অমরত্বের গবেষণায় বিজ্ঞান : সপ্তম পর্ব – কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ

প্রথম পর্বে ছিল জীবন, মৃত্যু, প্রাণ, চিকিৎসাবিজ্ঞানে মৃত্যুর ধারণা; দ্বিতীয় পর্ব ছিল প্রকৃতিতে অমরত্বের উদাহরণ নিয়ে, তৃতীয় পর্বে ছিল মৃত্যুকে তাড়িয়ে বেড়ানো আবিষ্কার ও গবেষণার আণুবীক্ষণিক দিক ভ্যাকসিন ও অ্যান্টিবায়োটিক এর সফলতার ইতিহাস, চতুর্থ পর্ব সাজানো হয়েছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের শল্য চিকিৎসা (সার্জারি) বিভাগের বৈপ্লবিক আবিষ্কার অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিষয়ে। ‘মরণব্যাধি ক্যান্সার’ থেকে ‘মরণব্যাধি’ বিশেষণটি দূর করার জন্য চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী মহলে যেসকল কর্মকাণ্ড চলছে ও ইতোমধ্যেই যেসব সফলতা পাওয়া গেছে সেগুলোর তথ্যের সমারোহ ছিল পঞ্চম পর্বে। HIV-AIDS-এর বিরুদ্ধে গড়ে তোলা প্রতিরোধে সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সাফল্যের ইতিহাস বর্ণিত ছিল ষষ্ঠ পর্বে

অত্যাধুনিক শল্য চিকিৎসা ব্যবস্থার অঙ্গ প্রতিস্থাপন পদ্ধতি কিভাবে প্রচুর মরণাপন্ন রোগীকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে নিশ্চিত মৃত্যুর দুয়ার থেকে, তা চতুর্থ পর্বে দেখেছিলাম। কিন্তু এ পদ্ধতির একটি বড় সীমাবদ্ধতা হল অঙ্গ/প্রত্যঙ্গের যোগানের স্বল্পতা বা Organ Shortage। মরণোত্তর দেহদান ও স্বেচ্ছায় প্রত্যঙ্গ প্রদান ব্যতীত অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব হয় না। তাই প্রয়োজনের তুলনায় প্রতিস্থাপনযোগ্য প্রত্যঙ্গের যোগান অপ্রতুল। এতে অনেক রোগী যথাসময়ে প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গ না পেয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে Artificial Organ বা কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ। নানাবিধ কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ, এ সংক্রান্ত আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণার তথ্য নিয়েই সাজানো হচ্ছে সপ্তম পর্ব।

কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ কী?

কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ হচ্ছে এমন জৈব কিংবা অজৈব দেহাংশ বা যন্ত্র ব্যবস্থা যা দেহের ত্রুটিপূর্ণ জৈবিক অঙ্গের স্থানে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দেহের সাথে সংযুক্ত থেকে সেই জৈবিক অঙ্গের সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা করে রোগীকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন প্রদান করে। এছাড়া কখনো কখনো ত্রুটিপূর্ণ অঙ্গের সাথে কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ সহায়ক হিসেবে সংযুক্ত করা হয়।

বহুল প্রচলিত কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ সমূহ

আংশিক কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম হাড়, হাড়ের সংযোগস্থল ও ত্বক। আমাদের দেশে যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা ও অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে তাতে এই কৃত্রিম প্রত্যঙ্গগুলোর সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। Bio Materials প্রযুক্তির উৎকর্ষে বর্তমানে এমন সব রাসায়নিক দ্রব্যের উদ্ভব ঘটেছে যেগুলো দেহাভ্যন্তরে স্থাপন করা যায় জৈবিক দূষণ (Contamination) ও সংক্রমণের (Infection) সম্ভাবনা ছাড়াই। দুর্ঘটনায় গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হাড়ের চিকিৎসায় সিলিকন রাবারের তৈরি হাড় প্রতিস্থাপন করা হয়। এছাড়া হাঁটু ও শ্রোণিদেশের হাড়ের সংযোগস্থলের চিকিৎসায় প্লাস্টিক, ধাতব বল এবং পলিমারাইজড সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের প্রতিস্থাপনে ব্যবহার করা হয় Collagen-glycosaminoglycan এবং Silicon Rubber-এর দ্বিস্তরবিশিষ্ট বিশেষায়িত পর্দা, যাকে আমরা ‘প্লাস্টিক সার্জারি’ বলে জানি। তবে ত্বকের সম্পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম কোনো কৃত্রিম ত্বক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। সিলিকন ত্বক দেহের আবরণ হিসেবে প্রতিস্থাপন করা হয় যা দেহের ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে বাইরের জীবাণু সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। পরিপূর্ণভাবে ত্বকের কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম এমন জৈব ও অজৈব কৃত্রিম ত্বক তৈরির ব্যাপারে গবেষণা চলমান।

কৃত্রিম প্রত্যঙ্গের ধরণ

শুধু হাড় অথবা ত্বক-ই নয়, বর্তমান জৈব রসায়ন ও অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির ফলাফল হিসেবে জীবনের জন্য অপরিহার্য অনেক অঙ্গ যেমন হৃদপিণ্ড, কিডনি ইত্যাদির আংশিক ও পরিপূর্ণ অংশ কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত ও প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে। কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ তৈরিতে ব্যবহৃত পদার্থের ধরন অনুযায়ী একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়
1. Mechanical / Artificial: সম্পূর্ণ অজৈব পদার্থের তৈরি যান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ।
2. Bio-Mechanical / Bio-Artificial: আংশিক অজৈব-যান্ত্রিক ও আংশিক জৈব কোষ দ্বারা প্রস্তুত কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ।
3. Biological: সম্পূর্ণ জৈব কোষ দ্বারা কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুতকৃত প্রত্যঙ্গ যা হুবহু প্রকৃত অঙ্গের মত কাজ করতে সক্ষম।

এদের মধ্যে মেকানিক্যাল ও বায়ো-মেকানিক্যাল কৃত্রিম প্রত্যঙ্গগুলো মূলত অস্থায়ী এবং ব্যবহার করা হয় বায়োলজিক্যাল অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট এর পূর্ব পর্যন্ত রোগীকে জীবিত রাখার উদ্দেশ্যে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় Bridge to Transplant. একমাত্র বায়োলজিক্যাল এবং অত্যাধুনিক কিছু বায়ো-আর্টিফিশিয়াল কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ স্থায়ীভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়। বর্তমানে মেকানিক্যাল ও বায়ো-আর্টিফিশিয়াল কৃত্রিম প্রত্যঙ্গের পরিসর বেশ চওড়া হলেও বায়োলজিক্যাল কৃত্রিম প্রত্যঙ্গের ক্ষেত্র ততটা বিস্তৃত নয়। তবে অত্যাধুনিক Cell Culture, Tissue Culture, Genome Editing, Xenotransplantation ইত্যাদি প্রযুক্তির সহায়তায় বায়োলজিক্যাল কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ তৈরির ক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে।

বাহ্যিক কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ

দেহের বাহ্যিক প্রত্যঙ্গের প্রতিস্থাপনে যান্ত্রিক কৃত্রিম প্রত্যঙ্গের মধ্যে বর্তমানে সফলতার শীর্ষে রয়েছে কৃত্রিম হাত ও কৃত্রিম পা। এই দুটি অঙ্গ মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য না হলেও দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় ও জীবনমান (QoL: Quality of Life) বজায় রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটো অংশ। অত্যাধুনিক কৃত্রিম হাত ও পা বাড়তি সুইচ/ডিভাইস এর সাহায্যে নিয়ন্ত্রণের বদলে স্নায়বিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করে অনেকাংশে স্বাভাবিক হাত ও পায়ের মতই ব্যবহার করা যাচ্ছে। এগুলোকে আরো উন্নততর করার লক্ষ্যে স্পর্শ, ব্যথা ইত্যাদি জৈবিক অনুভূতির সাথে সম্পৃক্ত করার জন্যও গবেষণা চলমান।

Artificial Leg

কৃত্রিম পা একটি বহুল প্রচলিত কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ। যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর প্রায় ৫০০০ রোগীর দেহে কৃত্রিম পা প্রতিস্থাপন করা হয়। এদের বেশিরভাগই রক্তচলাচল জনিত সমস্যার কারণে পা বাদ দেয়া রোগী। এশিয়া অঞ্চলে নানাবিধ কারখানা ও সড়ক দুর্ঘটনার শিকার রোগীর চিকিৎসায় এই কৃত্রিম প্রত্যঙ্গের প্রয়োজন হয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে স্থল মাইনের ফাঁদে পা হারায় বহু মানুষ। পা হারানো এসব ব্যক্তিকে অন্তত স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করার ব্যবস্থা করে দিতে কৃত্রিম পা। এটি একটি কার্যকরী কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ।
বর্তমানে শুধু হাঁটাই নয়, দৌড়ানো, লাফানো এবং খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত, এমনকি উঁচু স্থান বেয়ে উপরে ওঠার জন্যেও উপযুক্ত কৃত্রিম পা রয়েছে। এসকল কৃত্রিম পা Stump & Socket পদ্ধতিতে দেহের সাথে সংযুক্ত থাকে, যা আবার প্রয়োজনে খুলে রাখা যায়। বর্তমানে এমন কিছু কৃত্রিম পা রয়েছে যেগুলো সার্জিক্যাল পদ্ধতিতে দেহের সাথে স্থায়ীভাবে সংযুক্ত করা হয়।

