প্রথমেই আসি মিথ কী সে বিষয়ে।
মিথ বা পৌরাণিক কাহিনী হলো, কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা কোনো বিখ্যাত লেখকের দ্বারা বহুল প্রচলিত কোনো ঘটনা বা কাহিনী যার উৎসস্থল এতই পুরনো বা ধোঁয়াটে যা যাচাই করার সম্ভাবনা নেই বা খুব কম। যেমন গ্রীক মিথ, মিশরীয় মিথ, প্রাচীন আটলান্টিস শহরের মিথ, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের মিথ, বা হেলেন অব ট্রয়ের মিথ। আধুনিক বা নতুন মিথগুলোকে বলা হয় আরবান লেজেন্ড (যেমনঃ লন্ডন শহরের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার জ্যাক দ্যা রিপারের কাহিনী)। আর মিথ থেকে যে ধারণা বা কনসেপ্ট পাওয়া যায় তাকে বলা হয় মিথকনসেপশন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো ভুল হবার সুযোগ থাকে।
আর যে ভুল ধারণাগুলো জনপ্রিয়তার কারণে প্রচলিত হয়ে যায় তাদের বলা হয় মিসকনসেপশন। যেমনঃ বজ্রপাতের আঘাতে কেউ মারা গেলে তার মাথার ব্রেন চুম্বক বা ম্যাগনেট হয়ে যাওয়া। নীচে কিছু মিথকনসেপশন এবং মিসকনসেপশন তুলে ধরা হলো।
১. বাদুড় নাকি অন্ধঃ এটা একটা বহুল প্রচলিত মিথ।
বাদুড় দিনে ভালো ভাবেই দেখতে পায় আর রাতে ইকোলোকেশন (সোনার সাউন্ড) ব্যবহার করে শিকার করে। অনেকটা ডিসি কমিক্সের ব্রুস ওয়েনের মতো, যে দিনে সাধারণ মানুষ এবং রাতে ব্যাটম্যান হয়ে দুষ্টের দমন করে।
বাদুড় কিন্তু পাখি নয়, পশু প্রজাতি। এদের গায়ে বিড়ালের মত লোম আছে। আবার এদের ডানা নেই। গায়ের চামড়া বর্ধিত হয়ে ডানার গঠন নিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, শিকার করার সময় এরা একে অপরের সোনার সিগন্যাল জ্যাম করে দিয়ে নিজে আগে শিকার করার চেষ্টা করে।
২. গ্রেট ওয়াল অব চায়না নাকি দেখা যায় স্পেস থেকেঃ মিথকনসেপশন।
হতাশ করার জন্য দুঃখিত তবে জিনিসটা স্পেস থেকে দেখা যায়না। এপোলো ১১ এর যারা চাঁদে অবতরণ করেছিলো, তাদের কেউই মানব নির্মিত কোনো বস্তু চাঁদ থেকে দেখতে পায়নি। স্পেস স্টেশন থেকে মেগা সিটির রাতের লাইটগুলো দেখা গেলেও মাটি থেকে ১৮০ মাইল বা ২৯০ কি.মি. উপরে উঠলেই চায়নার গ্রেট ওয়াল খালি চোখে অদৃশ্য হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন শাটল এস্ট্রোনট জে. ওপ।
৩. ব্ল্যাক হোল নাকি মহাজাগতিক ভ্যাকুয়্যাম ক্লিনারঃ মিসকনসেপশন।
ব্লাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মহাজগতিক ভ্যাকুয়্যাম ক্লিনার নয়। এটি প্রচণ্ড ঘনত্ব এবং মহাকর্ষ বল সম্পন্ন এক বস্তু যা চোখে দেখা যায় না। ব্ল্যাক হোল নিয়ে বহু জায়গায় বহু লেখা হলেও সবাই কেন জানি এটাকে অনেক বাড়িয়ে বাড়িয়ে লেখে। এটাও মনে করা হয় যে ব্ল্যাক হোলের কাজই হলো নিজে গিয়ে ছায়াপথ/নক্ষত্র/গ্রহ খেয়ে ফেলা। কিন্তু এটা আসলে সস্তা কিছু সাইন্স ফিকশন থেকে পাওয়া একটা মিসকনসেপশন মাত্র।
