কসমস (১৯৮০) সকল এপিসোডের বাংলা সাবটাইটেল.
প্রাচীনকাল থেকে সংখ্যার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বেশ চোখে পড়ার মতো। লাকি সেভেন, আনলাকি থার্টিন এর ধারণা হয়তো সেখান থেকেই। কার্ল সেগানের অপূর্ব সৃষ্টি “কসমস” তের খণ্ডের এক উপাখ্যান! আনলাকি থার্টিন এর ধারণা যে ডাহা মিথ্যা তা নিশ্চয় বুঝে গেছেন তারা, যারা একটিবারের জন্য হলেও “কসমস” মনযোগ দিয়ে দেখে ফেলেছেন। এই তেরটা পর্ব দেখার পর তেরকে সবচেয়ে লাকি মনে হতে পারে আপনার! হা হা!! কসমস নামের এই অতুলনীয় সিরিজটি এবার নিয়ে ১৩তম বার দেখা হলো। প্রতিবারেই নতুনত্ব চোখে পড়ে! শেষবার দেখতে দেখতে ভাবলাম পর্বগুলোকে নিয়ে ১৩ পর্বের সিরিজ লিখে ফেলি! হাতে ১৫ দিনের একটা লম্বা ছুটি। এরচেয়ে সুন্দরভাবে আর কোনোভাবেই কাটানো সম্ভব না। তাই পরান পাখি ল্যাপটপটা নিয়ে বসে গেলাম এই সুন্দর উপাখ্যান তুলে ধরার জন্য। যারা ইতোমধ্যে দেখে ফেলেছেন তারা খুব বেশি কিছু পাবেন না এখান থেকে। তবে যারা দেখেননি তারা আঁটঘাঁট বেঁধে দেখতে বসবেন বলে আমার বিশ্বাস! যাই হোক, কথা না বাড়িয়ে শুরু করি প্রথম ঘণ্টার গল্প দিয়ে…
১ম ঘণ্টা
মহাজাগতিক সমুদ্রের সৈকত
১ম ঘণ্টার শুরুতে টিভি সিরিজটির ব্যাপারে পরিচয় করিয়ে দেন কার্ল সেগানের স্ত্রী “অ্যান ড্রুইয়ান”। টিভি সিরিজটি লেখা হয়েছিলো ১৯৭০ দশকের শেষের দিকে কার্ল সেগান, অ্যান ড্রুইয়ান, ও স্টিভেন সোটার এর দ্বারা। সেই সময়টাতে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পুরো পৃথিবী কব্জা করে রেখেছিলো পৃথিবীর বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী ও আনবিক অস্ত্রের দখল নিয়ে। ৫০ হাজারের অধিক পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছিলো তারা। কসমস প্রচারের সময় কোনো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ছিলো না। সেই প্রচারের বহু বছর পার হবার পরেও সিরিজটির তথ্যে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। কার্ল সেগানের অনুমানগুলো এখনো তরুণ। “ব্রহ্মাণ্ডের সাথে আমাদের একাত্মতা” এই বাণী প্রচারের জন্যই টিভি সিরিজটির যাত্রা।
গল্পের শুরুটা একটা সমুদ্রের তীর থেকে। গল্প কথক “কার্ল সেগান”। অন্যসব গল্পের মতো শুরু না হলেও আমার দেখা সবচেয়ে সেরা শুরু ছিলো এই গল্পের শুরুটা। “কসমস হলো- যা ছিলো, যা আছে, আর যা থাকবে।