পিরামিড আমাদের তৈরি

১.

ঐ দূর মহাকাশ থেকে এসে কেউ মিশরের পিরামিডগুলো আমাদের জন্য বানিয়ে রেখে যায়নি। কোনো ভিনগ্রহের প্রাণী এগুলো বানানোর জন্য  আমাদের নিকট বিশেষ কোনো যন্ত্র বানিয়ে দিয়েও যায়নি। যদি কোথাও পড়ে থাকেন, পিরামিড ভিনগ্রহীদের তৈরি, তাহলে তা ভুল। 

বিশাল পিরামিডের কাজ চলছে আর বিশেষ পোশাক পরিহিত সৈন্যদের মতো মানুষরা শ্রমিকদের গায়ে জোরে জোরে চাবুক মারছে। এভাবেই এগিয়ে চলছে পিরামিড নির্মাণের কাজ। এভাবেই শ্রমিকদের উপর কঠোর নির্যাতন চালিয়ে গড়ে উঠল পিরামিড। অনেক ভিনদেশি মুভিতে এই দৃশ্য দেখে হয়তো আপনি অভ্যস্থ। না, এভাবেও তৈরি হয়নি পিরামিড। 

এতটুকু পড়ে আপনি হয়তো বলবেন, ” প্রমাণ আছে, প্রমাণ!? “

হ্যাঁ। অনেক শক্ত শক্ত প্রমাণ আছে -যেগুলো উপরে বর্ণিত এমন অনেক ষড়যন্ত্রতত্ত্বকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। চলুন শুরু করা যাক। 

এটা সত্য যে, ভিক্টোরিয়ান যুগের পূর্ব পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট নিদর্শন ছিল না, তাই স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছিল না  কে বা কারা পিরামিড নির্মাণ করেছিল। বহুকাল ধরে প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই নির্মাণ শ্রমিকদের কবর বা গ্রামের সন্ধান করে বেড়িয়েছেন।

সাল ১৮৮৮। 

ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক ফ্লিন্ডার পেট্রি ইলাহুন নামক স্থানের Senwosert II এর পিরামিডের মধ্য প্রাঙ্গনে আবিষ্কার করলেন একটি ধ্বংস প্রাপ্ত পরিকল্পিত নগর। সেখানে তিনি খুঁজে পেলেন ছাদযুক্ত ইটের ঘর। সেখানে বসবাস করা নারী-পুরুষদের পোশাক, তাদের তৈরি মৃৎশিল্প এবং তাদের বাচ্চাদের খেলনা। 

এর পরেও তারা থেমে থাকেননি, প্রকৃত নির্মাণ শিল্পীদের সন্ধান করতে। এর ফলে আরও ভালো ভাবে আমরা বলতে পারছি পিরামিড সাধারণ মানুষদের হাতেই তৈরি। এর পরে অসংখ্য নির্মাণ শ্রমিকদের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস আমাদের বলেছিলেন, পিরামিড এক লাখ দাস-দাসীদের দ্বারা নির্মিত, যারা নিয়মিত পরিশ্রম করে এবং প্রতি তিন মাসে একটি করে একটি দল বদল করে (অর্থাৎ একটি দল তিন মাস করে কাজ করত,তারপর আরেকটি নতুন দল আসত) পিরামিড নির্মাণ করেছিল। তিনি পরবর্তীতে ভুল প্রমাণিত হন।

