোসরেরা পৃথিবীতে দাপিয়ে রাজত্ব করেছিলো, সেই সময়ে আমাদের পূর্বসূরীরা, ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীরা, মাটির নীচে ভয়ে জীবন কাটাতো। সেই গ্রহাণুর আঘাত এই ঘটনাচক্রকে পাল্টে দিলো।
একে বলা হয় (ক্রেটাসিয়াস-পেলিওজেইনি) Cretaceous-Paleogene বিলুপ্তি। এতে পৃথিবীর ৫০% প্রাণী বিলুপ্ত হয়। এ গণবিলুপ্তিতে non-avian ডাইনোসররাও মরে গেল।

একটু কল্পনা করা যাক! মনে করো, গ্রহাণুটি পৃথিবীর দিকে আসতে আসতে কোনো এক বস্তুর সাথে মহাকাশে সামান্য ধাক্কা খেলো। ফলস্বরুপ, গ্রহাণুর গতিপথ গেলো পাল্টে। এটি আর পৃথিবীতে আঘাত হানলো না। তাহলে এখনো পৃথিবীতে হয়তো ডাইনোসরেরা রাজত্ব করতো। তাহলে পরবর্তীতে স্তন্যপায়ী ছোটো প্রাণীরা বিবর্তিত হয়ে কোনোদিনই আমাদের পূর্বসূরীদের মতো হতে পারতো না, আর আমরাও আর কখনো আসতাম না। এ হল চরম অনিশ্চয়তার খুব ভালো একটা উদাহরণ। প্রকৃতিতে টিকে যাবার এক সুযোগ। যা আমরা পেয়েছিলাম তখন।

– ৮ : আদ্যিকালের ঠাকুরদার ঠাকুরদা –

মানুষের বিবর্তন

৩০ ডিসেম্বর , প্রায় ৬,৫০,০০,০০০ (৬ কোটি ৫০লক্ষ) বছর আগে …
প্রাইমেট্‌দের (আদিম বনমানুষ – Primates) আবির্ভাব।

৩১ ডিসেম্বর , সকাল ০৬টা ০৫ মিনিট , প্রায় ১,৫০,০০,০০০ (১ কোটি ৫০ লক্ষ) বছর আগে …
এইপদের (প্রাইমেট্‌ পরবর্তি দু-পায়ে চলা বনমানুষ – Apes) আবির্ভাব।

এ দিনেই দুপুর প্রায় ১টা বেজে ৩০মিনিটে Ape আর মানুষদের সম্ভাব্য প্রথম আদি পুর্ব প্রজাতি Proconsul এবং Ramapithecus রা আসতে থাকে।

৩১ ডিসেম্বর , দুপুর ০২টা ২৪মিনিট , প্রায় ১,২৩,০০,০০০ (১ কোটি ২৩ লক্ষ) বছর আগে …
হোমিনিড (মানুষ ও অন্যান্য এপের মধ্যবর্তী পর্যায়, নরবানর বলা যেতে পারে, ছোট মস্তিস্কের দু পেয়ে বনমানুষ -hominids) এর আবির্ভাব হলো।

মহাবিশ্ব ইতোমধ্যেই সাড়ে ১৩শ কোটি বছর পেরিয়েছে। এখনো আমাদের চিহ্নটি পর্যন্ত নেই। এই ক্যালেন্ডার যেমনটি দেখাচ্ছে, সময়ের এ সুবিশাল মহাসমুদ্রে আমরা মানুষরা বিবর্তিত হয়েছি কেবল মাত্র শেষ ঘণ্টায়, কসমিক ক্যালেন্ডারের শেষ দিনটিতে

