ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রচণ্ড রকমের ঘুম কাতুরে; আমি ঘুমকে বলি “অতৃপ্ত ভালোবাসা”। “সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে আমরা ঘুমাই”- এ হচ্ছে সবচেয়ে সরল ব্যাখ্যা। কিন্তু একজন বিজ্ঞানযাত্রী হিসেবে ঘুমের বিজ্ঞান একটু তো জানা উচিৎ, কী বলেন?
৫০ দশকের আগ অব্দি ঘুমকে বলা হত শরীর ও মস্তিষ্কের নিষ্ক্রিয় দশা। কিন্তু, এখন আমরা জানি ঘুমন্ত অবস্থায়ও আমাদের মস্তিষ্ক একাধিক কর্ম সম্পাদন করে, যা আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পাওয়া গেছে ঘুম চক্রের সন্ধান। আর এই ঘুম চক্রে চলে দুই ধরনের ঘুম দশা। এক, নন-র্যাপিড-আই-মুভমেন্ট বা non-REM sleep, আরেকটি হলো র্যাপিড-আই-মুভমেন্ট বা REM sleep
আমাদের ঘুম চক্রের প্রথম দিকের দশা হল নন-র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা non-REM sleep। এই দশা মোট চারটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপ হচ্ছে ঘুম এবং জাগ্রত অবস্থার মাঝামাঝি সময়। স্বাভাবিকভাবেই, খুব সহজেই ঘুম ভেঙে যায় এই অবস্থায়।
দ্বিতীয় ধাপ মোটামুটিভাবে প্রথম ধাপের ১০ মিনিট পর শুরু হয়। এই ধাপকে বলা যায়, হাল্কা ঘুম বা সত্যিকার অর্থে ঘুমানো। এই অবস্থায় আমাদের হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ হয়। এই অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রাও কমতে শুরু করে।
তৃতীয় ধাপে আমরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হতে শুরু করি। আমাদের হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কমতে শুরু করে।
চতুর্থ ধাপে এসে আমরা সম্পূর্ণ ভাবে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হই। শরীরের মাংসপেশীর কার্যক্রম কমে আসে এবং ছন্দাকারে তালে তালে শ্বাস-প্রশ্বাস শুরু হয়। এই পর্যায়ে ঘুম ভাঙলে জেগে উঠে পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে নিতে কয়েক মিনিট সময় লেগে যায়।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়ার মধ্য দিয়েই আমাদের প্রবেশ হয় র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা REM sleep দশায়। ঘুম যাওয়ার প্রায় ৭০ থেকে ৯০ মিনিট পরে র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা REM sleep শুরু হয়। চোখের পাতা বন্ধ থাকলেও চোখ নড়াচড়া করে। এই অবস্থায় পুনরায় শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যায় সাময়িকভাবে শরীরের নড়ন বন্ধ হয়ে যায়। চমকপ্রদ ব্যাপার হল, আমরা সজাগ না থাকলেও আমাদের মস্তিষ্ক এই দশায় সবচেয়ে বেশি কর্মরত থাকে। এমনকি কখনো কখনো আমরা সজাগ অবস্থাতেও আমাদের মস্তিষ্ক এত সক্রিয় থাকে না। বুঝতেই পারছেন, আমাদের স্বপ্ন দেখা হয় এই দশাতেই। এই দশার পরেই, আমরা আবার নন-র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা non-REM sleep দশায় প্রবেশ করি।
এই দুই দশার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে ঘুমন্ত থাকা সময় জুড়ে। আপনি কতক্ষণ ঘুমোচ্ছেন, এর উপর নির্ভর করে কতটুকু সময় গভীর ঘুমে ব্যয় হবে। সাধারণত, যত বেশি সময় ঘুমানো যায়, প্রতি চক্রে তত অল্প সময় মানুষ গভীর ঘুমে বা র্যাপিড আই মুভমেন্ট দশায় যায়।
নিচের ইনফোগ্রাফিকে এক ঝলকে ঘুম চক্র দেখে নিতে পারেন।
Shared from: https://www.sixstepstosleep.com
ঘুম নিয়ে এত কথা পড়ে ঘুমঘুম না লাগলেও অন্তত হাই তোলার তো কথা। বর্তমান সময়ে এসে ঘুমের প্রতি অবিচার কারণে -অকারণে প্রায়ই করা হয়ে যায়। ঘুমের বিজ্ঞানের সাথে জানিয়ে দিই, গত ১৬ ই মার্চ ছিল বিশ্ব ঘুম দিবস। এই বছরের স্লোগান ছিল ‘Join the Sleep World, Preserve Your Rhythms to Enjoy Life’. এই স্লোগানের সাথে তাল মিলিয়ে বলতেই হয়, জীবন তো একটাই। এই এক জীবন উপভোগ করতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
তথ্যসূত্রঃ
১. জন্স হপকিন্স মেডিসিন ওয়েবসাইট