কেমন গ্রহে প্রাণ থাকতে পারে?

01. Science

নতুন একটা গবেষণা থেকে বলা হচ্ছে, আমাদের ছায়াপথ অর্থাৎ আকাশগঙ্গাতেই থাকতে পারে ১০ কোটি প্রাণসমৃদ্ধ গ্রহ। আজ থেকে কত কত বছর আগে, কার্ল সেগান তার “কসমস” বই আর টিভি সিরিজের মধ্যে একটা চমৎকার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন – চিন্তা করলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে যায়! সম্প্রতি এ জাতীয় গবেষণাগুলো করা হচ্ছে আরো বর্ণনামূলকভাবে, আরো গাণিতিকভাবে। আসুন, আজ কিছু গবেষণার কথা জানি, কিছু মজার বিষয় শিখি।

Habitability Index

ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস, এল পাসো- এর শিক্ষক ডঃ লুইস আরউইন, তার কলিগদেরকে নিয়ে গ্রহগুলোর জন্য একটা ইনডেক্স তৈরি করেছেন। ইনডেক্সের মধ্যে ফ্যাক্টরগুলো হচ্ছে গ্রহের তাপমাত্রা, কক্ষপথ, বাহ্যিক ও রাসায়নিক গঠন, ইত্যাদি। ইনডেক্সের রেঞ্জ হচ্ছে শূন্য থেকে এক। এক মানে সেইরকম, শূন্য মানে “ম্যাহ”!

এই ইনডেক্স কোনো এলিয়েন অনেকদূর থেকে ফলো করলে পৃথিবী পাবে ০.৯৭, একের অনেক কাছাকাছি। ডঃ লুইস আরউইন কিন্তু পৃথিবীতে বসে একটা গ্রহকে একদম গোটা ১ দিয়ে ফেলেছেন, ওটার নাম Gliese 581c

Goldilock Zone

জীবনধারণের জন্য পানি লাগে, তাই গ্রহের অবস্থান হতে হবে এমন যাতে নক্ষত্রের বেশি কাছাকাছি না হয়, তাহলে পানি বাষ্প হয়ে যাবে। আবার যাতে বেশি দূরেও না হয়, নইলে পানি বরফ হয়ে যাবে। গ্রহকে থাকতে হবে একটা সুবিধাজনক “গোল্ডিলক জোন” এর মধ্যে। পৃথিবী, এমন একটি গ্রহ। এটা একটা ক্রাইটেরিয়া। এমন আরো কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।

২০১৪ এর আগস্টে, দ্যা এস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারসে একটা আর্টিক্যাল ছাপা হয়েছিলো। সেখানে ফার্স্ট অথর জ্যাকলিন ফ্যাহারটি বলেছেন, মাত্র ৭ আলোকবর্ষ দূরে একটা ব্রাউন ডোয়ার্ফ গ্রহ পাওয়া গেছে। গ্রহটার near-infrared image আর্টিক্যালে দেখানো হয়েছে। এই আর্টিক্যালের abstract এর শেষ লাইনে বলা হচ্ছে, আমাদের সৌরজগতের বাইরে জলীয়বাষ্পের মেঘযুক্ত গ্রহের সরাসরি প্রমাণের জন্য এটাই প্রথম ক্যান্ডিডেট। এর আগে বায়ুমণ্ডলে পানির উপস্থিতি পাওয়া গেছে, কিন্তু পানির মেঘ এই প্রথম। চিলির লা কাম্পানা অবজার্ভেটরীর সাড়ে ৬ মিটার মেগেল্যান টেলেস্কোপ দিয়ে প্রাপ্ট ডেটা থেকে এই আর্টিক্যাল লেখা হয়েছিলো।

২০০৯ সাল থেকেই নাসা’র কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ পৃথিবীর জমজ ভাই খুঁজে বেড়াচ্ছে সৌরজগতের বাইরে। ২৩ জন সায়েন্টিস এর এক টীম, এমনই এক গ্রহের আবিষ্কার নিয়ে একটা সায়েন্টিফিক আর্টিক্যাল পাবলিশ করেছিলেন ২০১৪ সালে।

গোল্ডিলক জোনের মধ্যে থাকলেই যে বসবাসযোগ্য হবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর এটা ঠিক পৃথিবীর জমজ ভাই না, চাচাতো ভাই বলতে পারেন। আছে বেশ কিছু মিল, কিন্তু একদম এক বাপ-মায়ের সন্তান না, এই আর কী!

