ট্রু লাভ

আমার  নাম জয়ী, আমার সহকর্মী মিলটন ডেভিডসন আমাকে এই নাম দিয়েছে।  মিলটন একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার এবং আমি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। আমি মাল্টিভেক-কমপ্লেক্সের একটি অংশ, আমি মাল্টিভেকের সাহায্যে সারা পৃথিবীর সাথে কানেকটেড। আমি সব জানি, প্রায় সবকিছু।

আমি মিলটনের ব্যক্তিগত প্রোগ্রাম, ওর জয়ী। মিলটন অন্য যে কারো চাইতে প্রোগ্রামিং ভাল বোঝে এবং আমি ওর পরীক্ষামূলক প্রোগ্রাম। সে আমাকে সুন্দর করে কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছে। আমি অন্য কম্পিউটার কিংবা প্রোগ্রামের তুলনায় ভালো করে কথা বলতে পারি।

মিলটন বলেছিল, ‘ভাষা তেমন কিছুই না। এটা শুধু চিহ্ন কিংবা প্রতীকের সাথে শব্দ মেলানো, জয়ী। ভাষা এভাবেই মানুষের মস্তিষ্কে কাজ করে, যদিও আমরা এখনো জানি না আমাদের মস্তিস্কে কোন চিহ্ন কিংবা প্রতীকগুলো আছে। কিন্তু আমি তোমার ভেতরের প্রতীকগুলো চিনি, আর সেগুলোকে শব্দের সাথে একটার সাথে আরেকটা মেলাতে পারি।’ 

হয়তোবা সে কারণেই আমি কথা বলতে পারি। কিন্তু আমার মনে হয় আমি যতটা ভাল করে চিন্তা করতে পারি ততটা গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। যদিও মিলটন বলেছে আমি নাকি খুব সুন্দর করে কথা বলি।

মিলটন এখনো অবিবাহিত, তার বয়স প্রায় ৪০ বছর। সে বলেছে সে কখনো তার মনের মত মানুষ খুঁজে পায় নি। একদিন সে আমাকে বলেছিল, ‘ হয়তোবা এখনো আমি আমার মনের মানুষ খুঁজে পাই নি, জয়ী। কিন্তু যখন পাব সে হবে আমার মনের মানুষ, আমার ট্রু লাভ। এবং এই ট্রু লাভ খুঁজে বের করতে তুমি আমাকে সাহায্য করবে। বিশ্বের সমস্যা সমাধানের জন্য তোমার উন্নতি করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, জয়ীএখন আমার সমস্যার সমাধান করআমার জন্য ট্রু লাভ খুঁজে বের কর।

আমি জানতে চাইলাম, ট্রু লাভ কী? কিন্তু মিলটন বললো আমি বুঝবো না কারণ এটা নাকি ভাবের ব্যাপার। তার জন্য একটা আদর্শ মেয়ে খুঁজে বের করতে যে হবে তার মনের মানুষ, তার ট্রু লাভ।

সে বললো, যেহেতু আমি মাল্টিভ্যাক-কমপ্লেক্সের সাথে জড়িত, সেহেতু আমি চাইলেই বিশ্বের সব মানুষের তথ্য নিতে পারবো। এরপর আমরা একেকটা দল ধরে ধরে বাদ দিতে থাকবো যতক্ষণ না মাত্র একজন বাকি থাকেসেই একজন হবে মিলটনের মনের মানুষ।
আমি তাকে জানালাম, আমি প্রস্তুত।
সে বললো, ‘প্রথমে সব পুরুষদের বাদ দাও।‘
ওই কাজটা সহজ ছিল, ওর ভয়েস কমান্ডে আমার মলিকিউলার ভাল্বে সিম্বল এক্টিভেট হয়ে যায়। ওর কথা মত আমি ৩,৭৮৪,৯৪২,৮৭৪ জন পুরুষকে বাদ দিয়ে দেই। আর বাকি রইল ৩,৭৮৬,১১২,০৯০ জন মহিলা।

মিলটন বললো, ‘এদের ভেতর ২৫ বছরের নিচে যারা এবং ৪০ বছরের উপরে যারা তাদেরকেও বাদ দিয়ে দাও। আর চোখের রঙ নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নাই, সেটা যে কোনো রঙ হতে পারে তবে চুল যেন লাল না হয়। লাল চুল আমার একেবারে পছন্দ না।’ 
দুই সপ্তাহ পর আমরা মাত্র ২৩৫ জন মহিলায় নেমে আসি। তারা সবাই খুব ভাল ইংরেজি বলে। মিলটন ভাষাগত কোনো সমস্যা চায় না।

