বাংলাদেশিজম নামক পেইজটি বিগ ব্যাঙ এর সময় বা এর আগে-পরে কী হয়েছিলো, তা নিয়ে একটা ভিডিও বানিয়েছে। অসংখ্য ভুল এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আরোপিত এজেন্ডায় ভরা এই ভিডিওটির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আমরা একটা ভিডিও বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশিজম পেইজ বা উপস্থাপক নাহিদ রেইনস এর বিরুদ্ধে আমাদের কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। আমরা বিজ্ঞানের যাত্রী। বিজ্ঞানের এই যাত্রায় দায়িত্ববান পথিক হিসেবে আমরা এই ভিডিওটার যৌক্তিক সমালোচনা করছি।
নাহিদ বললো,
বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মনে করতেন এই মহাবিশ্ব… মহাবিশ্বের কোন শেষ নেই। এটা ইনফিনিট… যাকে বলা হয়। কিন্তু আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি থিওরি বদলে দেয় সবকিছু, আর সাথে ছিল হাবল টেলিস্কোপের কিছু যুগান্তকারী আবিষ্কার।
“হাবল টেলিস্কোপের কিছু যুগান্তকারী আবিষ্কার … ” বলে আসলে কিছু নেই। “হাবল টেলিস্কোপ” একটা টেলিস্কোপের নাম, আর টেলিস্কোপের নিজের পক্ষে কোনওকিছু আবিষ্কার করা সম্ভব না। আর উনি যদি বলতে চান, এটা হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে কেউ আবিষ্কার করেছে, সেটাও ভুল। কারণ, হাবল’স ল এসেছিলো ১৯২৭ সালে। আর হাবল টেলিস্কোপ লঞ্চ করা হয়েছিলো ১৯৯০ সালের এপ্রিলের ২৪ তারিখ; অর্থাৎ টেলিস্কোপকে স্পেসে পাঠানোর ৬৩ বছর আগে।)
যেটা প্রমাণ করেছিল যে এই মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলো সবসময় একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
১৯২৭ সালে হাবল’স ল প্রথম ডিরাইভ করেন জর্জ লেমাইটর বা উচ্চারণভেদে জর্জ লেমিত্রে ( Georges Lemaître, জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি থেকে যেটা ১৯১৫ তে প্রকাশ করেছিলেন আইনস্টাইন)। দু বছর পর এডউইন হাবল এই ল’টি সঠিক বলে নিশ্চিত করেন এবং তার নামেই এটা প্রচার পায়।)
১৯৬৪ সালে জাস্ট বাই এক্সিডেন্ট আমাদের এই পৃথিবীর এটমস্ফিয়ারে অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলে বিজ্ঞানীরা… অ্যাঁ… আবিষ্কার করেন কিছু কসমিক রেডিয়েশন,
১৯৬৪ সালে যেটা আবিষ্কার করা হয়েছিল, সেটার আসল নাম কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন বা সি.এম.বি। সৌর জগতের বাইরে থেকে আসা সকল রেডিয়েশনই “কসমিক রেডিয়েশন”। সেটা নানা জায়গা থেকে আসতে পারে, অন্য গ্যালাক্সির বিভিন্ন সুপারনোভা থেকে আসা নানা জাতের রেডিয়েশনের সাধারণ নাম কসমিক রেডিয়েশন। আর সি.এম.বি. হলো বিগ ব্যাংয়ের সময় সৃষ্টি হওয়া এক বিশেষ ধরনের রেডিয়েশন।
সহজ একটা উদাহরণ দেই। ধরুন আমি বললাম, নাহিদ না জেনে কথা বলে। এখন প্রশ্ন উঠবে এই নাহিদ কোন নাহিদ? স্পষ্ট করে না বলায় অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু আমি যদি বলি, নাহিদ রেইনস নামে একজন বিগ ব্যাং নিয়ে না জেনে কথা বলে – তাহলে আর কোন কনফিউশন থাকে না। কারণ বিগ ব্যাং নিয়ে ভুলভাল ভিডিও বানানো নাহিদ রেইনস একজনই আছেন। তাই ঐ কিছু কসমিক রেডিয়েশন যে কোন কসমিক রেডিয়েশন, তা না বললে বেশ দ্বিধা তৈরি হয়।
যা আইনস্টাইনের বিগ ব্যাং থিওরিকে
কী শোনালেন, ভাই? আইনস্টাইনের বিগ ব্যাঙ থিওরি? বৃহৎ বিস্ফোরণের ধারণার সাথে জে লেমেটার বা উচ্চারণভেদে জর্জ লেমিত্রে, এডুইন হাবল, আর স্টিফেন হকিং এর নাম আনতে পারেন। সব ক্ষেত্রে আইনস্টাইনের নাম না আনলে হয় না?
