অমরত্বের গবেষণায় বিজ্ঞান : ষষ্ঠ পর্ব – HIV-AIDS গবেষণায় তিন যুগ

ক্যান্সারের পরে এবং আরো বেশি শক্তপোক্তভাবে ‘প্রাণঘাতী’ বিশেষণটি যে রোগের নামের সাথে সংযুক্ত হয়ে আছে কয়েক যুগ ধরে সেটি হল এইডস (AIDS – Acquired Immuno-Deficiency Syndrome)। HIV (Human Immunodeficiency Virus) নামক সামান্য ‘প্রোটিনের থলেতে মোড়ানো এনজাইমে ডুবানো একখণ্ড RNA’ এই বিজ্ঞানের যুগে সারা বিশ্বের নামীদামী জ্ঞানীগুণী চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণকে যেভাবে নাকানিচুবানি খাইয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে তাতে করে এখন পর্যন্ত এই বিশেষণটি ধরে রাখা এই ‘অদৃশ্য’ জৈববস্তুকণার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে।

৮০’র দশকের শুরুতেই এক নতুন ধরণের সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পরতে শুরু করে যা দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় আশঙ্কাজনক হারে। বছর দুয়েকের মধ্যেই এর মূলহোতা HIV ভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব হয়। কিন্তু এখনো এর কোনো সফলভাবে কার্যকরী প্রতিষেধক (ভ্যাকসিন) আবিষ্কৃত হয়নি যেটির কল্যাণে HIV-AIDS চিকিৎসাবিজ্ঞানের করায়ত্ত হয়েছে এমন বলা যাবে। তার মানে আবার এই নয় যে বিজ্ঞানীগণ হাল ছেড়ে অসহায় হয়ে বসে আছেন। অণুজীববিজ্ঞান (Microbiology), অণুপ্রাণবিজ্ঞান (Molecular Biology), জেনেটিক্স, জিনোমিক্স, জিনপ্রকৌশল (Genetic Engineering) ইত্যাদি বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক শাখার হস্তক্ষেপে একের পর এক অজানা তথ্য উন্মোচিত হচ্ছে। অপ্রতিরোধ্য HIV ভাইরাসের গঠন ও কার্যপ্রণালী সম্পর্কিত রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে গবেষকগণের সফলতায় সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসায় দেখা যাচ্ছে আশার আলো।

প্রথম পর্বে ছিল জীবন, মৃত্যু, প্রাণ, চিকিৎসাবিজ্ঞানে মৃত্যুর ধারণা; দ্বিতীয় পর্ব ছিল প্রকৃতিতে অমরত্বের উদাহরণ নিয়ে, তৃতীয় পর্বে ছিল মৃত্যুকে তাড়িয়ে বেড়ানো আবিষ্কার ও গবেষণার আণুবীক্ষণিক দিক ভ্যাকসিন ও অ্যান্টিবায়োটিক এর সফলতার ইতিহাস, চতুর্থ পর্ব সাজানো হয়েছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের শল্য চিকিৎসা (সার্জারি) বিভাগের বৈপ্লবিক আবিষ্কার অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিষয়ে। ‘মরণব্যাধি ক্যান্সার’ থেকে ‘মরণব্যাধি’ বিশেষণটি দূর করার জন্য চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী মহলে যেসকল কর্মকাণ্ড চলছে ও ইতোমধ্যেই যেসব সফলতা পাওয়া গেছে সেগুলোর তথ্যের সমারোহ ছিল পঞ্চম পর্বে। প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর থেকে বিগত তিন যুগে HIV ও AIDS সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও গবেষণায় অগ্রগতি ও সাফল্য এবং অদূর ও সুদূর ভবিষ্যতে HIV ভাইরাস সংক্রমণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনার সম্ভাব্যতা ষষ্ঠ পর্বের মূল বিষয়বস্তু।

প্রথম দিকে কার্যকর প্রতিষেধক না থাকা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞানতার কারণে HIV ভাইরাস ক্রমশ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সেই সাথে উৎপত্তি হয় নানা রকম গুজব; স্বভাবতই যা ছড়িয়ে পরে সঠিক তথ্যের চেয়ে দ্রুতগতিতে। HIV-AIDS নিয়ে অঞ্চলভেদে, বিশেষ করে অনুন্নত দেশগুলোতে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সাথে সাথে গড়ে ওঠে বিচিত্র সব অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার। বাংলাদেশে দুটো সমসাময়িক প্রচলিত গুজব “ফলের রস খেয়ে এইডস” ও “মশার কামড়ে এইডস” এর যৌক্তিক খণ্ডন রয়েছে বিজ্ঞানযাত্রায়। আগ্রহী পাঠকগণ HIV ও AIDS সংক্রান্ত সামগ্রিক প্রাথমিক ধারণার জন্য বিজ্ঞানযাত্রার “মরণব্যাধি এইডস নিয়ে যত কথা” এবং “এইচআইভি এবং এইডস” নিবন্ধদ্বয় পড়তে পারেন। এছাড়া এইডস যেহেতু ইমিউনোসিস্টেম বা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত তাই ইমিউনোসিস্টেম সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেতে ও সংশ্লিষ্ট সায়েন্টিফিক টার্মগুলো সহজে বুঝতে বিজ্ঞানযাত্রায় গল্পের ভাষায় লেখা “ইমিউন সিস্টেমঃ একটি পারিবারিক চলচ্চিত্র” এর দুটি পর্ব (পর্ব ১, পর্ব ২) সাহায্য করবে।

ভাইরাস ও রেট্রোভাইরাস

ভাইরাস হল আণুবীক্ষণিক পরজীবী যা নির্দিষ্ট জীবকোষে প্রবেশ করে নিজস্ব জৈবরাসায়নিক উপাদান গুলোর সাহায্যে সংক্রমিত কোষের কোষীয় অঙ্গাণু কাজে লাগিয়ে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে ও জীবদেহে ছড়িয়ে পরে। ভাইরাস সুগঠিত কোষ নয়। ভাইরাসে কোনো সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস কিংবা কোষীয় অঙ্গাণু থাকে না। ভাইরাস মূলত নিউক্লিক এসিডের এক খণ্ড শৃঙ্খল (DNA or RNA chain)। নিউক্লিক এসিডের সাথে থাকে জৈবরাসায়নিক সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু এনজাইম। আর এই পুরো নিউক্লিক এসিড চেইন ও এনজাইমের সমষ্টিকে ঘিরে থাকে প্রোটিনের আবরণ। প্রচলিত ভাষায় প্রোটিন আবৃত নিউক্লিক এসিড চেইন ও এনজাইমের এই পুরো অংশকে একত্রে ভাইরাস বলা হলেও একে অণুজীববিদ্যার ভাষায় বলা হয় ভিরিয়ন (Virion); আর প্রতিটি অভ্যন্তরীণ জৈব অংশ যেমন নিউক্লিক এসিড শৃঙ্খল, প্রতিটি প্রোটিন ও এনজাইমকে বলা হয় ভাইরাস পার্টিকেল। এভাবে বলা যেতে পারে যে, সংক্রমণ করতে সক্ষম ভাইরাস পার্টিকেল যুক্ত জৈবকণাই ভিরিয়ন বা প্রচলিত ভাষায় ভাইরাস। পাঠকগণের বোঝার সুবিধার্থে এখানে ভিরিয়নকে প্রচলিত ‘ভাইরাস’ শব্দ দ্বারাই উপস্থাপন করা হচ্ছে।

ভাইরাস কী জীব নাকি জড়বস্তু? এটি বহুদিনের বিতর্কিত একটি প্রশ্ন। প্রথম পর্বে জীবের বৈশিষ্ট্যর ভেতরে প্রধান ও জরুরি বৈশিষ্ট্য হিসেবে দুটো বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ ছিলো। জীবকে বাইরে থেকে খাদ্য গ্রহণ বা শক্তি সংগ্রহ করতে হবে অর্থাৎ জীবের শ্বসন প্রক্রিয়া থাকবে এবং নিজের অনুরূপ প্রতিলিপি তৈরি করতে হবে বা বংশবৃদ্ধি করতে হবে। বিতর্কের একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান এখানেই। ভাইরাসের নিজস্ব শ্বসন ব্যবস্থা নেই, নিজে নিজে প্রতিলিপিও তৈরি করতে পারে না; অবশ্য পোষক কোষের ভেতরে প্রবেশ করে পোষক কোষের জৈব-রাসায়নিক উপাদান ও কোষীয় অঙ্গাণুকে কাজে লাগিয়ে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে থাকে। আবার এই বিতর্ক জীব ও জড়ের সংজ্ঞার উপরেও অনেকটাই নির্ভর করে যে সংজ্ঞা এখনো খুব সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে দেয়া সম্ভব হয় নি। তাই ভাইরাস এর অবস্থান নির্ধারণ এখনো জীব ও জড়ের মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে।