“ ঠিক এই কথা দিয়েই শুরু হয়েছে গল্পটা। আমাদের প্রজাতি যে তরুণ, কৌতুহলী, আর সাহসী সেটা সেগান নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিলেন। সেগানের মতে, “আমাদের ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ধারিত হবে কসমসকে আমরা কতটা বুঝি তার উপরে। যে কসমসে আমরা ভেসে আছি সকালের আকাশে ধূলোর একটা কণার মত করে।” এই অসাধারণ গল্পের ধাপে ধাপে আসবে ছায়াপথ, নক্ষত্র, গ্রহ, প্রাণ ও সচেতনতার আগমন, বিবর্তন, এবং বিলুপ্তি। বরফের গ্রহ হোক, আর হীরের নক্ষত্র হোক, কিছুই বাদ যাবে না এই গল্পে। এই গল্পটা ঠিক গল্প নয়। এটা একটা যাত্রা। যা আমাদেরকে ভাবাবে নতুন ভাবে। শেখাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু। প্রেম শেখাবে। কীভাবে এই মহাবিশ্বকে ভালবাসতে হয় সেটা শেখাবে। এই ভ্রমণের প্রতি পদে পদে আমরা যুক্তি দিয়ে ভাববো। আমরা সত্যের সন্ধান করবো, সেটা আমাদের যেদিকেই নিক না কেন! আর এই সত্যের সন্ধানে কল্পনা ও সংশয় দুটোরই ডাক পড়বে। আমরা অনুমান করবো, কিন্তু বাস্তবতাকে না মিলিয়ে ফেলে। মহাজগতের এই বিশাল সমুদ্রে পৃথিবী নামক এক সৈকতে দাঁড়িয়ে আমাদের যাত্রা শুরু করছি। আমরা আমাদের অস্তিত্ব বুঝতে চাই, আর আমরা তা পারবো। কারণ, আমরাই কসমস! আমরা নক্ষত্রের টুকরো দিয়েই তৈরী। যাত্রাটির গন্তব্য পৃথিবী। যাত্রা শুরু হচ্ছে মহাবিশ্বের কোনো এক অংশ থেকে। সেগানের সাথে এই যাত্রার কাহিনী বলা শুরু করা যাক-
যাত্রার শুরুতেই বিলিয়ন বিলিয়ন আলোক বিন্দু আমাদের চোখে ধরা দিতে লাগলো। প্রতিটি বিন্দুতে শত শত বিলিয়ন নক্ষত্রের বাস। কার্ল সেগান সেগুলোকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন “ছায়াপথ” নামে। সকল গতির বাঁধা পেরিয়ে কল্পনার জাহাজে ভেসে আমরা এসে পৌঁছালাম আমাদের জানা মহাবিশ্বের মাঝামাঝি কোনো স্থানে। কিন্তু এখান থেকে আমার বাড়ি ‘পৃথিবী’র অস্তিত্বও দেখতে পেলাম না! সেগান জানালো, “এখান থেকে আমরা আমাদের ছায়াপথও দেখি না। সূর্য বা পৃথিবী তো দূরের থাক!” পৃথিবী থেকে ৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে দাঁড়িয়ে আমরা আবিষ্কার করলাম, যেদিকেই যাই না কেন, প্রকৃতির নিয়ম সবখানেই একরকম। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র কাজ করে কসমসের সবখানে। ছায়াপথের গুচ্ছের মাঝে মাঝে মাঝে কিছু ডিম্বাকার ছায়াপথ থাকে যা ট্রিলিয়ন নক্ষত্র দিয়ে তৈরী। এই ছায়াপথগুলো প্রতিবেশিদের গ্রাস করতে থাকে। বিশাল এই ব্যাপারকে নক্ষত্রবিদরা ‘কোয়েইজার’ নামে ডাকেন। যাত্রাপথে হারকিউলিস নামে এক ছায়াপথের গুচ্ছের সাথে পরিচিত হলাম। সেগান জানালেন, “এখানে প্রতিটা ছায়াপথের দূরত্ব প্রায় ৩ লক্ষ আলোকবর্ষের কাছাকাছি!” ছায়াপথের জন্ম, মৃত্যু আছে ঠিক মানুষের মতই! এরা জন্ম গ্রহণ করে, কৈশোর