মানুষ প্রথম চাঁদের বুকে পা রাখার পরে প্রায় অর্ধ-শতাব্দী পার হতে চলেছে। এখন আমরা মঙ্গলে বসতি গড়ার চিন্তা ভাবনা করছি। চিন্তা করলেই মনে হয় সাইন্স-ফিকশনের মধ্যে বসে আছি। তবে এই প্রায় অর্ধ-শতাব্দী পরে এসেও কেউ কেউ এখনও বিশ্বাস করেন যে মানুষ আসলে চাঁদে যায়নি। সেটা শীতল যুদ্ধ (Cold War) চলাকালীন রাশিয়াকে টেক্কা দেওয়ার জন্য ইউএসএ’র একটা চাল ছিল। মিথ ব্যবসায়ীদের কাছেও এটা বেশ একটা হট-কেক। ইউটিউব, ফেসবুক এবং নানান হোক্স (hoax – গুজব) সাইটে চন্দ্রাভিযানের খুঁত বের করার জন্য তৈরি করা ছবি / ভিডিওর অভাব নেই। চন্দ্রাভিযান মিথ বেশ পুরনো ব্যাপার হলেও বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে ইন্টারনেট যেমন অল্প কিছুদিন ধরে পৌঁছাতে শুরু করেছে। একইভাবে এই ভুয়া সংবাদগুলোও নতুন করে পৌঁছাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের একটা প্রথম সারির অনলাইন নিউজ পোর্টালও ২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবরের সংখ্যায় একই রকম একটি খবর প্রকাশ করেছে। আজকের লেখা চন্দ্রাভিযানের সেই মিথ নিয়েই।
রাশিয়াকে ফেলে আমেরিকা আগে চাঁদে কেমনে গেলো?
অনেকেই বলতে চান যে ঐ সময় আমেরিকা টেকনোলজির দিক থেকে রাশিয়ার চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিলো। তাহলে, রাশিয়া কেন আগে যেতে পারলো না? আমেরিকা আগে কীভাবে গেলো?
সত্যিটা হচ্ছে, আমেরিকাও তখন মহাশূন্য যাত্রা নিয়ে অনেক বেশি সচেতন ছিলো। কিন্তু ওদের জন্য বজ্রপাতের মত খবরটা ছিলো রাশিয়া আগেই মহাকাশে যান পাঠিয়ে দিয়েছে। তখন তারা জোরেসোরে এক্সপ্লোরার মিশন নিয়ে নেমেছিলো, এবং খুব অল্প সময়ে ওরাও মহাকাশে যান পাঠিয়েছিলো। এরপর প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ১৯৬২ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর এক বিখ্যাত ভাষণে (বাংলা অনুবাদ করেছেন রজত দাশগুপ্ত) চাঁদে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এবং সেই অঙ্গীকারেই আমেরিকা ১৯৬৯ সালে চাঁদে অবতরণ করে।
আসুন প্রথমে দেখি, বাতাস ছাড়া পতাকা নেতিয়ে পড়ছে না কেন?
চন্দ্রাভিযানের মিথ ব্যবসায়ীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় যুক্তি হচ্ছে চাঁদে তো বাতাস নেই তাহলে পতাকা উড়ছে কিভাবে?
চাঁদে যে পতাকা উড়ানোর জন্য বাতাস নেই সেটা নাসার বিজ্ঞানীরাও জানতেন। হ্যাঁ উনারা পৃথিবীতে বসেই জানতে পেরেছিলেন যে চাঁদে বাতাস নেই। এখন পৃথিবীতে যখনই পতাকা উড়ানো হয় স্বাভাবিক অবস্থায় পতাকাটা দণ্ডের সাথে নেতিয়ে থাকে। বাতাস আসলে পত-পত করে উড়তে থাকে। চাঁদে তো বাতাস নেই, ফলে সবসময়ই নেতিয়ে থাকবে। ইউএসএ’র পতাকা তাহলে বোঝা যাবে কিভাবে? তাই পতাকাকে সোজা রাখার জন্য তাঁরা উল্টো “L” এর মত একটা দণ্ড ব্যবহার করলেন। কী চমৎকার বুদ্ধি! বাতাস এসে পত-পত করে উড়ানো লাগবে না, সবসময়ই পতাকা সোজা হয়ে থাকবে। এটা অবশ্য কোনও মৌলিক আবিষ্কার নয়, অনেক জায়গায়ই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
পতাকা কি আসলেই উড়ছে?
আমাদের প্রথমে চিন্তা করতে হবে উড়া বলতে কি বুঝছি? উড়া এবং নড়া এক ব্যাপার নয়। পতাকা উড়ছে বলে যে ভিডিওটি প্রচার করা হয় তা আসলে বাতাসে পতাকা উড়ছে সেরকম নয়। পতাকা মাটিতে লাগানোর সময় “L” আকৃতির দণ্ডের নড়াচড়ায় পতাকাটাও নড়ছে। আর যেহেতু চাঁদে বাতাস নেই ফলে বাতাসের বাধাও নেই। ঘর্ষণহীন পরিবেশে পতাকা বরং পৃথিবীর পরিবেশের চেয়ে বেশিই নড়ছে। এই নড়াচড়ার ভিডিওকে পতাকার উড়া বলে প্রচার করাটা আসলেই হাস্যকর। তারপরেও এই ব্যাখ্যা যাদের বিশ্বাস হচ্ছে না তারা এই ভিডিওটি দেখতে পারেনঃ
পায়ের ছাপ সংক্রান্ত গুজব
আরেকটা প্রচলিত গুজবে নভোচারীদের পায়ের ছাপ আর জুতো দেখিয়ে অনেকটা বিজয়ীর হাসি হেসে বলা হয়, “শুনি, এই ছাপ কেমনে আসলো?”