ভাইরাসে থাকা DNA ও RNA শৃঙ্খলের গঠন একসূত্রক (Single stranded – ss) কিংবা দ্বিসূত্রক (Double stranded – ds) হতে পারে (ssDNA, ssRNA, dsDNA, dsRNA)। জীবদেহে সংক্রমণ করা ভাইরাসের নিউক্লিক এসিড এর গঠন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ছয়টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণীর ভাইরাস এনভেলাপড বা আবৃত ভাইরাস। এসব ভাইরাসের ‘ভাইরাস পার্টিকেল’ গুলো প্রোটিনের আবরণে আবৃত থাকে। এদের নিউক্লিক এসিড ভাইরাসের মধ্যে ssRNA আকারে অবস্থান করে। কিন্তু পোষক কোষে সংক্রমণের পর এই ssRNA, ভাইরাল এনজাইমের সহায়তায় প্রাণীদেহের মত dsDNA তে পরিণত হয় ও পোষক কোষের DNA এর সাথে একীভূত (Integrate) হয়ে যায়। ফলে একীভূত DNA (Integrated DNA) সহজেই কোষীয় অঙ্গাণুর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নতুন নতুন ভাইরাস তৈরি করতে সক্ষম হয়। তাই এদের বলা হয় রেট্রোভাইরাস। HIV একপ্রকার রেট্রোভাইরাস।

HIV এর গঠন

গোলকাকৃতি HIV ভাইরাসের ব্যাস ১০০ ন্যানোমিটার। (১ ন্যানোমিটার = ১ মিলিমিটারের দশলক্ষ ভাগের এক ভাগ) দ্বি-স্তর বিশিষ্ট লিপিড দিয়ে গঠিত হয়েছে ভাইরাসের বহিরাবরণ। একে বলা হয় এনভেলাপ। এনভেলাপের ভেতরের দেয়ালে থাকে ম্যাট্রিক্স প্রোটিনের আস্তরণ। এই আস্তরণের ভেতরের দিকে রয়েছে লিংক প্রোটিন এবং লেটারাল বডি। এই প্রতিটি প্রোটিনের প্রকরণে রয়েছে একাধিক বৈশিষ্ট্য ও কার্যকারিতার ভিন্ন ভিন্ন প্রোটিন অণু। চারদিকে এসব প্রোটিনে পরিবেষ্টিত হয়ে ভাইরাসের অভ্যন্তরে অবস্থান করছে একটি কোণকাকৃতি গঠন যার নাম ‘ক্যাপসিড’। ক্যাপসিড প্রোটিনে মোড়ানো ক্যাপসিডের ভেতরের অংশকে বলা হয় ভাইরাসের মজ্জা (core)। মজ্জায় অবস্থান করে নিউক্লিক এসিড এবং আরো কিছু এনজাইম ও প্রোটিন। মজ্জাতে দু’টি একসূত্রক RNA (ssRNA) শৃঙ্খল থাকে। এর সাথে থাকে কিছু এনজাইম ও প্রোটিন, যেগুলোকে কাজে লাগিয়ে RNA ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি করে। ভাইরাসের বহিরাবরণে উত্তলাকার ৭২ টি স্ফীত অংশ থাকে, যেগুলোকে knob (গাঁট) বলা হয়। ১৫ ন্যানোমিটার ব্যাস ও ৯ ন্যানোমিটার উচ্চতার এই গাঁটগুলো হালকাভাবে এনভেলাপের বহিঃপৃষ্ঠে থাকা ট্রান্সমেমব্রেন প্রোটিনের সাথে সংযুক্ত থাকে।

HIV এর কোষীয় সংক্রমণ ও বিস্তার

HIV কিভাবে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় কিংবা এ থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায় কী, তা এই অংশের প্রতিপাদ্য নয়। বরঞ্চ HIV মানবদেহে প্রবেশ করার পর কিভাবে নির্দিষ্ট শ্বেতরক্তকণিকাকে সংক্রমণ করে, কিভাবে সংক্রমিত কোষের অঙ্গাণু ব্যবহার করেই নিজের হাজারো প্রতিলিপি তৈরি করে ও মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায় সে সম্পর্কে এখানে আলোকপাত করা হচ্ছে।

এনভেলাপড রেট্রোভাইরাস HIV তাপমাত্রা ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এজন্য HIV মানবদেহের বাইরে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। PH 3-10 এর মধ্যবর্তী দ্রবণে এটি টিকে থাকতে সক্ষম মাত্র কয়েক ঘণ্টা। ৭০ শতাংশ ইথানল দ্রবণ, ৫০ শতাংশ আইসোপ্রোপানল দ্রবণ, প্যারাসাইটিক এসিড কিংবা সোডিয়াম ডোডিসল সালফেটের মত উচ্চমাত্রার ডিটারজেন্টের সংস্পর্শে এক মিনিটের মধ্যে HIV ভাইরাস অকার্যকর হয়ে যায়।

মানবদেহের বাইরে ৫৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় HIV এর অর্ধায়ু ৩০ মিনিটের মত, ৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ১ মিনিট এবং ৬৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস হলে অর্ধায়ু ১ সেকেন্ডেরও কম। ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার জলীয়বাষ্পমুক্ত শুষ্ক বায়ুতে ১০ মিনিট উত্তপ্ত করলে HIV সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হয়। দেহাভ্যন্তরে শ্বেত রক্তকোষে সংক্রমিত না হয়ে রক্তে মিশে থাকা অবস্থায় ভাইরাসের অর্ধায়ু মাত্র ২০-৩০ মিনিট

তাহলে দেখা যাচ্ছে – মানবদেহের বাইরে HIV বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। দেহে প্রবেশের পরেও দ্রুত শ্বেতকোষে সংক্রমিত হতে না পারলে ভাইরাস নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। তাই দ্রুত নির্দিষ্ট শ্বেত রক্তকোষে সংক্রমণের মধ্য দিয়ে HIV তার কার্যকারিতা ও প্রতিলিপি তৈরির কাজ শুরু করে থাকে। বেশ কয়েকটি ধাপে অনেকগুলো জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে HIV কার্যকর হয়ে প্রতিলিপি তৈরি করে থাকে।

ভাইরাসের সংযুক্তি (Viral Attachment or Binding)
HIV সকল দেহকোষে সংক্রমণ করে না, নির্দিষ্ট শ্বেত রক্তকণিকাতে সংক্রমিত হয়। কয়েক প্রকার শ্বেত রক্তকণিকার মধ্যে শুধুমাত্র T Lymphocyte কোষেই HIV সংক্রমণ ঘটে থাকে। এদের Helper T cell বলা হয়ে থাকে। লেখার সরলতার সুবিধার্থে Helper T Cell কে সাধারণভাবে ‘শ্বেতকণিকা’ লেখা হচ্ছে। HIV এর এনভেলাপের সাথে থাকা নবগুলোর গ্লাইকোপ্রোটিন gp120, শ্বেতকণিকার সারফেসে থাকা CD4 রিসেপ্টর অণুর সাথে সংযুক্ত হয়। তারপর ক্রমান্বয়ে অন্য কো-রিসেপ্টার CCR5 অণুর সাথে আবদ্ধ হয়ে শ্বেতকণিকার বহিঃপৃষ্ঠের সাথে দৃঢ়ভাবে যুক্ত হয়। শ্বেতকণিকার বহিঃপৃষ্ঠের রিসেপ্টর ও কো-রিসেপ্টর অণুর সাথে ভাইরাস এনভেলাপের পৃষ্ঠদেশের গ্লাইকোপ্রোটিনের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে ভাইরাস ফিউশন প্রক্রিয়ায় কোষে প্রবেশের জন্য তৈরি হয়ে যায়।

সংযোজন (Fusion)
কো-রিসেপ্টর এর সাথে মিথস্ক্রিয়ার ফলে gp120 গ্লাইকোপ্রোটিনের অভ্যন্তরে থাকা gp41 ট্রান্সমেমব্রেন প্রোটিন উন্মুক্ত হয়ে শ্বেতকণিকার কোষপর্দায় (Cell Membrane) হাইড্রোফোবিক ফিউশন পেপটাইড প্রবেশ করায়। এরপর gp41 প্রোটিন স্ক্রুর মত পেঁচানো আকৃতি ধারণ করে কোষ পর্দায় প্রবেশ করে এবং কোষপর্দা ও ভাইরাসের এনভেলাপকে পরস্পরের দিকে টেনে ভাইরাস ও কোষের সরাসরি বাহ্যিক সংস্পর্শ ঘটায়। সংস্পর্শে চলে আসলে কোষ ও ভাইরাস মেমব্রেন একীভূত হয়ে যায় এবং ভাইরাসের ভাইরাস পার্টিকেল তথা ম্যাট্রিক্স প্রোটিনে মোড়ানো পুরো ক্যাপসিড শ্বেতকণিকায় অনুপ্রবেশ করে।

এভাবে HIV মানবদেহের Helper T Lymphocyte কোষে সংক্রমিত হয়। সংক্রমিত হবার পর শুরু হয় ভাইরাসের মূল কাজ, নিজের প্রতিলিপি তৈরি।