আধুনিক কৃত্রিম পায়ের বিভিন্ন অংশ সিলিকন ইলাস্টোমার, কার্বন ফাইবার ইত্যাদি পদার্থের তৈরি। (Flex-Foot’s prosthetic foot) দেহের সাথে সংযোগস্থলে নরম ও নমনীয়তার প্রয়োজনে সিলিকন এবং নিচের অংশে ওজন বহনের জন্য কার্বন ফাইবার ব্যবহার করা হয়। কার্বন ফাইবার একই সাথে হালকা এবং বেশি লোড বহনে সক্ষম। কিছু কিছু সফেসটিকেটেড কৃত্রিম পায়ের মধ্যে শক লোড শোষণের জন্য স্প্রিং সংযুক্ত থাকে।

অত্যাধুনিক কৃত্রিম পা গুলোতে সংযুক্ত রয়েছে মাইক্রো কন্ট্রোলার এবং নানা ধরণের সেন্সর। (The Otto Bock C-Leg) এগুলোর সহায়তায় কৃত্রিম পা হয়ে উঠেছে প্রায় আসল পায়ের মতই। হাঁটার সময় কৃত্রিম পায়ের অবস্থান, প্রেশার ইত্যাদির তথ্য সংগ্রহ করে সেন্সরগুলো। এসকল তথ্য এক বা একাধিক মাইক্রো কন্ট্রোলারে বিশ্লেষণ করে কৃত্রিম পায়ে সংযুক্ত হাইড্রোলিক ড্যাম্পার ও অন্যান্য অংশের নড়াচড়া এবং স্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রিত হয় প্রায় আসল পায়ের মতই। সিঁড়ি ব্যবহার করার সময় এসব কৃত্রিম পায়ের নড়াচড়া হয় আসল পায়ের মতই ছন্দময়। কম্পিউটারযুক্ত এই ‘বুদ্ধিমান পা’-গুলো যেন পা হারানো ব্যক্তিকে প্রায় সুস্থ পায়ে হাঁটার মতই অনুভূতি প্রদান করে।

বর্তমানে কৃত্রিম পা ব্যবহার করে শুধু স্বাভাবিক হাঁটা ও দৌড়ানোই নয় বরং পর্বতারোহণের মত শক্তিশালী ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শুরু করে নৃত্যের মত সূক্ষ্ম ও শৈল্পিক কাজও করা সম্ভব হচ্ছে অবলীলায়। অত্যাধুনিক কৃত্রিম পায়ের নানা দিক উঠে এসেছে এই TED conference-এ।

New bionics let us run, climb and dance | Hugh Herr

Bionic Hand

কৃত্রিম পায়ের তুলনায় কৃত্রিম হাত আমাদের কাছে অনেকটাই অপরিচিত। কিন্তু কৃত্রিম হাত তৈরির ব্যাপারে চিকিৎসাবিজ্ঞানী, তড়িৎ ও যন্ত্রকৌশলী, Bio Materials Engineer এবং কম্পিউটার প্রকৌশলীগণ একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন এবং ধাপে ধাপে সাফল্যও পাচ্ছেন। কৃত্রিম পায়ের তুলনায় কৃত্রিম হাত সামগ্রিকভাবে যথেষ্ট জটিল। ভরের অনুপাতে হাত মানুষের দেহের শতকরা এক শতাংশ হলেও এর অনুভূতি বহন ও নিয়ন্ত্রণের উভমুখী কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকে আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (Central Nervous System – CNS) শতকরা ত্রিশ শতাংশ। পায়ের তুলনায় হাতের স্নায়বিক সংবেদনশীলতার ধরণ এবং পরিচালনাও যথেষ্ট জটিল। তবে এই জটিলতা কিছুটা কাটিয়ে উঠে বেশ কিছু নির্দিষ্ট পরিচালনায় পারদর্শী কৃত্রিম হাত আবিষ্কৃত হয়েছে ইতোমধ্যেই। বর্তমানে বায়ো-ম্যাটেরিয়ালস প্রযুক্তির উৎকর্ষে হালকা কিন্তু শক্তিশালী নানাবিধ পদার্থ আবিষ্কৃত হওয়ায় কৃত্রিম হাত অতিরিক্ত ভরের বাঁধা অতিক্রম করে বহনযোগ্য অবস্থায় এসেছে। মোটরচালিত হওয়ায় এসকল হাত শব্দের উৎপত্তি করে। তবে আধুনিক Hydraulic Powered Motor এই শব্দকে একেবারে স্বল্প পরিমাণে নামিয়ে আনতে সক্ষম।

বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার (মোবাইল অ্যাপ ইত্যাদি) নির্দেশনা ছাড়া সরাসরি ব্যবহারকারীর স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে চালিত কৃত্রিম হাতের ক্ষেত্রে Myoelectric Control ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত অল্প সংখ্যক নড়াচড়ার জন্য প্রস্তুত হাতের ক্ষেত্রে, বাহুর বিভিন্ন স্থানে স্নায়বিক উদ্দীপনার ফলে সৃষ্ট বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা সংগ্রহ করে কৃত্রিম হাতের সংযোগস্থলে থাকা বিশেষ সেন্সর। সেগুলো পাঠানো হয় কৃত্রিম হাতের সাথে সংযুক্ত কম্পিউটারে (on board computer)। সেখানে এই বৈদ্যুতিক উদ্দীপনার প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করা হয়। হাতের কোন ধরনের নড়াচড়ার জন্য কোন প্যাটার্নে বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা বেশি হয় সেটার হিসাব কষে কৃত্রিম হাতকে নড়াচড়ার নির্দেশ দেয় কম্পিউটার। আর এ কাজটির জন্য ব্যবহৃত নয় মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম যাকে সহজে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’-ও বলা যেতে পারে। তবে এই পদ্ধতিতে কৃত্রিম হাত ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীকে বহুবার চেষ্টা করে নিজেকে শিখতে ও কৃত্রিম হাতকে ‘শেখাতে’ হয় কোন ধরনের বৈদ্যুতিক উদ্দীপনার প্যাটার্নের জন্য কোন পরিচালনা নিয়ন্ত্রিত হবে।

আরো জটিল এবং রিয়েলিস্টিক নড়াচড়ার জন্য তৈরি কৃত্রিম হাতের গঠন, স্থাপন ও কার্যকারিতা আরো জটিল হয়। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি Targeted Motor Reinnervation (TMR). এজন্য শল্যচিকিৎসা ব্যবস্থার (Surgical Procedure) মাধ্যমে ব্যবহারকারীর হাতের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণের বিচ্ছিন্ন স্নায়ুগুলোকে সংযুক্ত করা হয় অন্যান্য পেশির সঙ্গে। এতে হাতের বিভিন্ন নড়াচড়ায় ব্যবহৃত স্নায়ুগুলোর উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত হয় সে সকল পেশি। কৃত্রিম হাতের সংযোগস্থলে সংযুক্ত একাধিক ইলেক্ট্রোড তখন সেই উদ্দীপনা গ্রহণ করে। ভিন্ন ভিন্ন পেশি উদ্দীপ্ত হওয়ায় ইলেকট্রোডগুলো আরো নির্দিষ্টভাবে সিগন্যাল গ্রহণ করতে পারে অত্যাধুনিক Electromyogram (EMG) পদ্ধতিতে। সে সিগন্যাল মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম প্রসেস করে আরো সুচারুরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কৃত্রিম হাতের নানাবিধ পরিচালনা। এ ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট অল্প কিছু নড়াচড়ার বদলে বেশ চওড়া পরিসরে কৃত্রিম হাত পরিচালিত হতে পারে।

কৃত্রিম হাতের সংযোগস্থলের বদলে EMG ইলেক্ট্রোডগুলো সরাসরি পেশিতে সংযোগ করা যায় কিনা সে গবেষণা চলছে। এছাড়া Sonomyography পদ্ধতিতে Ultrasound ব্যবহার করে TMR সংযুক্ত পেশির সংকোচন-প্রসারণ নির্ণয়ের মাধ্যমে উদ্দীপনা গ্রহণ করা যায় কিনা সেটি নিয়েও গবেষণা চলছে। এ পদ্ধতিতে শুধু উদ্দীপনাই নয়, হাতে প্রযুক্ত বল সংক্রান্ত তথ্যও সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে আরো নির্দিষ্টভাবে ও বৃহৎ পরিসরে কৃত্রিম হাতের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