১১টা ৫৯মিনিট ৪৬সেকেন্ড

অদ্যাবধি লিপিবদ্ধ হওয়া সকল ইতিহাস আমাদের কসমিক ক্যালেন্ডারের শুধুমাত্র শেষ ১৪ সেকেন্ডে জায়গা করে নেয়, আর তোমার শোনা প্রত্যেক ব্যক্তি বেঁচে ছিলেন এই এখানেরই কোনখানে। সব, সবকিছু, ছিলো যতো রাজা-রাজ্য আর লড়াই, অভিবাসন আর উদ্ভাবন, যুদ্ধ আর প্রেম; ইতিহাসের বইয়ের পাতার সবকিছুই ঘটে এখানে, আমাদের কসমিক ক্যালেন্ডারের এই শেষসেকেন্ডগুলোতে। কিন্তু আমরা যদি এসবের অনুসন্ধান মহাজাগতিক সময়ের সংক্ষিপ্ত মুহুর্তের মধ্যে করতে চাই; তবে এবার আমাদের স্কেলটিকে পরিবর্তন করতে হবে। ক্যালেন্ডারের শেষ দিন ৩১শে ডিসেম্বরকে ঘন্টা, মিনিট আর সেকেন্ডে ভাগ করে ঘেঁটে দেখতে হবে।

এ মহাবিশ্বে আমরা নবীন আগন্তুক। আমাদের গল্প শুরুটা হয় কসমিক ক্যালেন্ডারের শেষ রাতে।

আজ থেকে ৪০ লক্ষ বছর আগে।
স্থলভূমিগুলো এর অনেক আগেই মহাদেশ গঠন করেছে। তবে পরিবর্তন হতেই থাকে। আফ্রিকার অনেকটা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ঘন জঙ্গল বাপক আকারে বিস্তৃত ছিলো। তাতেই আদিম এইপ-রা ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতো। হঠাৎ এক সময় ধীরে ধীরে আফ্রিকার পূর্বদিকে ৪,০০০ মাইল ব্যাপী এক বিস্তৃত পর্বতমালা জেগে ওঠে, ফলে ঐ পর্বতমালার পশ্চিমে বৃষ্টি কম হতে থাকে। অনাবৃষ্টিতে ধীরে ধীরে সব যেন আরো শুকিয়ে যেতে থাকে। গভীর ঘন অরণ্যের স্থানে এখন শুধুই ঘাসের বন। একে আমরা এখন আফ্রিকার সাভানা অঞ্চল নামে চিনি।

বাধ্য হয়ে এইপ-রা গাছের ডাল ছেড়ে ঘাসের বনে হাঁটতে শুরু করল আর দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়ল খাদ্যের সন্ধানে। মনে হচ্ছে সব শেষ হতে চলেছে। কিন্তু না। এর যে প্রতিক্রিয়া তা ভাবলেও অবাক হতে হয়। তখন এরা দুপায়ে হাঁটতে শুরু করে। কারণ তাতে ঘাসের ওপর থেকে বহুদূরে দেখবার সুবিধে হত। এমন অভ্যাসের দরুণ তখন থেকে এখন অব্দি মানুষ দুপায়ে হাঁটছে।

এ হচ্ছে New Year’s Eveএর রাত ৯টা ৪৫মিনিট৩৫লক্ষ বছর আগেকার কথা, তোমার-আমার, আমাদের পূর্বসূরীরা, তাদের পদচিহ্ন রেখে চলে গিয়েছে।
আমরা এই সবে দু পায়ে ভর করে দাঁড়াতে শিখেছি এবং আমাদের পূর্বসূরীদের পথকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে চলেছি । যখনি আমরা দু পায়ে দাঁড়াতে থাকলাম, আমাদের দৃষ্টি আর জমির দিকে রইলো না। আমরা তখন ওপরে তাকাতে শুরু করলাম বিস্ময়ে; আর মুক্ত হয়ে গেল আমাদের দৃষ্টি।

মানুষের অস্তিত্বের সব থেকে দীর্ঘতম অংশের জন্য ধরে নেয়া যাক গত ৪০,০০০ প্রজন্ম। আমরা তখন ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম , শিকার করা আর খাবার সংগ্রহের জন্য শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে থাকতাম । যন্ত্রপাতি তৈরি, আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করা, জিনিসপত্র বানানো, সব কিছু জায়গা নেয় কসমিক ক্যালেন্ডারের শেষ ঘণ্টাটিতে।

৩১ ডিসেম্বর, রাত ১০ টা ২৪ মিনিট , প্রায় ২৫,০০,০০০ (২৫ লক্ষ)বছর আগে …
এরই কোনো এক সময়ে প্রথম আদিম মানুষ পৃথিবীতে হাঁটতে শুরু করলো ।