প্রতিলিপি গঠন (Replication)

  • ভাইরাসের মজ্জা (core) সংযোজন প্রক্রিয়ায় শ্বেতকণিকায় প্রবেশের পর ম্যাট্রিক্স প্রোটিনের আবরণ ও ক্যাপসিড প্রোটিনের তৈরি ক্যাপসিডের দেয়াল ভেঙ্গে পরে এবং ক্যাপসিডের ভেতরে থাকা RNA এবং একাধিক এনজাইম ও প্রোটিন সংক্রমিত শ্বেতকণিকার সাইটোপ্লাজমে অবমুক্ত হয়।
  • সাইটোপ্লাজমে উন্মুক্ত হবার পর RT এনজাইম p51, বিপরীত দিক থেকে প্রতিলিপি তৈরি করতে করতে (reverse transcription প্রক্রিয়ায়) ভাইরাসের RNA কে পর্যায়ক্রমে ssRNA থেকে ssDNA এবং সবশেষে ssDNA থেকে dsDNA তে রূপান্তরিত করে, যা মানব DNA গঠনের অনুরূপ।
  • ভাইরাল RNA সফলভাবে দ্বি-সূত্রক DNA তে রূপান্তরিত হবার পর Integrase এনজাইম p32, এই ভাইরাল dsDNA কে শ্বেতকণিকার নিউক্লিয়াসের ভেতর নিয়ে যায় এবং কোষের মূল DNA এর সাথে সংযুক্ত করে দেয় ইন্টিগ্রেশন প্রক্রিয়ায়। ভাইরাল DNA কোষের নিজস্ব DNA এর সাথে একীভূত হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কোষে স্থায়ীভাবে ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে পরে। তখন ভাইরাল DNA যুক্ত সংক্রমিত শ্বেতকণিকার সম্পূর্ণ DNA কে বলা হয় Pro-viral DNA এবং সংক্রমিত কোষকে বলা হয় Pro-virus. এ অবস্থায় কোষ বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ তৈরি হলে নতুন কোষটিও হয় ভাইরাস আক্রান্ত।
  • Pro-virus শ্বেতকণিকা নতুন ভাইরাসের আঁতুড়ঘর হিসাবে কাজ করে। এটি যেন তখন অজস্র নতুন ভাইরাস তৈরির মোক্ষম টেমপ্লেট। সফল ইন্টিগ্রেশনের পর Pol II পলিমার, Pro-viral DNA এর ভাইরাল DNA অংশটুকু থেকে mRNA এবং genomic RNA প্রস্তুত করতে শুরু করে।
  • ভাইরাল mRNA কোষের নিউক্লিয়াস থেকে বেড়িয়ে এসে কোষের রাইবোজোমকে কাজে লাগিয়ে ভাইরাল এনজাইম ও প্রোটিন তৈরি করতে থাকে। যেগুলোকে বলা যেতে পারে ভবিতব্য নতুন ভাইরাসের ভাইরাস পার্টিকেল।
  • এভাবে অজস্র নতুন ভাইরাস পার্টিকেল তথা ভাইরাল প্রোটিন, এনজাইম এবং ভাইরাল RNA, ট্রান্সক্রিপশন ও ট্রান্সলেশন পদ্ধতিতে তৈরি হয়। এগুলো গুচ্ছ গুচ্ছ হয়ে প্রো-ভাইরাসের বহিঃপৃষ্ঠের মেমব্রেনের নিচে এসে জড়ো হয়। একে Assembly বলা হয়। তারপর ভাইরাল পার্টিকেলের গুচ্ছ ফিউশনের বিপরীতভাবে কোষ থেকে শিশু HIV আকারে বেড়িয়ে আসে। এই পদ্ধতিকে Budding বলা হয়।
  • বাডিং প্রক্রিয়ায় সদ্য নির্গত শিশু HIV শুরুতেই অন্য কোষে সংক্রমণের উপযুক্ত থাকে না। সদ্য নির্গত HIV এর ভেতরে প্রোটিন ও এনজাইম সুগঠিত হতে থাকে, ম্যাট্রিক্স প্রোটিনের আবরণ তৈরি হয়, ভাইরাল RNA ও এনজাইমকে ঘিরে ক্যাপসিড গঠিত হয় এবং ধীরে ধীরে শিশু HIV পূর্ণতা লাভ করে।

Howard Hughes Medical Institute জটিল বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো সহজে শিক্ষার্থীদের নিকট পৌঁছে দিতে বেশ কিছু সংখ্যক ভিডিও–যেমন সিমুলেশন, অ্যানিমেশন ইত্যাদি–তৈরি করেছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে HIV এর কোষীয় সংক্রমণ ও প্রতিলিপি তৈরি নিয়ে। HIV কিভাবে শ্বেতকণিকাকে আক্রমণ করে ও কোষীয় জৈব-রাসায়নিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে তা তাদের HIV Life Cycle অ্যানিমেশন থেকে চমৎকার ভাবে বোঝা যাবে।

HIV Life Cycle – Howard Hughes Medical Institute

দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসে HIV সংক্রমণের প্রভাব

Immune System বা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শ্বেত রক্তকণিকা। শ্বেত রক্তকণিকা প্রধানত দুই প্রকার, B cell এবং T cell. T cell আবার দুই ধরণের। Killer T cell এবং Helper T cell.

  • B cell এর প্রধান কাজ হল জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করা।
  • Killer T cell, জীবাণু আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত দেহকোষ ধ্বংস করে।
  • Helper T cell এর কাজ হচ্ছে প্রধানত দেহে জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করে রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে Killer T cell এবং B cell কে সতর্ক করা ও জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর করা।

Helper T cell গোত্রের CD4+ Helper T cell কে সংক্রমণ করে থাকে HIV. সংক্রমণের পর HIV কার্যকর হয়ে বংশবৃদ্ধি শুরু করে। এই ঘটনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফলাফল হিসেবে, সংশ্লিষ্ট গোত্রের শ্বেতকোষ দ্রুত আশঙ্কাজনক হারে ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে থাকে। শ্বেত রক্তকণিকাগুলোর কার্যক্রম একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে যখন একটির কার্যকারিতা হ্রাস পায় তখন স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য কণিকা তাদের কার্যক্রম স্বতঃস্ফূর্তভাবে চালিয়ে যেতে পারে না। ফলে দেখা দেয় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি।
শ্বেতকণিকা ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে হতে যখন মাত্রাতিরিক্তভাবে কমে যায় তখন দেহের সকল অংশে জীবাণুর আক্রমণ শনাক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত Helper T cell থাকে না। আর Helper T cell এর রাসায়নিক সংকেত না পাওয়ায় অন্যান্য শ্বেত কণিকাও তাদের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। এতে করে দেহে সাধারণ ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগশোকও খুব সহজেই জায়গা করে নেয়, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) শক্তিশালী থাকলে সম্ভব হতো না। দেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার কারণে বাইরে থেকে ভ্যাকসিন, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি প্রয়োগ করেও এসময় সহজে সুস্থতা পাওয়া যায় না।

HIV নিজে সরাসরি আক্রান্ত ব্যক্তিকে মেরে ফেলে না, কিন্তু অন্যান্য জীবাণুর আক্রমণের জন্য সহজ পরিবেশ তৈরি করে দেয়। এ অবস্থায় দেহে অন্যান্য জীবাণুর আক্রমণ মারাত্মক আঁকারে পৌঁছে যেতে পারে সহজেই, প্রতিরোধযোগ্য রোগও হয়ে উঠতে পারে অপ্রতিরোধ্য; যা রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

HIV থেকে AIDS

HIV সংক্রমণের সাথে সাথেই সংক্রমিত ব্যক্তি অসুস্থ হয় না কিংবা এইডসে আক্রান্ত হয় না। এটি একটি পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়া। HIV আক্রান্ত অবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগে যেসব রোগব্যাধি দেহে বাসা বাঁধে, তাদের বলা হয় সুযোগসন্ধানী সংক্রমণ (Opportunistic Infections বা OI). HIV আক্রান্ত অবস্থায় এক বা একাধিক OI দ্বারা আক্রান্ত হলে তখন তাকে বলা হয় Acquired Immune Deficiency Syndrome বা AIDS.

Stage 1: Acute HIV infection
দেহে HIV সংক্রমণের ২-৪ সপ্তাহ পরে আক্রান্ত ব্যক্তি ফ্লু (সর্দিজ্বর) জাতীয় ব্যাধি অনুভব করতে পারেন যার স্থায়িত্ব কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এটি বহিঃজৈবকণার প্রতি দেহের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার ফলাফলে ঘটে থাকে। কখনো কখনো এমন উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে। এ অবস্থায় দেহে প্রচুর HIV ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ও আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত এবং বীর্যের আদানপ্রদানে সুস্থ ব্যক্তির HIV সংক্রমিত হবার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

Stage 2: Clinical latency (HIV inactivity or dormancy)
প্রথম পর্যায় শেষে, HIV সংক্রমণ দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে কিছুটা শিথিল হয়। ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির হার অনেক কমে আসে। এ অবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ বা Chronic HIV Infection বলা হয়ে থাকে। এ পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো প্রকার অসুস্থতা কিংবা উপসর্গ অনুভব করেন না। এই পর্যায়ের শেষেই আবির্ভূত হয় প্রাণঘাতী পর্যায় AIDS.