অনেকাংশে সাপোর্ট করে, এস্ট্যাবলিশ করে ফেলে নতুন এক থিওরি। সেই থেকে এই মহাবিশ্বের অনেক ব্যাপার আমাদের কাছে অনেক বেশি… আরো বেশি ক্লিয়ার করে… আরো বেশি… অ্যাঁ ইউনিফর্মড হয়ে…অ্যাঁ … আমরা পাচ্ছিলাম অনেক নতুন ধরনের ডাটা। সেই সাথে ছিল হাবল টেলিস্কোপের আরো অনেক ধরনের আবিষ্কার।
এসব কিছুই সাপোর্ট করে আইনস্টাইনের বিগ ব্যাং থিওরিকে
আবারো, আইনস্টাইনের বিগ ব্যাঙ থিওরি? হতাশ!
নাসার বিজ্ঞানীদের রিসেন্ট অবজারভেশন বলে এই মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত বড়ো হচ্ছে, বড়ো থেকে বড়ো হচ্ছে, ইনফিনিট ওয়ে’তে বড়ো হচ্ছে।
জ্বি না, মোটেও ইনফিনিট আকারে বড় হচ্ছে না। কোনো বিষয় সম্পর্কে না জেনে, কোনো ধারণা না রেখে দর্শকের সাথে প্রতারণার মানে কী? মহাবিশ্বের প্রসারণের সুনির্দিষ্ট হার আছে, এবং সেটি হচ্ছে ৭৪ দশমিক তিন প্লাস/মাইনাস ২ দশমিক এক কিলোমিটার পার সেকেন্ড পার মেগাপারসেক। এই তথ্যটা গুগল করে যে কোনো সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বের করতে পারে। আপনি সায়েন্স শো বানাতে এসেছেন, আপনার মধ্যে দায়িত্ববোধের এই ধরনের অভাব খুবই হতাশার ব্যাপার। ন্যূনতম পরিশ্রম করে যদি কনটেন্ট বানানোর ইচ্ছে না থাকে, তাহলে না বানান। কিন্তু অন্তত মিথ্যা কোনো কনটেন্ট ছড়াবেন না।)
সো, এই বিগ ব্যাং থিওরি আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আসলে কী এই বিগ ব্যাং থিওরি? এটা কীভাবে কাজ করে? আর এই বিগ ব্যাং থিওরির আগে কী হয়েছিল?
এই প্রশ্নেই বুঝা যাচ্ছে আপনার স্থান-কাল বা স্পেস-টাইম কন্টিনিউয়াম নিয়ে কোন ধারণাই নাই। বিগ ব্যাং থিওরির মতে, বিগ ব্যাং ঘটার সাথে সাথে স্থান ও সময়ের প্রসারণ তথা সামনে এগিয়ে চলা শুরু হয়েছে। বিগ ব্যাংয়ের মুহূর্তে টাইম ছিল শূন্য। তারপর থেকে তা পজিটিভ দিকে বাড়ছে। বিগ ব্যাংয়ের আগে সময়ের কোন অস্তিত্বই নাই, তাহলে সেটাকে “আগে” বলা যায় কী? নেগেটিভ টাইম? এ যেন বারো হাত কাকুড়ের তেরো হাত বিচি!