ব্ল্যাকহোলের নিজস্ব এলাকা থাকে এবং কখনই সে তার কক্ষপথের বাইরে গিয়ে ডাকাতি করে আসে না। কোনো বস্তু ব্ল্যাকহোলের কক্ষপথে পড়ে গেলে তখন তার কপালে খারাবি থাকে। এবং ব্যাপক মহাজাগতিক পরিবর্তন না হলে আমাদের সৌরজগতের ব্ল্যাক হোলের কবলে পড়ার কোনো সম্ভবনা নেই।
৪. জিহ্বা নাকি বিভিন্ন অংশ দিয়ে বিভিন্ন স্বাদ গ্রহণ করেঃ প্রচলিত আছে যে, জিহ্বা তার সামনের দিক দিয়ে ঝাল, পিছনের দিক দিয়ে টক স্বাদ অনুভব করে। কিন্তু এটা একটা মিসকনসেপশন।
জিহ্বার পুরো অংশ জুড়ে অসংখ্য স্নায়ু কোষ আছে। তাই জিহ্বার যেকোনো জায়গায় যেকোনো অনুভূতিই এরা সমানভাবে গ্রহণ করে এবং রিসেপ্টরে পাঠায়। তাই নির্দিষ্ট কোনো স্বাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নির্ধারিত নেই।
৫. নিশীথে হাঁটা পাবলিকদের নাকি জাগাতে নেইঃ ঘুমের ঘোরে যারা হাঁটে, ওদেরকে জাগালে আত্মা অন্য জগতে রয়ে যায় বা চেতনা দুই জগতের মাঝে আটকে থাকে বলে প্রচলিত আছে। এটাও মিসকনসেপশন।
ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলেই বরং দুর্ঘটনার সুযোগ কমে যায়। শুধু প্রাথমিক ভাবে হতবিহবল হয়ে পড়ে ওরা। কিছু হরর মুভি বা বই থেকে এই ধারণা আসতে পারে যে ভূতে ধরলে ঘুমের মধ্যে হাঁটা রোগ শুরু হয়। মেডিকেলের ভাষায়, এটি অতি সাধারণ স্লিপিং ডিজঅর্ডার।
৬. ষাঁড় নাকি লাল রঙ দেখলে ক্ষেপেঃ মিথকনসেপশন।
১৭০০ শতাব্দী থেকে স্পেইন বা পর্তুগালের ঐতিহ্যবাহী খেলা বুল ফাইটিং, স্প্যানিশে যাকে বলে টাউরোমাকি। এখানে একজন লড়াকু ব্যক্তি (ম্যাটাডর) থাকে যে এক বা একাধিক ষাঁড়ের সাথে লড়াই করে। এখানে দেখা যায়, ষাঁড়কে লড়াই করার জন্য প্রলুব্ধ করতে ম্যাটাডর হাতে লাল রংয়ের কাপড় (যাকে মুলেটা বলে) নিয়ে নাড়াচাড়া করে। সেখান থেকেই প্রচলিত হয়েছে যে, ষাঁড় লাল রং দেখলে ক্ষেপে যায়।
কিন্তু এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। গরু প্রজাতির সকল প্রাণীরাই বর্ণাদ্ধ বা কালার ব্লাইন্ড। তাদের চোখে লাল, সবুজ, সাদা রং এর কোনো ভেদাভেদ নেই। তারা আসলে বুল ফাইটারের আক্রমণাত্মক ভঙ্গি এবং হাতের কাপড়ের তীব্র নড়াচড়া দেখে ক্ষেপে যায়; লাল রং দেখে নয়। সূতরাং, লালা জামা পড়ে গরুর আশপাশ দিয়ে গেলে টেনশনে থাকার দরকার নেই।
৭. গ্রীষ্মকালে পৃথিবী সূর্যের কাছে শীতকালে দূরে থাকেঃ প্রচলিত ভুল ধারণা বা মিসকনসেপশন।
সূর্য থেকে দূরত্বই যদি ঋতু পরিবর্তনের কারণ হতো, তাহলে উত্তর গোলার্ধে (যেমনঃ বাংলাদেশ, উত্তর আমেরিকা) যখন গ্রীষ্মকাল, তখন দক্ষিণ গোলার্ধে (অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা) শীতকাল চলে কেন?