Stage 3: Acquired immunodeficiency syndrome (AIDS)
দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের শেষে এসে হঠাৎ HIV প্রচণ্ড সক্রিয় হয়ে ওঠে। অত্যন্ত দ্রুত হারে প্রতিলিপি তৈরির ফলে রক্তে HIV ভাইরাসের পরিমাণ মারাত্মক হারে বাড়তে থাকে এবং স্বভাবতই একই সাথে CD4+ Helper T cell এর সংখ্যা ঝুঁকিপূর্ণভাবে অত্যন্ত দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করে।

তৃতীয় ধাপে এসে রক্তে HIV ভাইরাসের পরিমাণ অত্যন্ত বেড়ে যায় এবং CD4+ Helper T cell এর সংখ্যা কমে প্রতি ঘন মিঃমিঃ রক্তে মাত্র ২০০ টি তে এসে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় Opportunistic Infections বা OI সহজেই দেহে বাসা বাঁধতে সক্ষম হয়। তখন দেখা দেয় নানারকম উপসর্গ যেমন ডায়রিয়া, জ্বর, দ্রুত ওজনহানি, শারীরিক দুর্বলতা, লসিকা গ্রন্থি বা lymph gland ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।

OI গুলোর মধ্যে রয়েছে Cervical Cancer, Chronic Ulcer, Tuberculosis (TB) বা যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, ফুসফুস ও পরিপাকতন্ত্রের নানা অংশে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত রোগ ইত্যাদি। সুস্থ ব্যক্তির জন্য এসব ব্যাধি যথাযথ চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য হলেও AIDS আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে এগুলোই হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী।

HIV সংক্রমণ নির্ণয়

HIV নির্ণয়ে প্রধানত তিন ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। যথা নিউক্লিক এসিড টেস্ট, অ্যান্টিজেন/অ্যান্টিবডি টেস্ট এবং অ্যান্টিবডি টেস্ট।

Nucleic Acid Test (NAT)
এই পরীক্ষায় সরাসরি সংগৃহীত রক্তে HIV ভাইরাসের উপস্থিতি ও পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। রক্তে HIV এর উপস্থিতি-অনুপস্থিতি ছাড়াও HIV এর পরিমাণ নির্ণয় করা যায় বলে একে ভাইরাল লোড টেস্টিংও বলা হয়। সাধারণত ভাইরাসাক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা চলাকালীন ভাইরাসের আনাগোণা কেমন ও চিকিৎসার কার্যকারিতা বুঝতে ভাইরাল লোড টেস্ট করা হয়ে থাকে। পরীক্ষাটি খুব ব্যয়বহুল হওয়ায় সাধারণত শুধুমাত্র সংক্রমণ হয়েছে কিনা তা নির্ণয় করতে এই টেস্ট করা হয় না।

Antigen/Antibody Test
সাধারণত ল্যাবরেটরিতে অপেক্ষাকৃত দ্রুত HIV সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য এই টেস্ট করা হয়ে থাকে। দেহে HIV সংক্রমণ ঘটলে p24 অ্যান্টিজেন তৈরি হয়। এই অ্যান্টিজেন শনাক্ত করার মধ্য দিয়েই এ পদ্ধতিতে HIV সংক্রমণ নির্ধারিত হয়।

Antibody Test
HIV সংক্রমণে দেহের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় বিশেষ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেই অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নিরীক্ষার মাধ্যমে HIV এর সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। এই পদ্ধতিটি তুলনামূলক দ্রুত ও সহজ পদ্ধতি। ল্যাবরেটরিতে শিরা থেকে রক্ত নেয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই এই পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়া বর্তমানে বিশেষ ‘মেডিক্যাল কিট’ পাওয়া যায় যেগুলো দিয়ে আঙ্গুলের ডগা থেকে নেয়া খানিকটা রক্ত কিংবা মুখগহ্বরের লালার সাহায্য ২০-৩০ মিনিটের মধ্যেই HIV সংক্রমণ ঘরে বসেই পরীক্ষা করে নেয়া যায়।

HIV-AIDS এর বর্তমান চিকিৎসাব্যবস্থা

৯০’র দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত HIV-AIDS কে এক প্রকার ‘নিশ্চিত মৃত্যু’ই বলা যেত। দেহে HIV সংক্রমণের কয়েক বছরের মধ্যেই সংক্রমিত ব্যক্তি সংক্রমণ পর্যায় থেকে AIDS পর্যায়ে উন্নীত হত এবং AIDS এ আক্রান্ত হবার বছর তিনেকের মধ্যেই নানাবিধ OI তে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরত। কিন্তু বর্তমান উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থার কল্যাণে এই দুরবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে।

ARV & ART
চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণের নিরলস গবেষণার ফলে HIV’র সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবার জন্য মোক্ষম এক যুদ্ধাস্ত্র আবিষ্কৃত হয় যার নাম Anti-Retroviral Drugs (ARV). রেট্রোভাইরাস HIV এর বিরুদ্ধে ARV প্রয়োগ করে চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলা হয় ART বা Anti-Retroviral Therapy. ১৯৮৭ সালে প্রথম AZT নামক অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ঔষধ আবিষ্কৃত হয়। এটি ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন ধাপকে বাধাগ্রস্ত করে। এই ঔষধ প্রয়োগের ফলে কোষে প্রবেশের পরেও ভাইরাল RNA, ssRNA থেকে dsDNA তে পরিণত হতে পারে না। ফলে সংক্রমিত শ্বেতকণিকা প্রো-ভাইরাসে পরিণত হয় না ও নতুন নতুন ভাইরাস তৈরি করতে পারে না। ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে বলে একে Reverse Transcriptase Inhibitor বলা হয়।

এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির বিভিন্ন ধাপকে বাধাগ্রস্ত করতে কার্যকর কয়েক প্রকারের বেশ কিছু সংখ্যক অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ঔষধ আবিষ্কৃত ও U.S. Food & Drug Administration কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে।

  • Nucleoside Reverse Transcriptase Inhibitor (NRTI) – ১৩ টি
  • Non-nucleoside Reverse Transcriptase Inhibitor (NNRTI) – ৬ টি
  • Protease Inhibitor (PI) – ১১ টি
  • Fusion Inhibitor – ১ টি
  • Entry Inhibitors – ১টি
  • Integrase Inhibitor – ৩ টি

এসব ARV ধরন অনুযায়ী ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির নির্ধারিত ধাপের প্রক্রিয়া সংঘটিত হতে বাধা দেয়।

  • Reverse Transcriptase Inhibitor, সংক্রমিত কোষে নিউক্লিক এসিড শৃঙ্খলের ssRNA কে dsDNA তে রূপান্তরিত হতে বাধা দেয়।
  • Protease Inhibitor, শিশু HIV এর ভেতরে থাকা Protease এনজাইমকে কার্যকর হতে দেয় না। ফলে শিশু HIV পরিণত ও সংক্রামক HIV তে পরিণত হতে পারে না।
  • Fusion Inhibitor, শ্বেতকণিকার মেমব্রেনের সাথে HIV মেমব্রেনের ফিউশন হতে দেয় না। এতে HIV, CD4+ Helper T cell এ প্রবেশ করতে পারে না।
  • Entry Inhibitor, একই সাথে Fusion Inhibitor এর কাজ করে এবং অতিরিক্ত হিসেবে CCR5 কো-রিসেপ্টরের সাথে ভাইরাসের সংযুক্তিকে বাধা প্রদান করে।
  • Integrase Inhibitor, ভাইরাল DNA কে শ্বেতকণিকার নিজস্ব DNA এর সাথে একীভূত হতে দেয় না। ফলে শ্বেতকণিকা সংক্রমিত হয়ে প্রো-ভাইরাসে পরিণত হয় না।

এসকল ARV এবং ART প্রয়োগের মাধ্যমে প্রথমবারের মত অদম্য HIV ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

Highly Active Anti-Retroviral Therapy (HAART)
ARV প্রাথমিকভাবে HIV নিয়ন্ত্রণে সাফল্য অর্জনের পর, প্রতিদিন নিয়মিতভাবে একাধিক ARV’র সম্মিলিত জোরালো প্রয়োগের মাধ্যমে সংক্রমিত ব্যক্তির দেহে ভাইরাল লোড ও ভাইরাসের কার্যকারিতা নাটকীয়ভাবে কমিয়ে রক্তে HIV এর মাত্রা, পুনঃউৎপাদনের হার ও ক্ষতিকর প্রভাব পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখার চিকিৎসাপদ্ধতি HAART এর আবিষ্কার ও প্রচলন হয় ১৯৯৬ সালে