পূর্ণাঙ্গ কৃত্রিম হাতের আবিষ্কার এখন পর্যন্ত যে অংশে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে সেটি হচ্ছে ‘ত্বকের অনুভূতি’। কৃত্রিম হাত দিয়ে কোনো কিছু ধরার পর তার অনুভূতি মস্তিষ্কে না পৌঁছালে সেই কৃত্রিম হাত ঠিক যেন পূর্ণতা পায় না। কৃত্রিম হাতে কোনো কিছু ধরলে যাতে যথাযথ বল প্রয়োগ হয়, বেশি বল প্রয়োগে ভেঙ্গে না যায় কিংবা কম বল প্রয়োগে পিছলে না যায় সেজন্য কিছু সেন্সর সংযুক্ত থাকে। কিন্তু সেটি ব্যবহারকারীকে কোনো অনুভূতি প্রদান করে না। কৃত্রিম হাতের সংযোগস্থলে সংযুক্ত ইলেক্ট্রোডের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে অনুভূতি প্রদান করা যায় কিনা সেটি নিয়ে গবেষণা চলছে। স্পর্শ এবং ব্যথার অনুভূতি সংক্রান্ত কিছু গবেষণা থেকে এ ব্যাপারে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

বর্তমানে বায়োনিক হাত তৈরির গবেষণার প্রধান ও সর্বোচ্চ  লক্ষ্য হচ্ছে একটি বায়ো-মেকাট্রনিক (Biomechatronic) কৃত্রিম হাত তৈরি করা। এর বহিরাবরণ হবে প্রকৃত হাতের মত। এটি সরাসরি দেহের প্রান্তিক স্নায়ুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সংযুক্ত থাকবে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দ্বিমুখী স্নায়বিক তথ্য আদান প্রদান করবে এবং পরিপূর্ণভাবে পরিচালিত হবে। ফলে ব্যবহারকারীকে আসল হাতের মতই নানাবিধ অনুভূতি প্রদান করবে। আশা করা হচ্ছে আগামী দশ বছরের মধ্যেই এমন, অন্তত খুব কাছাকাছি মানের কৃত্রিম হাত তৈরি করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে কৃত্রিম হাত প্রযুক্তি কতটা উন্নত অবস্থায় পৌঁছেছে সে সম্পর্কে দৃশ্যমান ধারণা পাওয়া যাবে The Guardian এর  Beyond bionics: how the future of prosthetics is redefining humanity সংক্ষিপ্ত ডকুমেন্টারিতে।

Beyond bionics: how the future of prosthetics is redefining humanity

অভ্যন্তরীণ কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ

হাত কিংবা পা হারিয়ে একজন মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে না পারলেও অন্তত বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু দেহাভ্যন্তরের জটিল জৈব প্রত্যঙ্গ যেমন হার্ট, লিভার, কিডনি, ফুসফুস ইত্যাদি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেললে রোগীর প্রাণসংশয় দেখা দেয়। এ ধরনের রোগীকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা হচ্ছে অঙ্গ প্রতিস্থাপন, যা নিয়ে বিষদ আলোচনা ছিল চতুর্থ পর্বে। কিন্তু অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে একটি বড় শর্ত হচ্ছে যথোপযুক্ত ডোনার পেতে হবে। ডোনার পাওয়া না গেলে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা এক প্রকার অসম্ভব ছিল। এই সমস্যার সমাধানকল্পে উঠে এসেছে কৃত্রিম প্রত্যঙ্গের গবেষণা। বর্তমানে এসব গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গের পরিবর্তে নানাবিধ জৈব ও অজৈব কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ আবিষ্কৃত হচ্ছে। এগুলো দেহে সংযোজন ও প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে উপযুক্ত ডোনার পাবার আগ পর্যন্ত (as a bridge to transplant)। এমনকি এসব কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে রোগী বেশ লম্বা সময় ধরে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনও করতে সক্ষম হচ্ছেন।

Total Artificial Heart (TAH)

প্রথম পর্বে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় প্রধানত দুই ধরনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছিল। তার একটি ছিল কার্ডিয়াক ডেথ। বলা যেতে পারে আর্টিফিশিয়াল হার্ট এবং হার্ট ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট প্রযুক্তি মিলে বর্তমানে আমরা তাত্ত্বিকভাবে কার্ডিয়াক ডেথকে জয় করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে কৃত্রিম হৃদপিণ্ড ব্যবহার করে একজন মানুষ জৈব হৃদপিণ্ড ছাড়াই বেঁচে থাকতে সক্ষম। অন্ততপক্ষে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারির আগ পর্যন্ত (as a bridge to transplant)। এমনকি এই কৃত্রিম হৃদপিণ্ড নিয়ে রোগী অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনযাপনও করতে পারছেন।

কয়েক যুগের গবেষণায় পর্যায়ক্রমিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আবিষ্কৃত হয়েছে কৃত্রিম হৃদপিণ্ড Total Artificial Heart (TAH)। সর্বপ্রথম ১৯৫৭ সালে Dr. Willem Kolf এবং Tetsuzo Akutsu, একটি কুকুরের দেহে প্রথম প্রস্তুতকৃত কৃত্রিম হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করেন। ৯০ মিনিট সেই কৃত্রিম হৃদপিণ্ড কুকুরটির দেহে রক্ত সঞ্চালনে সফল হয়েছিল। ১৯৬৭ সালে, হৃদপিণ্ড নিয়ে আক্ষরিক অর্থেই খেলা করা কার্ডিয়াক সার্জন Dr. Chris Barnard সর্বপ্রথম মানবদেহে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করলেন। ১৯৬৯ সালে Dr. Kolf-এর একজন শিক্ষানবিশ, Dr. Liotta, প্রথমবারের মত মানবদেহে পরীক্ষামূলক কৃত্রিম হৃদপিণ্ড ‘Liotta Heart’ প্রতিস্থাপন করলেন। এই কৃত্রিম হৃদপিণ্ড ৬৪ ঘণ্টা ধরে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখে। এরপর রোগীর দেহে একটি মানব হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়। Bridge to Heart Transplant-এর ইতিহাসে সফলতার মাইলফলক স্থাপিত হয়। ইতিহাসের প্রথম কোনো কৃত্রিম হৃদপিণ্ড একজন হৃদরোগীকে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন সার্জারি পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হল। ১৯৮১ সালে Dr. Cooley দ্বিতীয়বারের মত মানবদেহে কৃত্রিম হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করলেন। কৃত্রিম হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের ৫৫ ঘণ্টা পর সেই রোগীর দেহে মানব হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।

১৯৮২ সালে Dr. Kolf-এরই একজন শিক্ষার্থী Robert Jarvik-এর ডিজাইন করা Jarvik 7 মডেলের একটি কৃত্রিম হৃদপিণ্ড Dr. Kolf-এরই আরেক শিক্ষার্থী Dr. William DeVries খুব ঘটা করে ৬১ বছর বয়স্ক একজন হৃদরোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করলেন। এই কৃত্রিম হৃদপিণ্ড রোগীর দেহে কার্যকর ছিল ১১২ দিন। ১৯৮৫ সালে Jarvik 7 মডেলের একটি কৃত্রিম হৃদপিণ্ড ২৫ বছর বয়সী একজন হৃদরোগীর দেহে স্থাপন করা হয়। কৃত্রিম হৃদপিণ্ড স্থাপনের ৯ দিন পর রোগীর দেহে মানব হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপর রোগী জীবিত ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর। কৃত্রিম হৃদপিণ্ডের ইতিহাসে বলা যায় এটিই সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ সফল কৃত্রিম হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন (as a bridge to transplant)।

হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত গুরুতর হৃদরোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে কৃত্রিম হৃদপিণ্ড Jarvik 7-এর সফলতার পর ১৯৯৩ সাল থেকে CardioWest TAH-এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়। ২০০২ সাল পর্যন্ত ৮১ জন হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষমাণ হৃদরোগীর দেহে এই কৃত্রিম হৃদপিণ্ড স্থাপন করা হয়। ৭৯ শতাংশ Survival Rate এবং ৭০ শতাংশ Overall 1 Year Survival হার পাওয়া যায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে। অবশেষে ২০০৪ সালে U.S. Food & Drugs Administration (FDA) কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয় CardioWest TAH. বর্তমানে CardioWest TAH এর একমাত্র স্বীকৃত প্রস্ততকারক হচ্ছে Syncardia এবং তাদের প্রস্তুতকৃত কৃত্রিম হৃদপিণ্ড Syncardia TAH নামে পরিচিত। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চৌদ্দ-শতাধিক Syncardia TAH স্থাপন করা হয়েছে।