মিশরের চতুর্থ রাজবংশের দ্বিতীয় ফারাও কুফুর নিকট ১০০,০০০ জন দাস-দাসী থাকা সম্ভব নয়। যদি থেকেও থাকত, তাহলে তারা একসাথে একটি পিরামিড নির্মাণ করেননি। এক্ষেত্রে অনেক বিশেষজ্ঞই একমত পোষণ করেছেন যে, পিরামিড নির্মাণে প্রাথমিক শ্রমিকদের সংখ্যা ৪০০০ জন (এরা ছিলেন-খনি শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি)। এই চার হাজার জনকে সাহায্য করেছিল ১৬ থেকে ২০০০০ হাজার জন শ্রমিক (এরা বিভিন্ন যন্ত্র নির্মাণ, খাদ্য সরবরাহ এরকম কাজের সাথে যুক্ত ছিল)। সুতরাং এ থেকে বলা যায়, ২০ থেকে ২৫ হাজার জন শ্রমিক মিলে ২০ বছরে একটি পিরামিড নির্মাণ করেছিলেন। এই নিমার্ণ শ্রমিকরা আরেকটি স্থায়ী বেতনভুক ৫০০০ জন শ্রমিকদের দলে বিভক্ত ছিল। তারা সকলে পিরামিডের নিকটে একটি গ্রামে তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করত। একটি ২০০০০ সদস্যের অস্থায়ী শ্রমিকদের দলও ছিল।তারা সাধারণত তিন অথবা চার মাসের জন্য কাজ করতে আসত এবং পিরামিড গ্রামের আশে-পাশে ক্যাম্প নির্মাণ করে বসবাস করত।

গিজার  পিরামিড গ্রামের পবিত্র কবরের অঞ্চলটি “ওয়াল অফ দ্যা ক্রো “নামে পরিচিত ছিল। একটি চুনাপাথরের দেয়াল  দ্বারা এটিকে জীবিতদের  জগৎ থেকে  পৃথক করা হয়েছিল। প্রধান পিরামিড গ্রামটি  গিজা পিরামিডের উপত্যকা র মন্দিরের  কাছেই অবস্থিত।  কিন্তু দুভাগ্যবশত এটি বর্তমানে অধুনিক শহর নেজলেট-এস-সামমানের নীচে অবস্থিত এবং বেশ দুর্গম বা বিপদজনক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামের মৃত ব্যক্তিদের মরুভূমির বুকে দাফন করা হয়েছিল। তাদের কবরগুলোতেও অনেক দামী স্বর্ণ, পাথরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, এসব জিনিসপত্র রাজাদের কবর থেকে ধার করে নিয়ে আসা হতো।

মিশরীয় কবর ডাকাতদের টার্গেট ছিল মূলত ফারাওদের কবরগুলো। ফলে তারা শ্রমিকদের কবরগুলোর দিকে তেমন মনোযোগ দিতে পারেনি। ফলে শ্রমিকদের অক্ষত কঙ্কালগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে । ফলে বিজ্ঞানীরা শ্রমিকদের প্রোফাইল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। ছয়’শ এর চেয়ে বেশি দেহের উপর গবেষণা চালানো  হয়েছে।দেহগুলোর  অর্ধেকের বেশি হলো নারী এবং শতকরা ২৩ ভাগ হলো শিশু।

সুপারভাইজারদের কবরে থাকা শিলালিপি থেকে বোঝা সম্ভব কিভাবে পিরামিড নির্মাণের কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছিল। পিরামিড শহরের দক্ষিণাঞ্চলে একটি শিল্প নগরী ছিল। সেখানে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা শ্রমিকদের তৈরি ড্রেন, রাস্তা, বাড়িঘরের সন্ধান পেয়েছেন। এখনও অনুসন্ধান চলছে। এরই মাঝে মার্ক লেহনার একটি কপার প্রসেসিং প্লান্টের সন্ধান পেয়েছেন। এছাড়াও কয়েকটি রুটি বানানোর ছাঁচ, মাছ প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের সন্ধান (অনেক ধুলোময় মাছ সহ) পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন পশুর হাড়ের সন্ধানও পেয়েছেন। এই হাড়গুলো মূলত হাঁস, শুকর, ও মুরগির। এই পশুগুলো সম্ভবত শ্রমিকদের গৃহে পালিত হয়েছিল।

ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোকে ভুল প্রমাণ করার জন্য কায়রো মেডিকেল ইউনিভারসিটি স্কুলের মাওমিনা কামাল ফুকুর পিরামিডের কর্মীদের ডিএনএ-এর উপর পরিক্ষা চালিয়েছেন। তিনি তাদের ডিএনএ তে কোনো এলিয়েন বা বর্হিজাগতিক প্রাণের সন্ধান পাননি।

