ঠিকই শুনেছেন। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ সন্ধান পেয়েছে পৃথিবী থেকে সব চেয়ে দূরতম ছায়াপথের (এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া)। এটাকে GN-Z11 নাম দেওয়া হয়েছে। ছায়াপথটিকে যখন আমরা খুঁজে পাই তখন এটা ১৩.৪ বিলিওন আলোকবর্ষ দূরের অবস্থায় ছিলো। তার মানে দাঁড়ায় আমরা এখন এটার যে অবস্থাটা দেখছি তা হল বিগ ব্যাং এর ৪০০ মিলিওন বছর পরের অবস্থা (কারণ ছায়াপথ থেকে আলো হাবল টেলিস্কোপে এসে পোঁছাতে ১৩.৪ বিলিওন বছর সময় লেগে গেছে)। এর আগে আমরা পেয়েছিলাম ছায়াপথ-EGS8p7 কে, যা থেকে আলো আসতে লেগেছিলো ১৩.২ বিলিওন বছর। ইয়েল ইউনিভার্সিটির চিফ ইনভেস্টিগেটর Pascal Oesch বলেন যে “ছায়াপথ- GN-z11 কে আমরা এমন একটি সময়ের অবস্থায় দেখতে পেয়েছি যখন মহাবিশ্বের বয়স, এর বর্তমান বয়সের মাত্র ৩% এ ছিলো।”
ছায়াপথটিকে যে নক্ষত্রপুঞ্জে খুঁজে পাওয়া যায়, তার নাম হলো আরসা-মেজর [১]। হাবল টেলিস্কপের জন্য ছায়াপথটিকে হয়তো খুঁজে পাওয়া সহজ হতো না, যদি না এটিতে তখন অনেক বেশি পরিমাণে নক্ষত্র তৈরির কাজ চলতো। বেশি বেশি নক্ষত্র তৈরির কারণে এটি বেশ উজ্জ্বল অবস্থায় ধরা পড়ে। হাবল টেলিস্কপের ওয়াইড ফিল্ড ক্যামেরা-৩ এ ছায়াপথের “রেড শিফট” বা লালমুখিতা [২] ধরা পড়ে এবং যা পরিমাপ করা সম্ভব হয়। লালমুখিতার পরিমাণ যত বেশি হবে গ্যালাক্সির দূরত্বও তত বেশি হবে। এই ছায়াপথের লালমুখিতা হল ১১.১ এবং আগের খুঁজে পাওয়া ছায়াপথের লালমুখিতা ছিলো ৮.৬৩।
GN-z11 আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথ থেকে ২৫ গুণ ছোট। এবং আমাদের ছায়াপথে যে পরিমাণ নক্ষত্র আছে তার ভরের মাত্র ১% ভর আছে নতুন খুঁজে পাওয়া ছায়াপথটির। কিন্তু এটা আকাশগঙ্গা অপেক্ষা প্রায় ২০ গুণ দ্রুত নতুন নক্ষত্র তৈরি করেছে, যা মহাকাশ বিজ্ঞানী দের মতে বিগব্যাং এর পরপরই জন্ম নেওয়া কোনো ছায়াপথের জন্য খুবই আশ্চর্যের। বর্তমানে এটা প্রায় ৩২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে আছে বলে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্যাস্কেল ঈশ (Pascal Oesch) বলেছেন।
এই ছায়াপথটিকে খুঁজে বের করতে পারা হাবল স্পেস টেলিস্কোপের ক্ষমতার প্রায় শেষ সীমা অতিক্রান্ত হবার মতন বিষয়। তবে ২০১৮ তে যখন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) চালু করা হবে তখন এই মহাবিশ্বের ইতিহাস খুঁজে বের করতে আমরা হয়তো সময়ের আরো পেছনে যেতে পারবো।
[১] আরসা মেজর (ursa major) – আকাশের এরিয়া গুলোকে সহজে চিহ্নিত করে রাখার জন্য ম্যাপিং করা হয়। আরসা মেজর যা বড় ভাল্লুক নামেও পরিচিত আকাশের তেমনি একটি চিহ্নিত অংশ। এটি Claudius Ptolemy কর্তৃক ২য় শতকের দিকে শনাক্ত উত্তর স্বর্গীয় গোলার্ধে থাকা আরো ৪৮ টি ঋক্ষ মন্ডলের(নক্ষত্র মন্ডল) একটি।
[২] লালমুখিতা – পদার্থ বিদ্যার ভাষায় কোন বস্তু থেকে নিঃসরিত আলো বা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যখন বৃদ্ধি পায় তখন রেড শিফট বা লালমুখিতা ঘটে। আমরা জানি যে বেগুনী আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, নীলের তারচেয়ে একটু বেশি এবং লাল আলোর সব থেকে বেশি। তাই তরঙ্গ নির্গমনকারী কোনো বস্তু যদি আমাদের দিকে এগিয়ে আসে তাহলে পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে ডপলার ইফেক্টের কারণে ওই তরঙ্গের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং তা নীলচে দেখায়। আর আমাদের থেকে দূরে সরে যেতে থাকলে তরঙ্গের তীব্রতা কমতে থাকে এবং তাই তখন তা লালচে দেখায়। মহাবিশ্বের সব কিছুই পৃথিবী থেকে এ কারণে লালমুখী দেখা যায়। এবং যার লালমুখিতার পরিমাণ যত বেশি তা পৃথিবী থেকে তত বেশি দূরে।
তথ্যসুত্রঃ
Most Distant Galaxy We’ve Ever Observed
WOW!cool.omg!this is so deep