Syncardia TAH (Total Artificial Heart) তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত।
1. Implantable Artificial Heart (Ventricles)
2. Drive Line
3. Pneumatic Drive

Implantable Artificial Heart (Ventricles): বায়োপ্লাস্টিকের তৈরি হাউজিং ও ডায়াফ্রামের সমন্বয়ে গঠিত হয় কৃত্রিম হৃদপিণ্ডের বাম ও ডান নিলয় (Left & Right Ventricle)। এই দু’টি অংশ একটি বিশেষ ধরনের বন্ধনীর মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে যাতে করে এটি রোগীর বক্ষপিঞ্জরে সহজে স্থাপন করা যায়।

প্রতিটি Ventricle-এ থাকে দু’টি করে যান্ত্রিক কপাটিকা (Mechanical Valve)। একটি দিয়ে রক্ত এখানে শুধুমাত্র প্রবেশ করতে পারে (In flow valve), অন্যটি দিয়ে শুধু বেরিয়ে যেতে পারে (out flow valve); জৈব হৃদপিণ্ডের মতই। প্রতিটি Ventricle-এর ভেতর বিশেষ মেমব্রেন ডায়াফ্রাম থাকে যেটি অনেকটা বেলুনের মত সংকুচিত প্রসারিত হতে সক্ষম। এই ডায়াফ্রামে দুটি প্রকোষ্ঠ (Chamber) থাকে। একটি Blood Chamber এবং অন্যটি Air Chamber.

Drive Line: প্রতিটি Ventricle-এর Air Chamber-এর সাথে সংযুক্ত থাকে একটি করে টিউব বা ক্যানুলা। এই ক্যানুলা কিছুটা নিচে নেমে এসে উদর ভেদ করে দেহের বাইরে অবমুক্ত হয়। দেহের বাইরে এসে ক্যানুলা দু’টি সংযুক্ত হয় ভিন্ন ধরনের দুটি টিউবের সাথে। এই টিউব দুটিকে বলা হয় Drive Line. ড্রাইভ লাইনের এক প্রান্ত সংযুক্ত থাকে Ventricle Cannula-এর সাথে অপর প্রান্ত সংযুক্ত থাকে একটি নিউমেটিক পাম্পের সাথে, যাকে বলা হয় Driver.

Pneumatic Driver: Ventricle-এর Air Chamber ক্যানুলা হয়ে ড্রাইভ লাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে একটি External Pneumatic Pump-এর সাথে। এই পাম্প নির্ধারিত স্পন্দনে Air Puls এবং Vaccum Puls তৈরি করতে থাকে। এভাবে বায়ুচাপের স্পন্দনের মাধ্যমেই ডায়াফ্রামের Air Chamber সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। Air Chamber-এর সংকোচন ও প্রসারণের সাথে সাথে মেমব্রেন ডায়াফ্রামের অপর পাশে থাকা Blood Chamber যথাক্রমে প্রসারিত ও সংকুচিত হয়। Blood Chamber-এর সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে Total Artificial Heart দেহে রক্ত সঞ্চালনের সেই কাজটাই করে যেটি করতে পারছিল না রোগীর দুর্বল হৃদপিণ্ড।

Pneumatic Driver যখন ভ্যাকুয়াম পালস তৈরি করে তখন এই ঋণাত্মক বায়ুচাপের কারণে Ventricle-এর Air Chamber সংকুচিত হয়। এতে ডায়াফ্রামের অপর পাশে থাকা Blood Chamber-এর প্রসারণ ঘটে। এ সময় inflow valve খুলে যায় এবং outflow valve বন্ধ থাকে। প্রসারিত Blood Chamber-এ হৃদপিণ্ডের Artium থেকে রক্ত প্রবেশ করে। ঠিক পর মুহূর্তে Driver Pump একটি Air Puls উৎপন্ন করে। এই বায়ুচাপ Drive Line বেয়ে চলে যায় Ventricle-এর Air Chamber-এ। তাতে Air Chamber প্রসারিত হয় ও সংশ্লিষ্ট Blood Chamber সংকুচিত হয়। এ সময় Inflow Valve বন্ধ থাকে এবং Outflow valve খুলে যায়। Blood Chamber-এর সংকোচনের ফলে Blood Chamber-এ থাকা রক্ত হৃদপিণ্ডের Aorta এবং Pulmonary Artery হয়ে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে নির্ধারিত স্পন্দনে পর্যায়ক্রমিক সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে কৃত্রিম হৃদপিণ্ড দেহে রক্ত চলাচল বজায় রাখে।

Syncardia TAH-এ নিউমেটিক পাওয়ার প্রদানের জন্য দুই মডেলের ড্রাইভার রয়েছেঃ
1. Companion 2 Hospital Driver
2. Freedom Portable Driver

Companion 2 Hospital Driver: এই ড্রাইভার আকারে তুলনামূলক বড় এবং হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনার উপযোগী। হাসপাতালের অপারেশন রুম এবং পেশেন্ট বেড সাইডে ব্যবহারের উপযোগী, একই সাথে স্থানান্তর যোগ্য। সাধারণত TAH ট্রান্সপ্ল্যান্টের পরে যতদিন রোগীকে হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়, ততদিন এই ড্রাইভার ব্যবহার করা হয়। ড্রাইভারটি শুধু নিউমেটিক পাওয়ার জেনারেটর হিসেবেই কাজ করে না, সাথে কৃত্রিম হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম মনিটরিং এবং বৃহৎ পরিসরে নানা প্যারামিটার নিয়ন্ত্রণের জন্যও ব্যবহার করা যায়। এতে একটি আধুনিক ডিসপ্লে সংযুক্ত থাকে যাতে সংশ্লিষ্ট নানাবিধ ডেটা, গ্রাফ, সেটিং ইত্যাদি প্রদর্শিত হয়। অনুমোদিত চিকিৎসকগণ প্রয়োজনে এ সকল তথ্য ব্যবহার ও সেটিং পরিবর্তন করতে পারেন।

Freedom Portable Driver: তুলনামূলক সুস্থ-সবল ও নবীন রোগীদের ক্ষেত্রে TAH ট্রান্সপ্ল্যান্টের পরে যখন রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল হয় এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনের উপযুক্ত হয়, তখন রোগীকে এই ড্রাইভার দেয়া হয়। এটি ছোট, হালকা (আনুমানিক ৬ কেজি) ও সহজে ব্যাগপ্যাকে বহনযোগ্য। এটি রোগীকে হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ দেয়। এই ড্রাইভার দুটি লিথিয়াম-আয়ন (Li-io) ব্যাটারি দ্বারা পরিচালিত, যা সাধারণ ঘর-বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ এবং গাড়ির চার্জিং পোর্টের মাধ্যমে রিচার্জ করা যায়। এ পর্যন্ত ৩৫০ জন Heart Transplant-এর জন্য অপেক্ষমাণ রোগীর জীবন-মান উন্নত করতে ব্যবহৃত হয়েছে Freedom Portable Driver.

Heart Transplant এবং Total Artificial Heart-এর সমন্বয়ে বর্তমানে সঙ্কটাপন্ন হৃদরোগীগণ সম্পূর্ণ কৃত্রিম উপায়ে বেঁচে থাকতে সক্ষম হচ্ছেন। এর সাথে Heart Xenotransplantation-এর অতি সাম্প্রতিক সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল যেন ‘কার্ডিয়াক ডেথ’-এর বিরুদ্ধে কাঙ্ক্ষিত পরিপূর্ণ বিজয়ের হাতছানি। Xenotransplantation সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে নিবন্ধের শেষ অংশে।

বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে কিডনি অকার্যকর হয়ে যাওয়া মানে ছিল অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু। চল্লিশের দশকে ডায়ালাইসিস মেশিনের আবিষ্কার এবং পঞ্চাশের দশকে প্রথম সফল কিডনি প্রতিস্থাপন, কিডনি রোগের চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে। এরপর থেকে পুরো শতাব্দী জুড়ে ডায়ালাইসিস এবং কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট চিকিৎসা পদ্ধতির উত্তরোত্তর উন্নতি সাধিত হয়ে এসেছে। কিন্তু ডায়ালাইসিসের জটিল, সময় সাপেক্ষ ও ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া আর সেই সাথে কিডনি ডোনারের অপ্রতুলতা কিডনি চিকিৎসায় বৃহৎ অন্তরায় হিসেবে থেকেই গেছে। এই বাধা অতিক্রম করতে গবেষণার জগতে উঠে এসেছে ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ার ক্ষুদ্রতমকরণ ও কৃত্রিম কিডনির ধারণা।

