আমি তখন আরামসে মার্শমেলো খাইতেসিলাম। তখনি উনার আগমন, আর আমি মনে মনে বললাম, শ্যাষ!
কাচ্চাঃ কেমন আছো, দাদা?
আমিঃ ভাল। কী চাই?
কাচ্চাঃ আকাশের রঙ কী, দাদা?
আমিঃ (চোখ রাঙায়) চক্ষে কি আন্ধার দেহ?
কাচ্চাঃ আচ্ছা। নীল কেন?
আমিঃ (বিরক্ত হয়ে) সূর্যের আলো আমাদের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে সেখানে আলো বিক্ষিপ্ত হয়, মানে চারদিকে ছড়িয়ে যায়। যে রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত কম, সেই রঙের আলো তত বেশি ছড়াবে, আর সে আলোটাই দেখা যাবে। তাই আমরা নীল দেখি। এইডারে Rayleigh scattering বলে। নইলে এমনিতে আকাশ বলতে তো কিছু নাইক্কা!
কাচ্চাঃ এমন হলে তো আকাশের রঙ বেগুনি হবার কথা, তা হয় না কেন?
আমিঃ বুদ্ধি হইসে দেখতেছি। ভাল প্রশ্ন। বস, বলতেছি। আকাশের রঙ আমরা কেমন দেখব তার দুইটা ফ্যাক্টর আছে। এক, সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডলে কতটা ছড়াচ্ছে; আর দুই, আমাদের চোখ সেটা কিভাবে নিচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের ব্যাপারটা সবারই জানা। কিন্তু এতে শেষে একটু ভুল আছে। তা হলো, বায়ুমণ্ডল অনুযায়ী তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম হওয়ার কারণে আকাশের রঙ বেগুনি হবার কথা। এবার তোরে বেক্কল বানাই?
কাচ্চাঃ মানে?
আমিঃ আকাশের রঙ আসলে বেগুনি!
কাচ্চাঃ এ্য!!
আমিঃ হ, সত্যিই। কিন্তু আমরা নীল দেখছি। এর কারণটা নিশ্চয়ই বুঝছিস।
কাচ্চাঃ আমাদের চোখ?
আমিঃ হুম। এটা বুঝতে হলে একটু বায়োলজি পড়াতে হবে।
কাচ্চাঃ দাদা, একটু খেলে আসি?
আমিঃ আরে এত কঠিন না। আমাদের চোখের রেটিনায় আলোকসংবেদী দুইটা কোষ আছে, রড আর কোন। রড ভুলে যা, এইটার কাজ নাই এখানে। বলবো কোনের কাহিনী। এই কোন কোষ ৩ টাইপ আছে। এগুলো ৩টা আলোর প্রতি সবচে বেশি সংবেদনশীল – লাল, নীল, আর সবুজ। একটা বস্তু থেকে নির্গত আলোকে যে টাইপ বেশি সংবেদিত করবে, আমরা বস্তুকে সে রঙের দেখবো।
কাচ্চাঃ একটু থামাই। তাহলে আমরা অন্য রঙ দেখি কীভাবে?
আমিঃ এতে একটু কাহিনী আছে। ধর, তুই একটা নীল বস্তু নিলি। এখন সেটাকে তোর নীল-টাইপ কোন কোষ বেশি সংবেদন করবে ঠিক আছে, কিন্তু বাকি দুটো কিন্তু বসে থাকবে না। তারাও বাম হাত ঢুকাবে। তখন বস্তুটা অন্য রঙের দেখাবে।
সেইম ঘটনা ঘটে আকাশের ক্ষেত্রেও। আগেই বলছি, আকাশের বেসিক্যালি রঙ বেগুনি। এই বেগুনি আলো যখন আমাদের চোখে প্রবেশ করে, তখন আমাদের চোখের লাল-টাইপ কোন কোষ বেগুনিকে সবচে বেশি সংবেদিত করে। ফলে আকাশের রঙ তখন লালচে বেগুনি হবার কথা। কিন্তু তা হয় না, কারণটা একটু আগেই বললাম। লাল কোন কোষ বেশি সংবেদন করবে ঠিক আছে, কিন্তু বাকি দুইটাও ছেড়ে দিবেনা। তারাও এই বেগুনির সাথে রিয়েকশন করবে। আর এই রিয়েকশনের ফলে আকাশের সর্বশেষ রঙ হয়ে দাঁড়ায় নীলচে বেগুনি।
কাচ্চাঃ অমা! তাহলে নীল দেখি কেন?
আমিঃ (রেগে) এতক্ষন কী কইসি! বললাম না আমাদের চোখে বেগুনীকে কেবল লালই একটু সংবেদন করে। কিন্তু নীলও তো বেসিক কালারই, যা আমাদের কোন কোষে আছে। তাই আমরা সব মিলিয়ে নীলটাই দেখতে পাই। তাহলে, আকাশের কালার কী বল তো?
কাচ্চাঃ বুঝসি। আকাশের কালার বেগুনি, আমাদের চোখ সেটাকে দেখে নীলচে বেগুনি, কিন্তু মেজরিটির পাল্লায় পরে আমরা শুধু নীলটাই দেখি। ঠিক আছে?
আমিঃ হুম। যা এলা। অনেক মাথা চিবাইসস।
তখনি উনার ফোনে কল আসলো। হ্যালো বলার ভাবেই বুঝলাম, বফের কল। বফ সাহেব কী জানি বললো, সাথে সাথেই উনার ঝাড়ি, “এই শোন, আকাশের রঙ নীল না, বেগুনী বুঝসো! আরেকদিন এটা বললে…..”
মুখ চাইপা হাসি কেম্নে আটকাই!
(অন্য কারো সাথে এমন হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী না!)
ধন্যযোগ।