সঘন চুমুর ইতিবৃত্ত

গত ৬ জুলাই সোমবার ছিল চুমু দিবস। নিতান্তই প্রাগৈতিহাসিক এই মানব আচরণের তত্ত্ব-তালাশের চেষ্টা অনেক বিজ্ঞানীই করেছেন। যেমন, নেদারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, দশ সেকেন্ডের একটি সঘন চুমুর মাধ্যমে আমরা ৮ কোটি ব্যাকটেরিয়া আদান প্রদান করি! [১]

কী বুঝলেন? রোগ বালাইয়ের ভয় পাচ্ছেন তো! যদি সঙ্গীর সর্দি-কাশি লাগে, তাহলে চুমু একটু কম খাওয়াই ভাল। তবে বেশি চিন্তারও কারণ নেই। চুমুর মাধ্যমে ছোঁয়াচে রোগ হওয়ার চাইতে হ্যান্ডশেক করে অসুখ বাঁধানোর সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তবে চুমু মানে যে শুধুই প্রেম কিংবা রোগ (কিংবা প্রেমরোগ), তা কিন্তু না। জন্মের পরই অপত্যস্নেহের প্রথম বহিঃপ্রকাশ চুমুর মাধ্যমেও কিছুটা ঘটে। বাবা-মায়ের নিবিড় আদর আর চুমুতে জগতের বিশুদ্ধতম ভালোবাসা আর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকে। শিশুর স্তন্যপানও চুমুরই পরিবর্ধিত রূপ। চুমু দেয়া কি আমরা অনুকরণ করে শিখি? নাকি এটা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আসে? এ বিষয়ে নৃতাত্ত্বিকরা এখনও একমত হতে পারেন নি। তবে এটুকু নিশ্চিত যে [২], এই চুমুর মাধ্যমেই বেশ কিছু স্নায়বিক রসায়ন নিঃসৃত হয়, যেমন অক্সিটোসিন, ডোপামিন ইত্যাদি, যা বেড়ে ওঠার সময় মস্তিষ্কের অনুভূতির হাইওয়ে তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রেমের চুমুর ব্যাপারে আরো কিছু ইন্টারেস্টিং ব্যাপার জানা গেছে। মানুষের শরীরে যৌন-আকাঙ্ক্ষার সবচেয়ে প্রকাশিত অঙ্গ হচ্ছে তার ঠোঁট। অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে গড়নেও তা আলাদা। মানুষের ঠোঁট বাইরের দিকে বের হয়ে আসে, যা প্রাণীজগতে খুব একটা দেখা যায় না। বিবর্তনের দিক দিয়ে মানুষের কাজিন গরিলা, শিম্পাঞ্জি, বা বোনোবোর মধ্যেও এমন ঠোঁট নেই। অসংখ্যা স্নায়ু ঠোঁটের ত্বকে উন্মুক্ত হয়ে থাকে। চুমুর মুহূর্ত শুরু হলেই এই স্নায়ুগুলোতে ঝড় বইতে শুরু করে। নিউরোট্রান্সমিটারদিয়ে হাইস্পিড ব্রডব্যান্ডের মতন তথ্য যাওয়া শুরু করে। এবং এটাই ঠিক করে দেয় সঙ্গীর প্রতি তাদের আকর্ষণের মাত্রা। তাই ভালোবাসাবাসির ক্ষেত্রে চুমুর গুরুত্ব অনেক বেশি। কতোটা? স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক অ্যাট অ্যালবানিতে বিবর্তনিক মনোবিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে শতকরা ৫৯ জন পুরুষ এবং ৬৬ জন নারীই প্রথম চুমু পছন্দমত না হওয়ায় সম্পর্ক শুরুতেই সমাপ্তি টেনেছেন! [৩] এ যেন এসপার, নয় ওসপার পরিস্থিতি – এক চুমুতেই সম্পর্কের বাঁচা-মরা!

চুমুর সময় শরীরে আর কী কী ঘটে?
ডোপামিন আর অক্সিটোসিনের কথা তো আগেই বলেছি। ডোপামিন মূলত নৈকট্য আর কামনাকে বাড়িয়ে তোলে। আর অক্সিটোসিনকে আদর করে বলা হয় “ভালোবাসা হরমোন”, যা কিনা কারো কাছে কাছে থাকার অনুভূতিকে তীব্র করে তোলে। চুমুর সময় অ্যাড্রিন্যালিন নিঃসৃত হতে থাকে, ক্রমশ হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, আর শরীরও যেন অন্য কিছুর জন্য তৈরি হয়ে যায়। এসময় কর্টিসোল নামের স্নায়বিক চাপের হরমোনটাও অনেক কমে আসে। রক্তনালী প্রসারিত হয়। শ্বাসপ্রশ্বাস গভীর হয়ে থাকে। নাড়িস্পন্দন দ্রুততর হতে থাকে। এজন্যই কবি বলেছেন,

একটি কথার দ্বিধাথরথর চূড়ে
ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী;
একটি নিমেষে দাঁড়ালো সরণী জুড়ে,
থামিল কালের চিরচঞ্চল গতি;

(শাশ্বতী/সুধীন্দ্রনাথ দত্ত)

তথ্যসূত্রঃ
[১] http://www.microbiomejournal.com/content/2/1/41

[২] https://www.webmedcentral.com/article_view/3785

[৩] http://www.sciencedaily.com/releases/2007/08/070830121629.htm

[নোটঃ লেখাটি এই আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে লিখিত।]

Comments

আপনার আরো পছন্দ হতে পারে...

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
জানান আমাকে যখন আসবে -
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x