পরীক্ষাগারে ভরহীন ওয়েইল ফার্মিওনের (Weyl Fermions) অস্তিত্ব পাওয়ার বিষয়টি পদার্থবিজ্ঞান জগতে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। বস্তুত পার্টিকেল ফিজিক্সে ওয়েইল ফার্মিওনের আবিষ্কারকে ঈশ্বরকণা বা হিগস বোসন কণার আবিষ্কারের পর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর এই আবিষ্কারে বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানীর অবদান থাকায় আমাদের দেশীয় বিজ্ঞান মহলে এই ব্যাপারটি গুরুত্বের সাথে উপস্থাপিত হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এই বিজ্ঞানীর নাম ড. জাহিদ হাসান। আমরা গর্বিত হতেই পারি এই ভেবে যে পদার্থবিদ্যার দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ,একটা বোস- আইনস্টাইন স্ট্যাটিস্টিকস ও আরেকটা ওয়েইল ফার্মিওনঃ দুজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী অবদান রয়েছে। আর এ দুজনের নামের পরপরই জন্মস্থান হিসেবে বাংলাদেশের নামটাও উচ্চারিত হবে।
প্রারম্ভিক আলোচনা
ওয়েইল ফার্মিওনটা কি সেটা বলার আগে কিছু ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা রাখাটা জরুরি। সে ব্যাপারগুলোতেই আগে আসছি। তবে ভূমিকাতে বলা যায় ওয়েইল ফার্মিওন এক ধরনের কোয়াসিপার্টিকেল।স্বাভাবিক অবস্থায় এরা প্রায় অস্তিত্বহীন। কিছু বিশেষ অবস্থায় এদের পাওয়া যায়।
মানুষের কণা বা দৃশ্যমান সবকিছুর পেছনে গাঠনিক উপাদানগুলোর খোঁজ শুরু সেই ডেমোক্রিটাসের যুগ থেকে। এরপর মহর্ষি কণাদ। মাঝে হয়ত আরো অনেকেই ছিলেন। তবে বিজ্ঞানী ডালটনের স্বীকার্যগুলো পরমাণু বা বৃহত্তর দৃষ্টিতে কণিকাদের ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা প্রদানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ধাপ বলা যেতে পারে। যদিও ডালটন সেই যুগে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে বেশ কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল করেছিলেন। সেই ভুলগুলোর অন্যতম ছিল ‘পরমাণুর অবিভাজ্যতা’। উন্নত যন্ত্রপাতির কল্যাণে আমরা দেখেছি পরমাণুর বিভাজ্যতা – ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রনের উপস্থিতি।
তবে এরা ছাড়াও আরো কিছু কণার অস্তিত্ব বিদ্যমান। আর এদেরকে যদি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করতে যাই তাহলে আমাদের ক্লাসিকাল মেকানিক্স আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স এ দুটোরই সাহায্য লাগবে।
ম্যাক্সওয়েল-বোল্টজম্যানের ক্লাসিকাল তত্ব কেবলমাত্র গ্যাস কণাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিলো। যেহেতু এই তত্ত্ব বেশ কিছু ঘটনা বা ফেনোমেনার যেমন ফটোইলেক্ট্রিক ইফেক্ট, কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ, ম্যাক্স প্লাঙ্কের বিকিরণ নীতির বা রেডিয়েশন ফর্মুলার কোন ব্যাখ্যাই দিতে পারেনি। সেহেতু আরো ক্ষুদ্রতার দিকে অগ্রসর হয়ে বাঙালী বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু কিছু ধারণা বা assumptions উপস্থাপন করেন যেটা ছিল ক্লাসিক্যাল থিওরি থেকে একেবারেই আলাদা। তার এই ধারণাগুলোর সাহায্যে তিনি বিকিরণ সংক্রান্ত ব্যাপারগুলোকে ব্যাখ্যা করতে পেরেছিলেন। পরে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাথে মিলিত গবেষণার ফলস্বরূপ এটা একটা তত্ত্ব হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পায় যাকে আমরা বোস-আইন্সটাইন স্ট্যাটিস্টিকস বলি। তো এই তত্ত্ব অনু্যায়ী যে কণাগুলো ছিল, তাদের নাম দেয়া হল বোসন। ফোটন, গ্লুওন বোসনের উদাহরণ। এক ধরনের শক্তিস্তরে একাধিক বোসন থাকতে পারে।