বর্তমানে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ARV একযোগে প্রয়োগ করে HAART চিকিৎসা দেয়া হয়। এসব অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ঔষধ অত্যন্ত কার্যকরীভাবে ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি বাধাগ্রস্ত করে রক্তে ভাইরাল লোড খুবই সীমিত মাত্রায় রাখতে সক্ষম। প্রতিদিন যথাযথ নিয়মে ঔষধ সেবন করলে ত্রিমুখী বাধার সম্মুখীন হয়ে HIV এর পুনঃউৎপাদনচক্র ধসে পড়ে। এতে করে HIV সংক্রমিত ব্যক্তির দেহে HIV ভাইরাসের পরিমাণ খুব নগণ্য মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত থাকে, যার ফলে রোগী তেমন কোনো উপসর্গই উপলব্ধি করে না এবং প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়।

HAART চিকিৎসাপদ্ধতি বর্তমান উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা। এক সময়ের বৈশ্বিক প্রাণঘাতী রোগ এইডসকে প্রায় নিয়ন্ত্রণযোগ্য একটি ব্যাধিতে পরিণত করেছে। নিয়মিত চিকিৎসায় HIV সংক্রমিত ব্যক্তির এইডসজনিত মৃত্যু ৫০-৮০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

Prevention form Mother to Child Transmission of HIV (PMTCT)
ARV প্রয়োগে HIV নিয়ন্ত্রণের অন্যতম বড় একটি সফলতা হচ্ছে HIV সংক্রমিত মা থেকে ভূমিষ্ঠ শিশুতে HIV সংক্রমণ রোধ করতে পারা। এজন্য গর্ভধারণের শুরু থেকেই কিংবা গর্ভধারণের আগে থেকেই সংক্রমিত মাকে ART অথবা HAART চিকিৎসা নিয়মিত নিতে হবে। পরবর্তীতে শিশু ভূমিষ্ঠ হবার জন্য C-section বা সিজারিয়ান পদ্ধতিতে শিশু ভূমিষ্ঠ হলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার চেয়ে শিশুর HIV সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে। ভূমিষ্ঠ হবার পর নবজাতকের দেহে চিকিৎসক নির্ধারিত মাত্রায় নিয়মিত ARV প্রয়োগ করতে হবে যতদিন পর্যন্ত শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করছে।

অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ঔষধ মাতৃদেহে ভাইরাসের পুনঃউৎপাদন রোধ করে দেহে ভাইরাল লোড একেবারে নিম্ন পর্যায়ে রাখে ফলে গর্ভের শিশুতে HIV সংক্রমণের সম্ভাব্যতা যথেষ্ট কমে যায়। ভূমিষ্ঠ হবার পরে নবজাতককেও ARV দিতে হয় যাতে সামান্য পরিমাণ HIV দেহে প্রবেশ করলেও তা কার্যকর হতে না পারে। মাতৃদুগ্ধ পানের মাধ্যমেও মাতৃদেহ থেকে HIV শিশুদেহে ছড়াতে পারে। তাই যতদিন শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করছে কমপক্ষে ততদিন নিয়মিত নবজাতককে ARV দিতে হবে।

World Health Organization (WHO) এর তথ্যানুযায়ী ২০০৯-২০১৫ সাল পর্যন্ত আফ্রিকার ২১ টি HIV কবলিত দেশে ARV ব্যবহার করে PMTCT পদ্ধতির সফল প্রয়োগের ফলে HIV সংক্রমিত মা থেকে নবজাতকের মধ্যে HIV সংক্রমণ কমিয়ে ২-৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। চিকিৎসাধীন মায়ের যেসকল শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করেনি তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার ২ শতাংশেরও কম, আর যারা মাতৃদুগ্ধ পান করেছে তাদের মাতৃদুগ্ধপানের মেয়াদের উপর ভিত্তি করে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশেরও নিচে।

HIV-AIDS এর চিকিৎসা গবেষণার ভবিষ্যৎ

Vaccine – প্রতিষেধক
ভাইরাসঘটিত রোগের জন্য চূড়ান্ত চিকিৎসা হল ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিন, সংক্রমিত ভাইরাসকে ধ্বংস করে এবং দেহে ভাইরাসের অনুপ্রবেশ বন্ধ করে। HIV আবিষ্কৃত হবার পর সবাই ধারণা করেছিলেন হয়ত কয়েকবছরের মধ্যেই চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণের তৎপরতায় HIV এর কার্যকরী প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়ে যাবে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি দিয়ে তিন যুগ পরে এখনো HIV এর কার্যকরী প্রতিষেধক অনেকটা স্বপ্নের মতই রয়ে গেছে!

HIV আবিষ্কারের বছর চারেক পর থেকেই প্রতিষেধক তৈরির গবেষণা চলতে থাকে পুরোদমে। কিন্তু পরপর কয়েকটি ভ্যাকসিন ট্রায়াল প্রি-ক্লিনিক্যাল পর্যায় অর্থাৎ প্রাইমেটের উপর করা নিরীক্ষাতেই বাজেভাবে বিপর্যস্ত হয় ও অকার্যকর প্রমাণিত হয়। তখনই ধারণা করা হয়েছিল যে HIV এর ভ্যাকসিন তৈরি অন্যান্য ভ্যাকসিনের মত সহজ হবে না। পরবর্তীতে HIV এর গঠন, সংক্রমণ ও প্রতিলিপি তৈরি প্রণালী আরো বিস্তারিতভাবে জানার পর এর মূল কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হল। HIV ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির বিভিন্ন পর্যায়ে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ায় ভাইরাল RNA থেকে DNA এবং ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ায় ভাইরাল DNA থেকে RNA তৈরি হয়। এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় নিউক্লিক এসিড চেইনের গঠনের প্রতিলিপি তৈরির সময় প্রচুর ত্রুটিযুক্ত অংশ তৈরি হয়। যাকে বলা হয় মিউটেশন। বারবার প্রতিলিপি তৈরি হবার কারণে HIV এর মিউটেশন ঘটে অত্যন্ত দ্রুত ও বৃহৎ পরিসরে। যার কারণে এটি সহজেই ভ্যাকসিন রেজিস্ট্যান্ট হয়ে পরে ও ভ্যাকসিন অকার্যকর বলে পরিগণিত হয়।

২০০৯ সালে থাইল্যান্ডে RV114 নামে ভ্যাকসিন ট্রায়াল হয়েছিল। এক্ষেত্রে দুটো আলাদা আলাদা ভ্যাকসিনের যৌথ প্রয়োগের মাধ্যমে কুপোকাত করার চেষ্টা করা হয়েছিল HIV কে। কিন্তু দেখা গেল ভ্যাকসিনের যে মূল কাজ সেই ভাইরাস নির্মূল করাই সম্ভব হয়নি। ART দিয়ে নিয়ন্ত্রিত রোগীর চেয়ে ভ্যাকসিনেটেড রোগীর বেশি কোনো উন্নতি হয়নি।

Functional Cure – স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ
কার্যকরী প্রতিষেধক তৈরি বহুদূরের পথ বিবেচনায় এখন গবেষণাক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে যে ব্যবস্থাটি তা হল ‘Functional Cure’ বা ‘স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ’। বর্তমানে ART চিকিৎসায় HIV নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও এটি চলমান একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার দ্রুত-বার্ধ্যক্যের মত দৃশ্যমান পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ARV প্রয়োগে HIV ভাইরাসের কার্যক্রম শিথিল করা গেলেও ভাইরাসকে ক্ষতিকর অবস্থায় না যেতে দিতে চাইলে রোগীকে প্রতিদিন নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হয় আজীবন। আবার রোগীর ধ্বংসপ্রাপ্ত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও সবসময় আগের অবস্থায় ফিরে আসে না। তাই প্রয়োজন এমন একটি চিকিৎসাব্যবস্থা যাতে নির্দিষ্ট কিছু সময় নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করে আজীবনের মত HIV কে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়। লম্বা সময় ঔষধ সেবন করলেও যেন তা আজীবন না হয় তেমন একটি ব্যবস্থা, যাতে চিকিৎসার ফলাফল হিসেবে স্থায়ীভাবে দেহে HIV সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত হয়ে ক্ষতিকর পর্যায়ের নিচে চলে যায় এবং পুনরায় ক্ষতিকর পর্যায়ে ফিরে আসতে না পারে।

Functional Cure বলতে রোগীর এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যখন রোগীর দেহে HIV ভাইরাসের উপস্থিতি থাকলেও পরিমাণে অত্যন্ত নগণ্য (Undetectable Viral Load) ও স্থায়ীভাবে সুপ্ত অবস্থায় থাকবে, তার কোনো দৃশ্যমান কার্যকারিতা থাকবেন না এবং রোগী সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবে।