পার করে, যৌবন পার করে! বিশাল শক্তিধর এই ছায়াপথের রাজ্যে অনেক অনেক বিশ্ব পুরে ছাই হয়ে যায়। হয়তো অনেক অনেক সভ্যতা এভাবেই ধ্বংস হয়ে গেছে কোনো না কোনো ছায়াপথের সংস্পর্শে এসে। একটা চোখ ধাঁধানো আলোক বিন্দু দেখে সেগান বলে উঠলেন, “এটা ‘লোকাল গ্রুপ’। এর আয়তন ৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। এতে ২০ টির বেশি ছায়াপথ আছে”।
পৃথিবী থেকে ২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির অবস্থান। রূপে গুণে সেরা এই ছায়াপথের আবার উপছায়াপথও আছে! ২৫ কোটি বছরে একবার ঘোরে এমন বিশাল ছায়াপথও চোখে পড়লো এই পথেই! বিস্ময়ের পর বিস্ময় যখন একের পর এক ধরা দিচ্ছে, তখন সেগান বলে উঠলেন, “এই যে আমাদের ছায়াপথ!” ক্যারিনা-সিগ্নাস নামক এক প্রান্তে মানবজাতির বাস। এর ‘লোকাল আর্ম’ নামে একটা আদুরে ডাকও আছে। কেউ কেউ একে ‘অরিয়ন আর্ম’ বলেও ডাকেন। ৪০০ বিলিয়ন সূর্যের বিশাল এক ঘর এই গ্যালাক্সি। আলো ১ লক্ষ বছরের কাছাকাছি সময় নেয় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে। ‘পালসার’ নামে এক সংকুচিত তারার টুকরো সামনে আসতেই অবাকই হলাম। সেকেণ্ডে ২ বার করে মিটমিট করে জ্বলছে একটা নক্ষত্র। অনেকে তো আমার মত ধরেই নিয়েছিলো এটা বুদ্ধিমান প্রাণীর কাজ হতে পারে। কিন্তু, সেগান বললেন, “তেমন বুদ্ধিমত্তা বা মহাশূন্যযান হয়তো আছে, কিন্তু পালসার তাদের চিহ্ন নয়।“ যাত্রাপথে দেখা যায় অনেক অনেক রকমের বস্তু। যা নিজেদের সাজিয়ে ফেলতে পারে এমন ভাবে, যাদেরকে আমরা ‘প্রাণ’ নামে অভিহিত করি।
ধীরে ধীরে আমরা একটা মামুলি হলুদাভ বামন নক্ষত্রের দিকে পৌঁছাচ্ছি, যার চারিধারে ৯ টি গ্রহ প্রদক্ষিণ করছে। প্রদক্ষিণ করছে কয়েক ডজন চাঁদ, হাজার হাজার গ্রহাণু, আর বিলিয়ন বিলিয়ন ধুমকেতু। পৃথিবী থেকে মাত্র ৪ আলোক-ঘণ্টা দূরে নেপচুন গ্রহ। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম শনির বলয়ের ধারে। বলয়টি তৈরী হয়েছে কয়েক ট্রিলিয়ন ঘূর্ণনরত তূষারের গোলক দিয়ে। খুব দ্রুতই পৃথিবীতে আসছিলাম। যাত্রাপথে মঙ্গলে একটু ঢুঁ না মারলে কি চলে? মঙ্গলের একটা আগ্নেয়গিরি আছে মাউণ্ট অলিম্পাস নামে। প্রায় পৃথিবীর মতো এই গ্রহ আমাদের নিয়মিত ডাকছে। কিছুদূর এগোনোর পর আমরা চলে এলাম পৃথিবীর কাছে। আমরা দেখে ফেলেছি বিলিয়ন ট্রিলিয়ন নক্ষত্র। প্রাণ জিনিসটা শুধুই পৃথিবীতে থাকা যুক্তিযুক্ত নয় মোটেও। কসমস প্রাণ দিয়ে ঠাসা। কিন্তু, এখনো পর্যন্ত আমাদের জানা প্রতিটি প্রাণ, প্রতিটি সচেতন সত্তা, প্রতিটি সভ্যতা বসত করছে এই পৃথিবীতে।