১৯২৬ সালে বোস-আইন্সটাইনের তত্ত্বকে কিছুটা পরিমার্জন করে দুজন বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি ও পল ডিরাকের হাত ধরে আরেকটা স্ট্যাটিস্টিক আসে যাকে ফার্মি-ডিরাক স্ট্যাটিস্টিকস বলা হল।এই তত্ত্ব অনুযায়ী যেসব কণাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হল তাদের বলা হল ফার্মিওন। ইলেকট্রন প্রোটন ও নিউট্রন’– এরা সবচেয়ে বিখ্যাত ফার্মিওন। আরো অনেক ধরনের ফার্মিওন আছে। ফার্মিওনরা নিজেরা কখনো একই ধরনের শক্তিস্তরে থাকতে পারে না। অর্থাৎ এক ধরনের শক্তিস্তরে কেবল একটি ফার্মিওনই থাকতে পারে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী বোসন এবং ফার্মিওনরাই এলেমেন্টারি পার্টিকেল বা মৌলিক কণা। বোসনরা হলো বল পরিবহনকারী বা ফোর্স ক্যারিয়ার কণা। বোসন কণাদের অন্তর্ভুক্ত ফোটন বা গ্লুওন সম্পর্কে এখানে যেহেতু প্রয়োজনীয়তা নেই সেহেতু ফার্মিওনদের দিকেই দৃষ্টিটা রাখছি।
ফার্মিওন
ফার্মিওনরাই হল ম্যাটার পার্টিকেল। অর্থাৎ পদার্থ তাদের নিয়েই তৈরি। প্রাথমিকভাবে ফার্মিওনদের নিয়ে যদি শ্রেণীবিভাগ করি তাহলে দুটো ভাগে ভাগ করতে পারবো একটা হল কোয়ার্ক আরেকটা লেপটন।
কোয়ার্করা হল প্রোটন এবং নিউট্রনের গাঠনিক উপাদান। যেহেতু প্রোটন ও নিউট্রন কোয়ার্কের মত পার্টিকেল দিয়ে তৈরি তাই এদেরকে বলা হয় হ্যাড্রন। ছয় ধরনের কোয়ার্ক আছে। আর লেপটনদের সহজতম উদাহারণ হল ইলেকট্রন। এছাড়াও টাঊ, মিউওনদেরও উল্লেখ করা যেতে পারে।
ইলেকট্রন সহ সকল ফার্মিওনদের ভর আছে। কিন্তু বিটা নিঃসরণ (beta decay) ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এতে কিছু সমস্যা দেখা দিল।সমস্যাটা ছিল চার্জ নিয়ে। তখন বিজ্ঞানী পাউলি, বোসন এবং ফার্মিওনের পাশাপাশি তৃতীয় এক ধরনের কণার কথা উপস্থাপন করেন। তিনি এই কণাকে বোসন বা ফার্মিওনদের মধ্যে অধিভুক্ত না করে নিউট্রিনো নাম দেন। তার তত্ত্ব অনুযায়ী এটাই কিন্তু ভরহীন কণিকা হবার কথা ছিলো।
ওয়েইল ফার্মিওন
১৯২৯ সালে গণিতবিদ হারম্যান ওয়েইল একটি তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যাতে কিছু “‘বিশেষ ক্ষেত্রে’” বা “বিশেষ পরিস্থিতিতে” এমন এক ধরনের ফার্মিওনের ব্যাপারে উল্লেখ করা হলো যাদের ওজন থাকবে না, কিন্তু তারা চার্জ ঠিকই বহন করে নিতে সক্ষম হবে। গণিতবিদ ভেইলের নামানুসারেই এই ধরনের ফার্মিওনের নাম দেয়া হয় ওয়েইল ফার্মিওন। তার তত্ত্বে এতটুকু আভাস ছিল যে ওয়েইল ফার্মিওন কোনো ফ্রি-স্ট্যান্ডিং কণা হবে না। অর্থাৎ, এটাকে সহজে অন্য কণা থেকে পৃথক করা যাবে না।
অনেকদিন ধরে ভাবা হতো, আরেকটি সাব এটমিক পার্টিকেল নিউট্রিনোই হয়তো ভরহীন ওয়েইল ফার্মিওন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে পরীক্ষাগারে প্রমাণিত হয় যে নিউট্রিনোরও কিছু ভর আছে। পাউলির নিউট্রিনো কণার অস্তিত্ব আছে বৈকি কিন্তু তারাও ভরযুক্ত।
তো ওয়েইল ফার্মিওন নিয়ে গবেষণা জারি রইলো। একদিন হিগস-বোসন কণা বা তথাকথিত ঈশ্বর কণার আবিষ্কারের ঘোষণা আসলো। এই কণার আবিষ্কারের পেছনের একটা ব্যাপারকে মাথায় রেখেই বিজ্ঞানীরা প্রস্তাব রাখলেন যে ভরহীন ওয়েইল ফার্মিওন হয়ত সরাসরি না পাওয়া গেলেও কিছু পদার্থের স্ফটিকে বা ক্রিস্টালে বিশেষ অবস্থা সৃষ্টি করে এদের পাওয়া সম্ভব। এইধরনের ক্রিস্টালের নাম দেয়া হল ওয়েইল-সেমিমেটালস (weylsemimetals)।