তখনকার সময়ের প্রতিটি মিশরীয় পরিবার কোনো না কোনো ভাবে পিরামিড নির্মাণের সাথে জড়িত ছিল। এটি মূলত একটি জাতীয় প্রকল্পের মতো ছিল। পুরো জাতি এক সাথে তাদের মেধা ও পেশি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পিরামিড নির্মাণ করেছিল।

১. একজন নিমার্ণকর্মীর কবর।(ছবি: এপি নিউজ)

২.সিনিয়র নিমার্ণকর্মীদের জন্য বানানো কবর।(ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক) 

৩.বেকারির কর্মীর ছবি।রুটিসহ অন্যন্য খাবার তৈরি করতেন এরা। ( ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক) 

৪.নিমার্ণকর্মীরা মাংসও খেত।(ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক) 

৫. নির্মাণকর্মীদের জন্য বিয়ার তৈরি করা হচ্ছে।

৬.একজন নির্মাণকর্মীর কবর।

৭. কাজ করার সময় আহত হয়েছিল এই কর্মী। তাকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছিল। ফলে দু বছর বেশি বেঁচেছিলেন ইনি।

২.

আমি বোঝাতে চেয়েছি, পিরামিড মূলত মানুষের তৈরি। কোনো বর্হিজাগতিক প্রাণী এসে এগুলো বানানোর বুদ্ধি বা উপকরণ আমাদের নিকট দিয়ে যায়নি। তবুও অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। বিষয়টাকে পরিষ্কার করে ফুটিয়ে তুলতে না পারলে এই ব্যর্থতা আমার । এই বিষয়গুলো ক্লিয়ার করা দরকার।

“কিন্তু বিজ্ঞানীরা কঙ্কাল দেখে কীভাবে বুঝলো, যে তারা শ্রমিক ছিল? শ্রমিক হলেও তারাই যে পিরামিড বানিয়েছে এটার প্রমাণ কী?”

যে দেহগুলো পাওয়া গেছে, তাদের দেহে বিশেষ চিহ্ন দেখা গেছে। পাথর বহন করার কারণে তাদের কোমরে বিশেষ পরিবর্তন দেখা যায়। এছাড়াও তাদের অনেকে কাজ করার সময় আহত হয়েছিলেন। প্রথম অংশের ৭নং ছবিটা দেখুন। 

তাদের বাড়ি বা কবর  থেকে পিরামিড বানানোর উপাদানগুলো পাওয়া গেছে। সুতরাং তারা পিরামিডের নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। 

তারা মানুষ ছিল কি না, এজন্য ডিএনএ টেস্টও করা হয়েছে।

” তাহলে ভারী  ওজনের পাথরগুলো এত উপরে কিভাবে উঠাত?'”

উত্তরঃ গিজার পিরামিডের উচ্চতা প্রায় ৪৫০ ফুট। কিভাবে ৪০০০বছরের পুরনো প্রযুক্তি দিয়ে এটি নির্মাণ করা হলো এ নিয়ে সবাই বিস্ময় প্রকাশ করে। লিভারপুর ইউনিভার্সিটি র বিজ্ঞানীরা এই রহস্যের সমাধান করতে পেরেছেন। তারা একটি ঢালু স্থান খুঁজে পেয়েছেন। এই ঢালু স্থানটি অনেকটা সিড়ির মতো। মাঝে মাঝে গর্তের মতো রয়েছে। এই ঢালগুলোকে ব্যবহার করেই মূলত শ্রমিকরা ব্লকগুলোকে উপরে নিয়ে যেত। এক্ষেত্রে দ্বিমুখী পুলিং সিস্টেমকে কাজে লাগানো হয়েছিল। 