কীভাবে কোনকিছু না থেকে অনেক বড়ো একটা বিস্ফোরণ ঘটেছিল? বিস্ফোরণ ঘটে সৃষ্টি করেছিল এই মহাবিশ্ব। জানতে হলে সাথেই থাকুন। বিগ ব্যাং থিওরি কী জানতে হলে প্রথমে চলুন আমরা চলে যাই বিগ ব্যাং হবার সময়… সেই মহাবিস্ফোরণ হবার সময়… ঠিক দ্যাট ভেরি মোমেন্ট… অর্থাৎ সেই ফিউ সেকেন্ডস… আমরা এখন সেই কয়েকটা সেকেন্ডের… প্রথম কয়েকটা সেকেন্ডের কথা বলবো… এই মহাবিশ্বের প্রথম কয়েকটা সেকেন্ড… কী হয়েছিল প্রথম সেকেন্ডে… ইন দ্যা ফার্স্ট সেকেন্ড… প্রথম সেকেন্ডে কী ছিল। অ্যাঁ… যেগুলিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় কোয়ার্ক অর্থাৎ যেগুলো ইলেকট্রন …অ্যাঁ নিউট্রন এগুলোর চাইতেও ছোট এধরনের কিছু… অ্যাঁ… পার্টিকেল ঘোরাফেরা করছিল… ইন অ্যান সাম কাইন্ড অফ ওপেন স্পেইস অর সামথিং উই হ্যাভ নো আইডিয়া হোয়াট ইজ দ্যাট
ইয়ে মানে, উনি এখানে “we” বলতে কাকে বোঝাচ্ছেন, কে জানে! ওনার হয়তো “নো আইডিয়া”, কিন্তু বিজ্ঞানীসমাজের তো আইডিয়া আছে- অবস্থাটা হচ্ছে “কোয়ার্ক-গ্লুওন-প্লাজমা”। কোয়ান্টাম ক্রোমোডায়নামিক্সে কোয়ার্ক গ্লুওন প্লাজমা হচ্ছে পদার্থের এমন একটি অবস্থা যেটা অতি উচ্চ তাপমাত্রা বা ঘনত্বে ( অথবা উভয়েই) বিরাজমান থাকে। বিস্তারিত জানতে তথ্যসূত্রে যেতে পারেন বা গুগল করতে পারেন।
বাট তারা ঘোরাফেরা করছিল। ইন এ ভেরি হাই টেম্পারেচার। খুব। অতি উচ্চ তাপমাত্রায়। এই কোয়ার্কগুলি ঘোরাফেরা করছিল। এর পরে এই কোয়ার্ক… বেশ কয়েকটি কোয়ার্ক মিলে ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার… গঠন করেছিল। ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার দুটো একসাথে মিলে সৃষ্টি করলো ইলেকট্রন এবং নিউট্রন।
এই পর্যায়ে এসে আপনার ভিডিওটা ইগনোরেন্স বা অজ্ঞানতার উৎকৃষ্ট উদাহরণে পরিণত হয়েছে। ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার এই দুইটা জিনিস এক হইলে যা হয় সেটা হচ্ছে প্রচন্ড বিষ্ফোরণে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়া বা এনাইহিলেশন। এইটা জানতে বড় পদার্থবিজ্ঞানী হওয়া লাগে নয়া, ক্লাস ফাইভ সিক্সে জাফর ইকবাল স্যারের সায়েন্স ফিকশন অথবা আরেকটু বড় হইলে ড্যান ব্রাউনের থ্রিলার এইঞ্জেলস এন্ড ডিমন্স পড়লেই চলে। গুগলে এন্টিম্যাটার সার্চ দিয়ে একেবারে প্রাথমিক তথ্যগুলো দেখলেও এইটা জানার কথা।