এই তত্ত্ব প্রকাশের পর প্রিন্সিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ডেন্সড ম্যাটার ফিজিসিস্ট আমাদের দেশীয় বিজ্ঞানী জাহিদ হাসান তার বিভিন্ন দেশের সহকর্মীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন। তারা Tantalum arsenide (ট্যান্টালাম আর্সেনাইড) নামে এক ধরনের ওয়েইল সেমিমেটাল বা ক্রিস্টালের ভেতর আল্ট্রাভায়োলেট আলোর বীম এবং এক্স-রে রশ্মি ফেলে প্রথমবারের মত ওয়েইল ফার্মিওনের অস্তিত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত হন।
আনুষ্ঠানিকভাবে তারা তাদের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন বিখ্যাত “সায়েন্স” জার্নালে এই বছরের জুলাইয়ের ১৬ তারিখে। তারা ওয়েইল ফার্মিওনকে এক রহস্যময় কণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা দেখিয়েছেন যে ওয়েইল ফার্মিওনের কোন ভর নেই, তবে চার্জ আছে। দুটো ওয়েইল ফার্মিওনকে একত্র করলে একটা ইলেকট্রন পাওয়া সম্ভব। আরো মজার ব্যাপার হলো, এরা ক্রিস্টালের ভেতরে একই সাথে ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার এই দুই বৈশিষ্ট্যই ধারণ করতে পারে।
ওয়েইল ফার্মিয়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ
তাদের এই আবিষ্কার রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে। কারণ ওয়েইল ফার্মিওন ইলেকট্রনিক্সের জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। এদের ভর না থাকায় এরা কোন বাধার সম্মুখীন না হয়েই চার্জ বহন করতে পারে। ফলে তারা খুব দ্রুত চার্জ বহন করবে। গাণিতিকভাবে দেখা গেছে ভরহীন ওয়েইল ফার্মিওন ইলেকট্রনের চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে চার্জ পরিবহন করতে পারবে। এমনকি কয়েক বছর আগে আবিষ্কার হওয়া গ্রাফিনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ গতিতে এরা চার্জ বহন করবে। ওয়েইল ফার্মিওনকে কাজে লাগানো সম্ভব হলে কম্পিউটার তথা ইলেক্ট্রনিক্স সকল যন্ত্রের প্রসেসরের গতি অবিশ্বাস্য রকমে বেড়ে যাবে। তবে এটার জন্য নতুন ধরনের সেমিকন্ডাকটর ও ইনসুলেটর বানাতে হবে। যেটা এখনকার দিনে সময়সাপেক্ষ, সেটা হয়ত ওয়েইল ফার্মিওনের ব্যাবহারে অল্প সময়েই হয়ে যেতে পারে। ওয়েইল ফার্মিওনের আবিষ্কারকরা এই ধরনের ইলেকট্রনিক্সের নাম দিয়েছেন ওয়েইলট্রনিক্স (weyltronics)।
শুধু প্রসেসর না কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়েও দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে ওয়েইল ফার্মিওন। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং হল বিশেষায়িত এক যান্ত্রিক ব্যবস্থা যেখানে প্রতিটি বাইনারী ডিজিট বা বিট একইসাথে ০ এবং ১ নির্দেশ করতে সক্ষম। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর ব্যবহারিক পর্যায় এখনো একদম প্রাথমিক অবস্থায় আছে। যেহেতু ওয়েইল ফার্মিওন একই সাথে ম্যাটার বা এন্টিম্যাটার হয়ে থাকতে পারে, সেহেতু এদেরকে দিয়েই হয়তো কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর জগতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হবে।
তবে এখনই ওয়েইল ফার্মিওনকে কাজে লাগানো যাবে না। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বিশ বছরের মধ্যে এটাকে হয়তো ব্যবহার উপযোগী করে নিয়ে আসা সম্ভব হতে পারে।
মোটামুটি কিছু জটিলতা এড়িয়ে এটাই হলো ওয়েইল ফার্মিওনের আবিষ্কার নিয়ে কিছু কথা। এবার আমাদের গর্ব জাহিদ হাসানকে নিয়ে কিছু কথা বলি।
ডঃ জাহিদ হাসান