অধ্যাপক রোলান্ড ইনমার্চ এই পদ্ধতিটিকেই যুক্তিযুক্ত মনে করছেন। পূর্বের প্রত্নতত্ত্ববিদেরাও মনে করত, এভাবেই ব্লকগুলোকে উপরে নিয়ে যাওয়া হতো, মানুষের পেশি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে। পাথর বা ব্লকগুলোর ওজন ছিল ২.৫ থেকে ১৫ টনের মধ্যে। মোট ব্লকের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৩ লক্ষ। এই ব্লক বা পাথর নিয়েই অনেকের সংশয়। মরুভূমির মাঝে কিভাবে পাথরগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? এটিরও সমাধান আছে। এটির সমাধানে প্রাচীন মিশরীয়রাই আমাদের সাহায্য করেছে।  Djehutihotep এর একটি কবরের হায়ারোগ্লিফিকে দেখা যায়, ১৭২ জন দড়ির সাহায্য একটি বিশাল মূর্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মূর্তির  সামনে একজন লোক পানি ছিটিয়ে ঘর্ষণ কমানোর চেষ্টা করছেন। সুতরাং এভাবেই পাথরের ব্লকগুলোকে বহন করা হতো। 

আশা করি, আর বলবেন না, “এলিয়েনরাই পিরামিড বানিয়েছিল!”

তাছাড়া এটা ষড়যন্ত্রতত্ত্বের আওতায় পড়ে। 

৮. এই হলো সেই ঢাল। ( ছবি : বিবিসি)

৯.এভাবেই ভারী ব্লকগুলো উপরে তোলা হতো।(ছবি:দ্যা সান)

১০.মূর্তির পায়ের কাছে সামনে হেলে থাকা লোকটিকে দেখুন।(ছবি: physics.org)

১১.ভেজা বালুতে ঘর্ষণ কমে যায়। ফলে সহজে ভারী জিনিস বহন করা সম্ভব হয়।(ছবি: Live Science) 

৩.

সাধারণ মানুষজন পিরামিড এলিয়েনদের দ্বারা নির্মিত এরূপ  ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো কোথা থেকে পেয়েছে? কে  এই ষড়যন্ত্রতত্ত্বের উদ্ভাবক?

অনেক সন্ধান করে খুঁজে পেয়েছি তাকে। তার নাম এরিক ভন  দানিকেন। হুমায়ূন আহমেদের একটি বইয়ে তাকে খুঁজে পেলাম। হুমায়ূন আহমেদের একজন ভাই  তাকে এই লোকের লেখা একটি বই উপহার দেন। বইটার নাম হলো-“দেবতারা কি গ্রহান্তরের মানুষ?”

প্রথমেই বলে রাখি, বেশির ভাগ বিজ্ঞানী তার হাইপোথিসিসটিকে প্রত্যাখান করেছেন।

হুমায়ূন আহমেদ এই লোকের সাথে দেখা করেছিলেন। দানিকেন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার দিয়ে বেড়াত। উইকিপিডিয়া বলছে, তিনি প্রতিবছর গড়ে ১০০০০০ হাজার মাইল ভ্রমণ করতেন। দানিকেন প্রায় ৩০০০ টি বক্তৃতা দেন। যার মধ্যে ৫০০টি বক্তৃতা তিনি দিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তো একদিন তিনি চলে আসলেন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা টেস্ট ইউনিভার্সিটিতে। হুমায়ূন আহমেদ তখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি আসায় হল লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল । তিনি বক্তৃতা দিতে আরম্ভ করলেন। বিভিন্ন ভিডিওর ক্লিপিংস  দেখালেন। প্রমাণ দিলেন, ভিনগ্রহীরা এসে আমাদের সভ্যতা শুরু করে দিয়ে গেছে। তারপর করতালি দিয়ে তার বক্তৃতা শেষ হলো। বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর তিনি বললেন, এই হলঘরে এমন কেউ কি আছেন যে তার দেওয়া হাইপোথিসিসে বিশ্বাস করেন না।

হুমায়ূন আহমেদ উঠে দাঁড়ালেন। 

দানিকেন বললেন,”তুমি কি বিশ্বাস করছ না?”