ঋতু পরিবর্তনের মূল কারণ – পৃথিবীর ২৩.৫ ডিগ্রি অক্ষীয় ঢাল করে থাকা। বছরের একেক সময়, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন কোণে সূর্যের আলোকরশ্মি পেয়ে থাকে। যখন পৃথিবীর একটি অংশ সোজা কোণে বা ডিরেক্ট এঙ্গেলে সূর্যের আলো গ্রহণ করে তখন ওই অংশ তত বেশী গরম হয়।
যেমন, উত্তর গোলার্ধের অংশগুলো জুন মাসের দিকে সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে থাকলেও সূর্যের দিকে ২৩.৫ ডিগ্রী কোণে হেলে থাকায় সূর্যের আলো সোজাসুজি আপতিত হয়। তাই জুন মাসের দিকে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে গ্রীষ্মকাল হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন উল্টো ঘটনা।
৮. চিংড়ি নাকি পোকাঃ পানিতে থাকার কারণে মাছ না হয়েও চিংড়িকে মাছ ডাক শুনতে হয়। আবার অনেকে তা সংশোধন করে বলে থাকেন যে চিংড়ি মাছ নয়, পোকা। আসলে চিংড়ি (গলদা, বাগদা, লবস্টার, কুচো চিংড়ি, কাঁকড়া) হল আর্থ্রোপোডা পর্বের ম্যালাকোস্ট্রাকা ক্লাসের অমেরুদণ্ডী প্রাণী। অন্যদিকে পোকা যেমন তেলাপোকা, গুবরে পোকা, ঘাস ফড়িং বা বিচ্ছু হল আর্থ্রোপোডা পর্বের ইনসেক্টা ক্লাসের প্রাণী। এটা অনেক বড় একটা পার্থক্য। তাই চিংড়ি মাছও নয়, পোকাও নয়।
৯. ইলেক্ট্রিক বাল্বের আবিষ্কারক নাকি এডিসনঃ মিথকনসেপশন।
এডিসন নয়, ইল্কেট্রিক বাল্ব প্রথম আবিষ্কার করেন হাম্ফ্রে ডেভি নামক ইংরেজ বিজ্ঞানী। আবিষ্কারটি হয় ১৮০০ সালে। কিন্তু সেগুলো ল্যাবরেটরিতে কাজ করলেও সর্বস্তরের মানুষের ব্যবহার উপযোগী ছিলো না। টমাস এডিসন অনেক পরীক্ষার পর ১৮৮০ সালে জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী বাল্ব আবিষ্কার করেন এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাজারে ছাড়েন।
১০. ভাইকিংরা নাকি শিংযুক্ত হেলমেট পরতোঃ আমরা বিভিন্ন নর্স (উত্তর মেরু অঞ্চলের) রুপকথায় দেখেছি, ভাইকিংরা শিং যুক্ত শিরস্ত্রাণ পরতো।
কিন্তু ভাইকিংদের শিরস্ত্রাণ ছিলো ঠিকই, তাতে কোন শিং/হর্ন ছিলো না। ১৯ শতকের এক কস্টিউম নির্মাতা তার কস্টিউম আকর্ষণীয় করার জন্য শিং যোগ করেন।
১১. হাঙ্গর নিয়মিত খেলে নাকি ক্যান্সার হয় নাঃ কিছু আমেরিকান/ইউরোপিয়ানদের ধারণা, হাঙ্গর খেলে ক্যান্সার হয় না। কারণ হাঙ্গর সহজাতভাবেই ক্যান্সার থেকে মুক্ত। এ ধারণা এসেছে “শার্ক ডোন্ট গেট ক্যান্সার” নামের একটি বই থেকে। বইটি মূলত হাঙ্গরের তেলের ওষুধ বিক্রির একটা প্রচারণা ছিলো। কিন্তু তারপর থেকে বহু মানুষ ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে ব্যাপক হারে হাঙ্গর নিধন করে উদরপূর্তি করছে। কিন্তু আফসোসের বিষয়, তাদের ক্যান্সার হওয়ার সুযোগ ১% তো কমে নাই-ই, অন্য কোনো উপকারও হয়নি।