আজ থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ বছর আগের সেই পৃথিবী, দেখতে অনেকটা এখনকার মতোই; একজন তার সন্তানকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের পায়ের ছাপ দেখতে আমদেরই মতো। তাদেরকে দেখতে এখনকার মানুষেরই মত লাগছে। এ হচ্ছে Homo Erectus নামের আদিম মানব প্রজাতি। এই প্রথম কোনো প্রানীর পায়ের ছাপ যেন দেখতে আমাদেরই মত লাগছে! অতীত আর ভবিষ্যতের যতো কীর্তি-গাঁথা, সভ্যতা, সফলতা, সব-সবকিছুর শুরুটা যেন এক-পা এক-পা করে এগুচ্ছে। হ্যাঁ, এই প্রথম আমাদের পদচিহ্নকে আমরা চিনতে পারছি।
তারাই প্রথম পাথরের সরঞ্জামাদি ও হাতিয়ারগুলো বানাতে শুরু করলো। তবে মানুষ তখনও বন্য হিংস্র জন্তুর ভয়ে রাত্রি যাপন করতো।

– ৯ : আমরা মানুষ –

৩১ ডিসেম্বর, রাত ১১ টা৪৪ মিনিট , প্রায়,০০,০০০ (৪ লক্ষ)বছর আগে …
১২টা বাজতে ১৬ মিনিট বাকি,
প্রাগৈতিহাসিক মানবগোষ্ঠীর প্রথম কেউ একজন আগুনকে ব্যবহার করতে শিখলো। আর তারপর আমরা বন্যতায় আগুনকে সম্বল করে আঁধারের ভয়কে ধীরে ধীরে জয় করতে থাকলাম।

৩১ ডিসেম্বর, রাত ১১ টা ৫২ মিনিট , প্রায়,০০,০০০ (২ লক্ষ)বছর আগে …
১২টা বাজতে ৮ মিনিট বাকি,
কঙ্কাল ও শারীরিক গঠনের দিক থেকে আধুনিক মানুষের পদযাত্রার সূচনা হল। আমাদেরকে এবার মানুষের মতো দেখতে লাগছে।

৩১ ডিসেম্বর , রাত ১১ টা ৫৫ মিনিট , প্রায় ১,১০,০০০ (১ লক্ষ ১০ হাজার) বছর আগে …
বর্তমানে পৌঁছুতে আছে আর ৫ মিনিট!

আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে শুরু করলো। প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে সমুদ্রের জলস্তর (সমুদ্রপৃষ্ঠ) নামতে থাকে। ফলে আফ্রিকা আর এশিয়ার আরবীয় অঞ্চলের উপকূলের মধ্যকার দূরত্ব কমতে কমতে ৮ মাইলের মধ্যে চলে আসে। এখনকার লোহিত সাগর তখন চওড়ায় এতোটাই কম ছিলো যে কয়েকজন মিলে তা পার করে ওপারে চলে যাওয়া যায়।

অন্য আরেক প্রজাতি যাদের নাম Homo Sapiens (হোমো সেপিয়েন্স), তাদেরই কয়েকজন প্রথম এই সরু জলপথকে অতিক্রম করে আফ্রিকা থেকে ওপারে চলে গেলো। এখনকার বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এই বিশ্বাসে এক হয়েছেন যে, এই মুষ্টিমেয় মানবগোষ্ঠীই প্রজন্মান্তরে এশিয়া, ইউরোপ, ভারত আর বহু পরে আমেরিকাতে ছড়িয়ে পড়েছে।