এই শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া কিছু নিরীক্ষাধর্মী ঘটনা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের আবিষ্কারের প্রেক্ষিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ বর্তমানে Functional Cure কে অদূর ভবিষ্যতেই হাতের মুঠোয় পেতে যাওয়া কোনো বিষয় হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন।

HIV Controller – আক্রান্ত ব্যক্তিই যখন ভাইরাসের নিয়ন্ত্রক
HIV এবং এর কার্যপ্রণালী সম্পর্কে যখন বিশদভাবে জ্ঞানার্জন শুরু হয় তখন, ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে এমন কতিপয় HIV আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায় যারা HIV সংক্রমণের পরেও ART ছাড়াই দিব্যি সুস্থ ছিলেন বহুদিন। তাদের দেহে সংক্রমণের পরেও HIV মারাত্মকভাবে কার্যকর হতে পারেনি বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত যা সচরাচর দেখা যায় না। পরবর্তীতে এমন আরো HIV সংক্রমিত ব্যক্তি পাওয়া গেছে যাদের দেহে HIV থাকা সত্ত্বেও সেগুলো বেশ কয়েকবছর পর্যন্ত সক্রিয় হতে পারেনি, ফলে সংক্রমিত ব্যক্তি সুস্থ জীবন যাপন করেছেন। HIV আক্রান্তদের মধ্যে এমন ব্যক্তির সংখ্যা অতি সামান্য। মাত্র ০.১ – ০.৫% অর্থাৎ গড়ে প্রতি হাজারে ১-৫ জন।

খোঁজ পাবার পর এধরনের সংক্রমিত ব্যক্তিদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বেড়িয়ে এসেছে দারুণ সব তথ্য। ২০০৫ সাল নাগাদ এসব পরীক্ষানিরীক্ষার ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা থেকে জানা গেল এই নগণ্য সংখ্যক মানুষের মধ্যে রয়েছে জিনগত কিছু বৈশিষ্ট্য এবং তাদের দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় রয়েছে কিছু বিশেষ ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য যার কারণে এসব ব্যক্তির দেহে HIV প্রবেশ করার পরেও বহুদিন কার্যকর হতে পারে না। HIV ভাইরাসের জন্য কঠিন পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পন্ন এসকল ব্যক্তিদের বলা হয় HIV Controller.

আবার ২০১৩ সালের এক গবেষণায় এমন কতিপয় সংক্রমিত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে যারা টানা তিন বছর ART চিকিৎসা গ্রহণের পর প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত HIV Controller এর মত আচরণ করার সম্ভাব্য সক্ষমতা অর্জন করেছেন। অর্থাৎ টানা তিন বছরের ART চিকিৎসা শেষে, অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ঔষধ সেবন না করলেও তাদের দেহে HIV ভাইরাসের কার্যকারিতা স্তিমিত থাকা সম্ভব প্রায় ১০ বছর। এ গবেষণাপত্রটি VISCONTI study report নামে পরিচিত। এ ধরণের রোগীদের বলা হয় Post-treatment Controller.

HIV Controller এবং Post-treatment Controller ব্যক্তিদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা এখনো চলছে। তাদের জৈবিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরো গভীর তথ্য সংগ্রহ করে হয়ত উন্নত টার্গেটেড থেরাপি ও জিনপ্রকৌশলের বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই বৈশিষ্ট্যের প্রয়োগ হয়ে উঠতে পারে Functional Cure এর একটি কার্যকরী পদ্ধতি।

Stem Cell Transplant
২০০৭ সালে একজন রোগী HIV প্রতিরোধে ব্যস্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণের নজর কেড়ে নিয়েছিল আশাতীতভাবে। অপ্রত্যাশিতভাবেই পৃথিবী অবাক হয়ে দেখল একজন Functionally cured HIV patient!

১৯৯৫ সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী Timothy Ray Brown এর দেহে HIV এর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এরপর তিনি পর্যায়ক্রমে ART এবং HAART চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ জীবন যাপন করতে থাকেন। অতিবাহিত হয় দশ বছর। তিনি লিউকোমিয়া’য় আক্রান্ত হন। চিকিৎসক প্রথমে কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন কিন্তু থেরাপি পরবর্তী জটিলতার কারণে কেমোথেরাপির পরিবর্তে চিকিৎসক তাকে স্টেম সেল প্রতিস্থাপন (দেহের যেসব কোষ অন্যান্য কোষে পরিণত হতে পারে, সেগুলোকে stem cell বলে) চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেন। প্রথমে তিনি না বললেও একটা সময় লিউকোমিয়া’র অবস্থার অবনতি হলে তিনি স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

তখন চিকিৎসক একটি নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন কিন্তু তখনো তিনি এতটা আশাবাদী ছিলেন না যে এই নিরীক্ষার ফল সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে। রোগীর সাথে মেলে এবং HIV ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সক্ষম মিউটেশন CCR5 Delta 32 সম্পন্ন একজন ডোনারের নিকট থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করার প্রয়াস গ্রহণ করা হয়। ঠিক এমনই একজন ডোনার পাওয়া যায়। প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। প্রতিস্থাপনের দিন থেকে রোগী অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ঔষধ সেবন বন্ধ করেছিলেন। প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হবার তিন মাসের মধ্যে রোগী সুস্থ হলেন এবং অবিশ্বাস্যভাবে দেখা গেল অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ঔষধ ছাড়াই রোগীর দেহে HIV’র উৎপাত বন্ধ হয়ে গেছে। রক্তে HIV’র মাত্রা ক্ষতিকর মাত্রার অনেক নিচে রয়েছে এবং কোনো বাহ্যিক ঔষধ ছাড়াই HIV নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রয়েছে।

স্টেম সেল প্রতিস্থাপনের পর ART ছাড়াই দেহে স্বয়ংক্রিয়ভাবে HIV নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ২০ মাস পর The New England Journal of Medicine এ পুরো বিষয়টি প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকগণ। পৃথিবীর প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র Functional Cure প্রাপ্ত HIV আক্রান্ত ব্যক্তি Timothy Ray Brown নিজেকে আবিষ্কার করেন “The Berlin Patient” হিসেবে খ্যাত একজন ব্যক্তি হিসেবে।

হ্যাঁ, নির্দিষ্ট মিউটেশন থাকা ডোনারের স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করার পরে Berlin Patient ফাংশনাল কিউর পেলেও এই পদ্ধতি HIV নিয়ন্ত্রণের গ্রহণযোগ্য সেই ‘আরাধ্য’ পদ্ধতি নয়। কারণ Steam cell Transplant প্রক্রিয়াটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এই Berlin Patient কেই পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আবার লিউকোমিয়া’র জন্য একই ধরনের Stem cell transplant প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল যা প্রথমবারের মত সফল ছিল না। তিনি কোমা, প্যারালাইসিস অর্থাৎ প্রায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন সুদীর্ঘ ছয় বছরের চিকিৎসা ও পরিচর্যায়। যেখানে HAART এর মত মৃত্যুঝুঁকিহীন চিকিৎসা রয়েছে সেখানে এতটা ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি চিকিৎসাবিজ্ঞানের নিয়মানুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়।

এছাড়া ২০০৮ ও ২০১০ সালে বোস্টনে পর্যায়ক্রমে দুজন HIV সংক্রমিত রোগীর উপর Berlin Patient এর মতই stem cell transplant পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। এদের দুজনের পরিচিতি “The Boston Patient” হিসেবে। প্রাথমিকভাবে আশার আলো দেখালেও পরবর্তীতে তা টেকেনি। প্রথমে মাসখানেক ART ছাড়াই এদের দেহে HIV খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না অর্থাৎ সুপ্ত অবস্থায় ছিল এবং পরে পুনরায় HIV’র তৎপরতা দেখা দেয়। অর্থাৎ এ দুজন Functional Cure লাভ করতে পারেননি।

Berlin Patient এর সফলতার কেস স্টাডি আর একই প্রক্রিয়ায় Boston Patient এর বিফলতার কেস স্টাডি থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ Functional Cure এর দেখা সরাসরি না পেলেও দুটো বিষয় স্পষ্টভাবে জেনেছেন যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
১. Functional Cure কোনো ‘রূপকথা’ নয়। এটি ‘বাস্তব’ এবং ‘সম্ভব’।
২. CCR5 Delta32 মিউটেশন এবং Stem cell Transplant এই দুই বিষয়ের গভীর গবেষণায় Functional Cure এর জন্য প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসবে যা কাজে লাগাতে পারলে হয়ত এই মিউটেশনকে কেন্দ্র করেই অদূর ভবিষ্যতে Functional Cure এর দেখা পাওয়া সম্ভব। এমনকি জিনপ্রকৌশলকে কাজে লাগিয়ে হয়ত HIV সংক্রমিত ব্যক্তিকে স্থায়ীভাবে HIV Controller এ রূপান্তরিতও করা যাবে।