মাইক্রোফ্লুইড ও ন্যানোটেকনোলজির উৎপত্তির পর সত্তরের দশক থেকে ক্ষুদ্রপরিসরে সহজে বহনযোগ্য ডায়ালাইসিস সিস্টেমের গবেষণার কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত তিন ধরনের বহনযোগ্য ডায়ালাইসিস সিস্টেম উল্লেখযোগ্যঃ
1. PAK = Portable Artificial Kidney
2. WAK = Wearable Artificial Kidney
3. iBAK = Implantable Bio-Artificial Kidney 

প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের PAK যথাক্রমে ১০-২৫ কেজি এবং ১.৫-১০ কেজি ভরের। এগুলো সহজে বহনযোগ্য, কখনো সুটকেস আকৃতির এবং ঘরে বসেই ডায়ালাইসিস কার্যক্রম পরিচালনার উপযুক্ত। WAK-এর ভর ৫ কেজির কম; বেল্ট, ভেস্ট ও ব্যাগপ্যাকে বহনযোগ্য। মেমব্রেন ডায়ালাইসিস, ডায়ালাইসেট রিজেনারেশন সিস্টেম, পাম্পিং সিস্টেম, পেশেন্ট মনিটরিং সিস্টেম ও ব্যাটারি সহযোগে প্রস্তুত এই ক্ষুদ্র ডায়ালাইসিস সিস্টেম রোগীকে সহজে চলাফেরা করার সুযোগ প্রদান করে এবং রোগীর জীবন মান (QoL: Quality of Life) উন্নত করে। এ ধরনের কিছু ডিভাইস বর্তমানে Human Trail পর্যায়ে আছে। iBAK হচ্ছে সর্বাধুনিক ন্যানোটেকনোলজি এবং Cell culture/Tissue Culture-এর সমন্বয়ে তৈরি Micro-Electromechanical কৃত্রিম কিডনি যা দেহাভ্যন্তরে স্থাপনের মাধ্যমে পূর্নাঙ্গভাবে জৈব কিডনির প্রায় সমমানের রক্ত পরিশোধনের কাজ করতে সক্ষম।

Dr. Shuvo Roy-এর নেতৃত্বে University of California San Francisco (UCSF)-এর গবেষকদল এবং Dr. William Fissell-এর নেতৃত্বে Vanderbilt University-এর গবেষকদল দেহাভ্যন্তরে প্রতিস্থাপনযোগ্য কৃত্রিম কিডনি আবিষ্কারে কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি UCSF-এর একটি প্রোটোটাইপ কৃত্রিম কিডনি প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হয়ে জিতে নিয়েছে KidneyX-এর ৬৫০,০০০ ডলার মূল্যমানের পুরষ্কার। ২০১০ সালে কৃত্রিম কিডনির একটি খসড়া মডেল নিয়ে কাজ শুরু করে UCSF-এর গবেষক দল। প্রায় একযুগের গবেষণায় সেই মডেল বহুমাত্রায় উন্নত হয়ে প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হয়েছে; এখন সংশ্লিষ্ট গবেষকগণ Human Trial-এর জন্য উপযুক্ত ডিভাইস প্রস্তুতির কাজ করছেন।

Dr. Shuvo Roy-এর নেতৃত্বাধীন The Kidney Project-এর Implantable Boi-Artificial Kidney সাকুল্যে দুটি তাসের প্যাকেটের সমান একটি যন্ত্র। দুটি পরস্পর সংযুক্ত পলি-কার্বনেট হাউজিং নিয়ে গঠিত এই কৃত্রিম কিডনির বহিরাবরণ। প্রথম হাউজিং হচ্ছে মূল ছাঁকনি, Hemofilter. অত্যাধুনিক ন্যানোটেকনোলজির সহায়তায় সুনির্দিষ্ট প্যাটার্নের Biocompatible Nanopore Silicon Membrane-এর অনেকগুলো স্তর সাজিয়ে তৈরি করা হয় Hemofilter. মেমব্রেনগুলো ছাঁকনির কাজ করে। রক্ত থেকে অপদ্রব্য এই সিলিকন মেমব্রেনের ছাঁকনিতে ছেঁকে অপসারিত হয়। রক্ত পরিশোধনের মূল কাজটি করে এই Hemofilter. ধমনী থেকে রক্ত প্রথমে এখানে প্রবেশ করে ও পরিশোধিত হয়। Hemofilter-এর সিলিকন মেমব্রেন ছাঁকনিতে রক্ত থেকে অপদ্রব্যের সাথে ছেঁকে আলাদা হয়ে যায় চিনি, লবণ ইত্যাদি নানাবিধ প্রয়োজনীয় খনিজ এবং প্রচুর পানি। ফলে রক্তের স্বাভাবিক তারল্য এবং pH ঠিক থাকে না। রক্তের এই বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনে কৃত্রিম কিডনির দ্বিতীয় অংশ, Bioreactor.

Hemofilter-এ পরিশোধিত রক্ত এবং খনিজ সমৃদ্ধ বর্জ্য (Ultrafiltrate) দু’টি আলাদা টিউবের মাধ্যমে প্রবেশ করে দ্বিতীয় হাউজিংয়ে, যাকে বলা হয় Bio-reactor. এই অংশ আরেকটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি Cell Culture/Tissue Culture-এর উৎকর্ষের ফলাফল। Living Engineered Tubular Cell (কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত বিশেষ জীবিত কিডনি কোষ) দিয়ে প্রস্তুত করা হয় Boi-reactor. এখানে tubular cell-এর মাধ্যমে Ultrafiltrate থেকে রক্তে পুনরায় শুষে নেয়া হয় প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি ও খনিজ। অপদ্রব্যে থেকে যায় শুধুমাত্র বর্জ্য বা মূত্র। এরপর দুটি আলাদা টিউবের মধ্য দিয়ে যথাক্রমে স্বাভাবিক তারল্য ও pH সমৃদ্ধ রক্ত চলে যায় শিরায় আর বর্জ্য পদার্থ চলে যায় মূত্রথলিতে।

বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও আধুনিক ফিচারের জন্য কৃত্রিম কিডনি গবেষণার জগতে UCSF-এর উদ্ভাবিত কৃত্রিম কিডনি সবচেয়ে এগিয়ে আছে এবং হয়ত অচিরেই প্রতিস্থাপনযোগ্য কৃত্রিম কিডনি হিসেবে Human Clinical Trail-এ অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

  • Immuno-Isolation: এই কৃত্রিম কিডনিতে রক্তের সংস্পর্শে থাকা প্রতিটি অংশের উপরে অত্যন্ত পাতলা অর্ধভেদ্য সিলিকন মেমব্রেনের আস্তরণ রয়েছে। এই মেমব্রেনগুলোর ছিদ্র (Nanopore) পানি ও ছোট খনিজ অণুর জন্য ভেদ্য কিন্তু রক্তের শ্বেত কণিকার জন্য অভেদ্য। তাই রক্ত থেকে অপদ্রব্য নিষ্কাশন ও Ultrafiltrate থেকে পুনঃশোষণ সম্ভব হলেও দেহের immune system থেকে পৃথক থাকে সংশ্লিষ্ট কৃত্রিম অংশসমূহ। ফলে এটি ব্যবহারে Blood Clot, Rejection ইত্যাদির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এজন্য এই কৃত্রিম কিডনি প্রতিস্থাপনের পর Immune Suppression Medicine, Blood Thinner, Anti-rejection Medicine ইত্যাদির ব্যাপক ব্যবহারের দরকার হবে না।
  • Biocompatible Coating: এটিতে ফিল্টারের উপরিতল বিশেষ Biocompatible Film-এর আবরণে ঢাকা থাকে। ফিল্মের উপর দিয়ে রক্তের নিয়মিত প্রবাহের ফলে এখানে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না এবং রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় না।
  • No External Power & Pump: প্রতিস্থাপনযোগ্য কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ হিসেবে এর সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে এতে কোনো বাহ্যিক Power Source (ব্যাটারি)-এর প্রয়োজন নেই। রক্ত প্রবাহের জন্য কোনো অতিরিক্ত পাম্প প্রয়োজন হয় না। দেহের রক্তচাপের ফলেই রক্ত Hemofilter এবং Bioreacto-এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরিশোধিত হতে থাকবে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে UCSF-এর এই কৃত্রিম কিডনির প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে শুকরের দেহে প্রতিস্থাপিত প্রোটোটাইপ রক্তে থাকা অপদ্রব্য সফলতার সাথে পরিশোধন করেছে ৩০ দিন পর্যন্ত; Blood Clot কিংবা Rejection-এর মত বড় কোনো জটিলতা ছাড়াই। গবেষণার পরের ধাপে এই কৃত্রিম কিডনির প্রোটোটাইপ প্রস্তুত করা হবে মানুষের দেহের সমান পরিমাণে রক্ত পরিশোধনের উপযোগী করে। সেটার প্রাথমিক পরীক্ষা করা হবে শুকরের দেহে। সেই পরীক্ষায় সফল হবার পর মানব দেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন পাবে এই কৃত্রিম কিডনি। এক দশকের গবেষণায় কৃত্রিম কিডনি গবেষণা যতটা সফলতা পেয়েছে, আশা করা যায় পরবর্তী এক দশকের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ প্রতিস্থাপণযোগ্য Implantable Bio-Artificial Kidney মৃত্যুপথযাত্রী কিডনি রোগীদের মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

