সবাই প্রস্তুত? এক…দুই…তিন!
এটা হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালির Racetrack Playa. এটা একটা লেকের শুষ্ক পৃষ্ঠতল। অনেক অনেক বছর ধরেই এই জায়গাটা বৈজ্ঞানিক বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলো। কেন? অনেক অনেক প্রস্তরখণ্ড, যার কোনো কোনোটার ওজন ৫০০ কেজির কাছাকাছি, এখানে ঘুরে বেড়াতো, কোনো মানুষ বা অন্য প্রাণীর সাহায্য ছাড়াই। আর ঘুরে বেড়ানোর দূরত্বটাও কম না। একটা তো প্রায় ১ কিলোমিটার (৮৮০ মিটার) ভ্রমণ করে ফেলেছে।
কেউ কেউ প্রস্তাব করেছিলেন, জোর হাওয়া আর ভূ-পৃষ্ঠে বরফ জমার ফলে এমনটা হয়েছে। বলা হচ্ছিলো, নিচে বরফ জমা হয়, এবং হাওয়া এসে এটাকে ঠ্যালা দেয়, তাই এটা জায়গা পরিবর্তন করে। কিন্তু এটা বাতিল হয়ে যায়, প্রস্তরখণ্ডের দিক পরিবর্তন এবং নড়াচড়ার গতি ব্যাখ্যা করতে পারেনি বলে। দেখা গিয়েছিলো যে, একই সাথে যাত্রা শুরু করার পরেও, দুইজন দুইদিকে চলে গেছে। ক্যামনে কী?
আরেকটা হাইপোথিসিসে বলে, তড়িৎ-চৌম্বকক্ষেত্রের কথা। বাতাসের ধনাত্মক চার্জ আর মাটির সাথে লেগে থাকার ফলে ডলোমাইটের ঋণাত্মক চার্জ একে অপরকে আকর্ষণ করার কথা, যাতে মাটির সাথে পাথরের ঘর্ষণ কমে যায়, এবং পাথর কিছুটা মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারে। এই হাইপোথিসিসও পালে হাওয়া পায়নি। নাসার টীম ওখানে কোনো তড়িৎ-চৌম্বক বা র্যাডিয়েশনের তারতম্য পায়নি।
২৭শে আগস্ট, ২০১৪ সালে একটা দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত আর্টিক্যাল পাবলিশ হলো। যা আগে কেউ কখনো দেখেনি, সেটাই প্রত্যক্ষ এবং লিপিবদ্ধ করলো Scripps Institute of Oceanography এর একটা টীম। Time-Lapse Camera এবং জিপিএস মনিটরিং ব্যবহার করে, গত শীতে এই টীম বের করেছেন, আসলেই কেন এই পাথরগুলো স্থান পরিবর্তন করে।
দেখা গেছে, আসলে এই পাথরগুলোকে ধাক্কা দেয় বরফের স্তর। গত বছর, এই লেকে প্রায় ৫ সেন্টিমিটারের মত বৃষ্টি আর তুষার পড়েছে। এটুকু পুরো লেক জুড়ে একটা পাতলা বরফের স্তর তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। রাতের বেলা, যখন তাপমাত্রা শূন্যের নিচে, তখন পানি জমে যায়। দিনের বেলা, যখন রোদ ওঠে, বরফ ভেঙ্গে কিছুটা গলে বিশাল ও পাতলা স্তরে পরিণত হয়। এই স্তরের পুরুত্ব মাত্র দুয়েক মিলিমিটার, যেটাকে বাতাস ধাক্কা দিতে পারে। যখন এই স্তর ভেঙ্গে যায়, সেটা থেকে যে ফাটলের শব্দ আসে, সেটাও রেকর্ড করা হয়েছে।
মোটামুটি গতির হাওয়া এই বরফের স্তরকে পাথরের বিপরীতে ধাক্কা দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাথরের ওপর বরফের কয়েক স্তর জমা করে ফেলে, যতক্ষণ না যথেষ্ট বল প্রয়োগ করার মত ক্ষেত্রে তৈরি হয়, এবং এদেরকে নাড়ানো যায়। মাঝে মাঝে এই বরফের স্তর পাথরের ওপরেই ভেঙ্গে যায়, যেখান থেকে ব্যাখ্যা করা যায়, কেন একেক পাথর একেক দিকে যায়, অথবা কেন কেউ নড়ে, আর কেউ চুপটি মেরে বসে থাকে।
রহস্য সমাধান হলো। সামান্য কিছু পানি থেকে তৈরি প্রশস্ত, পাতলা বরফের স্তর ভেঙ্গে যায় সকালের সূর্যে এবং সরে যায় বাতাসে। সাথে সরে যায় পাথরও।
References:
Translated and edited from – Earth story – Post 1 and Earth story – post 2
ভিডিও দেখতে পারেন, আর্থ স্টোরির ওয়েবসাইটে
Original paper – Plosone
এইটা নিয়ে অনেক গাঁজাখুরি গল্প চালু ছিলো,
এবার তার অবসান হল।