CRISPR/Cas9 gene editing Technology
জীববিজ্ঞানের আণুবীক্ষণিক পরিসরে জিন প্রকৌশল এই শতাব্দীর অন্যতম যুগান্তকারী সাফল্য। চিকিৎসাবিজ্ঞানে জিন প্রকৌশলের ব্যবহারের একটি হচ্ছে জিন এডিটিং। ইতোপূর্বে দুটো পদ্ধতিতে জিন এডিটিং করা হত – ZFNs এবং TALENs. এই দুটো পদ্ধতির সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র ও কার্যকারিতা ছিল। সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে আরো উন্নত, সরল ও দক্ষ জিন এডিটিং প্রযুক্তি যার নাম CRISPR/Cas9.
CRISPR এর পূর্ণরূপ – Clustered Regularly Interspaced Short Palindromic Repeats
Cas9 হচ্ছে এই পদ্ধতির প্রধান একটি প্রোটিন।

বিজ্ঞানযাত্রার “নতুন প্রযুক্তি CRISPR-Cas9 (ক্রিসপার-ক্যাস-নাইন)” নিবন্ধটি এই নব্য জিন এডিটিং প্রযুক্তি সম্পর্কে খানিকটা বিস্তারিত ধারণা দেবে। এছাড়া জিন প্রকৌশল নিয়ে আরো বিস্তারিত থাকবে এই নিবন্ধ সিরিজের পরবর্তী একটি পর্বে।

দ্রুতগতির পুনঃউৎপাদনচক্র (Replication Cycle) ও অত্যধিক হারে মিউটেশনের কারণে HIV’র বিরুদ্ধে তিন যুগেও কোনো কার্যকর প্রতিষেধক আবিষ্কৃত না হওয়ায় ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় যে গুড়ে বালি পড়েছিল সে বালি অপসারণের ভূমিকায় যেন অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে CRISPR/Cas9 প্রযুক্তি।
সহজে ও সংক্ষেপে বললে; এই জিন এডিটিং পদ্ধতির সাহায্যে জীবিত কোষের DNA এর কিছু অংশ কেটে বাদ দেয়া যায়, কিছু অংশ পূর্বনির্ধারিত DNA sequence দিয়ে পরিবর্তন করা সম্ভব। আর সংক্রমিত ব্যক্তির দেহ থেকে HIV ভাইরাস দুর করার মোক্ষম একটি উপায় ঠিক এটিই।

এই নিবন্ধের “HIV এর কোষীয় সংক্রমণ ও বিস্তার” অংশে বলা হয়েছিল, HIV সংক্রমণে ভাইরাল DNA পোষক DNA তে একীভূত হয়ে পোষক কোষকে প্রো-ভাইরাসে পরিণত করে। এই প্রো-ভাইরাস থেকে তৈরি হতে থাকে নতুন নতুন ভাইরাস।
CRISPR/Cas9 পদ্ধতির সাহায্যে প্রো-ভাইরাসের ভাইরাল DNA অংশ ছেঁটে ফেলতে পারলে, কিংবা আংশিক কেটে ফেলে ভাইরাল জিনোম অকার্যকর করতে পারলেই সংক্রমিত পোষক কোষের মুক্তি মিলবে HIV এর অভিশাপ থেকে। প্রাথমিকভাবে ART চিকিৎসা বজায় রেখে ভাইরাল লোড নিয়ন্ত্রণে রেখে সঙ্গে CRISPR/Cas9 জিন এডিটিং পদ্ধতিতে সংক্রমিত প্রো-ভাইরাস এবং সুপ্ত অবস্থায় থাকা সংক্রমিত কোষকে ভাইরাস মুক্ত করতে পারলেই মিলবে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সেই আকাঙ্ক্ষিত মুক্তি ও পরিপূর্ণ সুস্থতা।

স্বাভাবিকভাবেই ভ্রূণ পর্যায়ে কিংবা সেল কালচারের সময় পরীক্ষাগারে জিন এডিটিং এর তুলনায় জীবদেহের কার্যকরী কোষে জিন এডিটিং অনেক বেশি জটিল। এই জটিল কাজটিই তুলনামূলকভাবে সহজে ও দক্ষতার সাথে করা সম্ভব হচ্ছে নতুন এই জিন এডিটিং প্রযুক্তির সহায়তায়। HIV’র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এই পদ্ধতির গবেষণা ব্যাপকভাবে চলছে। HIV নিরাময়ে CRISPR/Cas9 পদ্ধতি শীঘ্রই পরীক্ষামূলকভাবে প্রাইমেট মডেলে প্রয়োগ করা হবে এবং প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করবে। হয়ত CRISPR/Cas9 পদ্ধতির হাত ধরে শুধু Functional Cure নয়, সম্ভব হবে কাঙ্ক্ষিত HIV Elimination.

HIV-AIDS গবেষণাকালের চুম্বকাংশ

তিন যুগেও কার্যকরী প্রতিষেধকের অভাবে আপাতদৃষ্টিতে HIV গবেষণা মন্থর গতিতে এগুচ্ছে মনে হলেও জটিলতার তুলনায় মোটেও তেমন নয়। উপরন্তু রয়েছে গবেষণাক্ষেত্রে চিকিৎসা-নৈতিকতা সংক্রান্ত নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা। এসকল বিপত্তির মাঝেও HIV সংশ্লিষ্ট গবেষণা কার্যক্রম যে থেমে থাকেনি তা গবেষণার টাইমলাইনের দিকে তাকালেই উপলব্ধি করা যায়।

HIV-AIDS গবেষণার প্রথম দশক অর্থাৎ ৮০’র দশক চলে গেছে ভাইরাসের আপাদমস্তক আণুবীক্ষণিক গঠন ও কার্যকারিতা বুঝতে বুঝতে। পরবর্তী দশক থেকেই গবেষণার ফলাফল হিসেবে আসতে শুরু করেছে HIV প্রতিরোধে প্রাথমিক সফলতা। ৯০’র দশকে সংক্রমিত মা থেকে শিশুতে সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষমতা এবং দেহে ভাইরাল লোড নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপির সফলতা, এই দশকের HIV গবেষণার অন্যতম প্রধান সাফল্য।

গবেষণার তৃতীয় দশক তথা এই শতাব্দীর প্রথম দশকে generic antiretroviral drugs এর আবিষ্কার HAART চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতিসাধনের মাধ্যমে দেহে HIV এর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব করে তোলে, যাতে HIV সংক্রমণ AIDS পর্যায়ে যেতে পারে না। এছাড়া এই দশকে প্রথমবারের মত কোনো ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সংঘটিত হয় এবং স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে প্রথম কোন ব্যক্তি Functional Cure প্রাপ্ত হন।


বর্তমানে আমরা HIV গবেষণার চতুর্থ দশক পার করছি। এই দশকে অণুজীববিজ্ঞান ও জিন প্রকৌশলের উন্নতির ফলে HIV গবেষণায় পাওয়া যাচ্ছে অচিন্তনীয় সাফল্য। যে ‘Elimination’ এবং ‘Eradication’ শব্দবন্ধ HIV সংক্রমণের ক্ষেত্রে একপ্রকার ‘প্রায় অসম্ভব’ চিন্তা করা হত এই দশকের শুরুতেও; সেই শব্দবন্ধই দশকের শেষভাগে এসে অত্যাধুনিক অণুজীববিজ্ঞান, ন্যানোটেকনোলজি এবং জিন প্রকৌশলের সম্মিলিত শক্তিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের নাট্যমঞ্চে এসে হাজির হয়েছে নবউদ্যোমে। হয়ত অদূর ভবিষ্যতেই এসব অত্যাধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে HIV কে অন্ততপক্ষে ‘পোষ মানানো’ সম্ভব হবে।

তথ্যসূত্র : –

১. Fine structure of human immunodeficiency virus (HIV) and immunolocalization of structural proteins – Institute of Virology, Freie Universität Berlin
DOI: 10.1016/0042-6822(87)90449-1, PMID: 3643678, NCBI link

২. [Book] Molecular Cell Biology. 4th edition : Section 6.3 – Viruses: Structure, Function, and Uses (NCBI link)
by Harvey Lodish ,‎ Arnold Berk,‎ Lawrence Zipursky,‎ Paul Matsudaira,‎ David Baltimore,‎ James Darnell
ISBN-13: 978-0716737063, ISBN-10: 071673706X

৩. Defining Life: The Virus Viewpoint – Origins of Life and Evolution of Biospheres, The Journal of the International Astrobiology Society (Springer link)
DOI: 10.1007/s11084-010-9194-1, PMID: 20198436, PMCID: PMC2837877, NCBI link, BAK link

৪. Human Immunodeficiency Virus (HIV) – Transfusion Medicine and Hemotherapy (Karger link)
DOI: 10.1159/000445852, PMID: 27403093PMCID: PMC4924471, NCBI Link, BAK link

৫. HIV Life Cycle: Overview – Frank Kirchhoff, Institute of Molecular Virology, Ulm University Medical Center, Ulm, Germany (researchgate link)
DOI: 10.1007/978-1-4614-9610-6_60-1, Springer link, In Book: Encyclopedia of AIDS

