নাম শুনে লর্ড অফ দা রিংসের আংটির কথা মনে পড়তে পারে। তাতে অসুবিধা নেই, বরং mnemonic হিসেবে ভালোই মানানসই। দুটোই ধ্বংসলীলার উদাহরণ!
প্রশান্ত মহাসাগরের কিনার ঘেঁষে অবস্থিত এই অঞ্চলে আছে ৪৫২ টি আগ্নেয়গিরি। এদের মধ্যেই দুনিয়ার ৭৫% সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। “আগুনের গোলা”টি দক্ষিণ আমেরিকার একদম দক্ষিণ প্রান্ত থেকে শুরু করে উত্তর আমেরিকার উপকূল ধরে, বেরিং প্রণালী (Bering Strait) হয়ে জাপানের নীচ দিয়ে নিউ জিল্যান্ডে প্রবেশ করেছে।
নামে রিং বা গোল শব্দটি থাকলেও এটি মূলত অশ্বখুরাকৃতি। ৪০,০০০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ছড়ানো অঞ্চলটি দেখতে ঘোড়ার খুরের মতো। নীচের ছবি দেখলে ব্যাপারটা বুঝা যায়। তবে অ্যান্টার্কটিকার কিছু সক্রিয় এবং সুপ্ত আগ্নেয়গিরি মিলে রিংটির খোলা মুখকে “বন্ধ” করেছে বলা যায়।
প্রশ্নঃ কেন সৃষ্টি হল এই আগুনের আংটি?
উত্তরঃ প্লেট টেকটোনিকসের কারণে।
টেকটোনিক প্লেট হল পৃথিবীর কঠিন উপরিভাগ তথা ভূত্বকের বিশালাকার একেকটা খণ্ড। ১৯১২ সালে জার্মান আবহাওয়াবিদ আলফ্রেড ওয়েগেনারের কন্টিনেন্টাল ড্রিফ্ট তত্ত্ব থেকে এই টেকটোনিক প্লেট ধারণাটির জন্ম হয়।
এই ধারণা অনুযায়ী, পৃথিবীর উপরিতল কিছু পাতলা আর অনমনীয় খণ্ডের সমন্বয়ে তৈরি, যারা একে অপরের দিকে চলাচল করতে সক্ষম। এই খণ্ডগুলোরই নাম দেওয়া হয় টেকটোনিক প্লেট। এসব প্লেট স্থির নয় বরং ক্রমাগত নড়াচড়া করছে। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা টের পাওয়া না গেলেও যখন চিন্তা করবেন ভূত্বকের হাজার কিলোমিটার নীচে আছে কিছুটা তরল ধরণের পাথরের স্তর (যাকে বলে Mantle), তখন মেনে নেওয়া যায় যে, তরল জিনিসের উপর অবস্থিত প্লেটগুলো আসলেই নড়তে চড়তে পারে!
প্রধান দশটি প্লেট হল – আফ্রিকান প্লেট, এন্টার্কটিক প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট, অস্ট্রেলীয়ান প্লেট, ইউরেশীয়ান প্লেট, উত্তর আমেরিকান প্লেট, দক্ষিণ আমেরিকান প্লেট, প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট, সোমালি প্লেট এবং নাজকা প্লেট।
নড়তে নড়তে প্লেটগুলো একে অপরকে ধাক্কা দেয় বা পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়। অনেক সময় একজন আরেকজনের নীচে ঢুকে যায়। আর যখন এরা পরস্পরকে ধাক্কা মারে বা একজন আরেকজনের তলে চলে যায়, তখনই ভূমিকম্প হয়; সৃষ্টি হয় আগ্নেয়গিরির সারি আর পর্বতমালা। অবাক লাগছে? তবে শুনুন, নাজকা আর দক্ষিণ আমেরিকান প্লেটের সংঘর্ষেই সৃষ্টি হয়েছিলো আন্দেস পর্বতমালা। এবং ইন্ডিয়ান আর ইউরেশিয়ান প্লেটের ঠোকাঠুকির ফলে তৈরি হয়েছে হিমালয়!
খেয়াল করলে দেখবেন, রিং অফ ফায়ার কিন্তু প্রতিটা প্লেটের সংযোগস্থল ঘেঁষে অবস্থিত! তো, এটা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা না হলে আর কোনটা হবে? তাই দুনিয়ার প্রায় ৯০% ভূমিকম্প হয় এই অঞ্চলে। আর প্লেটদ্বয়ের মধ্যে ঘষাঘষি হলে একদম কিনারের দেশগুলো যতটা না কম্পন অনুভব করে, সংযোগস্থল থেকে দূরবর্তী দেশগুলো ততটা করে না।
Very important information. 💕💕💕💕💕💕❤❤❤❤
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য!