Monsanto কী?
Monsanto Tribunal
ডিসেম্বরের ৩ তারিখে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এই নাগরিক আদালতের ঘোষণা দেয়া হয়। এটাকে Monsanto Tribunal নামে ডাকা হচ্ছে, এবং এই নামে ওয়েবসাইটও খোলা হয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী, বিপ্লবী কর্মী, এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞ এই ট্রাইব্যুনালে আছেন। নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে, ২০১৬ সালের ১২ থেকে ১৬ই অক্টোবর পর্যন্ত এই বিচারকার্য চলবে। খেয়াল করলে দেখবেন, শেষদিনটা হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে, তাদেরই অর্থনৈতিক অবদানে আয়োজিত এই নাগরিক আদালতে, Monsanto-এর বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগগুলো হচ্ছে –
– মাটি দূষণ
– পানি দূষণ
– প্রজাতির বিলুপ্তি
– প্রাণীবৈচিত্র্য হ্রাস, এবং
– লাখ লাখ কৃষকের সহায় সম্বল কেড়ে নেয়া।
প্রথম কয়েকটা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তাদের বানানো বিশেষ আগাছা দমনকারী রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগের ফলে। শেষ অপরাধটাকে একটু বর্ণনা করার প্রয়োজন অনুভব করছি। এর সারমর্ম হচ্ছে এমন – তারা বাজার থেকে কিছু বীজ নেয়, সেগুলোকে জেনেটিক্যালি মডিফাই করে। তারপর সেগুলো বাজারে বিক্রি করে। সেগুলোর পরাগরেণু যখন বাতাসে উড়ে অন্যান্য কৃষকের ক্ষেতে গিয়ে পড়ে, তখন মনসানটো ওই কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা করে – ওদের বীজ অবৈধভাবে ব্যবহারের জন্য। অনেক অনেক কৃষক এভাবে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
আপনাদের অনেকের হয়তো মনে আছে, ১৯৯০ দশকের শেষ দিকে আর এই শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারতে অনেক কৃষক আত্মহত্যা করেছিলো। সমালোচক বন্দনা শিবা বলেছেন, এটার সাথে সরাসরি মনসানটোর বিটি কটন বীজের সম্পর্ক আছে। আগে নাকি কৃষকেরা প্রতি কেজি কটনে ৭ রুপি খরচ করতো, এবং পরে সেই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০০০ রুপিতে। এজন্যেই তাদের ধার বেড়েছে, এবং ধার শোধ করতে না পেরে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে।
আমেরিকাতেই যে মনসানটো রাজনীতিবিদদের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, সেটা মোটামুটি সাধারণ জ্ঞান। এই রাজনীতিবিদগণ মনসানটোর পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। একটু খেয়াল করে দেখলেই বোঝা যায় ব্যাপারটা। পৃথিবীর ৪০টিরও বেশি দেশে খাবার সামগ্রীর ওপরে বায়োটেকনোলজি লেবেল লাগাতে হয়। কিন্তু আমেরিকার FDA (Food and Drug Administration) এখনও এই লেবেল লাগানোটা বাধ্যতামূলক করেনি। মনসানটোর প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট এখন FDA কমিশনারের সিনিয়র উপদেষ্টা! এটা নিয়ে অনেক আন্দোলনকারীই হতাশ। এগুলো ছাড়াও আরও অনেক অনেক তথ্য দিয়ে মনসানটোর উইকি পেইজের “বিতর্ক” সেকশনটা ভরপুর।
মনসানটোর পুঁজিবাদী হাতও এতো লম্বা যে, এদের বিরুদ্ধে মামলা করেও কোনো লাভ হয়নি। এবারও হবে না বলে অনেকে মনে করছেন। একটা জিনিস লক্ষ্য করার মত। বেশ বড় আকারে এই নাগরিক বিচারকার্যের আয়োজন করা হলেও বড় কোনো নিউজ মিডিয়া এই খবরটাকে প্রচার করছে না। তবে, এই স্পেশাল সিটিজেন ট্রাইব্যুনাল মনে করছে যে, এই বিচারের মাধ্যমে তারা যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করতে সক্ষম হবেন যাতে মনসানটোর বিরুদ্ধে ক্রিমিন্যাল কোর্টে যথেষ্ট শক্তিশালী মামলা দাঁড় করানো যায়।
ব্যক্তিগতভাবে, আমি জেনেটিক্যালি মডিফায়েড খাদ্যের বিরুদ্ধে নই। বর্তমান বিশ্বে এতো ব্যাপক সংখ্যক মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন উপায়ে অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজন আছে। কিন্তু এটা আমরা মানুষের জন্যেই করছি (মানুষকে নিরাপদ রেখেই এই গবেষণা করতে হবে), মানুষের বিপক্ষে গিয়ে নয়। মনসানটো যেভাবে অন্যান্য কৃষকদেরকে হেনস্তা করছে, সেটাকে সুনজরে দেখার কোনো উপায়ই নেই। আর পরিবেশকে রক্ষা করারও কোনো বিকল্প নেই। তাই, অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে ২০১৬ এর অক্টোবর পর্যন্ত প্রমাণ সংগ্রহ চলবে। শেষ পর্যন্ত আসলেই কোনো পরিবর্তন হবে কিনা, বলা যাচ্ছে না। কিন্তু সব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা ও বিতর্কের দরকার আছে, সেটা ঘটছে অন্তত।
Reference:
ভালো একটা ব্যাপার সম্পর্কে জানলাম।
“লাখ লাখ কৃষকের সহায় সম্বল কেড়ে নেয়া” পয়েন্টটার ব্যাখ্যা পড়ে আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলো।
গুড়ুম হবার মতই ব্যাপার।