হুমায়ূন আহমেদ বললেন,” আপনার হাইপোথিসিসে মানুষের উদ্ভাবন শক্তি, কর্মক্ষমতাকে ছোট করা হয়েছে।”

দানিকেন বললেন,” তুমি মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা নিয়ে ধোঁয়াটে কথা না বলে আমি যেসব যুক্তি দিয়েছি তা খণ্ডন করো।একটি করলেই হবে।”

হুমায়ূন আহমেদ বললেন, “আপনি বক্তৃতায় বলেছেন, বালি থেকে কাচ বানাতে যে তাপ লাগে তা তৈরির ক্ষমতা মানুষের একসময় ছিল না, অথচ তারও  আগে কাচের তৈরি মানুষের মাথার খুলির ভাস্কার্য পাওয়া গেছে।”

“তুমি এটা ভুল বলতে চাচ্ছ?”

“না। পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ভাবেই কাঁচ ও ফুলগেরাইট তৈরি হয়। বালুতে যখন বজ্রপাত হয় তখন ঘটনাটি ঘটে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি কাচ দিয়ে মূর্তি বানানো হয়েছে। ভিনগ্রহের মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হয়নি।”

এই শুনে দানিকেন সাহেব রাগ করেছিলেন। 

“শ্যারিয়টস অফ গডস?” বইয়ে তিনি দাবি করেন, দিল্লির কুতুব মিনারের পাশে অবস্থিত প্রাচীন লৌহস্তম্ভটি নাকি মানুষের তৈরি নয়। কারণ সেটাকে নাকি মরচে ধরে না। অথচ স্তম্ভটিতে মরচে ধরে। পরবর্তীতে প্লেবয় ম্যাগাজিনে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেন, স্তম্ভটিতে জং ধরে এবং সেটি মানুষের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব ছিল। 

কার্ল সেগানের বিখ্যাত বই “কসমস”-এ তার কথা বলা হয়েছে। সেগান তার লেখাগুলোর সমালোচনা করেন। পৃথিবীতে এলিয়েনরা এসেছিলো কিনা, সেই বিষয়টি উড়িয়ে দেননি। তার মতে, অতীতে এমন ঘটনা ঘটে থাকতেই পারে। কিন্তু প্রাচীন এই স্থাপনাগুলো যে মানুষেরই তৈরি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

তার মতে,

Extraordinary claim needs extraordinary evidence

দানিকেন কোনো স্পষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

The Space Gods Revealed এর মুখবন্ধতে কার্ল সেগান তার সম্পর্কে বলেছেন :

That writing as careless as von Däniken’s, whose principal thesis is that our ancestors were dummies, should be so popular is a sober commentary on the credulousness and despair of our times. I also hope for the continuing popularity of books like Chariots of the Gods? in high school and college logic courses, as object lessons in sloppy thinking. I know of no recent books so riddled with logical and factual errors as the works of von Däniken.

বিভিন্ন সভ্যতার নিদর্শন নিয়ে তিনি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার করেছেন। আমাদের আলোচনা যেহেতু পিরামিড নিয়ে তাই পিরামিড নিয়ে তার দেওয়া যুক্তিগুলো খণ্ডন করব।

দাবি ১ – ১৯৬৮ সালে তার লেখা Chariots of the Gods? বইটিতে তিনি দাবি করেন যে, মিশরীয়রা পিরামিড তৈরি করতে পারেন না। কারণ, সে সময় তাদের হাতে এমন কোনো প্রযুক্তি বা যন্ত্রাংশ ছিল না, যার দ্বারা পিরামিড নিমার্ণ করা সম্ভব। তিনি আরও দাবি করেন পিরামিড শ্রমিকদের কোনো অস্তিত্ব নেই। 

পিরামিড শ্রমিকদের নিয়ে প্রথম অংশেই আলোচনা করা হয়ে গেছে। তাদের কবর আবিষ্কৃত হয়েছে । তাছাড়া অনেক যন্ত্রাংশ এখনো জাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখা রয়েছে।

