সূচনা
পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় খুব সম্ভবত একাধিক তত্ত্বকে একটিমাত্র তত্ত্বের মাধ্যমে প্রকাশ করা। আমরা জানি, ম্যাক্সওয়েল ১৮৬৭ সালে তড়িৎক্ষেত্র এবং চৌম্বকক্ষেত্রকে একত্রে একটিমাত্র ক্ষেত্রতত্ত্ব তড়িৎচৌম্বক তত্ত্বে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই তড়িৎচৌম্বক তত্ত্বটিই পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছিলো। তড়িৎচৌম্বক তত্ত্বের একটি সিদ্ধান্ত সুপ্রতিষ্ঠিত ইথারের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছিলো; ফলাফল হিসেবে পেয়েছিলাম বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। এই তত্ত্বে আইনস্টাইন স্থান ও কালের যে ধারণা দেন, তার উপর ভিত্তি করে মিন্সকোভস্কি এই দুটো বিষয়কে একত্র করে স্থান-কাল সন্ততিতে প্রকাশ করেন। সমতুল্যতার নীতির মাধ্যমে আইনস্টাইন দেখালেন, মহাকর্ষ ও ত্বরণ অভিন্ন।
মহাকর্ষ তত্ত্ব সম্পন্ন করার পর আইনস্টাইন চিন্তা করতে লাগলেন কিভাবে এই তত্ত্বকে তড়িৎচৌম্বক তত্ত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা যায়। তাঁর সেই চেষ্টা সফলতার মুখ দেখেনি। আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর পদার্থবিদগণ নতুন আরো দুটি বলের সন্ধান পান। ফলে এখন মোট বলের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ালো চার-এ। বিজ্ঞানীরা আইনস্টাইনের অসমাপ্ত কাজকে সামনে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করলেন। তবে এবার কাজ আরও জটিল হয়ে উঠলো। কারণ এখন মিলন ঘটাতে হবে দুটি নয়, চারটি বলের মধ্যে। সালাম, ওয়াইনবার্গ, ও গ্ল্যাশো তড়িৎচৌম্বক বল ও দুর্বল কেন্দ্রীণ (কেন্দ্রীণ = নিউক্লীয়) বলকে একত্র করে দেখান যে, এগুলো আসলে একই বলের দুটো ভিন্ন রূপ। তাঁরা এই একীভূত বলের নাম দেন Electroweak Force. একীভূত এই বলের সাথে সবল কেন্দ্রীণ বলের একত্রীকরণও হয়তো সম্ভব। এই তিনটি বলকে যদি একত্র করা সম্ভব হয় তবেই আমরা পেয়ে যাবো আরাধ্য সেই তত্ত্ব- মহান একীভূত তত্ত্ব। এই মহান একীভূত তত্ত্ব হতে পারে সর্বাত্মক তত্ত্বের জন্য এক বড় বাঁক। এই সর্বাত্মক তত্ত্বকেই আমরা চিনি কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি হিসেবে।
গত শতাব্দীর সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী দুটি তত্ত্ব ছিলো আপেক্ষিকতার তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম তত্ত্ব। কোয়ান্টাম তত্ত্ব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতের তত্ত্ব আর আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বৃহৎ জগতের তত্ত্ব (বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্বটি অবশ্য ক্ষুদ্র জগতেও ব্যবহৃত হয়)। তারপরও বিজ্ঞানীরা তত্ত্ব দুটিকে একটিমাত্র তত্ত্বের মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টায় রত ছিলেন। সেই প্রচেষ্টারই একটি অংশ হিসেবে সফল তত্ত্ব কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডাইনামিক্স বা কোয়ান্টাম তড়িৎগতিবিদ্যার জন্ম। এতে সংযোগ ঘটানো হয়েছে তড়িৎচৌম্বক তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম তত্ত্বের মাঝে। আবার বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব যেহেতু তড়িৎচৌম্বক তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে তাই অনেকে বলেন, মিলনটি হয়েছে আসলে কোয়ান্টাম তত্ত্ব ও বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের মাঝে। কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডাইনামিক্স হচ্ছে কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্বের এক উজ্বল দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে একটা বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিলো যে, কোয়ান্টাম তত্ত্বকেও ক্ষেত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। যদি তাই হয় তবে মহাকর্ষকেও কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা সম্ভব কেননা আইনস্টাইনের মহাকর্ষ তত্ত্ব একটি ক্ষেত্রতত্ত্ব। এরই ধারাবাহিকতায় কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির গবেষণা আবার নতুন জীবন ফিরে পায়।
চারটি মৌলিক বল
কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি সম্পর্কিত মূল আলোচনায় যাবার আগে চার প্রকার বল সম্পর্কে সামান্য ধারণা নেয়া দরকার। প্রথমেই জানা যাক সবল কেন্দ্রীণ বল সম্পর্কে। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই বল কোন কিছুকে একটি জায়গায় ধরে রাখতে বেশ পারদর্শী। একটি পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে প্রোটন ও নিউট্রন। এর চারপাশে থাকে ইলেকট্রন। ইলেকট্রনের আধান ঋণাত্মক। নিউক্লিয়াসের আধান ধনাত্মক। প্রোটন ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট হলেও নিউট্রন আধানবিহীন অর্থাৎ আধান নিরপেক্ষ। কণা পদার্থবিদ্যায় প্রোটন এবং নিউট্রনই কিন্তু শেষ কথা নয়। এদেরও ক্ষুদ্রতম গাঠনিক উপাদান আছে যাদেরকে বলা হয় কোয়ার্ক। কোয়ার্কগুলো গ্লুওন (gluon) দ্বারা একত্রে আবদ্ধ থাকে। glue, যার অর্থ “দৃঢ়ভাবে সংঘবদ্ধ রাখা” থেকে gluon শব্দের উৎপত্তি। এই গ্লুওন হচ্ছে সবল কেন্দ্রীণ বলের বাহক। তাহলে আমরা বলতে পারি, সবল কেন্দ্রীণ বলের কাজ হচ্ছে, গ্লুওন দ্বারা কোয়ার্ক তথা প্রোটন ও নিউট্রনগুলোকে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে দৃঢ়ভাবে সংঘবদ্ধ করে রাখা। সবল কেন্দ্রীণ বল না থাকলে কী অবস্থা হতো তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না।
সবল কেন্দ্রীণ বলের বিপরীত বল হিসেবে আছে দুর্বল কেন্দ্রীণ বল। সুতরাং এর কাজও স্বাভাবিকভাবেই সবল কেন্দ্রীণ বলের বিপরীত হবে। অস্থায়ী অতি পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় বিকিরণের জন্য এই বল দায়ী। সূর্যে যে ফিউশন বিক্রিয়া ঘটে তাও এই দুর্বল বলের কারণে। দুর্বল বল খুবই স্বল্প দূরত্বের মাঝে ক্রিয়াশীল থাকে (এর ক্রিয়াশীলতার সীমা প্রায় <১০-১৭ মিটার)। দুর্বল বলের জন্য বলবাহী কণারূপে আছে W ও Z কণা। এই কণাগুলোর ভর আছে এবং তা প্রোটনের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ ভারী। ১৯৬৮ সালে সালাম ও ওয়াইনবার্গ কর্তৃক প্রদত্ত electroweak বলের মাধ্যমে W ও Z কণার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এর সন্ধান পাওয়া যায়।
উপরে আলোচিত বল দুটি তড়িৎচৌম্বক ও মহাকর্ষ বলের তুলনায় যথেষ্ট নতুন বলা চলে। অপরদিকে তড়িৎচৌম্বক বলের ধারণাটি ছিলো আঠারো শতকে পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় অগ্রগতি। এই বলের বাহক হচ্ছে ফোটন, যেগুলো আমাদের চোখে আলোকরশ্মি রূপে ধরা পড়ে। তড়িৎক্ষেত্র ও চৌম্বকক্ষেত্রের সম্মিলিত ক্রিয়ায় ফোটন নির্গত হয়।
সবশেষে আছে মহাকর্ষ বল। মহাকর্ষকে আমরা এখন স্থান-কালের বক্রতারূপেও দেখি। স্থান-কালের বক্রতারূপী মহাকর্ষ তত্ত্বটি একটি ক্ষেত্রতত্ত্ব হওয়ায় তড়িৎচৌম্বক তত্ত্বের ন্যায় এরও একটি বাহক কণা থাকা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন গ্র্যাভিটন।
কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির পথে প্রথম পদক্ষেপ
১৯৩০ সালের পর থেকে বেশ কিছু তাত্ত্বিক পদার্থবিদ উপরিউক্ত চার প্রকার বলকে সংঘবদ্ধ করার আশায় কাজ শুরু করেন। এদের মধ্যে স্বয়ং আইনস্টাইনও ছিলেন। আগেও একবার বলেছি, এই সংঘবদ্ধ তত্ত্ব তৈরিতে প্রধান বাধা ছিল মহাকর্ষ। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে কোয়ান্টাম তড়িৎ গতিবিদ্যার সফলতা মহাকর্ষকে কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাথে একই সুতায় বাঁধতে বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করে। ১৯২৯ সালে কোয়ান্টাম তড়িৎ গতিবিদ্যার উপর প্রকাশিত প্রথম গবেষণাপত্রে হাইজেনবার্গ ও পাউলী কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাথে মহাকর্ষকে একত্রীকরণ সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন খুব ভালোভাবেই টের পাচ্ছেন যে, বিষয়টা যতটা সহজ বলে ভাবা হয়েছিলো আসলে তা নয়। হাইজেনবার্গ ও পাউলী যে ভুলটি করেছিলেন তা হচ্ছে তাঁরা মহাকর্ষীয় তরঙ্গকে খুব দুর্বল বিবেচনা করেছিলেন। স্থির জ্যামিতিক কাঠামোতে এই দুর্বল তরঙ্গ খুব ক্ষুদ্র আলোড়ন সৃষ্টি করে। বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হলে কাঠামো স্থির থাকে না। বিষয়টা আরেকটু পরিষ্কার করা দরকার। স্নিগ্ধ সকালে শান্ত পুকুরে একটি ঢিল ছুঁড়লে পুকুরের পানিতে যে মৃদুমন্দ আলোড়ন সৃষ্টি হয় তাকে স্থির কাঠামোতে সৃষ্ট ঢেউ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আবার জলোচ্ছ্বাসের কারণে বা সুনামিতে সৃষ্ট ঢেউকে মোটেও স্থির কাঠামোতে সৃষ্ট তরঙ্গ বলে মনে হয় না। বরং মনে হয় যেন সমস্ত জলস্তরটি একত্রে আলোড়িত হচ্ছে। স্থির বা অস্থির কাঠামোটি এখানে আন্দোলনের পশ্চাদ্ভূমি হিসেবে কাজ করছে। স্থির কাঠামোতে সৃষ্ট তরঙ্গকে বলা যায় পশ্চাদ্ভূমি নির্ভর তরঙ্গ আর সমগ্র কাঠামোটি যদি অস্থির হয় তবে সেক্ষেত্রে সৃষ্ট তরঙ্গটি হবে পশ্চাদ্ভূমি অনির্ভর তরঙ্গ।
মহাবিশ্বে এমনও স্থান আছে যেখানকার মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ সাগরের ন্যায়। এসকল ক্ষেত্রে স্থানকে স্থির পশ্চাদ্পট কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা সম্ভব নয়। এছাড়াও ফ্রেম ড্র্যাগিং এর ঘটনাও স্থানের অস্থির কাঠামোকে নির্দেশ করে। পাউলী ও হাইজেনবার্গ তাঁদের গবেষণাপত্রে কাঠামোর এই অস্থিরতাকে একদমই আমলে নেননি। তাঁদের কল্পনায় ছিল পশ্চাদ্ভূমি নির্ভর একটি তত্ত্ব। কেননা তাঁদের প্রস্তাবিত কোয়ান্টাম তড়িৎ গতিবিদ্যাও ছিল পশ্চাদভূমি নির্ভর। আর দুর্বল মহাকর্ষীয় তরঙ্গে কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রয়োগ খুব জটিল কোনো বিষয় নয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি মহাকর্ষীয় তরঙ্গকে কোয়ান্টাম বলবিদ্যাগতভাবে (যেমন গ্র্যাভিটন কণারূপে) দেখা সম্ভব (যেমনটা তড়িৎচৌম্বক তত্ত্বের ক্ষেত্রে ফোটন)।
পরবর্তীতে তাঁরা আরও একটি বড় সমস্যার সম্মুখীন হন কেননা মহাকর্ষীয় তরঙ্গের পারস্পরিক ক্রিয়া আছে। এমনকি শক্তি আছে এমন যে কোনো কিছুর সাথে এরা ক্রিয়াশীল থাকতে পারে এবং এরা নিজেরাও শক্তি বহন করে। তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গে এ ধরনের কোনো সমস্যা নেই। ফোটন যদিও তড়িৎ ও চৌম্বক আধানের সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া করতে পারে তথাপি তারা নিজেরা কখনই আধানপ্রাপ্ত হয় না। এ কারণে ফোটন কণা একে অপরের ভেতর দিয়ে অনায়াসে চলে যেতে পারে। যেহেতু মহাকর্ষীয় তরঙ্গ একে অপরের সাথে পরস্পর ক্রিয়াশীল থাকে তাই তাদের গতিকে স্থির পশ্চাদ্ভূমিতে ঘটছে বলে দাবি করাটা অমূলক। বরং তারা যখন অতিবাহিত হয় তখন পশ্চাদ্ভূমিকেও আন্দোলিত করে। সুতরাং কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির অবশ্যই পশ্চাদ্ভূমি অনির্ভর নীতি গ্রহণ করতে হবে।