“পৃথিবীতে স্বাগতম!” এই ভাবেই সেগান স্বাগতম জানালেন আমাকে! একটা সময় পৃথিবীটা বিশাল ছিলো। কিন্তু এখন পৃথিবীটা যেন আমরা হাতের মুঠোয় দেখি। নজরুলের সেই “বিশ্বজগৎ দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে” কথাটা বাস্তবায়িত হয়েছে। এই পৃথিবীর আকার প্রথম পরিমাপ করেন মিশরের এক লোক খ্রীষ্টের জন্মের ৩০০ বছর পূর্বে। আলেকজান্দ্রিয়া নামক স্থানে এরাটোস্থিনিস নামে এক লোক ছিলেন। আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির এই লাইব্রেরিয়ান একদিন প্যাপিরাসে লেখা বইতে অদ্ভুত জিনিস পড়লেন। সেখানে লেখা ছিলো সায়ীন নামে এক অঞ্চলের ব্যাপারে। সায়ীনে জুনের ২১ তারিখে মধ্য দুপুরে সূর্যের আলোর কোনো ছায়া থাকে না, কিন্তু আলেকজান্দ্রিয়াতে থাকে! প্রশ্ন হলো এটা, “কেন মাত্র ৮০০ কিলোমিটারের পার্থক্যে ছায়ার পার্থক্য চোখে পড়ে?” সেগান আমাকে দেখালেন কীভাবে এটা সম্ভব! একটা মানচিত্র নিয়ে দুইটি স্থানে কাঠি স্থাপন করলেন। একই সময়ে দুইটি স্থানে একই পরিমান ছায়া পড়লে খুব সহজেই পৃথিবী সমতল ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। কিন্তু, পৃথিবী গোলাকার হলেই কেবল দুই স্থানে দুই রকম ছায়া পড়া সম্ভব। এটা ছিলো অভাবনীয় আবিষ্কার। ডিগ্রি মেপে এরিটোসথিনিস পৃথিবীর পরিধি হিসেব করে ফেলেছিলেন।
সেগানের সাথে করে পাড়ি দিলাম মিশরে, যেখানে আলেকজান্দ্রিয়া ছিলো। শত শত বছর ধরে যুদ্ধবাজেরা এর প্রাসাদ আর মন্দিরকে পাল্টে গির্জা ও মসজিদ বানিয়েছে। সেই ভাঙাচোরা লাইব্রেরির আঙ্গিনায় গিয়ে সেগান বললেন, “এখানে ছিলো অন্যতম বড় লাইব্রেরি। এখানে কাজ করতেন বিখ্যাত সব মানুষেরা। লাইব্রেরির সাথে সাথে এটি ছিলো একটা গবেষণাগারও!” এক সময়ের গর্ব, এই লাইব্রেরিতে প্রবেশ করলাম সেগানের সাথে। এখান থেকে যে যাত্রার শুরু হয়েছিলো তা এখন আমাদের নিয়ে গেছে মহাবিশ্বের আনাচে কানাচে। এটা ছিলো মানব ইতিহাসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ গবেষণা কেন্দ্র। এখানে গবেষণা হতো কসমসের পুরোটা। ‘কসমস’ হলো গ্রীক শব্দ, যা দিয়ে ব্রহ্মাণ্ডের নিয়ম কানুন বোঝানো হয়। এখানে এরিটোসথিনিস ছাড়াও ছিলেন-
হিপারকাস – মহাবিশ্বে মানচিত্র বানিয়েছিলেন ও নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা নির্ণয় করেছিলেন।
ইউক্লিড – জ্যামিতি সাজিয়েছিলেন নিপুণভাবে!
ডায়োনিসিয়াস – বাক্যের পদ বিশ্লেষণ করেছিলেন।
হিরোফিলাস – যিনি বলেছিলেন, “হৃদয় নয়, মস্তিষ্কই জ্ঞানের কেন্দ্র।“
আর্কিমিডিস – অন্যতম সেরা ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার!
