গত দুই-তিন বছর যাবৎ আমাদের দেশে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নামের একটা খুবই প্রয়োজনীয় বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্তকরণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এখনকার ছেলেমেয়েদের এই বইয়ের সুবাদে অনেক কিছুই জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেমন ধরুন, আমি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক টপোলজি সম্পর্কে জানার সৌভাগ্য হয়েছে যখন আমি অনার্স সেকেণ্ড ইয়ারে পড়ি তখন। কিন্তু আমার ক্লাস এইটে পড়ুয়া স্টুডেন্ট এখনই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক টপোলজি সম্পর্কে বেশ ভাল আইডিয়া রাখে। আর এই টপোলজি টপিকটা সম্পর্কে সে জেনেছে তার আইসিটি বই থেকে। অবশ্য বর্তমানে কলেজ লেভেলের আইসিটি বইতে নেটওয়ার্ক টপোলজি নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা আছে।
আমার মাঝেমধ্যে হিংসা হয় বর্তমানের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি। আমি ওদেরকে ভাগ্যবান মনে করি কারণ ওরা এত ভালো একটা বিষয় কিছুটা পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। আমি কলেজে পড়ার সময় এইচটিএমএল, সি প্রোগ্রামিং, ডাটা ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না ,কিন্তু এখনকার অনেক ছাত্রছাত্রীই এগুলো সম্পর্কে বেশ জানে। যদি আমরা এই সাবজেক্টটাকে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে আমারা বিশ্বাস তারা ভবিষ্যতে আমাদের দেশের সম্পদ হয়ে দাঁড়াবে। আমি জানি সব জায়গাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টির পড়ানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে। যার কারণে সবাই হয়তো সমানভাবে এটার সুফল পাবে না।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হল প্রযুক্তি আর ভাল শিক্ষকের অপ্রতুলতা। ভালো শিক্ষকের অপ্রতুলতা দ্রুত দূর করা এখনই হয়ত সম্ভব না তবে স্মার্টফোন দিয়ে আমরা আমাদের ছাত্রদেরকে কম্পিউটারের অভাব কিছুটা দূর করতে পারি। আজকাল তো স্মার্টফোন বেশ সহজলভ্য। অনেক ছাত্রছাত্রীদের কাছেই স্মার্টফোন থাকেই । অন্তত এটা ব্যবহার করে তারা বেশ কিছু বিষয় ভালোভাবে রপ্ত করতে পারে।
ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে যে দুটো জরুরি বিষয় আছে তার একটা হলো এইচটিএমএল (ওয়েব ডিজাইনিং) এবং আরেকটা হলো কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। এই দুইটাই কিন্তু যে কেউ স্মার্টফোন ব্যবহার করে শিখতে পারবে। আমার এই লেখাটাতে আমি এই দুইটা কিভাবে স্মার্টফোনে সহজে করা যাবে সেটা নিয়েই আলোচনা করব। আর যেহেতু ব্যবহারিক পরীক্ষায় এইচটিএমএল, প্রোগ্রামিং ও ডাটা ম্যানেজমেন্টের উপর একটা প্রবলেম বা এক্সপেরিমেন্ট থাকবেই সেহেতু প্রাকটিস করার জন্যও এটা বেশ সহায়ক হবে।
এছাড়াও যারা এখন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা করছেন কিংবা প্রোগ্রামিং শিখছেন কিংবা ইচ্ছা আছে অথচ কম্পিউটারের অভাবে এখনো প্রোগ্রামিং শুরু করতে পারছেন না তাদেরও কাজে লাগতে পারে।
