(বিজ্ঞানযাত্রা ফেসবুক গ্রুপে রাগিব হাসানের পোস্ট)
যারা অনেকদিন ধরে কম্পিউটার ব্যবহার করেন, তাদের হয়তো এই ব্যাপারটা চোখে পড়েছে। এক সময় নতুন মডেলের কম্পিউটার কেনার সময়ে প্রসেসরের গতিটা ছিলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি যখন বছর ১৮ আগে কম্পিউটার কিনি প্রথম, তখন তার প্রসেসর ছিলো পেন্টিয়াম ১- ১৬৬ মেগা হার্জ। প্রসেসরের গতি বাড়তে বাড়তে ২০০৪-৫ নাগাদ পৌছে যায় ৩ গিগা হার্জে।
কিন্তু এখন? গতিবৃদ্ধির হার অনুসারে এই গতিটা এতোদিনে তো ৫-৬ গিগা হার্জে পৌঁছে যেতে পারতো। কিন্তু তা তো যায়নি। কেন?
এর পেছনে কারণ অনেক। বর্তমানের প্রসেসরে আগের প্রসেসরের চাইতে অনেক বেশি ট্রানজিস্টর ও লজিক গেইট দেয়া হচ্ছে। সেটা করতে গিয়ে ট্রানজিস্টরের ঘনত্ব বা ডেনসিটি বাড়াতে হয়েছে, মানে এখন একই জায়গায় অনেক বেশি ট্রানজিস্টর দেয়া হচ্ছে। এইসবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো –
(১) বিদ্যুৎ খরচ – ডেস্কটপ কম্পিউটারের বিদ্যুৎ খরচ বাড়তে বাড়তে ১০০ ওয়াটের উপরে চলে গেছে। যত বেশি ট্রানজিস্টর, তত বেশি বিদ্যুৎ খরচ। আর গতি বাড়ালে বিদ্যুৎ খরচটাও বাড়ে। তাই ক্লক স্পিড আর বাড়ছে না।
(২) তাপ – ক্লক স্পিড বাড়া মানে কম্পিউটার আরো অনেক বেশি কাজ করছে, ফলে বিদ্যুৎ খরচ বাড়ার সাথে সাথে তাপ উৎপাদনের পরিমাণও বাড়ছে। হিট সিংক, কুলিং ফ্যান এসব দিয়েও পার পাওয়া কঠিন, তাই গতি বাড়ানোটা বন্ধ আছে।
(৩) RC product – বেশি ট্রানজিস্টর গাদাগাদি করে বসানোতে তাদের সংযোগকারী তার হতে হচ্ছে অনেক বেশি সুক্ষ্ণ। এবং এর ফলে সেই সংযোগের রোধ বা রেসিস্ট্যান্সও বাড়ছে। আবার খুব কাছাকাছি নানা যন্ত্রাংশ ও তার বসানোতে তাদের ক্যাপাসিট্যান্স বাড়ছে। এই দুইটি জিনিষ বাড়ার কারণে বাড়ছে RC প্রডাক্ট, যা প্রসেসরের মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রন প্রবাহ তথা বিদ্যুতের গতিকে ধীর করে দিচ্ছে। ফলতঃ প্রসেসরের গতি একটা নির্দিষ্ট সীমার উপরে বাড়ানো কঠিন।
(৪) RAM এর গতি – কেবল প্রসেসরের গতি লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে কোনো লাভ নাই, যদি না প্রসেসরের সাথে মেমরির যোগাযোগটি ধীর গতির হয়ে পড়ে থাকে। RAM এর সাথে প্রসেসরের যোগাযোগ হয় মেমরি বাস দিয়ে। তার গতি প্রসেসরের গতির চাইতে অনেক কম। সেজন্য প্রসেসরের গতি বাড়াতে থাকলেই কম্পিউটার দ্রুত চলবে সেরকম না, বরং অনেকটা সময় প্রসেসরকে অলস ভাবে পড়ে থাকতে হবে করার মতো কাজ না পেয়ে (যেহেতু RAM থেকে ডেটা আসতে সময় লাগবে)।
উপরের এই প্রধান কারণগুলোর জন্যই বহুদিন ধরে প্রসেসরের গতি বা ক্লক স্পিড বাড়ানোর ব্যাপারটা থেমে আছে। অবশ্য কম্পিউটারের দক্ষতা বাড়ছে, তা অবশ্য অন্যভাবে। বর্তমানে সেটা করা হচ্ছে প্রসেসরের ভিতরে একাধিক কোর (Core) ভরে দিয়ে। বর্তমানের অধিকাংশ প্রসেসরই তাই মাল্টিকোর প্রসেসর। কোর এর ব্যাপারটা নিয়ে সামনে আরেকদিন লিখবো।
ভাল বিশ্লেষণ। তবে একটা প্রশ্ন রইল, পারসোলান কম্পিউটার থেকে যদি আমরা একটু উপরে যাই অর্থাৎ সুপার কম্পিউটারের দিকে তাহলে ব্যাপারটা কি দাড়ায়? সেখানে কি একই বিষয়গুলো কাজ করছে?
ধন্যবাদ