Xenotransplantation: Non-Human to Human Organ Transplant

Xenotransplant শব্দটি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার আবিষ্কার মনে হলেও আসলে এই ব্যবস্থার চর্চার ইতিহাস বহু পুরনো।

সেই সপ্তদশ শতাব্দীতে প্রথম ভিন্ন প্রাণীদেহ থেকে রক্ত মানবদেহে সঞ্চালন প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে Xenotransplant-এর অনুশীলনের সূচনা। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই নানাবিধ জটিলতার সম্মুখীন হয়ে Xenotransfusion অকার্যকরী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। উল্লেখ্য, তখনো “Blood Group”-এর ধারণা আবিষ্কৃত হয়নি। ১৯০০ সালে “Blood Group” আবিষ্কৃত হবার পরে Xenotransfusion-এর ধারণা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হয়। এক শতাব্দী পরে ২০০০ সাল থেকে xenotransplantation প্রযুক্তির উন্নতি ও রক্তের ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে xenotransfusion-এর বিষয়টি গবেষণার জগতে আবার উঠে আসে। বিশেষ করে ২০০২ সালে জেনেটিক্যালি মডিফাইড শুকরের দেহে α1,3-galactosyltransferase gene-এর অপসারণের পর শুকরের রক্ত মানবদেহে ট্রান্সফিউশনের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা অতিক্রম করে। তবে এখনো Red Blood Cell সংশ্লিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে কার্যকর xenotransfusion সম্ভব হয়নি। আশা করা যায় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অগ্রগতির মাধ্যমে এই সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠে xenotransfusion ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে পৌঁছাবে এবং ভবিষ্যতে জেনেটিক্যালি মডিফাইড শুকর Universal Blood Source হিসাবে বিবেচিত হবে।

Skin xenografting গবেষণার সূচনা ঊনবিংশ শতকে। তখন থেকে ত্বকের ক্ষত বিশেষ করে পুড়ে যাওয়া ত্বক পরিবর্তনের চিকিৎসায় বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে। ভেড়া, খরগোশ, কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, মুরগী, কবুতর, ব্যাঙ ইত্যাদি প্রাণীর চামড়া skin xenografting-এর গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলতাও পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু immune system কর্তৃক রিজেকশনের হার এবং cross spices জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাব্যতা বিবেচনায় বৃহৎ পরিসরে এসব প্রাণীর চামড়া skin grafting-এ ব্যবহারের অনুমোদন মেলেনি। পুড়ে যাওয়া ত্বকের ক্ষত চিকিৎসায় সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি সফলতা পাওয়া গেছে তেলাপিয়া মাছের চামড়ার গ্রাফটিং পদ্ধতিতে। তেলাপিয়া মাছের চামড়ার জৈবিক গঠন অনেকটা মানুষের মত। এছাড়া নিম্ন জীবাণু সংক্রমণ ও উচ্চ I collagen-এর উপস্থিতির জন্য পুড়ে যাওয়া ত্বকের চিকিৎসায় তেলাপিয়া মাছের চামড়া ব্যবহৃত হচ্ছে। Nile Tilapia মাছের চামড়ার Xenografting এবং আধুনিক Regenerative Medicine-এর যৌথ প্রয়োগে খুব ক্ষতিকরভাবে পুড়ে যাওয়া ত্বকের সফল চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে।

কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি আবিষ্কৃত হবার পরের দশকের শুরুতে লুইসিয়ানার Tulane University-এর চিকিৎসা বিজ্ঞানী Keith Reemtsma ছয়জন সংকটাপন্ন কিডনি রোগীর দেহে শেষ ভরসা হিসেবে শিম্পাঞ্জির কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। প্রতিস্থাপনের ৪-৮ সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিস্থাপিত কিডনির কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যায় Immune Rejection এবং জীবাণু সংক্রমণের কারণে। মাত্র একজন রোগী শিম্পাঞ্জির কিডনি নিয়ে বেঁচে ছিলেন এবং স্কুলশিক্ষক হিসেবে নিজ কাজে ফিরে যেতে পেরেছিলেন। প্রতিস্থাপনের ৯ মাস পর সেই প্রতিস্থাপিত কিডনির acute electrolyte disturbance-এর ফলে তার মৃত্যু ঘটে। এরপর কিছুদিন বিভিন্ন স্থানের গবেষকগণ শিম্পাঞ্জির কিডনি প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করেছেন কিন্তু উল্লেখযোগ্য সফলতা আসেনি। পরবর্তীতে নানা গবেষণায় দেখা যায় মানুষের জন্য প্রাইমেট অর্গান আকারে ও গঠনে কাছাকাছি হলেও xenotransplantation-এর ক্ষেত্রে প্রাইমেট দেহে থাকা জীবাণু সহজেই স্পিসিস ব্যারিয়ার পার করে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে। ফলে xenotransplantation-এর জন্য Source spices হিসেবে প্রাইমেট অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।

Xenotransplantation-এর অনুশীলনের ইতিহাস অত্যন্ত পুরনো হলেও কার্যকরীভাবে সফল xenotransplantation-এর পথ প্রশস্ত হয়েছে বিগত দশকে। Xenotransplantation-এর ক্ষেত্রে অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর জীবাণু সংক্রমণ ও ইমিউন রিজেকশনের হাত থেকে প্রতিস্থাপিত অঙ্গকে বাঁচাতে ইতোপূর্বে রোগীকে প্রচুর immune suppression drug এবং medication-এর মধ্য দিয়ে যাবার দরকার ছিল। তবুও সাফল্যের সম্ভাবনা ছিল কম।

বিগত দশকের প্রথমভাগে আবিষ্কৃত হয় সর্বাধুনিক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং টুল  CRISPR/Cas9. এই আবিষ্কার ও এর নানাবিধ উপযোগীতার জন্য আবিষ্কারকগণ গত বছর নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন। এই আবিষ্কার xenotransplantation গবেষণায় নতুন দিগন্তের সূচনা করে। Non-Human Source-এর অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার পর Immune Rejection, Infection and Immune Suppression সংক্রান্ত দৃশ্যপটই যায় উল্টে। এখন xenotransplantation-কে সফল করার জন্য প্রতিস্থাপন পরবর্তী ব্যাপক মেডিকেশনের বদলে জেনেটিক্যালি মডিফাইড Non-Human Source থেকে সংগৃহীত অর্গানের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। Organ Source হিসেবে প্রাইমেটের বদলে নজর দেয়া হয়েছে জেনেটিক্যালি মডিফাইড শুকরের দিকে। Non-Human Organ Source হিসাবে প্রাইমেটের বদলে শুকরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে কয়েকটি কারণে। শুকরের ব্রিডিং টাইম কম, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম। কম সময়ে অধিক সংখ্যক শুকর উৎপাদন করা যায়। আবার প্রাইমেট থেকে মানুষে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা অধিক, যেখানে শুকরের দেহ থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশ কম।

জেনেটিক্যালি মডিফাইড শুকরগুলোকে সংক্ষেপে GalSafe Pig, 10-GE Pig ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। 10-GE Pig-এ দশটি জিন পরিবর্তন করে শুকরের দেহে এমন কিছু পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে, যাতে অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গগুলো মানবদেহে প্রতিস্থাপিত হলে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং প্রতিস্থাপন পরবর্তী জটিলতা অনেকাংশেই কমে যায়। দশটির মধ্যে মানবদেহের অ্যান্টিবডির আক্রমণের ফলে রিজেকশনের জন্য দায়ী তিনটি জিন সরিয়ে ফেলা হয়েছে, ছয়টি মানব জিন সংযুক্ত করা হয়েছে যেগুলো প্রতিস্থাপিত প্রত্যঙ্গের জন্য immune acceptance ত্বরান্বিত করে। আর একটি জিন পরিবর্তন করা হয়েছে শুকরের দেহের প্রত্যঙ্গগুলোকে অত্যধিক বড় হয়ে যাওয়া থেকে বিরত রেখে মানবদেহের প্রত্যঙ্গের সমান করে রাখার জন্য।