১২. ফ্যানের বাতাস নাকি প্রাণঘাতীঃ দক্ষিণ কোরিয়াসহ ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে প্রচলিত মিসকনসেপশন হল রাতে ঘুমানোর সময় ইলেকট্রিক ফ্যানের বাতাস সরাসরি বুকে লাগাটা খুবই ক্ষতিকর। ধারণা করা হয় ফ্যানের বাতাস হাইপোথার্মিয়াসহ শ্বাসকষ্ট জাতীয় রোগ সৃষ্টি করে। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে যদি কেউ খুবই কাছে, যেমন বিছানার মধ্যে ফ্যান রেখে ঘুমান, তাহলে হয়তো ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
১৩. ভরা পেটে সাঁতার কাটতে গেলে নাকি পেশীতে টান লাগেঃ এটা বহুল প্রচলিত একটি মিসকনসেপশন যে, পেট ভরে খেয়ে সাঁতার কাটতে গেলে পায়ের পেশীতে টান লাগে বা খিল ধরে। তাই সাঁতার কাটার এক ঘণ্টা আগে পেট ভরে খেতে নেই। এই ধারণা ভিত্তিহীন। তাই পায়ের বা অন্য কোন পেশীতে টান লাগার সাথে ভরা পেটের সম্পর্ক নেই। মনে রাখতে হবে, পাকস্থলী পায়ে নয়। তাই ভরপেটে সাঁতার কাটতে গেলে হয়তো একটু দ্রুত হাঁপিয়ে যেতে হতে পারে।
১৪. বিবর্তনবাদ নাকি একটি থিওরিঃ দৈনন্দিন জীবনে থিওরি বলতে বোঝায়, যেটি শুধু কাগজে কলমে সম্ভব কিন্তু বাস্তবে এখনো প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু এটাই সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা। সায়েন্সের ভাষায় থিওরি হল, যার বিষয়ে সুবিন্যস্ত তথ্য প্রমাণাদিসহ বহু পর্যবেক্ষণের ভ্যালিড ডকুমেন্ট আছে। সোজা কথায় প্রমাণিত সত্য। যেমন থিওরি অব রিলেটিভিটি বা থিওরি অব গ্রাভিটি বা থিওরি অব এভ্যুলুশন।
সায়েন্সে থিওরি হলো কোনো বিষয়ের উপর প্রাপ্ত চূড়ান্ত ফলাফল। বিবর্তনবাদ এমনই একটা থিওরি যা শুধু মানুষের উৎপত্তি নিয়েই কাজ করে না (এটা একটা অংশ), বরং কীভাবে সব প্রজাতি কাজ করে, পরিবর্তিত হয়, খাপ খাইয়ে নেয়, বৈচিত্র্য সাধিত হয় – তার ব্যাখ্যা দেয়।
১৫. ক্যাফেইন নাকি পানিশূন্যতা ঘটায়ঃ আসলে সেরকম কিছু না। চা বা কফিতে এমনিতেই পানি থাকে। তাই এদের ক্যাফেইনের ডিইউরেটিক উপাদান যতটা পানিশূন্য করে, প্রায় ততটুকু পানির যোগান দিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে।
১৬. চা খেলে নাকি গায়ের রং কালো হয়ঃ চা, কফি পান করলে গায়ের রং এগুলোর মতো কালো হয় না। শ্যামলা ছেলেমেয়েরা নিশ্চিন্তে চায়ের কাপ নিয়ে বসতে পারেন। কারণ গায়ের রংয়ের জন্য দায়ী মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থ, যেটি বেশী পরিমাণে উপস্থিত থাকলে গায়ের রং কালো হয় আর কম থাকলে ফর্সা হয়। এটা পুরোটাই জেনেটিক একটা ফ্যাক্টর।
১৭. শেভ করলে নাকি চুল/দাড়ি ঘন হবেঃ এটা পুরোই সস্তা, নাপিতদের দ্বারা উদ্ভুত একটা মিথ।
