টাইরানোসোরাস রেক্স, যার আরেক নাম হচ্ছে Tyrant Lizard King ( নৃশংস সরীসৃপদের রাজা)! টি- রেক্সের ফসিল সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯০৩ সালে। যা জীবাশ্মবিদ সহ বিশ্বব্যপী প্রায় সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে। ইউ.এস এর মন্টানাতে আবিষ্কৃত একটি ফসিলকে খ্যাতিমান জীবাশ্মবিদ হেনরি ফেয়ারফিল্ড, সর্বপ্রথম- টাইরানোসোরাস রেক্স নামে অভিহিত করেন। পরবর্তীতে আরও অনেক ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে, যার অধিকাংশই পাওয়া গেছে মূলত এশিয়া আর উত্তর আমেরিকাতে। তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল অবস্থায় পাওয়া এবং গঠনের দিক দিয়েও প্রায় পূর্ণাঙ্গ ফসিলটি পাওয়া গেছে আমেরিকার সাউথ ডাকোটা’তে, ১৯৯০ সালে। ফসিলটির ডাকনাম রাখা হয়েছে “সু”। ধারণা করা হয়, টি-রেক্স ছিলো গড়ে লম্বায় ১২-১৩ মি. আর উচ্চতায় ৫-৬ মি.।
প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে, ক্রেটাশিয়াস যুগে, টাইরানোসোরাস রেক্স ছিল মূর্তিমান এক আতংকের নাম। তৎকালীন সময়কার বিশাল এই প্রাণীটিকে, আমরা প্রায় এক শতাব্দী ধরে সর্ববৃহৎ মাংসাশী প্রাণী হিসেবে গণ্য করেছি। সাম্প্রতিক আবিষ্কার অনুযায়ী এটা স্পিনোসোরাস আর জাইগ্যানোটোসোরাস এর কাছে আকৃতির দিক থেকে হেরে গেছে।
বিজ্ঞানীদের মনে, বহু বছর ধরে টি-রেক্স কে নিয়ে অমীমাংসিত অনেক প্রশ্ন রয়েছে। যেমনঃ টি-রেক্সের কি পালক ছিলো? টি-রেক্স আবিষ্কৃত হবার পর, ডাইনোসর আর পাখির মধ্যে বিবর্তনের যোগসূত্রের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। টি-রেক্স পরিবারের (টাইরেনোসরিড এর) সদস্য, এমন কিছু ডাইনোসরের ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে চায়নাতে। যেগুলো আকারে ছোট ও কিছু কিছু বেশ পুরাতন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার, এদের গায়ে আঁশটে পালকের প্রমাণ পাওয়া গেছে! যদিও একই বৈশিষ্টের (অর্থাৎ আঁশটে পালকযুক্ত) টি-রেক্সের কোনো ফসিল, এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। প্রমাণ ছাড়া আমরা শুধু কল্পনাই করতে পারি!
জীবাশ্মবিদদের মাথায় এমন আরো অনেক প্রশ্ন চলে আসে, যখন টি-রেক্সের সামনের দুই আঙ্গুলওয়ালা ছোট অঙ্গটির কার্যকারিতা কী ছিলো, এই প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়! পূর্বে ধারণা করা হতো, ছোট্ট এই হাত দুটি যৌনসঙ্গমের সময় সঙ্গীকে ধরে রাখার কাজে অথবা বিশ্রাম নেয়া অবস্থা থেকে চট করে উঠে দাঁড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে ধারণা করা হয় হাতগুলো হচ্ছে শুধুমাত্র ভিন্ন কোনো অঙ্গের অবশিষ্টাংশ। যেভাবেই বিশ্লেষণ করা হোক না কেন, একটা বিষয় বেশ পরিষ্কার- হাতগুলো এতই ছোটো যে মুখের আশেপাশেও পৌঁছাতে সক্ষম নয়।
১৪৫ থেকে ৯০ মিলিয়ন বছর আগেকার পুরনো ফসিল খুঁজে পাওয়া খুবই দুর্লভ ঘটনা। আর এই সময়টাতেই টি-রেক্স রাজকীয় দাপটে ঘুরে বেড়াতো। তাই ক্রেটাশিয়াস যুগের এই শিকারি প্রাণীর অজানা ইতিহাস রহস্যে ঢাকা পড়ে আছে। চায়নায় আবিষ্কৃত ফসিলগুলো এই গবেষণায় সাহায্য করছে। যদিও অবশিষ্টাংশগুলোর অবস্থা এতই খারাপ যে তথ্য উদ্ধার করা যথেষ্ট কঠিন। জুরাসিক যুগে, (অ্যালুসরিড’রা যখন শ্রেষ্ঠ শিকারী ছিলো) টাইরেনোসরিড’রা ছিলো আকৃতিতে ছোট, ৩-৪ মিটারের মত। আর অ্যালুসরিড’রা ছিলো প্রায় ৯ মিটার লম্বা। জুরাসিক যুগে, টাইরেনোসরিড’রা অ্যালুসরিডদের হটিয়ে দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ শিকারীর পদবীটা দখল করে নেয়। এখন, কখন/কিভাবে দখল করে নিলো তা জানতে হলে এই বিস্মৃতপ্রায় যুগের আরও অনেক ফসিল প্রয়োজন। যা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে আসলেই ঠিক কী ঘটেছিলো!
চমৎকার এই শিকারী প্রাণীটি আমাদের বিস্মিত করে। সময়ের সঙ্গে এদের সম্পর্কে আমাদের অনেক ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। ঋজু আকৃতির ও ধীর প্রকৃতির সরীসৃপ নয়, টি-রেক্স হচ্ছে পাখির মতন ছুঁচালোমুখী ও ক্ষিপ্র। আর নিশ্চিত হওয়া গেছে, টি-রেক্স অবশ্যই পৃথিবীর বুকে ঘুরে বেড়ানো সর্ববৃহৎ মাংসাশী প্রাণী নয়। কিন্তু এটা সত্যি, টাইরানোসোরাসকে সবাই ডায়নোসরের রাজা হিসেবে চেনে!
References:
Original Article – The Earth Story
Image Credit: BLEB
http://bit.ly/1DRBEgB