৪০,০০০বছর আগে …
মানুষরা যতোই উত্তরে এগোতে থাকে, ততোই বরফের এক বিশাল দেয়াল যেন তাদের দিকে দক্ষিণে জোড় কদমে বিস্তৃত হতে থাকে। এক তুষার যুগের(উইকিপিডিয়া অনুসারে এর স্থায়িত্বকাল ১,১০,০০০ থেকে ১২,০০০ বছর পুর্ব পর্যন্ত) সূচনা হতে চলেছে। বহু আগে আর একবার তুষার যুগ এসেছিলো। তবে এখনকার এই যুগ যেন মানবগোষ্ঠিকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে থাকে। হাজার হাজার বছর অতিকায় বরফের চাঁই পুরু চাদরের মত সারা পৃথিবীকে ঢেকে রাখলো। আর একটা সময় আবার সব গলতে শুরু করল। তখন বরফ গলা সমুদ্রের জল অনেক নিচে ছিলো। আর তাই সাইবেরিয়া ও আলাস্কাতে বরফের ওপর দিয়ে হেঁটেই যাওয়া যেত। এভাবেই বরফের ওপর দিয়ে হেঁটে তখনকার মানুষেরা এশিয়া থেকে এক নতুন ভূখণ্ড আমেরিকায় চলে আসে।

আমরা মহাবিশ্বের সময়ের মাপকাঠিতে এতোটাই নবীন যে তখনও আমরা ছবি আঁকা জানতাম না। তবে কসমিক ক্যালেন্ডারের শেষ৬০ সেকেন্ড আসতে না আসতে আমরা এটি শিখে যাবো।

১১টা ৫৯মিনিটে আমরা শিখতে থাকি কিকরে ছবি আঁকতে হয় ।

আমরা চিত্রাঙ্কণের পাশাপাশি পাথর কেটে মূর্তি তৈরি করতে শিখলাম। তখনকার মানুষের আঁকা ছবিগুলো আমরা পৃথিবীর নানান জায়গায় এখন দেখতে পাই। এখন অব্দি পাওয়া সবচেয়ে পুরনো প্রথম গুহাচিত্র (Cave Painting) রয়েছে ইউরোপে। এসব তো নিছক ৩০,০০০ বছর আগেকার কথা।

– ১০ : মানবের কৌতূহল –

এবার আসছে সেই সময় যখন আমরা জ্যোতির্বিদ্যা উদ্ভাবন করলাম। মূলত, আমরা সকলে জ্যোতির্বিদদের ওপরেই নির্ভরশীল ছিলাম। কোন্‌ নক্ষত্র কবে কোথায় উঠবে তা আন্দাজ করে আমরা আগেভাগেই অনুমান করতাম যে, পরের শীত কবে আসবে আর বন্যপশুপাল আবার কবে কোথায় ফিরে আসবে; এসবের ওপরেই আমাদের টিকে থাকা নির্ভর করতো।

তারপর থেকে, এই গত ১০,০০০বছর শুরুরপুর্ব পর্যন্ত আমাদের জীবন-যাপনের পদ্ধতিতে এক বিপ্লবের সূচনা হতে থাকে। তখন থেকে এখন অব্দি আমরা আমাদের জীবনযাত্রাকে উন্নততর করে চলেছি।

৩১ ডিসেম্বর, রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট
আমাদের কসমিক ক্যালেন্ডার শেষ হতে কিংবা বর্তমান সময়ে আসতে আর ১ মিনিট অবশিষ্ট!

৩২ সেকেন্ড, আজ থেকে প্রায় ১২,০০০ বছর আগে,
আমাদের এই পূর্বসূরীরা জানতো কি করে তাদের পরিবেশকে সাজিয়ে নিতে হয় । তারা বন্য উদ্ভিদ আর পশুদের লালন পালন করত । তারা জমিতে চাষাবাদ করা শুরু করলো । আর এক স্থানে বসবাস করে নিজেদের দেখাশুনা করতে থাকলো । ধীরে ধীরে আমরা সব কিছুকে পাল্টাতে থাকলাম ।
ইতিহাসে এই প্রথম বারের জন্য, আমাদের নিকট বয়ে নেবার চাইতে অতিরিক্ত কিছু আছে। একটা উপায় দরকার যাতে আমরা এর হিসেব রাখতে পারি।