কোয়ার্ক হলো সেই মৌলিক কণা যা দিয়ে সকল পদার্থ তৈরি হয়। অনেকগুলো কোয়ার্ক মিলে যে যৌগিক কণা তৈরি হয় তাকে হ্যাড্রন বলে। প্রোটন আর নিউট্রন হলো তেমনই দুইটি সুস্থির হ্যাড্রন। আর ইলেকট্রন? সেটা তো কোন কোয়ার্কই নয়। কোয়ার্ক ছাড়াও আরেকধরনের মৌলিক কণা আছে, যেগুলোর স্পিন বা ঘূর্ণনের দিক থাকে। এর নাম লেপ্টন। ইলেকট্রন হলো এক ধরনের লেপ্টন।
ম্যাটার আর এন্টিম্যাটার মিলে ইলেকট্রন আর নিউট্রন সৃষ্টি হয়, এর চেয়ে মিথ্যা কথা আর হতে পারে না! বিগ ব্যাংয়ের পর, এক সেকেন্ডের এক ট্রিলিয়ন ভাগেরও কম সময় পর, ম্যাটার ও এন্টিম্যাটার সৃষ্টি হচ্ছিল ফোটন থেকে, এবং সাথে সাথেই মিলিত হয়ে আবার ফোটনে রূপ নিচ্ছিল। কোন এক অজানা কারণে এই সাম্যাবস্থা ভেঙে যায়। প্রতি দশ কোটি ম্যাটার-এন্টিম্যাটার জোড়ের পাশাপাশি একটি ম্যাটার জোড় তৈরি হয়। অর্থাৎ একটা ফোটন ভেঙে দুইটা ম্যাটার কণা তৈরি হতে শুরু করে।
এর পরবর্তী কয়েক সেকেন্ডে সৃষ্টি হলো প্রথমবারের মতো হাইড্রোজেন এটম।
জ্বি না। হাইড্রোজেন তৈরি হতে সময় লেগেছিল প্রায় তিন লক্ষ আশি হাজার বছর, আর হাইড্রোজেন একা তৈরি হয় নি, সাথে ছিল হিলিয়াম ও লিথিয়াম। প্রথমে ফোটন থেকে ম্যাটার-এন্টিম্যাটারের সৃষ্টি ও বিনাশ ঘটছিল। তারপর ধীরে ধীরে মহাবিশ্ব আরো ঠাণ্ডা হলে ফোটন থেকে ম্যাটার-এন্টিম্যাটার জোড়া তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ম্যাটারের মৌলিক কণা কোয়ার্ক জড়ো হয়ে নিউট্রন আর প্রোটন সৃষ্টি হয়। সেই নিউট্রন আর প্রোটন মিলিত হয়ে প্রথম হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস। তখনো ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়ারের কক্ষপথে বাঁধা না পড়ে একটা স্যুপ তৈরি করেছিল এসব নিউক্লিয়াসের চারপাশে। মহাবিশ্বের তাপমাত্রা যখন কয়েক হাজার কেলভিনে কমে এলো, তখনই নিউক্লিয়াসগুলো ইলেকট্রনের সেই স্যুপ থেকে নিজেদের চারপাশে ইলেকট্রন আটকে নিতে পারলো। এইভাবে তৈরি হয়েছিল হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও লিথিয়াম। মজার কথা জানেন? এই তিন মৌল সৃষ্টি হবার সময় মহাবিশ্বের যে অবস্থা ছিল, সেটার রেডিয়েশনই সেই সি.এম.বি.। কিন্তু জনাব নাহিদ তো কসমিক রেডিয়েশন কী সেটাই জানেন না, তাই এইগুলো তার পক্ষে জানা সম্ভব হয় নাই।
এবং এই হাইড্রোজেন এটম পরবর্তী কয়েক মিলিয়ন বছর পরে সৃষ্টি করলো আমাদের এই মহাবিশ্ব, নানা ধরনের গ্যালাক্সি, এবং স্টারস, গ্রহ, নক্ষত্র, অ্যাস্টেরয়েডস, হোয়াটেভার উই সি টুডে। দিস ইজ আওয়ার ওয়ার্ল্ড।
