Paul Serrano আর তার টীম আফ্রিকার Gadoufaoua, Niger-এ খনন করছিলেন। এই অন্বেষণের মধ্যে তারা একটা বিশাল ফসিলীকৃত হাড়ের সন্ধান পেলেন। তারা চিনতে পারলেন, এটা অনেক আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কুমিরের একটি প্রজাতি। তারা ঠিক করলেন, এটার নাম দেবেন Super Croc.
১৯৮০ এর দশকে ফরাসী ফসিলবিদেরা একই রকম খুলির টুকরো পেয়েছিলেন। তারা এটার নাম দিয়েছিলেন Sarcosuchus imperator (flesh crocodile emperor). কিন্তু ১৯৯৭ সালে, সেরানো’র অভিযানের আগে, আমরা এই প্রাচীন শিকারীর ব্যাপারে তেমন কিছু জানতাম না।
খনন কাজ শুরু করার পরপরই, তারা কিছু বিশাল চোয়ালের হাড় পেলেন যেগুলোর দৈর্ঘ্য তাদের দলের বেশ কিছু সদস্যের সমান। এই চোয়ালের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ ফুট। আর বিশাল ভয়াবহ দাঁতই বলে দিচ্ছে যে এই দৈত্যাকার কুমীরগুলো সেগুলো ডাইনোসরের মাংস ছাড়ানোর কাজেই ব্যবহার করতো। প্রায় ১১০ মিলিয়ন বছর আগে, মধ্য ক্রেটাশিয়াস যুগে ঘুরে বেড়াতো বলে মনে করা হয়। মাথার খুলির টুকরোগুলো থেকে অনুমান করা যায় যে, এরা লম্বায় প্রায় ৪০ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতো আর ওজনে হতো প্রায় ৮ টনের মতো।
এই দলটি খুলির টুকরো পেয়েছে; অক্ষত চোয়ালের হাড়, কশেরুকা, পায়ের হাড় পেয়েছে। প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার সাইজের বর্ম প্লেট (scutes) পেয়েছে, যা এদের পুরো শরীরকে সুরক্ষা দিতো। হাড়গুলো সাজানোর পর বিজ্ঞানীরা দানবীয় কুমিরের কঙ্কালের অর্ধেকটার ব্যাপারে পরিষ্কার ছবি পেতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করেছে। Serrano মতে, ‘এই নতুন উপাদান আমাদের অতিকায় কুমির সম্পর্কে ভাল ধারণা দিয়েছে। তারা দেখতে কেমন ছিলো এবং তাদেরকে কুমির প্রজাতির তালিকার কোন জায়গায় স্থান দেওয়া যায়, সে ব্যাপারেও একটা ধারণা পাওয়া যায়’। কুমিরের বর্মের ওপর প্রত্যেক বছর একটা করে রিং বা বলয় বাড়ে। এ থেকে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে এই কুমীরের বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছর হবে।
Sarcosuchus কিন্তু caimans, gharials, alligators and crocodiles দের মত আধুনিক কুমিরের বংশানুক্রম অনুসরণ করেনি। Larsson, Serrano এর দলের এক সদস্য বলেন যে, “এটি আধুনিক কুমীর না, কিন্তু দু’ দলেরই পূর্ব পুরুষ একই”।
জুরাসিক যুগের প্রথম দিকে, যখন কুমির প্রজাতি ভূমি আর সামুদ্রিক কুমীরে বিভক্ত হয়ে পড়ে, সেই সময়ে Sarcosuchus এর উদ্ভব হয়। তারা সম্ভবত ওঁত পাতা শিকারী ছিলো, এবং শিকারকে প্রতিরক্ষার তেমন কোনো সুযোগই দিতো না। আধুনিক কালের ঘড়িয়ালের মতই, তাদের চোখের প্রকোষ্ঠ ওপরের দিকে বাঁকানো ছিলো। সেটাই তাদেরকে শিকারের জন্যে অপেক্ষার সময়, পুরো শরীরটা পানিতে লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করতো।
এদের আরেকটি অন্যতম সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো, হাড় দিয়ে তৈরি চঞ্চুর বৃত্তাকার ডগা যা “বুলা” (Bulla) নামে পরিচিত, ঠিক যেমনটা আধুনিক ঘড়িয়ালের মধ্যেও দেখা যায়। Larsson মনে করেন – ঘড়িয়াল যেমন যৌন মিলনের ডাক দেয়ার জন্য বুলা’র চারিদিকের পেশী ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের শব্দ নির্গত করে, প্রাচীন কুমীরও নিশ্চয়ই প্রজননের আহ্বান জানাতে হাঁক ছাড়তো। বুলা জিনিসটা হয়তো তাদের গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতাও ত্বরান্বিত করছিলো এবং অন্য শিকারী প্রাণীদের চেয়ে এদেরকে উঁচুতে স্থান দিয়েছিলো।
সুপার কুমীর নিয়ে যত ধারণা আর অনুমানই আসুক না কেন, কুমির পরিবারের দানবীয় এই সদস্য সবসময়ই রহস্য, বিস্ময়, আর ভয় সৃষ্টি করবে। বিশাল এই প্রাণীটি দক্ষ শিকারী ছিলো। টিকে থাকার অসাধারণ দক্ষতা ছিলো এদের। নদীতে বাস করা, ধূর্ততা আর গোপনীয়তায় পারদর্শী এই প্রাণীটির বিশাল কাঠামো তাদেরকে দুর্দান্ত শিকারীতে পরিণত করেছিলো – এটাই তাদেরকে করে তুলেছিলো, তাদের পরিবেশের প্রভু।
Reference:
Original Post – RB, The Earth Story
অনুবাদ – ফারহানা ইসলাম, ফরহাদ হোসেন মাসুম
Image and others: 1, 2, 3.