টাইম ট্রাভেল সম্ভব কি না সেটা না হয় আলোচনা করলাম না। ধরে নেই, মানুষ একসময় টাইম মেশিন, কৃষ্ণগহবরের মহাকর্ষ, বা ওয়ার্ম হোল ব্যবহার করে বা আলোর গতিতে ভ্রমণ করে টাইম ট্রাভেল করতে শিখলো। কিন্তু টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব হলেও কি অতীতে যাওয়া সম্ভব? এখানে শুধু অতীতে গমন নিয়েই বলা হবে।
প্রযুক্তিগত বাধাগুলো বাদ দিলেও টাইম ট্রাভেলের সময় অনেক প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে। যেমন, শারীরিক বাধা- মানুষের শরীর হয়তো টাইম ট্রাভেলের ঝক্কি সামলাতে পারবে না, টাইম ট্রাভেল করে হয়তো নিজের জগতে ফিরে আসতে পারবে না বা ডাবল অক্যুপেন্সি সমস্যা। এসব ছাড়িয়ে সবচেয়ে বড় যে বাধা, সেটা হলো গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স।
গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স
“Paradox” শব্দটার বাংলা হলো “আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী”। মানে যা কোনো কিছুর সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়। এই গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে – বর্তমানের কোনো ব্যক্তি যদি টাইম ট্রাভেল করে অতীতে ফিরে গিয়ে দাদা-দাদীর পরিচয় প্রতিহত করে দেয়, তাহলে ভ্রমণকারী ব্যক্তিটির বাবার জন্ম হবার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। তার ফলে টাইম ট্রাভেলার ব্যক্তিরও জন্ম হবার সুযোগ থাকে না। বড় হয়ে টাইম টাইম ট্রাভেল করে অতীতে ফিরে দাদাকে হত্যা করার সুযোগও থাকে না। কারণ তার তো জন্মই হয়নি। তাহলে প্রশ্ন হলো – তার দাদাকে কে হত্যা করলো? তার তো জন্মই হয়নি। বা দাদাকে হত্যা করার পর তার অস্তিত্বের কী হবে? তার কি আদৌ কি কোনো অস্তিত্ব থাকবে? দাদাকে হত্যা করার পর পর কি সে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে? টাইম ট্রাভেলের এই যে স্ববিরোধী ঘটনা, এটাকে বলা হয় গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স।
টাইম ট্রাভেলের প্যারাডক্সের বিষয়ে ২টা প্রচলিত থিওরি আছে।
১) নভিকভের আত্মরক্ষার থিওরি (Novikovs self-consistency theory) : এই থিওরি অনুযায়ী টাইম ট্রাভেল করে অতীতে ফিরে গেলেও কেউ এমন কোনো কাজের সাথে সংযুক্ত হতে পারবে না (মানে জগতের নিয়ম অনুযায়ী জগত সেটা হতে দেবে না) যেটা তার প্রকৃত বর্তমানকে প্রাভাবিত করবে। ধরা যাক কেউ একজন ব্যক্তি, “X” যদি অতীতে গিয়ে তার ছোটবেলার শিশু অবস্থার X কে হত্যা করার চেষ্টা করে, সে সেটা পারবে না। কারণ নিয়ম অনুযায়ী সে তার শিশু অবস্থাকে হত্যা করলে তার অস্তিত্বই অসম্ভব হয়ে যায়। হয়তো সে ছোটবেলায় যেখানে থাকতো সেখানে গিয়ে শৈশবের নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করে তাহলে দেখবে যে সেখানে তারা থাকে না। অন্য কোনো পরিবার সেখানে বসবাস করছে। জগতই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে দিয়েছে। এই থিওরি অনুযায়ী কেউ যতই চেষ্টা করুক না কেনো, এমন কোনো কাজ করতে পারবে না যা প্রকৃত বর্তমানকে পরিবর্তন করবে।
ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এর সেথ লয়েড (Seth Lloyed) ও তার গবেষক দল নভিকভের থিওরির একটু বিস্তৃত বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, “প্যারাডক্স থেকে রক্ষা পেতে “সম্ভাবনা” সবসময়ই প্রয়োজন অনুযায়ী বেঁকে (পরিবর্তন) যাবে।
যদি কেউ প্যারাডক্স তৈরি করার মত কাজ করে তবে তার ফলাফল যথেষ্ট অদ্ভুত হবে (Outcomes would become stranger as one approaches a forbidden act)। কারণ যা ঘটার, তা যাতে ঘটে সেজন্য জগত যতটুকু পরিবর্তন বা যত অসম্ভব প্রয়োজন, সবই সম্ভব করবে।