৬. [Book] Encyclopedia of AIDS edited by Thomas J. Hope, PH.D; Douglas D. Richman, MD; Mario Stevenson
Springer link, ISBN-13: 9781493971022, ISBN-10: 1493971026

৭. The Immune System-in More Detail – Nobelprize.org

৮. Dissecting How CD4 T Cells Are Lost During HIV Infection – Cell Host & Microbe
DOI: 10.1016/j.chom.2016.02.012, PMID: 26962940, PMCID: PMC4835240, NIHMSID: NIHMS763557, NCBI link, BAK link

৯. Antiretroviral drugs used in the treatment of HIV infection – U.S. Food & Drug Administration

১০. Review: The discovery and development of antiretroviral agents – Antiviral Therapy, International Medical Press
DOI: 10.3851/IMP2896, PMID: 25310317, NCBI link, WHO link, BAK link

১১. History of HAART: The true story of how effective multi-drug therapy was developed for treatment of HIV disease – Retrovirology, BioMed Central
DOI: 10.1186/1742-4690-3-S1-S6, PMCID: PMC1716971, NCBI link, BAK link

১২. New guidance on prevention of mother-to-child transmission of HIV and infant feeding in the context of HIV – World Health Organization (WHO)

১৩. Prevention of mother-to-child transmission (PMTCT) – World Health Organization (WHO)

১৪. Antiretroviral drug regimens to prevent mother-to-child transmission of HIV: a review of scientific, program, and policy advances for sub-Saharan Africa – Current HIV/AIDS Reports (NCBI link)
DOI: 10.1007/s11904-013-0154-z, PMID: 23440538, PMCID: PMC3644371, NIHMSID: NIHMS449644, Springer link, BAK link

১৫.  Past, present and future: 30 years of HIV research – Nature Reviews, Microbiology
DOI:10.1038/nrmicro3132, PMID: 24162027, NCBI link, BAK link

১৬. Post-Treatment HIV-1 Controllers with a Long-Term Virological Remission after the Interruption of Early Initiated Antiretroviral Therapy ANRS VISCONTI Study – PLOS Pathogens Journal
DOI: 10.1371/journal.ppat.1003211, PMID: 23516360, PMCID: PMC3597518, NCBI link, BAK link

১৭. Long-Term Control of HIV by CCR5 Delta32/Delta32 Stem-Cell Transplantation – The New England Journal of Medicine
DOI: 10.1056/NEJMoa0802905, PMID: 19213682, BAK link

১৮. I Am the Berlin Patient: A Personal Reflection – AIDS Research and Human Retroviruses (NCBI link)
DOI: 10.1089/aid.2014.0224, Publisher link, PMID: 25328084, PMCID: PMC4287108, BAK link

১৯. Stem-cell transplant wipes out HIV – Nature News
DOI:10.1038/news.2009.93

২০. Hopes of HIV cure in ‘Boston patients’ dashed – Nature News
DOI:10.1038/nature.2013.14324

২১. Current application of CRISPR/Cas9 gene-editing technique to eradication of HIV/AIDS – Gene Therapy, Nature Journal
DOI: 10.1038/gt.2017.35, PMID: 28471431, NCBI link, BAK link

২২. The Ethics of HIV Research in Developing Nations – Bioethics
DOI: 10.1111/1467-8519.00118, PMID: 11657295, NCBI link, BAK link

২৩. Center for Disease Control and Prevention (CDC)

২৪. World Health Organization (WHO)

২৫. Howard Hughes Medical Institute

২৬. Nobelprize.org

Comments

Avatar

S. A. Khan

Liberty, Love & Peace. মুক্তি, শান্তি ও প্রেম

আপনার আরো পছন্দ হতে পারে...

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
জানান আমাকে যখন আসবে -
guest
8 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
শাহাদাত হোসাইন
শাহাদাত হোসাইন
6 বছর পূর্বে

গবেষণাধর্মী এবং অত্যন্ত পরিশ্রম সাধ্য লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবা।
বাংলায় এধরণের গবেষণাধর্মী লেখা নেই বললেই চলে। আশা করছি ভবিষ্যতে বিজ্ঞানযাত্রার কাছ থেকে এধরণের আরো অনেক কিছু শিখতে পারব।
লেখক এবং বিজ্ঞানযাত্রার জন্য শুভ কামনা রইল।

mirmkhlaid
6 বছর পূর্বে

চমৎকার লিখা। ফাংশনাল কিউর আর ভ্যাকসিনের কথা নিয়ে এসে দুটির পার্থক্য ভালভাবে বুঝিয়েছেন। ক্রিসপার কাস ৯ আর বার্লিন প্যাশেন্ট এইচআইভির আলোচিত বিষয়টি নিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ। ক্রিসপারকাস৯ এর ট্রায়াল এখনো চলছে (খুববেশি আশাবাদী নই)। বার্লিন প্যাশেন্টে কাজ করলেও (যেহেতু সে কঠিন এবলেশন থেরাপীতে গিয়েছিলো), বাস্তবে CCR5 এর গবেষণা খুব বেশি সুফল দেখনি, কারণ CCR5 আর৫ ট্রপিক ভাইরাসের জন্য কাজ করলেও আর৪ ট্রপিকে কাজ করে না। নতুন আইডিয়া হিসেবে “শক এন্ড কিল” ও “ব্লক এন্ড লক” থেরাপী কাজ চলছে যা ডিএনএর এপিজেনেটিক্সকে টার্গেট করে। কিছু সংশোধন জরুরী আপনার লেখায়: ১. “ভাইরাস হল আণুবীক্ষণিক পরজীবী”>> ভাইরাস অতিআণুবীক্ষণিক। আপনি অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে… আরো পড়ুন

mirmkhlaid
Reply to  S. A. Khan
6 বছর পূর্বে

কারগার পাবলিকেশন্সে নি:সন্দেহে অনেক ভালো লিখা এবং আর্টিকেল আছে। আমার করা মন্তব্য হয়তো একপেষে হয়ে গেছে। প্রাতিষ্ঠানিক বলে আমি পুরো মন্তব্যকে গুলিয়ে ফেলেছি। সঠিক মন্তব্য হবে, এইচআইভির এর তথ্যের ক্ষেত্রে আমার করা মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিচ্ছি: এইচআইভি গবেষণার জন্য কারগারের চাইতে Nature, Cell, Science, JVI, NEJM, PNAS, eLIFE ইত্যাদি (ভালো ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর) জার্নাল ফলো করা বেশি ভালো । DOI থাকা মানে আপনার পাবলিকেশন্স একটি স্বতন্ত্র আইডেন্টিটি রয়েছে, অন্যদিকে এনসিবিআই/পাবমেড এ পাবলিকেন্স আসা মানে আপনার গবেষণা অন‌্য গবেষকদের কাছে কিছুটা গ্রহণযোগ্য। কিন্তু একটি গবেষণা কতটা স্বতন্ত্র, কতটা বিশ্বাসযোগ্য, কতটা বেশি তথ্যপূর্ণ তা নির্ভর করে প্রকাশিত জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ও সাইটেশনের উপরে। ধরুন,… আরো পড়ুন

mirmkhlaid
Reply to  S. A. Khan
6 বছর পূর্বে

আপনি এই সাইটে দেখতে পারেন : http://jcr.incites.thomsonreuters.com/JCRJournalHomeAction.action

এছাড়া গুগল স্কলারে যেকোন আর্টিকেলের সাইটেশন এবং কতগুলো সেল্ফসাইটেশন সেটাও দেথতে পাবেন। scholar.google.com/citations (যদিও একাউন্ট লাগতে পারে)

mirmkhlaid
Reply to  S. A. Khan
6 বছর পূর্বে

আমার পুরো কমেন্টটি ছিলো “ভাইরাস অতিআণুবীক্ষণিক। আপনি অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে পারবে না। ইমিউনোফ্লোরোসেন্সে হয়তো তার কিছু প্রোটিনের উপস্থিতি নিশ্চিত হতে পারবেন, কিন্তু সেটা পুরো ভাইরাস নয়।” >> অতিআণুবীক্ষণিক মানে হচ্ছে আপনাকে স্টেশালাইড মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখতে হবে। ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ অবশ্যই অনুবীক্ষণ যন্ত্র; তবে আপনি যখন বললেন ‘ভাইরাস আণুবীক্ষণিক প্রাণী’ সেটা বুঝায় যে আপনি সাধারণ মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখতে পারবেন, যেটা ভাইরাসের সনাক্তকারী বৈশিষ্টের বিরোধী। ভাইরাসকে অতিআণুবীক্ষণিক এইজন্যই বলায় হয়, কারণ সেটা ভাইরাসের আকার কত ক্ষুদ্র এবং সেটা সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখা যাবেনা। আণুবীক্ষণিক প্রাণীদের ক্ষেত্রে আপনি তাদেরকে আকারের ভিত্তিতে হয়তো সনাক্তকরতে পারবেন, ভাইরাসের ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য নয়, এমনকি সনাক্ত করার… আরো পড়ুন

8
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x