টলেমী – জোতিষশাস্ত্র নামক বিকৃত বিজ্ঞান সংকলন করেছিলেন। উনার পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণা ১৫০০ বছর রাজত্ব করেছিলো।
হাইপেশিয়া – গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, লাইব্রেরির শেষ প্রদীপধারী মহান নারী।
এই লাইব্রেরির প্রধান সম্পদ ছিলো বই! ধারণা করা হয়, প্রায় ১০ লাখের মত পুঁথি ছিলো এই লাইব্রেরিতে। ‘পেপার’ শব্দের জন্মদাতা ‘প্যাপিরাস’ এর জন্ম এই মিশরেই। প্যাপিরাসের উপরে হাতে লেখা হতো বই।
সেগান আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কেনো তোমাকে প্রথমেই এখানে নিয়ে এলাম?” পরক্ষণেই উত্তরটা উনিই দিলেন। বললেন, “কারণ, এখানেই সর্বপ্রথম আমাদের জাগতিক জ্ঞান সুসংগঠিতভাবে সাজানো হয়েছিলো।“
১৬০০ সালের দিকে কেপলার একটা মডেল তৈরী করেছিলেন, যাতে গ্রহগুলোর গতি আর বিন্যাস বোঝা যায়। ইউরোপে প্রথম সৌরকেন্দ্রিক মহাজগতের ধারণা স্বীকৃতি পায়। এই সময়টাতে মুক্তচিন্তাকে আবারো সম্মান দেওয়া হয়। যার ফলাফল ছিলো মানবজাতির ঘুম থেকে নতুন করে জেগে ওঠা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯২০ সালের দিকে সবাই আরেকবার থমকে গেলো, যখন জানা গেলো যে মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। জানতে পারলাম, মহাবিশ্বের জন্ম একটা বিস্ফোরণের দ্বারা। যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘বিগ ব্যাঙ’। হিসেব করে পাওয়া যায়, ১২ বিলিয়ন থেকে ১৫ বিলিয়ন বছরের মত বয়স এই মহাবিশ্বের।
এই পর্যায়ে সেগান পুরো ১৫ বিলিয়ন বছরকে ১ বছরে কনভার্ট করে আমাকে বোঝাতে শুরু করলেন। আমাদের জানা বছরকে ধরে নিই মহাবিশ্বের পুরো ১৫ বিলিয়ন বছর। যদি সেই হিসেবে জানুয়ারির ১ তারিখের প্রথম সেকেণ্ডে মহাবিস্ফোরণটা হয়, তাহলে মে মাসের দিকে মিল্কিওয়ে গঠিত হয়েছে। আমাদের সূর্য ও পৃথিবীর জন্ম সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি একটা পর্যায়ে। প্রাণের বিকাশ ৩১ ডিসেম্বরের দিকে।
প্রতিটা মাসকে সোয়া ১ বিলিয়ন বছরের সমান বড় ধরি। প্রতিটা দিন ৪০ মিলিয়ন বছর দীর্ঘ। প্রতিটা সেকেন্ডকে ৫০০ বছর ধরে নিই। এসব ব্যাপার এত বিশাল যে, আমাদের জানা মানব ইতিহাস ডিসেম্বরের শেষ মিনিটের শেষ কয়েক মুহুর্তে ঘটেছে। মহাজাগতিক এই ক্যালেন্ডারের হিসাবে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১০টা ৩০মিনিটে আমরা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি। রাত ১১টা ৪৬মিনিটে মানুষ আগুনকে বস করা শিখে নিয়েছে। ১১টা ৫৯মিনিট ২০সেকেণ্ডে আমরা চাষাবাদ শিখে ফেলেছি। এর মাত্র ১৫ সেকেণ্ড পর প্রথম শহুরে বসতির সূচনা। আমরা যতজনের কথা জানি তাদের প্রত্যেকের উপস্থিতি শেষ ১০টি সেকেণ্ডে। কতই না মামুলি আমরা! আমাদের সুযোগ আছে এই বিশালতা কাজে লাগানোর। সুযোগ আছে ১৫ বিলিয়ন বছরকে ছুড়ে ফেলে নিজেদের ধ্বংস করার। আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আমরা এই মুহুর্তে কী করছি তার উপর।
প্রথম ঘণ্টায় এতটুকুই কথা হলো কার্ল সেগানের সাথে। মহাজাগতির সমুদ্রের সৈকতে দাঁড়িয়ে আমাকে শুনিয়ে যাচ্ছিলেন এক মহাকাব্য। যা বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে যাচাই করা। ২য় ঘণ্টার গল্প শোনা ও সেগানের সাথে ভ্রমণের আশা রেখে সমুদ্রে আরেকবার পা ভেজাতে নামলাম। দেখিই না কি হয়!