এটা নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। দাঁড়ি বা লোমের ব্যাপারটা পুরোটাই জেনেটিক। কারো দাঁড়ি হবে কিনা, হলেও সেটা কতটা ঘন হবে, এটা প্রত্যেকের জিনের ভেতর এনকোডেড থাকে। এমনকি এটা যে সরাসরি পিতামাতার জেনেটিক কোড অনুসরণ করবে, তাও না। অনেক সময় জিন মিউটেট (সাবস্টিটিশন, ইন্সার্টেশন, ডিলিটেশন) করতে পারে বা নন-লিথাল জেনেটিক ডিসঅর্ডারের কারণে দাড়ি কম বেশী উঠা/অকালে চুল/টাক পড়ার মত সমস্যা হতে পারে, যা হয়তো পরিবারের অন্য কারো নেই।
১৮. অনেক উঁচু থেকে কয়েন পড়ে নাকি মৃত্যু হতে পারেঃ পতনশীল কয়েন (বর্তমানে ১-২০ গ্রামের বেশী কয়েন হয় না), তা সে যত উঁচু হতেই পড়ুক না কেনো, বাতাসের প্রভাবে বা বাধায় টার্মিনাল ভেলোসিটি বা সর্বোচ্চ বেগ ৩০-৫০ মাইল/ঘণ্টার বেশি হতে পারে না। সেই হিসেবে অনেক উঁচু হতে কয়েন পড়লে কমবেশি আহত হলেও নিহত হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই।
১৯. ব্রেনের ডান ভাগ এবং বাম ভাগের ক্ষমতা নাকি আলাদাঃ প্রচলিত আছে যে, মস্তিষ্কের ডান গোলার্ধ এক ধরণের কাজ করে যখন বাম গোলার্ধ করে অন্য ধরণের কাজ। এর কোনো বিজ্ঞানসম্মত সত্যতা এখনো পাওয়া যায় নি।
২০. মিষ্টি খেলে নাকি অতিরিক্ত কর্মক্ষমতা পাওয়া যায়ঃ মিষ্টি বেশী খেলে অতিরিক্ত কাজ করার শক্তি পাওয়া যাবে বা সহজে ক্লান্ত হবে না, পরিসংখ্যান এই মিথের সমর্থন করে না। ADHD (Attention Deficit Hyperactivity Disorder) সুগার ফ্রী ডায়েটেও দেখা দেয়।
২১. এলকোহল নাকি শরীরকে গরম রাখেঃ এলকোহল শরীরের উপরের দিকের শিরার রক্তের উষ্ণতা বৃদ্ধি করলেও শরীরের আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। যা কিনা প্রকৃত পক্ষে কোনো কাজে আসে না। তবে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এলকোহল সেবন না করাই উত্তম। কারণ পরিবেশই দেহ সচল রাখতে প্রয়োজনের বেশী উত্তাপ সরবরাহ করে থাকে।
২১. ঠাণ্ডা লাগলে নাকি গরুর দুধ খাওয়া যাবে নাঃ দুধ খেলে মিউকাস বৃদ্ধি পায়, যা মূলত সর্দি-কাশির জন্য দায়ী- এই ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ঠাণ্ডা লাগলে দুধ খাওয়া বন্ধ করার কোন দরকার নেই।
২২. এলকোহল নাকি ব্রেনের কোষ নষ্ট করেঃ মিথ কনসেপশন। পাঁড় মাতাল, যারা ক্যালোরির ঘাটতি এলকোহল দিয়ে পূরণ করে, তাদের ক্ষেত্রে এটি সত্য। কিন্তু পরিমিত এলকোহল পান করলে ব্রেনের কোষের ক্ষতি হয় না।
২৩. দক্ষিণ গোলার্ধে টয়লেট ফ্লাশের পানি বা বেসিনের পানি নাকি বাম দিকে ঘুরে কিন্তু উত্তর গোলার্ধে ঘুরে ডান দিকেঃ এটা একটা প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা। করিওলিস সূত্রের প্রভাব (Coriolis effect) টয়লেট ফ্লাশে প্রভাব ফেলে না।
