মুক্তা, যাকে ইংরেজিতে Pearl বলা হয়, সবার কাছেই অতি আকর্ষণীয় ও মোহনীয় একটি জিনিস। বিশেষত মহিলাদের কাছে এতো এক পরম প্রিয় বস্তু। এই মুক্তা তৈরির প্রক্রিয়া সত্যিই বিস্ময়কর। আমরা সবাই জানি যে ঝিনুকে মুক্তা তৈরি হয়। হ্যাঁ, ঝিনুক যারা মলাস্কা (Mollusca) পর্বের অন্তর্গত একপ্রকারের প্রাণি ও দুটি খোলস থাকার কারণে তাদেরকে বাইভাল্ভ (Bivalve) শ্রেণির অধিভুক্ত বলে গণ্য করা হয়। মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের মধ্যে Pinctada গণের ঝিনুক উল্লেখযোগ্য যাদেরকে Pearl Oyster বলা হয়। তাছাড়া অন্যান্য কিছু মলাস্ক (Mollusc) থেকেও মুক্তা তৈরি হয়।
ঝিনুকের খোলসে যথাক্রমে Periostracum, Prismatic ও Nacreous নামের তিনটি প্রধান স্তর থাকে যার সবচেয়ে ভেতরের স্তরটির নাম Nacreous। এই Nacreous স্তরটিকে “Mother of Pearl” বলা হয় কারণ এখান থেকেই মুক্তা তৈরির উপাদান Nacre নিঃসৃত হয় যা ক্যালসিয়াম কার্বনেট ও কংক্রিওলিন নামের প্রোটিন দিয়ে তৈরি। ঝিনুকের দেহে ম্যান্টল টিস্যু (Mantle tissue) নামের একপ্রকারের বিশেষ টিস্যু থাকে। এই ম্যান্টল টিস্যুতে যখন কোন বাহ্যিক বস্তুকণা, ক্ষুদ্র প্রাণি বা অণুজীব প্রবেশ করে তখন এরা অনুপ্রবেশকারীকে পরজীবি হিসেবে ধরে নেয় এবং শারীরিক প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে বস্তুটিকে ঘিরে Pearl sac তৈরি করে। এই Pearl sac এ তারা Nacre নির্গত করে । এই আবরণটি ম্যান্টল টিস্যুতে প্রবেশকৃত কণাটিকে সম্পূর্ণ আবৃত করে ফেলে ধীরে ধীরে। এভাবেই প্রবেশকৃত কণাটিকে ঘিরে মুক্তা তৈরি হয়।
মুক্তার আকার অনুপ্রবেশকৃত কণাটির আকার অনুসারে নির্ধারিত হয়। কৃত্রিম ভাবে মুক্তা চাষের সময় সার্জারির মাধ্যমে ঝিনুকগুলোর ম্যান্টল টিস্যুতে অন্য ঝিনুকের কাঁটা ম্যন্টল টিস্যু বা বিভিন্ন আকারের বস্তুকণা প্রতিস্থাপন করে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চাষের আওতায় রেখে মুক্তা সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহ করার পর মুক্তাগুলোকে পলিশিং ও প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করা হয়।
অন্তর সরকার
ফিশারিজ ২য় বর্ষ,
“চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়”