দাবি ২ – তার মতে, পাথরের ব্লকগুলো কাটতে নাকি মিশরীয়দের অনেক সময় লাগার কথা। তাছাড়া তাদের বহন করতেও নাকি অনেক সময় ও শ্রমের প্রয়োজন। তাই মাত্র ২০ বছরে মিশরীয়দের দ্বারা এইসব কাজ করা সম্ভব না। নিশ্চয়ই এর পেছনে এলিয়েনদের ভূমিকা রয়েছে।

পিরামিড নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্লগগুলো কীভাবে বহন করা হয়েছিল তা নিয়ে ২য় অংশে আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া “নোভা” ডকুমেন্টরিতে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

দাবি ৩ – তার মতে, পিরামিডের নিমার্ণ এত সূক্ষ্ম কেন হবে? মিশরীয়রা তো আগে এমন কিছু তৈরি করেননি। সব পিরামিড এত সূক্ষ্ম কেন? সুতরাং নিশ্চয়ই এর পেছনে এলিয়েনদের হাত আছে।

না, মোটেও না। প্রত্ততত্ত্ববিদদের মতে, মিশরীয়রা গিজার পিরামিড নিমার্ণ করার পূর্বেও কিছু পিরামিড নিমার্ণ করেন। সেগুলো তেমন সূক্ষ্ম ছিল না। সেসব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা এত সূক্ষ্ম পিরামিড নিমার্ণ করতে সফল হন।

দাবি ৪ – দানিকেন তার বইয়ে দাবি করেন যে, পিরামিড গুলো মেডিয়ান লাইনে অবস্থিত,যা মহাদেশটিকে বিভক্ত করে। মিশরীয়দের কাছে নাকি সে সময় এমন কোনো যন্ত্র ছিল না যেটি এমন ভাবে মহাদেশটিকে বিভক্ত করার স্থানটি নির্ধারণ করে দিতে পারে।সুতরাং এলিয়েনদের দেওয়া যন্ত্র দ্বারা তারা স্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম হোন।

মোটেও না। এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। মিশরীয় নিমার্ণকর্মীরা north via star observation খোঁজার পদ্ধতিটি আগে থেকে জানত। এরকম একটি যন্ত্রেরও সন্ধান পাওয়া গেছে (নাম merkhet)। যা দ্বারা মিশরীয়রা North Star কে ব্যবহার করে উত্তরাঞ্চল নির্ধারণ করত।

২০০৪ সালে “Skeptic Magazine “-এ প্রকাশিত এক আর্টিকেলে তুলে ধরা  হয়, কীভাবে দানিকেন তার এই মহাকাশচারীর ধারণাগুলো বিখ্যাত মার্কিন ভৌতিক গল্পকার এইচ.পি. লাভক্রাফ্ট এর গল্প হতে চুরি করেন। (-সমাপ্ত)

১২.এই হলো ষড়যন্ত্রতত্ত্বটির আবিষ্কারক দানিকেন। (ছবি:ইন্টারনেট)

১৩.মিশরীয়দের তৈরি merkhet।(ছবি: ইন্টারনেট)

তথ্যসূত্রঃ

রঙপেন্সিল, হুমায়ূন আহমেদ, অন্যপ্রকাশ।

Playboy Magazine, volume 21,Number 8, 1974.

Cosmos,Carl Sagan,অধ্যায়: Encyclopedia Galactica.  

Nova,”Decoding the Great Pyramid” -এ

প্রত্ততত্ত্ববিদ জাহি হাওয়াজ ও মার্ক লেহনারের সাক্ষাৎকার।

Chariots of the Gods?von Däniken.

Jason Colavito,” An Investigation into H.P.Lovecraft and the Iinvention of Ancient Astronaut. ” Skeptic Magazine. (2004) 

https://www.bbc.co.uk/newsround/46113215

https://www.nationalgeographic.com/history/archaeology/giza-pyramids/

https://www.livescience.com/45285-how-egyptians-moved-pyramid-stones.html

http://www.bbc.co.uk/history/ancient/egyptians/pyramid_builders_01.shtml

Comments

Avatar

Khondokar Abu Shihab

I am a Student.

আপনার আরো পছন্দ হতে পারে...

3 3 votes
Article Rating
Subscribe
জানান আমাকে যখন আসবে -
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x