প্রথমেই এইচটিএমএলের ব্যাপারটায় আসি – এইচটিএমএল প্রাকটিস করার জন্য আমাদের তিনটা সফটওয়্যার লাগবে। এগুলো হলো –
১। ES file explorer (download link: http://www.appsapk.com/es-file-explorer/)
২। Office Suite pro version 6
৩। এন্ড্রয়েড ব্রাউজার
ইএস ফাইল এক্সপ্লোরারটা না থাকলেও চলবে, অরিজিনাল ফাইল ম্যানেজার দিয়েও কাজ করা যাবে। তবে এই সফটওয়্যারটা দারুণ। এটা দিয়ে বিভিন্ন কাজ করা যায়। জিপ ফাইল আনজিপ করা, কম্প্রেস করা, পিডিএফ ইডিটর বিভিন্ন ফিচার আছে এতে যা ভবিষ্যতে বিভিন্ন কাজে লাগানো যাবে। আর অফিস সুট প্রো (প্রোফেশনাল) সফটওয়্যার ছাড়াও কিংসফট অফিস বা স্মার্ট অফিস-২ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো হবে যদি মাইক্রোসফটের অফিস সফটওয়্যারটা ইনস্টল করে রাখা গেলে। এটা বেশ ভারী একটা সফটওয়্যার তবে খুব কাজের।
প্রথমে অফিস স্যুট সফটওয়্যারে ঢুকে একটা নিউ ডকুমেন্ট ফাইল সিলেক্ট করতে হবে।
এরপর এইচটিএমএল ল্যাঙ্গুয়েজে নিজের ট্যাগগুলো লেখা শুরু করুন
এরপর যেকোন ফরম্যাট যেমন ডকএক্স বা টিএক্সটি ফরম্যাটে যেকোন ফোল্ডারে সেভ করুন। এরপর ইএস ফাইল এক্সপ্লোরার ওপেন করে যে ফোল্ডারে ডকুমেন্টটি সেভ করা আছে সেখানে যান।
ফাইলটার উপর এক সেকেন্ড চেপে ধরে রাখলেই রিনেইম করার অপশন আসবে।
(.docx) বা যা এক্সটেনশন থাকুক সেটা কেটে html অথবা htm করুন।
সেভ করার পর ফাইলের আইকন ওয়েব সিম্বল দেখাবে।
ফাইলের উপর ক্লিক করলে ফাইলটা শো করার জন্য এপের লিস্ট দেখাবে। সেখান থেকে ব্রাউজার সিলেক্ট করতে হবে।
সিলেক্ট করলে ডিজাইন করা পেজটি শো করবে।
বেশ সোজাই। এছাড়াও আরো ইজিলি কাজ করা যায় HTML play নামের একটা দারুণ কার্যকরী এপ্লিকেশন দিয়ে। এপ্লিকেশনটি গুগল প্লেস্টোরে আছে।
এরপর সি প্রোগ্রামিংয়ের ব্যাপারটায় আসি। ইন্টারনেটে অনেকগুলো সি প্রোগ্রামিং করার জন্য সফটওয়্যার (কম্পাইলার) পাওয়া যায় তবে সবচেয়ে ভালো “C4driod” এপ্লিকেশনটি। এটি কেন ভালো তা একটু পরে বলছি। এই সফটওয়্যারটি একেবারেই অল্প স্টোরেজ খরচ করে। অন্য এপ্লিকেশনগুলোর চাইতে ব্যবহারেও অনেক সুবিধা। প্রথমে এপ্লিকেশনে ঢুকে নতুন একটা ফাইল খুলে সেভ করে, সোর্স কোড টাইপ করে কম্পাইল করতে হবে।
এই সফটওয়্যারটা দিয়ে যে কেউ সি প্রোগ্রামিং দিয়ে তৈরি এন্ড্রয়েড অ্যাপ বানাতে পারবে। যেমন কেউ যদি সি ল্যাংগুয়েজে একটা ক্যালকুলেটরের প্রোগ্রাম লিখে,তাহলে সে সেটা এই অ্যাপ্লিকেশনটা দিয়ে ওই প্রোগ্রামটাকে আলাদা একটা সফটওয়্যার হিসেবে তৈরি করতে পারবে।এজন্য তাকে অপশনে গিয়ে এক্সপোর্টে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় ফিল্ডগুলা পূরণ করলেই চলবে।
কিছু কিছু কলেজে সি প্লাস প্লাস প্রোগ্রামিংও প্র্যাকটিস করায়। এক্ষেত্রে প্লেস্টোরে যে সফটওয়্যারগুলো আছে ওগুলো অতটা কার্যকর না। কারণ সি প্লাস প্লাস প্রোগ্রামিং এ অতি গুরুত্বপূর্ণ iostream.h নামের হেডার ফাইলটা থাকে না, এই কারণে CIN,COUT সহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ লাইব্রেরী ফাংশন ব্যবহার করা যায় না।