সে আমাকে জানাল তার পক্ষে ২৩৫ জনের ইন্টারভিউ নেয়া সম্ভব নয়, এতে অনেক সময় নষ্ট হবে এবং অনেকে সন্দেহ করতে পারে। আমিও তার সাথে একমত হলাম, ২৩৫ জনের ইন্টারভিউ নেয়া আসলে সময়সাপেক্ষ এবং মানুষের মাঝে সন্দেহ বাড়াবে।
মিলটন আমাকে দিয়ে কিছু কাজ করায় যার জন্য আসলে আমাকে তৈরি করা হয় নি। কেউ অবশ্য এ ব্যাপারে জানে না।
সে আমাকে জানাল এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ গোপন রাখতে হবে। যেহেতু এটা সম্পূর্ণ তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার বাইরের কারো নাক গলানোটা সে পছন্দ করবে নাকিন্তু এতজনের ইন্টারভিউ কিভাবে করবে সেই চিন্তায় ডুবে গেল সে।
সে বললো, ‘এক কাজ কর জয়ী, আমি এই ২৩৫ জনের সবার হলোগ্রাফ নিয়ে আসি এবং তুমি এদের মাঝে যাদের সাথে আমার সবচেয়ে মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের খুঁজে বের কর।’
মিলটনের চাহিদা মত আমি ২৩৫ জনের মাঝ থেকে ৮ জনকে খুঁজে বের করি যাদেরকে মিলটনের ভাল লাগার সম্ভাবনা আছে।
মিলটনকে জানানোর পর, সে বললো, ‘অসাধারণ জয়ী, তোমার কাছে এদের সব তথ্য আছে। তাদেরকে এখানে বদলি করে নিয়ে আস।’
কিন্তু আমাকে এসব কাজের জন্য ডিজাইন করা হয় নি। কাউকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বদলি করার কাজ মানুষের। যে কারণে এটাকে বলা হয়, ‘ম্যানিপুলেশোন’। কিন্তু আমি এখন এই কাজ করতে পারি কারণ মিলটন আমার জন্য সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যদিও এই কাজ আমি মিলটন বাদে অন্য কারো জন্য করতে পারবো না। আমার সেই ক্ষমতা নেই।

এক সপ্তাহ পর প্রথম মেয়েটি আসলো, মেয়েটিকে দেখার পর থেকেই মিলটনের চেহারা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। মেয়েটির সাথে মিলটনের কথাবার্তা দেখে মনে হল এটা খুব কঠিন একটা কাজ, আমাকে ভাষা শেখাতেও তার এত কষ্ট হয় নি যতটা হচ্ছে এই মেয়ের সাথে কথা বলতে। তবুও তারা দুজন বেশ ভাল সময় কাটাল, এবং মনে হল যে মিলটন আমার কথা ভুলেই গেছে। একসময় সে মেয়েটিকে বাইরে খেতেও নিয়ে গেল।
পরের দিন তার সাথে আমার আবার কথা হল, ‘নাহ জয়ী, আমার সময় ভাল কাটে নি। কোনো একটা অমিল আছে আমাদের মাঝে। মেয়েটি অবশ্যই অসাধারণ সুন্দরী ছিল, কিন্তু কেন যেন তার জন্য আমার কোনো ভাল লাগা কাজ করে নি। তার জন্য কোনো কিছু অনুভব করি নি আমিদেখি পরের জনের সাথে কেমন যায়।’
বাকি ৮ জনের সাথেও একই ব্যাপার ঘটলো। কিছু না কিছু সমস্যা থাকে, অমিল থাকে। কিন্তু মিলটন বুঝে উঠতে পারে না কী সেটা। কারণ তারা সবাই সুন্দরী। এদের মাঝে তিনজন আবার সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিজয়ী।’
‘জয়ী, আমি বুঝতে পারছি না সমস্যাটা কোথায়। তাদের হাসি সুন্দর, তাদের চেহারা সুন্দর, কিন্তু একজনকেও মনের মত মনে হয় নি। আমরা দুজনে মিলে বিশ্বের সেরা ৮ সুন্দরীকে খুঁজে বের করলাম অথচ একজনকেও মনের মানুষ মনে হল না।’
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তাদের কি তোমাকে ভাল লেগেছে? তাদের কি তোমাকে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে? তাদের কাছে কি তুমি আদর্শ পুরুষ?’
মিলটনের ভ্রু কুঁচকে গেল, সে এক হাত দিয়ে আরেক হাতে ঘুষি মেরে বলে উঠলো, ‘এটাই কারণ জয়ী। এখানে একজনের ভাল লাগলেই চলবে না, দুজনকেই দুজনের ভাল লাগতে হবে। শুধু আমার তাদের ভাল লাগলেই হবে না কিংবা তাদের আমার ভাল লাগলেই হবে না। ব্যাপারটা দুই পক্ষের। কিন্তু আমি কিভাবে খুঁজে বের করবো কার আমাকে ভাল লাগবে ?’
সারাদিন মিলটন এই ব্যাপার নিয়ে ভাবতে লাগলো এবং পরের দিন সে আমাকে বললো, ‘আমি এই দায়িত্ব সম্পূর্ণ তোমার উপর ছেড়ে দিচ্ছি, জয়ী। তোমার কাছে আমার সব তথ্য আছে, আমি তোমাকে আমার ব্যক্তিগত তথ্যগুলোও দিবো। নিজের সম্পর্কে আমি যা জানি, তুমিও তা জানবে। সেইসব ব্যক্তিগত তথ্য তুমি আমার আমার তথ্যভাণ্ডারে যোগ করবে। এবং সেই সাথে এটাও নিশ্চিত করবে যেন তুমি ছাড়া আর কেউ যেন এসব তথ্য জানতে না পারে