এই বিষয়টির উপর প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রুশ পদার্থবিদ পেত্রোভিচ ব্রনস্টেইন, ১৯৩৬ সালে। গবেষণাপত্রটি লেখার এক বছর পরেই তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফায়ারিং স্কোয়াডে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুর পর প্রতিভাবান এই বিজ্ঞানীর কাজগুলো একরকম হারিয়ে যায় বলা চলে। এরপর আসে কোয়ান্টাম তড়িৎ গতিবিদ্যার সাফল্য। এই সফলতা বিজ্ঞানীদের মনে আবারও আশার সঞ্চার করে। এবার পদার্থবিদরা দুটো দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। কেউ অনুসরণ করলেন ব্রনস্টেইন এর পশ্চাদ্ভূমি অনির্ভর পথ, আবার কেউ অনুসরণ করলেন পাউলী, হাইজেনবার্গের পশ্চাদ্ভূমি নির্ভর পথ। যারা প্রথম পথটি অনুসরণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন পল ডিরাক, পিটার বার্গম্যান এর মতো বিজ্ঞানী। কিন্তু তাঁদের সফলতা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। আশির দশকের পূর্ব পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম তড়িৎ গতিবিদ্যাকে সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বে প্রয়োগ করার চেষ্টা করতে লাগলেন। পশ্চাদ্ভূমি নির্ভর কোয়ান্টাম তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য কী হতে পারে তা কোয়ান্টাম তড়িৎ গতিবিদ্যার মাধ্যমে মোটামুটি ধারণা পাওয়া গিয়েছিলো। কিন্তু পশ্চাদ্ভূমি অনির্ভর কোয়ান্টাম তত্ত্বের স্বরূপ কী হতে পারে সেটা জানার কোনো উপায় ছিল না।
পাউলী ও হাইজেনবার্গের গ্র্যাভিটনের ধারণায় প্রথম আক্রমণ করেন রিচার্ড ফাইনম্যান। কোয়ান্টাম তড়িৎগতিবিদ্যার গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান থাকায় তিনি নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। ষাটের দশকের প্রথমদিকে তিনি কণা পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা থেকে সরে এসে মহাকর্ষকে কোয়ান্টাম তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রকাশ করার চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। কোয়ান্টাম তড়িৎগতিবিদ্যার আবিষ্কর্তা হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই তিনি তড়িৎগতিবিদ্যার উপর ভিত্তি করেই মহাকর্ষকে বোঝার চেষ্টা করেন। কিন্তু এবার তিনিও ব্যর্থ হলেন। ১৯৬২ সালে স্ত্রীকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি স্পষ্টভাবে এই বিষয়ে তাঁর বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির একটি সম্মেলন থেকে ফিরে তিনি তাঁর স্ত্রীকে লিখলেন-
“এইসব আলোচনা থেকে আমি কিছুই পাচ্ছি না, কিছুই শেখা হচ্ছে না। নেই কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা; পদার্থবিজ্ঞানের সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় একটি ক্ষেত্র এটা। ফলে খুবই অল্প সংখ্যক মেধাবী কিছু বিজ্ঞানী এটা নিয়ে কাজ করছে। ফলাফলস্বরূপ মরীচিকার পেছনে দৌড়ানোর মতো ব্যাপার ঘটছে………আর আমার রক্তচাপের জন্য সেটা মোটেও ভালো নয়। এর পর থেকে আমি যেন আর গ্র্যাভিটির কোনো অধিবেশনে না আসি সেটা আমাকে মনে করিয়ে দিও।”
(দ্বিতীয় অংশে সমাপ্ত)