প্রতি লাইনেই অনেকগুলো ভুলভাল গোঁজামিল। প্রথমত, হাইড্রোজেন একা নয়, সাথে ছিল হিলিয়াম আর লিথিয়াম। দ্বিতীয়ত, মিলিয়ন বছর নয়, সময় লেগেছিল প্রায় এক বিলিয়ন বছর। আশা করি নাহিদ সাহেব মিলিয়ন আর বিলিয়নের পার্থক্য বুঝেন। তৃতীয়ত, সকল গ্যালাক্সি, গ্রহ, এস্টেরয়েড এগুলো তৈরির জন্য হাইড্রোজেনের চেয়ে ভারী মৌল প্রয়োজন। আর ভারী মৌল তৈরি হয় অত্যন্ত উচ্চ তাপে, ফিউশন হয়ে। যেমন, আমাদের সূর্য দুটো হাইড্রোজেনকে ফিউজ করে হিলিয়াম বানায়। সূর্যের চেয়েও কয়েক গুণ বড়ো নক্ষত্রের বুকে, আরো উচ্চ চাপ ও তাপে তৈরি হয়েছিলো আরেকটু ভারী কিছু মৌল – যেমন কার্বন, আয়রন, ইত্যাদি। আর সেগুলো যখন বিস্ফোরিত হয়েছিলো, তখন আরো ভারী মৌলগুলো তৈরি হয়েছিলো। ওগুলো সৃষ্টি না হলে গ্রহ ও অ্যাস্টেরয়েডগুলো তৈরিই হতো না। জনাব নাহিদ যেভাবে এক বাক্যে হাইড্রোজেন দিয়ে মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছরেই মহাবিশ্বের সবকিছু বানিয়ে ফেললেন, তাতে বলতেই হয়, “কীভাবে পারো, ম্যান?”)
সো, বিগ ব্যাং থিওরি নিয়ে তো অনেক কথাই বললাম। কিন্তু আসল কথাই বলা হলো না। ঠিক কী ঘটেছিল এই বিগ ব্যাংয়ের আগে। ঠিক… বিগ ব্যাংয়ের আগের সেকেন্ডে কী হয়েছিল?
উনি বিগ ব্যাং থিওরি নিয়ে শো করতে এসেছেন, কিন্তু বিগ ব্যাং বা মহাবিষ্ফোরণের আগে যে সময় বলে কোনও কিছুর অস্তিত্ব ছিল না- এই বেসিক তথ্যটা একবারের জন্যেও চেক করে দেখার প্রয়োজন বলে মনে করেননি। “বিগ ব্যাং এর সাথে সাথে time and space তৈরি হয়েছিলো। তাই, “বিগ ব্যাঙের আগের সেকেন্ড” বলতে কিছু নেই।
আমরা শুধু এতটুকু জানি যে বিগ ব্যাংয়ের কারণেই আমাদের এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এটাই আমাদের মহাবিশ্ব। এই মহাবিশ্বের কোন একটা কর্নারে, কোন একটা ক্ষুদ্র বিন্দুতে, অর্থাৎ আমাদের পৃথিবীতে আমরা বসবাস করি। এখানেই আমাদের সিভিলাইজেশন, এখানেই আমাদের মানব সভ্যতা, এখানেই আমরা বাঁচি এবং এখানেই আমরা মরি। এভাবেই চলছে, এভাবেই চলতে থাকবে।
এভাবে চিন্তা করলে আর অন্যান্য বাসযোগ্য গ্রহ খোঁজার দরকার কী? এভাবে চলছে, কিন্তু এভাবে চলবে না। আমরা একসময় একাধিক গ্রহে জায়গা করে নেবো – এই উদ্দেশ্যেই কাজ করতে হবে।
হয়তো আমরা কখনো জানবো না বিগ ব্যাংয়ের আগে কী হয়েছিল। কিন্তু আমার মতে, জানার প্রয়োজনও নেই আমার এই মুহূর্তে। পৃথিবী নিয়েই আমি অনেক হ্যাপি। এবং আশা করি আপনারাও হ্যাপি।