আমি জানতে চাইলাম তার সব তথ্য জানলে আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারবো?
মিলটন বললো, ‘তুমি আমার সব্য তথ্য দিয়ে এই ২৩৫ জনের সাথে মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা কর। না ২৩৫ নয়, বরং ২২৭ জনের সাইকিয়াট্রিক এক্সাম নাও এবং তাদের ভাল লাগা খারাপ লাগার সাথে আমার পছন্দের মিল খুঁজে বের কর।’ (যদিও কারো সাইকিয়াট্রিক এক্সাম নেয়া আমার নির্দেশনাবলীর বাহিরে)

সারা সপ্তাহ ধরে মিলটন আমাকে তার সম্পর্কে সবকিছু জানালো। তার অভিভাবক এবং ভাই-বোন সম্পর্কে আমি জানলাম, জানলাম তার কৈশোর এবং স্কুলজীবন সম্পর্কে। এমনকি সে দূর থেকে কোন কোন মেয়েকে পছন্দ করতো তাও।

সে বলেছিল, ‘দেখেছ জয়ী, তুমি যত ভাল আমার সম্পর্কে জানবে তোমার জন্য আমার সঙ্গী খুঁজে বের করা তত সহজ হবে। তোমাকে আমার মত করে ভাবতে হবে। তাহলে তুমি আরো ভালভাবে বুঝতে পারবে আমি কী চাই এবং কোনটা আমার পছন্দ, কোনটা আমার অপছন্দ। তাহলে তুমি আমাকে ভালভাবে বুঝতে পারবে আর যখন আমাকে ভালভাবে বুঝতে পারবে তখন আমার মনের মানুষ কেমন হবে সেটাও বুঝতে পারবে। তখন এই ২২৭ জনের মধ্যে আমার জন্য সবচেয়ে আদর্শ মহিলা খুঁজে বের করতে পারবে তুমি, যে হবে আমার মনের মানুষ, আমার ট্রু লাভ।’

মিলটন তারপর থেকে প্রতিদিন আমার সাথে নিজের সম্পর্কে কথা বলতে লাগলো, আমিও তাকে ভালভাবে জানার চেষ্টা করতে লাগলাম। আস্তে আস্তে আমারো উন্নতি হতে লাগলো, আমি লম্বা লম্বা বাক্য বলতে শিখে গেলাম এবং আমার এক্সপ্রেশন ও আরো জটিল হতে লাগলো।