যে এই প্রোপাগান্ডা প্রথমবারের মত ছড়িয়েছে, সে এটা দেখায়নি যে, ঐ জুতোটা আসলে ভেতরের জুতো যেটার ছাপ পড়ার কথা না। বাইরের জুতোটা না দেখিয়ে ওরা কী প্রমাণ করতে চায়, কে জানে?
প্রোপাগান্ডা ভিডিওগুলো আসলেই খুবই চমৎকার করে বানানো হয়। বিশ্বাস করে ফেলতে ইচ্ছা করে। আমি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম দিকে এরকম একটা ১ ঘণ্টা লম্বা ভিডিও দেখে “প্রায়” বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম যে চন্দ্রাভিযান আসলে মিডিয়ার সৃষ্টি! জীবনের মূল্যবান এক ঘণ্টা নষ্ট। এই এক ঘণ্টা ঘুমালেও কাজে লাগতো! সে যাই হোক, বিজ্ঞানের উপরে বিশ্বাস রাখুন। আর নাসার এপোলো মিশনের এই চমৎকার ছবিগুলো দেখুন। NASA অনেকগুলো (প্রায় দশ হাজার) ছবি রিলিজ করেছে এপোলো মিশনগুলোর।
চাঁদ থেকে কত ক্ষুদ্র দেখায় আমাদের এই নীল গ্রহটা। খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে মানুষ হয়তো ভিন্ন গ্রহে বসতি স্থাপন করতে করতে একদিন মহাবিশ্বের এতই দূরে চলে যাবে যে তাঁদের আদি নিবাস খুঁজে বের করার জন্য সেখান থেকে স্পেস মিশন পরিচালিত হবে।
ছবিসূত্রঃ পাবলিক ডোমাইনে প্রকাশ করা নাসার ফ্লিকার একাউন্ট থেকে সংগৃহীত।
একটা সময় ছিল, আমিও দ্বিধায় পড়ে গেছিলাম। আমারও মূল্যবান কয়েক ঘন্টা গেছে এটা নিয়ে!!!!! কোন এক ইমাম (মসজিদে নামাজ পড়ায়) মসজিদে বসে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে এমন ব্রেন ওয়াস করছিলেন! সে কি যুক্তি!!!!!! মুসল্লি অধিকাংশই তো তখন সেই ইমামের ফ্যান…… চমৎকারভাবে ব্রেন ওয়াস ছিল ওটা। আল্লাহ,রসুল এর দোহায় দিয়ে, ইসলাম মিশিয়ে বিজ্ঞানের কি অপব্যখ্যা!!! পুরোই জুকার নায়েক!
হুম, অনেকেই চাঁদে যাওয়া নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। তবে মাঝে মাঝে দেখবেন এরাই আবার উদাস হয়ে বলে, নীল সাহেব নাকি চাঁদের ফাঁটল দেখে তাদের ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। একই অঙ্গে কতরূপ!
শেষের ছবিটিতে কোন নক্ষত্র না দেখা যাওয়ার কারণ কী ?? চাঁদে তো আর মেঘ নাই :3
আসলে ৬০এর দশকে ফটোশপ ছিল না তো! 😛
জোকস এপার্ট, চাঁদের সার্ফেস এবং পৃথিবীর ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার যে এ্যপাচার সেট করা ছিল সেটা নক্ষত্রের ছবি তোলার জন্য যথেষ্ট না। এই আর্টিকেলে আরও ভাল ভাবে ব্যাখ্যা করা আছেঃ https://goo.gl/yqcNVL
৬০ এর দশক-এর মুভি মনেহইয় দেখা হয়না !! ^^ ৬০ এর দশকে হলিউড রাশিয়ান ফিল্ম ইন্ড্রাস্টির চেয়ে এগিয়ে ছিল :v
*ইন্ডাস্ট্রি ……
১৯৬৯ এর পরে আর কোনো মানুষ কি গিয়েছিল চাঁদে ?
না গিয়ে থাকলে কেন যায়নি ?
গেছে তো। যাবে না কেন?
আমি একবার আমার এক শিক্ষকের কাছে শুনেছিলাম যে, আমেরিকা নাকি সেই ১৯৬৯ এর পরে আর কাউকে চাঁদে পাঠায় নি । কথাটি কি সত্যি ?
আর সত্যি হলে কেন পাঠায় নি ?
পাঠিয়েছে। শিক্ষকের সকল কথা বিশ্বাস করার দরকার নাই। এপোলো মিশন নিয়ে পড়াশোনা করুন।
যে ১২ জন চান্দের মাটিতে/বালিতে হাঁটাহাঁটি/লাফালাফি করেছেন তাঁরা হলেনঃ
Neil Armstrong, Buzz Aldrin, Pete Conrad, Alan Bean, Alan Shepard, Edgar Mitchell, David Scott, James Irwin, John Young, Charles Duke, Eugene Cernan, and Harrison Schmitt.
এখানে বিস্তারিত পাবেনঃ
http://mentalfloss.com/article/12379/12-men-who-walked-moon
https://en.wikipedia.org/wiki/Moon_landing
এই লেখা পড়ে কিছুটা সময় নষ্ট হলো।
এ ধরনের একটা লেখা আরো তথ্যবহুল হওয়াই উচিত বলে মনে করি।