এন্টার্কটিকার জনসংখ্যা কতজন? উত্তরটা জানার আগে একটু আন্দাজ করুন। কিছু তথ্য জেনে নিন আগে – এর আকার যুক্তরাষ্ট্রের দেড়গুণ, অস্ট্রেলিয়ার ১.৮ গুণ। আন্দাজের সুবিধা হলো কিছু? মনে হয় না, কারণ সঠিক উত্তর হচ্ছে ৪০০০, মাত্র চার হাজার। এরা আবার সবাই গবেষক, ৭৫টা রিসার্চ স্টেশনে গবেষণা করছেন।
এই মহাদেশে একটা ভাসমান বরফের ঘনক আছে, যার আকার স্পেনের চেয়েও বড়, প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার। বললাম ভাসমান, কিন্তু টেকনিক্যাল সত্যিটা হচ্ছে, এটা আটকে আছে এন্টার্কটিক বরফের স্তরের সাথে। মানুষের জীবদ্দশায় এটা হয়তো ভাসে না, কিন্তু পৃথিবীর বয়সের কথা চিন্তা করলে এই জিনিস মোটেও স্থির কিছু নয়। এটার নাম Ross Ice Shelf.
একটা ড্রিলিং প্রজেক্ট থেকে উদঘাটিত হয়েছিলো যে প্রায় ৪০ লক্ষ বছর আগে পুরোপুরি আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। ঐ সময়টাতে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ছিলো ৪০০ পিপিএম (বাতাসের দশ লক্ষ অণুতে ৪০০ অণু), আর পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিলো ৩ ডিগ্রী বেশি। পশ্চিম এন্টার্কটিকের প্রায় সকল বরফই গলে গিয়েছিলো। আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়েছিলো প্রায় ৭ মিটারের মত।
২০১৩ এর ১০ই মে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে আবারো ৪০০ পিপিএম হয়েছে, ঠিক প্রাচীন যুগের মত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আইস শেলফ আবারো ধসে পড়তে পারে, ১০০০ বছরের মধ্যেই হয়তো!
শুনে মনে হতে পারে, “ওহ, ১০০০ বছর অনেক সময়! এর মধ্যে আমরা নিজেদের গতিপথ পাল্টে ফেলবো, পরিবেশ ঠিক হয়ে যাবে!” কিন্তু গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, অবস্থা আমাদের ধারণার চেয়েও ভয়াবহ। দুটো ফ্যাক্টর আগে যোগ করা হয়নি, নতুন মডেলে যোগ করে দেখা গেছে, আগামী কয়েক (৫) দশকের মধ্যেই ঘটে যেতে পারে ভয়ানক সেই ধস।
সেই দুটো ফ্যাক্টরের একটা হচ্ছে, খাড়া বা উল্লম্ব বরফের চাঁই হঠাৎ ধসে যেতে পারে, সাধারণ ice-flow মডেলের মধ্যে সেটা বিবেচনা করা হয়নি। আর অন্যটা হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে গলে যাওয়া পানি যখন সরু ফাটলের ভেতর দিয়ে গড়িয়ে প্রবেশ করছে, তখন আবার জমাট বাঁধছে, বরফে পরিণত হচ্ছে, এবং আয়তনে বৃদ্ধি পাচ্ছে (ক্লাস ফাইভের বিজ্ঞান)… এটা ফাটলের অবস্থা আরো করুণ করে দিচ্ছে!
যাই হোক, এটা মাথায় রাখা দরকার যে, Ross আইস শেলফ গলে গেলে অবশ্য সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে না, কারণ সে তো নিজেই ভাসমান। কিন্তু এটার গুরুত্ব অন্যখানে। সেটা নিয়ে না হয় আরেকদিন পোস্ট দেবো।
Reference:
Image Credit: Marcus Arnold
further reading: http://www.andrill.org/static/index.html