এজন্য টার্বো সি প্লাস প্লাস কম্পাইলার ব্যবহার করা ভালো। (ডাউনলোডঃhttp://www.cyberfreewishes.com/uploads/6/4/0/6/6406650/turbo_c_for_android_techiesnet.zip)
ডাউনলোডেড ফাইলটা একটা zip or rar ফাইল।
এটাকে ইএস ফাইল এক্সপ্লোরার দিয়ে আনজিপ করলে এরকম একটা ফোল্ডার দেখা যাবে।
এই ফোল্ডারের ভেতরে ঢুকলেই একটা ফোল্ডার আর একটা এপ্লিকেশন পাবেন। এপ্লিকেশনটা ইন্সটল করতে হবে।
ইন্সটল করে ওপেন করার দরকার নেই। ইন্সটলের পর ব্যাক করে আগের অবস্থায় আসুন এবং TC ফোল্ডারের ভেতরে ঢুকুন।
এবার ভেতরের ফাইওগুলো এক্সট্র্যাক্ট করুন।
মনে রাখবেন অন্য কোন ফোল্ডারের ভেতর এক্সট্রাক্ট করবেন না ,এটাকে আলাদা একটা ফোল্ডার হিসাবেই মেমোরিতে সেভ করতে হবে। (ছবি দেখুন।)
Turbo c++ for android নামের একটা ফোল্ডার তৈরি হবে।এটার ভেতরে আরেকটা ফোল্ডার থাকবে TC নামে।এবার ওই ফোল্ডারটাকেও মূল মেমোরিতে একটা আলাদা ফোল্ডার হিসাবে মুভ অথবা কপি করুন। ডিকম্প্রেসিং হয়ে গেলে এবার ইন্সটল করা সফটওয়্যারটা ওপেন করুন।
এবং নিচের কমাণ্ডটা লিখুন
cd TC
এরপর ওকে ক্লিক করে নিচের কমাণ্ডটা দিন
cd bin
ওকে করে শেষ কমাণ্ডটা লিখুন এবং আবার ওকে দিন।
tc
এবার দেখবেন আপনার কম্পাইলার ওপেন হয়ে যাবে।
এটা ব্যবহার করা একটু কষ্ট, প্রতিবারই সফটওয়্যারটা দিয়ে কাজ করার সময় উপরের কমাণ্ডগুলি দিতে হয়। তবে কিছু শেখার জন্য এটুকু করাই যায়।
আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি, পরের প্রজন্ম আমার প্রজন্মের চেয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক এগিয়ে থাকবে। এদের শুধু পথটা দেখিয়ে দিতে হবে। আর আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে এদের এগিয়ে যাওয়াটার পথটা যাতে মসৃণ হয়। ভবিষ্যতে এরা আমাদের দেশকে আরো উপরে তুলে ধরবে, যদি আমরা তথ্য প্রযুক্তির আলো যথাযথভাবে সবার কাছে পৌঁছাতে পারি।
সাহায্যের জন্য আমাকে ইমেইল করতে পারেন – proyashzaman@gmail.com – এই ঠিকানায়।
এভাবে এইচটিএমএল ফাইল তৈরি ও ব্রাউজারে চলানো যাবে এটা সাধারন জ্ঞান কিন্তু আপনার পোস্টটা না পড়লে মাথায়ই আসতোনা 🙁 ধন্যবাদ। কাজটা সরাসরিও করা যায়। এজন্য HTML Editor নামে একটি এপ দিয়ে সরাসরি .html ওয়েব ডকুমেন্ট তৈরি করা যেতে পারে। এমন ফ্রি আরো কোনো ভালো এপের সন্ধান জানা থাকলে জানানোর অনুরোধ রইলো। তৈরিকৃত ডকুমেন্টগুলো html viewer দিয়ে দেখার চেয়ে ব্রাউজার দিয়ে (file:///sdcard/foldername/filename.html বা file:///storage/foldername/filename.htm) দেখা বেশি সুবিধাজনক। আমি সব ব্রাউজারে (অপেরা মিনি) এভাবে রান করাতে পারিনা। এ পদ্ধতিটাও বিস্তারিত বর্ণনা করার অনুরোধ রইলো। এন্ড্রয়েডে Qpython দিয়ে পাইথন ভাষার স্ক্রিপ্টও কম্পাইল করা যায়। অত্যন্ত সময় উপযোগী একটা লেখা লেখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।… আরো পড়ুন