২) প্যারালাল ইউনিভার্স থিওরিঃ এই তত্ত্ব অনুযায়ী কেউ যদি টাইম ট্রাভেল করে, সে কখনই তার নিজের টাইমলাইনের ইউনিভার্সের অতীতে যেতে পারবে না। টাইম ট্রাভেল করে শুধু মাত্র প্যারালাল ইউনিভার্সে গমন সম্ভব। যদি কেউ অতীতে গিয়ে তার দাদাকে হত্যা করে, সে আসলে তার ইউনিভার্সের প্যারালাল ইউনিভার্সে যাবে যেখানে আদৌ তার কোনো অস্তিত্ব ছিলো না। অর্থাৎ টাইম ট্রাভেলার যে টাইম লাইন থেকে এসেছে সেখানে তার বর্তমান অপরিবর্তিতই থাকবে। কারণ সে ট্রাভেল করছে অন্য আরেক ইউনিভার্সের টাইমলাইনে যেখানে তার অস্তিত্ব কখনই ছিলো না। ফলে তার দাদাকে হত্যা করায় আরেকটা সম্ভাবনার ইউনিভার্সে সে চলে যাচ্ছে।
এই থিওরির সাথে আরেকটি বিষয় চলে আসে। প্রতিটি সম্ভাবনার সাথে এক একটি ইউনিভার্সের থিওরি। ব্যাপারটা এইরকম যে আপনি আপনার এই জগতে হয়তো ছোটবেলায় জিলা স্কুলে চান্স পেয়েছেন। কিন্তু হয়তো এমন কোনো প্যারালাল ইউনিভার্স আছে যেখানে আপনি জিলা স্কুলের বদলে জোসেফ’স স্কুলে চান্স পেয়েছেন। আরেক ইউনিভার্সে আপনি হয়তো পড়াশুনাই করছেন না। আরেক ইউনিভার্সে আপনি ছোটবেলায় টাইফয়েডেই মারা গেছেন। এই ইউনিভার্সে আমি বাংলাদেশে আছি। হয়তো আরেক ইউনিভার্সে আমি আমেরিকায় থাকি যেখানে স্কারলেট জোহানসন আমার গার্লফ্রেন্ড (আহা, ভাবলেই দিল খুশ হয়ে যায়) ।
প্যারালাল ইউনিভার্সের থিওরি অনুযায়ী প্রতিটা সম্ভাবনার জন্য একটা করে ইউনিভার্স আছে। অনেকটা গাছের একটি কাণ্ড থেকে যেভাবে অনেকগুলো শাখা বের হয় তেমনি একটি ঘটনাকে গাছের কাণ্ড হিসেবে ধরলে প্রতিটা সম্ভাব্য ফলাফলের জন্য গাছের শাখার মত সম্ভাবনা সংখ্যক প্যারালাল ইউনিভার্স থাকবে। প্রতিটা কর্মের জন্য আলাদা ইউনিভার্স আছে – সুফল ভোগ বা দুষ্কর্ম ভোগের জন্য। এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড গল্পে এলিস খরগোশের গর্ত (Rabbit Hole) এর ভেতর পরে আরেক টাইমলাইনে চলে যায় যেখানে সব কিছু ভিন্ন, তেমনি ওয়ার্ম হোলগুলোও যেন এক একটা র্যাবিট হোল। একেক ওয়ার্ম হোলের ভিতর একেক কাহিনী পাওয়া যাবে।
*প্যারালাল ইউনিভার্সের মতবাদের মাধ্যমে ফিজিক্সের কোয়ান্টাম মেকানিক্সের থিওরি এবং মেম্ব্রেনাস থিওরি (M-Theory), টাইম ট্রাভেলের প্যারাডক্সের সমাধান দেবার চেষ্টা করেছে ।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বহু জগত (Many world interpretation) থিওরি তে বলা হয় যে – যে ঘটনার “সম্ভাবনা শূন্য নয়” ( random quantum event with a non-zero probability), তার প্রতিটা সম্ভাবনা এক একটা আলাদা জগতে ঘটবে।
ওদিকে মেম্ব্রেনের থিওরিতে বলা হচ্ছে অনেকগুলো ইউনিভার্স (Multi-verse/ Multiple Universe) ত্রিমাত্রিক গঠনে পাশাপাশি (Side by side) অবস্থান করে এক বিশাল চতুর্মাত্রিক স্থানাংক ব্যবস্থার ভেতর। এবং এই মাল্টিভার্সের ইউনিভার্স গুলোই আমাদের বিভিন্ন সম্ভাবনার ক্ষেত্র বা বলা যায় কর্মফলের ক্ষেত্র।
এখন প্রশ্ন হলো –
১: টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব?
উত্তর: থিওরিটিক্যালি সম্ভব। যেহেতু প্রাক্টিক্যালি পরীক্ষা করার মত প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি, তাই শুধু মাত্র থিওরিটিক্যাল সম্ভাবনা নিয়ে সন্তষ্ট থাকতে হচ্ছে।
২: বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে সম্ভব?
উত্তর: না। বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে সম্ভব না।
Recommended movies:
১. Back to the future Trilogy
২. Looper (2012)
৩. X-men Days of the future past (2014)
৪. Predestination (2014)
৫. Primer (2004)
৬. Justice League: Flashpoint Paradox (2013)
৭. Butterfly Effect (2004)
8. Interstellar (2014)
তথ্যসূত্রসমূহ – ফিজিক্সডটঅর্গ, স্পেসডটকম, উইকিপিডিয়া
গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স খুবই কাযর্কারী।তথ্য দিয়ে সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ সবাইকে।
but youtube e onek video ase ar onek prove o ase
আমি কি আপনার এই লিখাটার স্কিপ্ট টা ভিডিওর জন্য নিতে পারি।