গোল্ডিলক জোনের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া আরেকটা গ্রহ হচ্ছে কেপলার ১০-সি। বিজ্ঞানীরা এটাকে আদর করে ডাকছেন গডজিলা প্ল্যানেট। কারণ, এর ব্যস ২৯,০০০ কিলোমিটার, পৃথিবীর চেয়ে ২.৩ গুণ বেশি। এটা পৃথিবীর চেয়ে ১৭ গুণ ভারী। এটা যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে, সেটা বিগ ব্যাং এর মাত্র ৩ বিলিয়ন বছর পরেই তৈরি হয়েছিলো। অর্থাৎ, বিজ্ঞানীরা এখন অনেক পুরনো নক্ষত্রের সোলার সিস্টেমের মধ্যেও বাসযোগ্য গ্রহ বা প্রাণের সন্ধান চালাতে পারেন।

আমাদের সূর্যের বেশ কাছাকাছি আছে আরেকটা নক্ষত্র, আলফা সেন্টোরী বি। এবং তার দখলে আছে একটা বাসস্থান হিসেবে চরম একটা গ্রহ, এইরকম একটা সম্ভাবনার কথা বলছেন গবেষকরা। নিচের ছবিতে এদের রিলেটিভ সাইজ দেয়া আছে।

01. Science

Image Source – http://bit.ly/1hezNd0

পৃথিবীর মত দ্বীপ, অগভীর সাগর, মোটামুটি সমতল ঢাল আছে, এমন গ্রহকে বলে সুপারহ্যাবিটেবল প্ল্যানেট। আলফা-সেন্টোরি বি এর দখলে থাকা গ্রহটা এমন এক সুপারহ্যাবিটেবল প্ল্যানেট। এই নতুন গ্রহের এমন সবকিছুই থাকার কথা, যেখানে প্রাণধারণ সম্ভব। শুধু সমস্যা একটা, এটার অভিকর্ষ এক চতুর্থাংশ বেশি হবে। হলো না হয়, সমস্যা নেই……… আরো ডিটেইলস ভালোভাবে পাওয়া গেলে জটিল হতো! বিজ্ঞানীরা সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৭ সালে, নাসা TESS নামে একটা স্যাটেলাইট ছাড়ার প্ল্যান করছে যার কাজই হবে গ্রহ সন্ধান করা। এটা আমাদেরকে সৌরজগতের বাইরের এই এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর আকার, ভর, বায়ুমণ্ডল নিয়ে আরো ভালো তথ্য দিতে পারবে। ২০১৬ সালে, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ চালু করা হবে। নাসার মতে, এটা আমাদেরকে অন্য গ্রহের রঙ, ঋতু, আবহাওয়া, এমনকি উদ্ভিদের উপস্থিতির ব্যাপারেও অভাবনীয় তথ্য দিতে পারবে।

২০০৯ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত, কেপলার মিশনের মাধ্যমে আবিষ্কৃত যেসব গ্রহকে পৃথিবীর মাসতুতো ভাই বলা হচ্ছে, তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪,৬৯৬টিতে। এগুলোতে প্রাণ সত্যিই আছে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, “আমরা এখনো ওদের কাছ থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাইনি”……… দেখি কোনো দিন পাই কিনা।

Comments

ফরহাদ হোসেন মাসুম

ফরহাদ হোসেন মাসুম

বিজ্ঞান একটা অন্বেষণ, সত্যের। বিজ্ঞান এক ধরনের চর্চা, সততার। বিজ্ঞান একটা শপথ, না জেনেই কিছু না বলার। সেই অন্বেষণ, চর্চা, আর শপথ মনে রাখতে চাই সবসময়।

আপনার আরো পছন্দ হতে পারে...

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
জানান আমাকে যখন আসবে -
guest
1 Comment
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
azad
azad
9 বছর পূর্বে

পৃথিবীর তুলনায় ১/৪% বেশি অভিকর্ষ থাকা মানে ওখানকার প্রাণীগুলো( ধরে নেই, আছে) নিশ্চই আমাদের তুলনায় সবদিক থেকে ১/৪% খাটো হবে, তাই না?

1
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x