এখানে করিওলিস প্রভাবটা একটু বলে দেয়া যায়। করিওলিস সূত্র কোনো ঘূর্ণায়মান বস্তুর মধ্যে আরেক ঘূর্ণায়মান বস্তুর ঘূর্ণির দিক নির্দেশ করে। এখানে সহজেই বোঝা যাচ্ছে ঘূর্ণায়মান বস্তু হল পৃথিবী এবং বস্তুর ভেতরে আরেক ঘূর্ণায়মান বস্তু হলো তরল পদার্থ, পানি বা গ্যাস। পরীক্ষা হতে দেখা গেছে, উত্তর গোলার্ধে পৃথিবীর ঘূর্ণন হয় কাউন্টার ক্লক ওয়াইজ এবং দক্ষিণ গোলার্ধে হবে ক্লক-ওয়াইজ।
করিওলিস সুত্র অনুসারে চাপ কম থাকলে কাঠামোর ঘূর্ণন কাউন্টার ক্লক ওয়াইজ হলে তার ভেতরের বস্তুর ঘূর্ণন হবে ডান দিকে। সেই হিসেবে ফ্ল্যাশ বা বেসিনের পানির ঘূর্ণনও দুই গোলার্ধে দুই রকম হওয়া উচিৎ। কিন্তু তা হয় না দুটো কারণেঃ
১. করিওলিস বল অনেক ক্ষুদ্র এবং দুর্বল বল যা ছোট পরিসরে কাজ করার মত প্রভাব ফেলতে পারে না।
২. করিওলিস প্রভাব নিম্ন চাপযুক্ত পরিবেশে কাজ করে। তাই বেসিন বা ফ্লাশের পানির পরিবেশে চাপ স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু নিম্নচাপের কারণে সাইক্লোন বা টর্নেডো যখন হয়, তখন সাইক্লোন টর্নেডোর ঘূর্ণি উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে তাদের দিক বিপরীত থাকে। কারণ এক্ষেত্রে বৃহৎ পরিসর এবং নিম্ন চাপ থাকে।
২৪. চিউয়িং গাম পেটে গেলে নাকি সাত বছর ধরে হজম হয়ঃ জ্বি না। অন্তত এটা সত্যি যে চিউয়িং গাম হজম হয় না। কিন্তু পেটে চলে গেলে তা সর্বোচ্চ ১২ ঘন্টার মধ্যে বর্জ্যের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।
২৫. মানুষ নাকি শিম্পাঞ্জী হতে উদ্ভুতঃ হুজুগে বিবর্তনবাদ বিশ্বাসীদের কেউ কেউ মনে করে থাকে, শিম্পাঞ্জী থেকে আমাদের উদ্ভব। আসলে সেরকম কিছু না। বানরের পাশাপাশি শিম্পাঞ্জীও আমাদের নিকটবর্তী জেনেটিক আত্মীয়। ৭-৮ মিলিয়ন বছর আগে আমাদের কমন জেনেটিক পূর্বপুরুষ ছিলো।
২৬. ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম (অ্যাপেল) এবং লিন্যাক্স নাকি ভাইরাস আক্রমণ থেকে মুক্তঃ এটা একটা আধুনিক মিসকনসেপশন। ট্রোজান হর্স বা অন্যান্য ম্যালওয়্যার থেকে লিনাক্স বা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম মুক্ত নয়। বিশেষ করে এটা অনেকের ধারণা যে লিন্যাক্স ভাইরাস ফ্রী। কিন্তু ম্যাক ও.এস বা লিন্যাক্সেও (এদের জন্যে তৈরি) ভাইরাস আক্রমণ করে যদিও তা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের চাইতে অনেক কম।
২৭. লেমিংস নাকি দল বেঁধে আত্মহত্যা করেঃ কখনই লেমিংস দলবেধে আত্মহত্যা করে না।
তাদের ব্যালান্স সেন্স খুবই কম থাকায় অপিরিচিত এলাকায় মাইগ্রেশনের সময় প্রায়শই পড়ে যায়, যা দেখে গণআত্মহত্যার ধারণা এসেছে।