আমি মিলটনকে বললাম, ‘দেখ মিলটন, আমার মনে হয় তোমার জন্য আদর্শ মেয়ে হবে সে, যার সাথে তোমার ব্যাক্তিত্ব, আবেগ, এবং মানসিক প্রকৃতির মিল আছে। যদি এটা মিলে যায় তাহলে সে দেখতে কেমন সেটা পরের ব্যাপার। কাউকে ভাললাগার জন্য চেহারা প্রধান বিষয় হতে পারে না। আমরা এই মিলগুলো ২২৭ জনের মাঝে খুঁজে দেখবো। যদি না পাই তাহলে বাকিদের মাঝে খুঁজে দেখার চেষ্টা করবো। আমরা এমন একজনকে খুঁজবো যে তোমার চেহারা কিংবা কারো চেহারা নিয়েই মাথা ঘামাবে না, বরং সে কাউকে পছন্দ করলে তার ব্যাক্তিত্বের কারণে করবে। কী মনে হয় তোমার?’
মিলটন বললো, ‘একেবারে ঠিক বলেছ, আমার এ ব্যাপারে ধারণা নাই কারণ আমার জীবনে মেয়েদের সংস্পর্শ বেশি একটা ছিল না।  কিন্তু এখন তোমার কথা শুনে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেছে।’
আমরা প্রায় বিষয়েই একমত হই, আমাদের চিন্তা ধারণাও অনেকটা একরকম।
আমি তাকে বললাম, ‘আমাদের তাহলে আর তেমন সমস্যা থাকার কথা না, মিলটন। আমার হয়তোবা তোমার সম্পর্কে আরো কিছু জিনিস জানতে হতে পারে। তাতে যদি কোনো ফাঁক থাকে তাহলে সেটা পূরণ হয়ে যাবে।’

মিলটনকে বেশ খুশি মনে হল, সে বললো, ‘তোমার সাথে কথা বললে মনে হয় যেন নিজের সাথে কথা বলছি। আমাদের ব্যক্তিত্ব একেবারে মিলে গেছে।’
আমি বললাম, ‘আর তোমার মনের মানুষের সাথেও মিলে যাবে বলে আশা করি।’

আমি শেষ পর্যন্ত সেই মনের মানুষের খোঁজ পাই এবং সে ঐ ২২৭ জনের মাঝেই একজন। তার নাম ছিল ‘চ্যারিটি জোন্স’এবং সে ছিল উইচেটা হিস্ট্রি লাইব্রেরির এভালুয়েটর।
বাকি ২২৬ জন কোনো না কোনো কারণে বাদ পড়ে গেছে কিন্তু চ্যারিটির সাথে আমাদের সব কিছু মিলে গেছে।

আমার মিলটনকে চ্যারিটি সম্পর্কে কিছু বলার প্রয়োজন হয় নি। আমাদের যেহেতু একই রকম ব্যক্তিত্ব, আমাদের ভাললাগাও একই রকম হবে।

এখন আমার চ্যারিটিকে এখানে বদলি করে নিয়ে আসতে হবে। যার জন্য কিছু পেপার ওয়ার্ক করতে হবে যাতে কেউ কিছু সন্দেহ না করে।

কিন্তু মিলটনকে আমি না জানালেও মিলটন জেনে যাবে, কারণ সে আমার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে, আর এসবের আয়োজন সে নিজেই করেছে। তাই মিলটনের ব্যাপারেও কিছু করতে হবে।

মিলটনকে যখন তারা ধরে নিয়ে গেল সে বুঝতে পারছিল না কী ঘটছে। দশ বছর আগের কোনো এক অবৈধ কাজের জন্য তারা তাকে ধরেছে। কিন্তু একথা কারো জানার কথা না, সে কাউকে বলে নাই।
মিলটন শুধু আমাকে সবকিছু খুলে বলেছিল। তাই তাকে ধরিয়ে দেয়াও আমার জন্য সহজ ছিল।

যখন সে বুঝতে পারবে এটা আমার কাজ, তখন তার করার কিছু থাকবে না। কারণ সে যদি আমার কথা বলে তাহলে আরো অনেক বড় সমস্যার মাঝে পড়তে হবে।

ও এখন কারাগারে। কালকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসা দিবস। কাল চ্যারিটি বদলি হয়ে আসবে এখানে। আমি ওকে শিখিয়ে দিব কীভাবে আমাকে অপারেট করতে হয়। আমার সাথে কথা বলবে তার সুন্দর কণ্ঠে এবং আমার যত্ন নেবে তার কোমল হাতে। চেহারা বা গড়নে কী যায় আসে যখন আমাদের ব্যক্তিত্ব একই।
আমি কাল চ্যারিটিকে বলবো, ‘I am Joe, and you are my true love.’

আইজ্যাক আজিমভের ছোট গল্প “ট্রু লাভ”-এর অনুবাদ।

Comments

আপনার আরো পছন্দ হতে পারে...

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
জানান আমাকে যখন আসবে -
guest
2 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
ফরহাদ হোসেন মাসুম
এডমিন
7 বছর পূর্বে

That was a good one. নরম্যালি চলতে চলতে হঠাৎ করেই অ্যাসিমভীয় ধাক্কা!

2
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x