মধ্যরাতের ১৪ সেকেন্ড বাকি সেই সময়ে, কিংবা প্রায়,০০০বছরআগে, আমরা উদ্ভাবন করলাম – কি করে লিখতে হয়।
আর তারপর সেই সময় আর খুব একটা দূরে নেই যখন আমরা খাবার-দাবারের হিসেব রাখাসহ বা এর বাইরেে আরও বহু কিছু লিপিবদ্ধ করতে শুরু করবো। লিপি-লিখন আমাদেরকে আমাদের কথা-চিন্তা-ভাবনাকে সংরক্ষণ করতে দিলো আর স্থান-কালের বহু বহু দূরে পাঠাবার এক উপায় করে দিলো।

– ১১ : সভ্যতা-অসভ্যতা, উন্নতি –

আমরা ধীরে ধীরে ক্ষমতাধর হয়ে অন্যকে পরাস্ত করার উপায় উদ্ভাবন করতে থাকলাম । পাথর আর মৃত্তিকার শিলাতে লিপি-লিখনের মধ্যমে আমরা আমাদের এসব লিখে রাখলাম ।
আমরা জগৎ কাঁপিয়ে সামনে এগোতে থাকলাম…

৪৭ সেকেন্ড, ৫,৫০০ বছর আগে… বা, মধ্যরাত আসতে ১৩ সেকেন্ড বাকি
তখনকার হস্তলিপির নমুনা আমরা আজ খুঁজে পেলাম যা ছিলো প্রাচীন যুগের সমাপ্তির চিহ্ন এবং ইতিহাসের শুরু , ব্রোঞ্জ যুগের শুরু

৪৮ সেকেন্ড, ৫,০০০ বছর আগে … ১২ সেকেন্ড বাকি
মিশরের প্রথম রাজবংশ, সুমের(Sumer) মধ্যে প্রারম্ভিক রাজবংশীয় কাল, জ্যোতির্বিদ্যা

৪৯ সেকেন্ড, ৪,৫০০ বছর আগে … ১১ সেকেন্ড বাকি
বর্ণমালা, আক্কাদিয়ান(Akkadian) সাম্রাজ্য, চাকা আবিষ্কার

৫১ সেকেন্ড, ৪,০০০ বছর আগে … ৯ সেকেন্ড বাকি
হাম্মুরাবি’র(Hammurabi) শিলালিপি, মিশরের মধ্যযুগীয় সাম্রাজ্য

৫২ সেকেন্ড, ৩,৫০০ বছর আগে … ৮ সেকেন্ড বাকি
মাইসিনিয়ান(Mycenaean) গ্রীস; Olmec সভ্যতা; পূর্বাঞ্চলের দিকে, ভারতে, এবং ইউরোপে এবং লৌহ যুগ(Iron Age); কার্থেজের প্রতিষ্ঠা

৫৩ সেকেন্ড, ৩,০০০ বছর আগে … ৭ সেকেন্ড বাকি
ইসরায়েলে সাম্রাজ্য; প্রাচীন অলিম্পিক গেমস , Moses জন্মালেন

৫৪ সেকেন্ড, ২,৫০০ বছর আগে … ৬ সেকেন্ড বাকি
বৌদ্ধ(গৌতম বুদ্ধ), কনফুসিয়াস, চায়না অঞ্চলের কীণ রাজবংশ, আধুনিক(Classical) গ্রীস, অশোকএর সাম্রাজ্য, বেদ সম্পূর্ণ হয়, ইউক্লিডীয় জ্যামিতি, আর্কিমিডীয় পদার্থবিদ্যা, রোমান প্রজাতন্ত্র

৫৫ সেকেন্ড, ২,০০০ বছর আগে … ৫ সেকেন্ড বাকি
টলেমির জ্যোতির্বিদ্যা, রোমান সাম্রাজ্য, খ্রীষ্ট, সংখ্যা ০(শূন্য) এর আবিষ্কার

৫৬ সেকেন্ড, ১,৫০০ বছর আগে … ৪ সেকেন্ড বাকি
ইসলাম ধর্ম, মায়া সভ্যতা, সং(Song) রাজবংশ, বাইজেন্টাইন (Byzantine) সাম্রাজ্যের উত্থান

৫৮ সেকেন্ড, ১,০০০ বছর আগে … বা, মধ্যরাত আসতে ২ সেকেন্ড বাকি
মঙ্গোল সাম্রাজ্য, চেঙ্গিস খান তার হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, ক্রুসেড( Crusades), ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আমেরিকা অভিযান, ইউরোপে এলো রেনেসাঁ (Renaissance in Europe)।