২০১৫ সালে জেনেটিক্যালি মডিফাইড শুকরের কিডনি প্রতিস্থাপিত হয় একটি বেবুনের দেহে যেটি কার্যকর ছিল ১৩৬ দিন পর্যন্ত। সম্প্রতি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পরীক্ষামূলকভাবে জেনেটিক্যালি মডিফাইড শুকরের দুটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয় একজন ব্রেইনডেড মানুষের দেহে। এই পরীক্ষণ চলেছে ৭৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। এ সময় পর্যন্ত কিডনি দেহে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং ২৪ ঘণ্টায় ৭০০ মিঃলিঃ মূত্র উৎপাদন করে। এই পরীক্ষণ কিডনি xenotransplantation-এর গবেষণায় একটি মাইলফলক। কয়েকটি প্রাইমেট দেহে শুকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করেও যত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়, তার চেয়ে ঢের বেশি তথ্য পাওয়া গিয়েছে এই পরীক্ষণের মাধ্যমে। kidney xenotransplantation সফল চিকিৎসা পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য এখনো আরো গবেষণা প্রয়োজন। তবে আশা করা যায় হয়ত আগামী দশক নাগাদ kidney xenotransplantation বৈশ্বিক কিডনি ডোনার সংকটের প্রধান সমাধান হিসেবে আবির্ভূত হবে।

বিগত দশকে xenotransplantation গবেষণার জগতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে ছিল 10-GE Pig-এর হৃদপিণ্ড। প্রায় পুরো দশক ধরেই প্রাইমেট দেহে জেনেটিক্যালি মডিফাইড শুকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করে এর সফলতা ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুকরের হৃদপিণ্ড নিয়ে কোনো প্রাইমেটের বেঁচে থাকার রেকর্ড সর্বোচ্চ ৯৪৫ দিন, অর্থাৎ প্রায় তিন বছর। ২০০০ সালে International Society for Heart and Lung Transplantation-এর একটি প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছিল প্রাইমেট দেহে শুকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পর কমপক্ষে ৬০ শতাংশ প্রাইমেট যদি অন্তত তিন মাস জীবিত থাকে, তবে এমন জীবিত থাকা প্রাইমেটের সংখ্যা সর্বনিম্ন ১০ হবার পর মানবদেহে শুকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কথা ভেবে দেখা যেতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে অবশেষে গত ৭ জানুয়ারি প্রথমবারের মত ৫৭ বছর বয়সী এক হৃদরোগীর দেহে শুকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপিত হয়েছে। একে মানবদেহে ক্লিনিক্যাল গ্রেড শুকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সূচনা বলে আখ্যায়িত করা যায়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সফলতা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। এখান থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে, সেটা অনেকগুলো প্রাইমেট দেহের প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী। এই xenotransplantation সার্জারিটি ভবিষ্যতে আরো Pig-to-Human Heart xenotransplantation-এর জন্য তো বটেই, উপরন্তু শুকর দেহের আরো নানাবিধ প্রত্যঙ্গের xenotransplantation গবেষণায় অনুপ্রেরণা যোগাবে। Heart xenotransplantation সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ গবেষণার উত্তরোত্তর অগ্রগতির ফলাফলে হয়ত অচিরেই Heart Transplantation, Artificial Heart এবং Heart Xenotransplantation-এর ত্রিমুখী সফলতায় “কার্ডিয়াক ডেথ”-কে সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করা সম্ভব হবে।

Bio-Organ 3D Printing

যান্ত্রিক ও জৈব-যান্ত্রিক কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ তৈরির গবেষণার পাশাপাশি বর্তমানে চলছে জীবিত দেহকোষ দ্বারা তৈরি সম্পূর্ণ জৈবিক প্রত্যঙ্গ আবিষ্কারের গবেষণা। যান্ত্রিক কৃত্রিম প্রত্যঙ্গের তুলনামূলক বৃহৎ আকৃতি, External Power Source (ব্যাটারি)-এর প্রয়োজনীয়তা, দেহের Immune System-এর সাথে সমঝোতা করে দেহাভ্যন্তরে “Foreign Body” স্থাপনের জটিলতা, এবং Organ Transplant-এর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক জৈব প্রত্যঙ্গের অপ্রতুলতা কাটিয়ে উঠতে কৃত্রিম জৈব প্রত্যঙ্গের গবেষণা বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে।

আধুনিক Cell Culture প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও Stem Cell গবেষণার অগ্রগতির ফলে মানব দেহের বাইরে গবেষণাগারের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে দেহের বিভিন্ন কাজের জন্য দরকারি নানাবিধ কোষ তৈরি করা, জীবিত কোষকে বাঁচিয়ে রাখা ও কোষের নিয়ন্ত্রিত বিভাজন সম্ভব হচ্ছে। এই প্রযুক্তির সাথে আধুনিক 3D Printing প্রযুক্তি সংযুক্ত হয়ে কৃত্রিম জৈব প্রত্যঙ্গ প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বর্তমানে Bio-Organ 3D Printing সর্বাধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জৈব উপাদানের তৈরি পূর্ণাঙ্গ কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ তৈরি ছাড়াও Bio 3D Printing-এর আরেকটি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেহাভ্যন্তরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে বায়ো ম্যাটেরিয়ালের Scaffold স্থাপন করে রিজেনারেটিভ মেডিসিনের মাধ্যমে দেহের নিজস্ব রিজেনারেশনকে সহায়তা করে ক্ষতিগ্রস্ত/অসুস্থ প্রত্যঙ্গকে সুস্থ করে তোলা।

৮০’র দশকের শুরুতে শুধুমাত্র অজৈব অ্যাক্রেলিক পলিমার দ্রব্য নির্মাণের উপযোগী 3D Printer আবিষ্কৃত হলেও ৯০’র দশকের শেষ নাগাদ দন্ত চিকিৎসায় জৈব পদার্থের সফল 3D Printing ব্যবহারের মধ্য দিয়ে চিকিৎসাব্যবস্থায় 3D Printing Technology-এর আবির্ভাব ঘটে। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ১০ বছর বয়সী রোগী Luke Massella-এর মূত্রথলির কোষের নমুনা সংগ্রহ করে সেই নমুনা থেকে Bio material-এর তৈরি 3D Printed Scaffold-এর ভেতর Cell Culture পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে দুই মাস সময়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জৈব মূত্রথলি তৈরি করা হয়। তারপর রোগীর দেহে অকার্যকর মূত্রথলির স্থানে প্রতিস্থাপিত হয় এই কৃত্রিম জৈব মূত্রথলি। গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে একটি খরগোশের ক্ষতিগ্রস্ত শ্বাসনালীর অংশবিশেষ প্রতিস্থাপন করা হয় 3D Printed tracheal graft দ্বারা। চার সপ্তাহের পরীক্ষণ শেষে শ্বাসনালীর রিজেনারেশনে এর আশানুরূপ কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয়।

Bio 3D Printer-এ প্রিন্টিং ম্যাটেরিয়াল হিসেবে যা ব্যবহৃত হয়, তাকে সাধারণভাবে বলা হয় ‘বায়োনিক’ (Bionik)। বায়োনিকের মধ্যে রয়েছে জীবিত দেহকোষ, জৈব পদার্থ এবং কার্যকর জৈব অণু। 3D Printing প্রযুক্তির সহায়তায় এসব জৈব পদার্থের বায়োনিক স্তরে স্তরে সাজিয়ে কার্যকরী জটিল কৃত্রিম জৈব প্রত্যঙ্গ তৈরির চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি বায়োনিক উদ্ভাবিত হয়েছে যেগুলো 3D printing-এর মত যান্ত্রিক পদ্ধতির ভেতর দিয়ে গিয়ে পুনরায় স্বাভাবিক দেহকোষের মত আচরণ করে জৈব প্রত্যঙ্গের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে সক্ষম। তাছাড়া Stem cell গবেষণা এখনো পেট্রিডিশের 2D পরিবেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। 3D পরিবেশে Stem Cell-এর আচরণ এখনো গবেষণার বিষয়বস্তু। এছাড়াও Stem Cell খুবই সংবেদনশীল। 3D Printing-এর সময় কোষের উপর যে বাহ্যিক বল প্রযুক্ত হয় তাতে Stem Cell-এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। অন্যান্য বায়োনিকের জীবিত কোষের ক্ষেত্রেও প্রিন্টিং কার্যে প্রযুক্ত বলের ফলে কোষের জৈবিক গুনাগুণ ও কোষ বিভাজনের ক্ষমতা হ্রাস পায়।