আচ্ছা ভাইয়া, ধরে নিলাম আপনি খু-উ-ব হ্যাপি এই পৃথিবী নিয়ে। তা আপনি থাকতেই পারেন- যে যা ভেবে সুখ পায়, ক্ষতি কি! তবে আপনার অবগতির জন্য জানাই, বিজ্ঞানীরা যদি আপনার মত হ্যাপি থাকতেন, তাহলে এ্যাস্ট্রোফিজিক্স এর জন্ম হত না, পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানুষের কোনও আইডিয়া হত না, নাসা এর প্রয়োজন হত না, বিজ্ঞান আর মানব সভ্যতা আটকে থাকত সেই আদিম যুগে, যেখানে মানুষ পৃথিবীকেই মহাবিশ্বের কেন্দ্র ভাবতো। বিজ্ঞানের একটা প্রধান গুণ হচ্ছে এর জানার আগ্রহ, প্রতিনিয়ত পুরাতন ধারণা ভেঙেচুরে নতুন জ্ঞান আহরণ। আপনি এবং আপনার দেখাদেখি বাকিরা সবাই যদি পৃথিবী নিয়ে হ্যাপি থাকে, তাহলে সময়ের চাকা থেকে যাবে, থমকে যাবে মানব সভ্যতা, আটকে থাকবে বিজ্ঞানের চাকা।
আপনি হ্যাপি থাকতে চান, থাকুন। কোনও আপত্তি নেই। তবে সায়েন্স শো এর নামে এসব তৃতীয় শ্রেণীর আবর্জনা বানিয়ে নতুন প্রজন্মের মগজে পচন ধরাবেন না, প্লিজ! তাদের জানার আগ্রহের প্রয়োজন নেই, এমন কথা বলবেন না।
একটা ভাল এডিটিং সফটওয়্যার আর সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক থাকলেই সায়েন্স শো করা যায়না- সায়েন্স শো করতে হলে সায়েন্স এর সর্বশেষ সঠিক তথ্যগুলো জানতে হয়, তার জন্যে মিনিমাম একটু পরিশ্রম করতে হয়।
আমরা কাউকে ভিডিও বানাতে নিরুৎসাহিত করছি না। বেশি বেশি সায়েন্স ভিডিও তৈরি হওয়া উচিৎ বাংলায়। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই সঠিক তথ্য দিয়ে। শুধু এটুকু জানাতে চাইছি, আমরাও দেখছি।
বিজ্ঞানের আলোয় দূর হোক সব ভ্রান্ত ধারণা!
তথ্যসূত্রসমূহঃ
আমরা যা যা বলেছি, তার সবগুলোর তথ্যসূত্র নিচে দেয়া হলো। উইকিপিডিয়া তো আছেই। তাছাড়া ক্রসচেক করা হয়েছে এই সূত্রগুলো থেকে-
1) Cosmo Lectures
2) Big bang timeline
3) into the universe with stephen hawking
4) Pair Production
5) Matter and Antimatter Asymmetry
6) Antimatter
7) Physics Aps
8) Stellar information
9) Abyss lectures
10) dark matter
11) A brief history of time by stephen hawking
12) the universe in a nutshell by stephen hawking
13) ‘দ্য গ্রান্ড ডিজাইন’ – স্টিফেন হকিং [অধ্যায় ৩] (অনুবাদ – তানভীরুল ইসলাম)
14) ‘দ্য গ্রান্ড ডিজাইন’ – স্টিফেন হকিং [অধ্যায় ৬] (অনুবাদ – তানভীরুল ইসলাম)
15) the particle at the end of the universe by sean carroll (page 43-46)
nahis rains is reported