২০১৫ সাল ছিলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে এক অবিস্মরণীয় বছর। মহাকাশ গবেষণা হতে শুরু করে চিকিৎসা বিজ্ঞান হয়ে পদার্থবিদ্যা পর্যন্ত সব জায়গাতেই ছিলো সাফল্যের ছড়াছড়ি। জাতিসংঘ ২০১৫ সালকে ঘোষণা করেছিলো ‘আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বর্ষ’ এবং ‘আলোক-ভিত্তিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের বছর’ হিসেবে। মৃত্তিকা বর্ষ ঘোষণার লক্ষ্য ছিলো কৃষিতে নিত্য-নতুন প্রযুক্তির সন্নিবেশের মাধ্যমে বৈশ্বিক ভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সফলতাকে ত্বরান্বিত করা। আর আলোক-ভিত্তিক প্রযুক্তির পেছনে উৎসাহ প্রদানের কারণ ছিলো অপটিক্স নির্ভর বিভিন্ন প্রযুক্তির সাথে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, যোগাযোগ, নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ জ্বালানী শক্তির উৎসের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতের নিবিড় সম্পর্ক। এতসব আয়োজনের ভিড়ে শেষমেশ ২০১৫ সালটা বিজ্ঞানের পথে যাত্রায় কতটুকু গভীর পদচিহ্ন রেখে যেতে পেরেছিলো আসুন দেখে নেয়া যাক। নীচে তুলে ধরা হলো গত বছরে ঘটে যাওয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতের সেরা ১৫টি ঘটনা।
১। ২০১৫ এর মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকায় আধুনিক মানুষের ২.৮ মিলিয়ন বছর পুরনো এক পূর্বপুরুষের ফসিলের চোয়ালের অবশিষ্টাংশের সন্ধান পাওয়া যায়, যা মানুষের বিবর্তন-ধারা বিষয়ক গবেষণায় আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করে। বিজ্ঞানীরা মানুষের এই নব-আবিষ্কৃত পূর্বপুরুষের নাম দেন Homo naledi.
২। কঠিন, তরল, বায়বীয় – এই তিন অবস্থা ছাড়াও বিজ্ঞানীরা পদার্থের নতুন আরেকটি অবস্থার আবিষ্কার করেন। পদার্থের এই নতুন অবস্থার নাম দেওয়া হয় “Jahn-Teller metal“
৩। ২০১৫ এর ১৪ জুলাই ‘New Horizons’ মহাকাশযান বামন-গ্রহ প্লুটোর কাছ দিয়ে উড়ে যায় এবং প্লুটো সম্পর্কে অজানা বিভিন্ন তথ্যের সন্ধান দেয়।
৪। ২০১৫ এর শুরুর দিকে ম্যাসাচুসেটসের নর্থ-ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা বিগত ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম এন্টিবায়োটিক ঔষধ আবিষ্কার করেন। এই এন্টিবায়োটিকের নাম দেওয়া হয় Texiobactin যা গ্রাম-পজিটিভ ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগে কার্যকরী।
৫। ২০১৫ এর ২৮ সেপ্টেম্বর নাসার বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম মঙ্গলগ্রহে তরল পানির সন্ধান পান। এই আবিষ্কারের ফলে মঙ্গলগ্রহের রহস্য উন্মোচনে নতুন দ্বার খুলে যায়।
৭। ২০১৫ সালেই সর্বপ্রথম যুক্তরাজ্যের ‘জুলিয়ান ম্যালকিওরি’ নামের এক গবেষক মানব-সৃষ্ট গাছের পাতা তৈরিতে সফলতা অর্জন করেন। প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট গাছের পাতার মতোই এই পাতাও বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও আলোর উপস্থিতিতে শর্করা ও অক্সিজেন তৈরি করতে পারে।
৮। ২০১৫ এর মার্চে সর্বপ্রথম আলোর কণা ও তরঙ্গ রূপে, দ্বৈত অবস্থায় সহাবস্থানের ছবি তোলা হয়।
৯। ব্রিটেন সর্বপ্রথম তিনজন মাতাপিতার সন্তান (In Vitro Fertilization বা IVF) জন্মদানের আইন পাশের পক্ষে ভোট দেয়। IVF এর ফলে বিভিন্ন জটিল জিনগত রোগের চিকিৎসা সহজতর হবে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন। ‘Three-Parent Babies’ approved in UK
১০। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে Sagittarius A* নামের এক অতিকায় এবং অত্যুজ্জ্বল কৃষ্ণ গহ্বরের অস্তিত্ব আবিষ্কার করা হয়।
১১। কানাডার পাবলিক হেলথ এজেন্সি এক ভ্যাকসিনের আবিষ্কার করে যা প্রাথমিক অবস্থায় ইবোলা ভাইরাসের আক্রমণে শতভাগ কার্যকরী। Canadian-made Ebola vaccine works, study finds
১২। নাসার বিজ্ঞানীরা একটি রিপোর্টে বলেন যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ বাড়ছে এবং এই গ্রিন হাউজ গ্যাসের সবচেয়ে বড় শোষক, আমাজন বনাঞ্চলের ধীরে ধীরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণের ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।
১৩। গবেষকেরা প্রথম আণুবীক্ষণিক রোবোটিক যন্ত্রের আবিষ্কার করেন যা প্রাণীদেহের অভ্যন্তরে কোনোরকম ক্ষতি ছাড়াই প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদানে সক্ষম।
১৪। বিজ্ঞানীরা ‘কেপলার-৪৫২বি’ নামের ঠিক পৃথিবীর অনুরূপ আরেকটি গ্রহের সন্ধান পান। আমাদের পৃথিবীর মতোই কেপলার-৪৫২বি এমন এক নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে যা আমাদের সূর্যের মতোই। এই নক্ষত্রের নাম কেপলার-৪৫২। পৃথিবী আর কেপলার-৪৫২বি এর বার্ষিকগতিও সমান। বিজ্ঞানীরা গ্রহটিকে পৃথিবীর বিকল্প হিসেবে ভাবছেন। কিন্তু আফসোস এই যে, এই ‘পৃথিবী ২.০’ গ্রহটি আমাদের থেকে ১,৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত!
১৫। ২০১৫ সালে বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় অবদান বোধ হয় এইচআইভি এর প্রতিষেধক আবিষ্কার। আমেরিকার স্ক্রিপস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গবেষকেরা একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন যা HIV-1, HIV-2 এর প্রতিষেধক হিসেবে বেশ কার্যকারী। কিন্তু গবেষণাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে, কিন্তু এই ভ্যাকসিনের আবিষ্কারের ফলে ভবিষ্যতে এইচআইভির চিকিৎসা বেশ সহজ হয়ে পড়বে।
(লেখাটি ইতিহাস কথা বলে পেইজের সালতামামি ২০১৫ প্রজেক্টের জন্য বানানো)
Subscribe
Login
0 Comments