এখনো Bio Organ 3D Printing প্রযুক্তি, গবেষণার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এক বা বড়জোর দুই ধরনের দেহকোষের সমন্বয়ে গঠিত অতি সরল প্রত্যঙ্গ তৈরি করার চেষ্টার মধ্যেই এখনো এই গবেষণা সীমাবদ্ধ। বিভিন্ন ধরনের কোষের সমন্বয়ে গঠিত জটিল প্রত্যঙ্গের 3D Printing এখনো আমাদের নাগালের বাইরে। বলা চলে এই প্রযুক্তি এখনো তার আঁতুড়ঘর ছেড়ে বেরোতে পারেনি। তবে কম্পিউটার প্রযুক্তি, ন্যানোটেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, Cell/Tissue Culture ইত্যাদির বহুমাত্রিক গবেষণার উন্নতির সমন্বয়ে সুদূর ভবিষ্যতে হয়ত মানুষকে আর ব্যাটারিচালিত কৃত্রিম তড়িৎ-যান্ত্রিক প্রত্যঙ্গ বহন করে বেড়াতে হবে না কিংবা প্রয়োজন হবে না কোন কঠোর নিয়ন্ত্রিত উৎপাদন কেন্দ্রে প্রস্তুত শুকরের দেহ থেকে প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করার। নিজের দেহকোষ থেকে পরীক্ষাগারে তৈরি কৃত্রিম প্রত্যঙ্গই মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকে ফিরিয়ে আনতে পারবে স্বাভাবিক জীবনযাপনের পথে।


Health Resources & Services Administration, U.S. Department of Health & Human Services-এর তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ২০২০ সালে লক্ষাধিক রোগী অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্টের ওয়েটিং লিস্টে ছিল। সে তুলনায় ডোনার সংখ্যা এবং প্রাপ্ত প্রতিস্থাপনযোগ্য অর্গানের সংখ্যা অপ্রতুল। এই Organ Shortage-এর বাধা অতিক্রম করতে ইতোমধ্যেই Bio-Artificial Heart এবং Bio-Artificial Kidney-এর মত কার্যকরী অত্যাধুনিক যান্ত্রিক কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ Bridge to Transplant হিসাবে সফলতা অর্জন করছে এবং রোগীকে অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনযাপনের স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিচ্ছে। এর সাথে  xenotransplantation-এর অগ্রগতির ফলে হয়ত অদূর ভবিষ্যতেই চিকিৎসাব্যবস্থায় Organ Shortage আর কোনো বড় সীমাবদ্ধতা হয়ে থাকবে না। অতি সম্প্রতি Genetic Engineered Pig to Human Heart Transplant-এর সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সেটারই বার্তা বহন করছে। আবার Xenotransplantation-এর ক্ষেত্রে Non-Human Rights-এর ভায়োলেশনের ইথিক্যাল ইস্যুর দিকে লক্ষ্য করলে বাণিজ্যিকভাবে Xenotransplantation শুরু হতে হতে হয়ত এর বিকল্প হিসেবে Bio-Organ 3D Printing প্রযুক্তি এরকম কোনো মানবিকতার লঙ্ঘন ছাড়াই যোগান দিতে সক্ষম হবে পর্যাপ্ত সংখ্যক কৃত্রিম জৈব প্রত্যঙ্গ।

অঙ্গ প্রতিস্থাপন, কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ এবং রিজেনারেটিভ মেডিসিনের গবেষণার পর্যায়ক্রমিক আধুনিকায়নের ফলস্বরূপ দেহাভ্যন্তরের জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের অকার্যকারিতা অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর বদলে চিকিৎসা ও নিরাময় যোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। কৃত্রিম প্রত্যঙ্গের নানাবিধ উৎপাদন প্রক্রিয়ার সফলতার মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে হয়ত একদিন Organ Shortage-কে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে এবং শুধুমাত্র যথাসময়ে প্রতিস্থাপনযোগ্য অর্গান না পাবার কারণে ঘটা মৃত্যুগুলোকে পরিপূর্ণভাবে রোধ করা সম্ভব হবে।


তথ্যসূত্র

১. Bioartificial Organ Manufacturing Technologies – Cell Transplantation
DOI: 10.1177/0963689718809918, PMID: 30477315, PMCID: PMC6322143, NCBI Link, BAK Link

২. Book: Polymeric Materials and Artificial Organs – Chapter 3: The Basics of Artificial Organs – CHARLES G. GEBELEIN, Department of Chemistry, Youngstown State University, American Chemical Society
ISBN13: 9780841208544, eISBN: 9780841210844
Book DOI: 10.1021/bk-1984-0256, Chapter DOI: 10.1021/bk-1984-0256.ch001
Book BAK Link, Chapter BAK link

৩. Biologic and synthetic skin substitutes: An overview – Indian Journal of Plastic Surgery
DOI: 10.4103/0970-0358.70712, PMID: 21321652, PMCID: PMC3038402, NCBI Link, BAK Link

৪. Artificial limbs – Clinical Review, Science, medicine, and the future, The BMJ
DOI: 10.1136/bmj.323.7315.732, PMID: 11576982, PMCID: PMC1121287, NCBI Link, BAK Link

৫. Össur Prosthetics

৬. Ottobock Prosthetics

৭. Open Bionics Prosthetic Arm

৮. Bionic hand as artificial organ: Current status and future perspectives – Artificial Organs
DOI: 10.1111/aor.13422, PMID: 30653695, BAK Link

৯. Bionic prosthetic hands: A review of present technology and future aspirations – The Surgeon, Journal of the Royal Colleges of Surgeons of Edinburgh and Ireland
DOI: 10.1016/j.surge.2011.06.001, PMID: 22041647, BAK Link

১০. The total artificial heart – Journal of Thoracic Disease
DOI: 10.3978/j.issn.2072-1439.2015.10.70, PMID: 26793338, PMCID: PMC4703693, NCBI Link, BAK Link

১১. Syncardia Total Artificial Heart

১২. The future of the artificial kidney – Indian Journal of Urology
DOI: 10.4103/iju.IJU_273_21, PMID: 34759521, PMCID: PMC8555564, NCBI Link, BAK Link

১৩. The Kidney Project successfully tests a prototype bioartificial kidney – UCSF News, BAK Link

১৪. The Kidney Project: Creating a bioartificial kidney as a permanent solution to kidney failure – University of California San Francisco (UCSF)

১৫. A brief history of clinical xenotransplantation – International Journal of Surgery
DOI: 10.1016/j.ijsu.2015.06.060, PMID: 26118617, PMCID: PMC4684730, NIHMSID: NIHMS707588, NCBI Link, BAK Link

১৬. Xenotransfusions, past and present – Xenotransplantation Journal
DOI: 10.1111/j.1399-3089.2007.00404.x, PMID: 17489860, BAK Link

১৭. Innovative treatment using tilapia skin as a xenograft for partial thickness burns after a gunpowder explosion – Journal of Surgical Case Reports
DOI: 10.1093/jscr/rjz181, PMID: 31214319, PMCID: PMC6565829, NCBI Link, BAK Link

১৮. Clinical Pig Kidney Xenotransplantation: How Close Are We? – Journal of  American Society of Nephrology
DOI: 10.1681/ASN.2019070651, PMID: 31792154, PMCID: PMC6934994, NCBI Link, BAK Link

১৯. What is CRISPR/Cas9? – The BMJ Journal
DOI: 10.1136/archdischild-2016-310459, PMID: 27059283, PMCID: PMC4975809, NCBI Link, BAK Link

২০. Press release: The Nobel Prize in Chemistry 2020

২১. University of Maryland School of Medicine Faculty Scientists and Clinicians Perform Historic First Successful Transplant of Porcine Heart into Adult Human with End-Stage Heart Disease – UMMC News, BAK Link

২২. First clinical-grade porcine kidney xenotransplant using a human decedent model – American Journal of Transplantation
DOI: 10.1111/ajt.16930, PMID: 35049121

২৩. Pig Kidneys Transplanted to Human in Milestone Experiment: Experts predict that such nonhuman-to-human “xenotransplants” may become a viable option within the next decade – Scientific American

২৪. Success for pig-to-baboon heart transplants – Nature News
DOI: 10.1038/d41586-018-07419-5, PMID: 30560955, BAK Link

২৫. First pig-to-human heart transplant: what can scientists learn? – Nature News
DOI: 10.1038/d41586-022-00111-9, BAK Link

২৬. 3D bioprinting of cells, tissues and organs – Nature Scientific Report
DOI: 10.1038/s41598-020-70086-y, BAK Link

২৭. A new bladder made from my cells gave me my life back – BBC News, BAK Link

২৮. Transplantation of a 3D-printed tracheal graft combined with iPS cell-derived MSCs and chondrocytes – Nature Scientific Reports
DOI: 10.1038/s41598-020-61405-4, PMID: 32152475, PMCID: PMC7062776, NCBI Link, BAK Link

২৯. Organ Donation Statistics – Health Resources & Services Administration, U.S. Department of Health & Human Services

Comments

Avatar

S. A. Khan

Liberty, Love & Peace. মুক্তি, শান্তি ও প্রেম

আপনার আরো পছন্দ হতে পারে...

3 2 votes
Article Rating
Subscribe
জানান আমাকে যখন আসবে -
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x