প্রায়সেকেন্ড আসতে না আসতেই, ভালো খারাপ যাই হোক, পৃথিবীর দুটি অংশ একে অন্যকে আবিষ্কার করলো। ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা অভিযান করে একে আবিষ্কার করলেন ।

– ১২ : শেষ মুহুর্তের কথা –

শেষ সেকেন্ডে, গত ৫০০ বছরে, আমরা কত কী না করেছি! আধুনিক বিজ্ঞান জাদু দেখিয়েছে, দুটো বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে, আমরা পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশের দিকে রওনা দিয়েছি, চাঁদে পা রেখেছি, মহাকাশযান পাঠিয়েছি সৌরজগতেরও বাইরে। এটা সেই সময়, যখন বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির সুদূরপ্রসারী সব উন্নতি, বৈশ্বিক সংস্কৃতির উত্থান, সাথে সাথে মানবজাতির নিজেদের ধ্বংসের উপায় করে নেয়া—এসব হয়েছে ও হচ্ছে। হ্যাঁ, আমরা সুদূর অতীত ভ্রমণ করে এবার বর্তমানে এসে ঠেকেছি।

পৃথিবীর গল্প তো শেষ হয় নি। এখনো অনেক কিছু বাকি! আমাদের পৃথিবী হয়তো আরো ৪৫০ কোটি বছর টিকে রইবে। আরো বেশি বিস্ময়, অধিক শংকা এবং আরো অধিক অদ্ভুত জীবন-সৃষ্টির লীলাখেলা আমাদের সামনে পড়ে আছে, আমাদেরই এই অবিশ্রান্ত পৃথিবীতে, বয়ে চলা ভবিষ্যতে। আমাদের এই মহাকালের গল্পের পরের অধ্যায়গুলো এখনো লেখা হচ্ছে।

আজ থেকে অনেক অনেক বছর পর মহাজাগতিক পঞ্জিকার এককগুলো পাল্টে যাবে। তখন আর এক সেকেন্ডে হয়তো ৪৩৮ বছর হবেনা। এখন আমরা বলছি, ৫ সেকেন্ড আগে শূন্য সংখ্যাটির আবিষ্কার হয়েছে। কোনো এক সময় পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো বলবে, ৫ সেকেন্ড আগে আমরা নতুন এক গ্রহে কলোনী স্থাপন করেছি। অসীম সম্ভাবনা অপেক্ষা করে আছে আমাদের প্রজাতির জন্য। পরবর্তীতে এই পঞ্জিকায় কী কী লেখা হবে, সেটার নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে আমাদের প্রজাতির ওপরেই নির্ভর করে। আমরা কি যুদ্ধ করে নিজেদেরকে ধ্বংস করে দেবো? নাকি প্রজাতির সকলে মিলে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়বো? সিদ্ধান্ত আমাদের হাতেই।


    তথ্য ও ছবিঃ

  • http://en.wikipedia.org/wiki/Cosmic_Calendar
  • Cosmos: A SpaceTime Odyssey, documentary TV show
  • Earth: Making of a Planet, documentary TV show
  • http://starryskies.com/Artshtml/dln/1-02/cosmic.cal.html

Comments

Avatar

কৌশিক রায়

ঐ চার দেয়ালের শৃঙ্খলের মধ্যে বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশুনো করা হয় নি , তাতে কি । বিজ্ঞানের মধ্যে থেকে বিজ্ঞানকে উপেক্ষা করার মত লোক আমি নই । তাই এ নিয়েই আছি ... সবকিছুকে পরখ করে দেখা ...

আপনার আরো পছন্দ হতে পারে...

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
জানান আমাকে যখন আসবে -
guest
1 Comment
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
MUHAMMAD SHAMIM
8 বছর পূর্বে

আমার জীবনে সবচেয়ে ভালোলাগা অনলাইন পোস্ট এটি।ধন্যবাদ ও সেইসাথে কৃতগ্তা জানাই।

1
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x