২৮. গোল্ডফিশের স্মৃতি নাকি ৩ সেকেন্ডঃ অনেকে এটা শুনেছে যে গোল্ডফিশ নাকি মাত্র ৩০ সেকেন্ড বা ৩ সেকেন্ড পর্যন্ত স্মৃতি ধারণ করতে পারে – যা একটা মিথ।
গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি কয়েক মাস পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকে যা কিনা অনেক পলিটিশিয়ানদের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী। এই মিথের উৎস পাওয়া যায়নি।
২৯. শিম্পাঞ্জীর সাথে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে নাকি H.I.V. ধরেছে মানুষকে: এইচ.আই.ভি ভাইরাস মানুষের সাথে শিম্পাঞ্জীর যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে না, খাদ্যের জন্য বানর প্রজাতি শিকার করে তাদের মাংস খাবার সময় ওদের রক্ত থেকে ছড়ায়।
৩০. মানুষ নাকি ব্রেইনের শুধুমাত্র ১০% ব্যবহার করেঃ মিথকনসেপশন।
আমরা আমাদের ব্রেনের মাত্র ১০ ভাগ ব্যবহার করি না। আমাদের ব্রেনের সকল কোষই প্রয়োজন অনুযায়ী কম-বেশী ব্যবহার করি। কিন্তু সাধারণত আমরা যে ধরনের কাজ করে থাকি, তাতে কখনোই আমাদের ব্রেনের সকল কোষের শতভাগ অংশগ্রহণের দরকার পড়ে না। কিন্তু দেখা যায়, আমাদের ব্রেন সবসময়ই মাল্টিটাস্কিং করতে থাকে। শুধুমাত্র একটা দিকে মনযোগ রাখা কখনোই হয়ে ওঠে না। যেমনঃ একজন যত ভালোভাবে কোন কিছু মুখস্ত করার চেষ্টা করুক না কেনো, তার মন বা প্রবৃত্তি তার ব্রেনকে সামান্য হলেও অন্য কাজে লাগিয়ে রাখে। এছাড়া আমাদের শারীরবৃত্তীয় কাজেও আমাদের ব্রেনের একটা অংশ সবসময় কাজ করে যায় যা আমাদের দৈনন্দিন কাজ কর্মের উপর খুব বেশি মাত্রায় নির্ভর করে। তাই ব্রেন যে কতটা ব্যবহৃত হচ্ছে তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা এক প্রকার অসম্ভব। সেই হিসেবে, আমারা যারা সাধারণ মানুষ, তারা ব্রেনের মাত্র ১০%, আইন্সস্টাইন সর্বোচ্চ ২৫%, বা নিকোলা টেসলা ৭৫% ব্যবহার করতেন এসবই মিথ।
অনেক তথ্য বিভ্রান্তিকর আর কিছু ভুল ও আছে । তবে লেখকের প্রয়াসকে স্বাগতম
অবশ্যই জানান কোথায় কী কী ভুল আছে। শুধু ভুল আছে বলে থেমে গেলে হবে? লেখক অবশ্যই আপনার কথা মনযোগ দিয়ে শুনবে। বলে ফেলুন।
খুব ভাল! ধন্যবাদ! তবে ১৯ নম্বরটা নিয়ে বিভ্রান্ত আছি! তাইত জানি বাম অংশ যুক্তি এভং ডান অংশ কল্পনা! ভুল বলতে তো এটাই বলা হচ্ছে তাইনা?
২৩ নম্বর টা মজা লাগছে। টয়লেটের ফ্লাশে ‘করিওলিস ইফেক্ট’। হা হা
৪ নং ভুল,
জিহ্বায় ৪ ধরনের টেস্টবাড আছে,একেবারে সামনে মিস্টি,এর ঠিক পিছনে পাশে করে লবণাক্ত,এর পিছনে টক এবং একেবারে পিছনে তিক্ততার স্বাদ অনুভব করে জিহ্বা।
তার মানে জিহবার আগা দিয়ে টক কিছু ছোঁয়ালে আপনি বুঝবেন না? কী বলেন, ভাই?