যদিও ওয়েইল ফার্মিওনের গবেষণাটি ছিলো বহুজাতিক তবুও বিশ্ব মিডিয়ায় ড,জাহিদ হাসানকে ফোকাস করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি।বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান অধ্যাপক ড. জাহিদ হাসান। তার ডাকনাম তাপস। তিনি শ্রীপুর আসন থেকে ছয় বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলীর ছেলে। ড. জাহিদের মা নাদিরা আলী তালুকদার। ১৯৭০ সালের ২২ মে ঢাকার সেন্ট্রাল রোডের নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন ড. জাহিদ হাসান। তার বাবা অ্যাডভোকেট রহমত আলী দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একদিন জাহিদ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তখন তাকে আদর করে কোলে নিয়ে বলেছিলেন, তোমার এই ছেলে একদিন অনেক বড় হবে। ওর জন্য আমার দোয়া রইলো।
লেখাপড়ায় বরাবরই অসাধারণ ছিলেন জাহিদ। জাহিদ হাসান ১৯৮৬ সালে ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এসএসসিতে জাহিদ চারটি শিক্ষা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় হয়েছিলেন দ্বিতীয়। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়েই মাত্র ১৬ বছর বয়সে জাহিদ “এসো ধুমকেতুর রাজ্যে’ নামের বই লিখে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৬তে। ১৯৮৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে চার শিক্ষা বোর্ডে সম্মিলত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে এইচএসসি পাস করেন। এরপর গণিতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাত্র চার দিন ক্লাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই বছরই স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন পদার্থবিজ্ঞানে।
আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কারণে সুযোগ হয় নোবেল বিজয়ী তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন ওয়াইনভার্গের কাছে শিক্ষা গ্রহণের। এরপর মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে চলে যান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেও কাজ করেন অসংখ্য খ্যাতিমান পদার্থবিজ্ঞানীদের সঙ্গে। বিশেষ আমন্ত্রণে অতিথি হয়ে লেকচার দিতে যান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার লেকচার শুনে চমৎকৃত হন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ উপস্থিত সবাই। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের প্রস্তাব আসে। তিনি যোগ দেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে। পিএইচডি শেষ করে ২০১২ সালে আইনস্টাইন, নিলস বোর, ওপেন হাইমারের স্মৃতিধন্য প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতেও কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন।
বিশ্বখ্যাত ল্যাবরেটরি সার্ন (সিইআরএন), লরেন্স বার্কলে, ব্রোকহেভেন ন্যাশনাল ল্যাবে কাজ করার সুযোগও হয়েছে ড. জাহিদ হাসান। এ ছাড়াও বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত রয়েছেন। লেকচার দিয়ে বেড়াচ্ছেন বিশ্বজুড়ে। অনেকগুলো বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। আর এগুলোর অধিকাংশ প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার’, ‘সায়েন্স’ ‘ফিজিক্স টুডে’ ইত্যদির মত বড় বড় প্রকাশনায়। তার স্ত্রী প্রকৌশলী ফারাহ আহমেদ মাইক্রোসফট কর্পোরেশনে কর্মরত আছেন। জাহিদ এক ছেলে ও এক মেয়ের পিতা।
তার সাম্প্রতিকতম আবিষ্কার অদূর ভবিষ্যতে মনুষ্যপ্রজাতির অগ্রগতির পথে বিরাট অবদান রাখতে পারে। এজন্য তার নোবেলপ্রাপ্তির জোরালো সম্ভাবনার কথা বলেছেন বিশ্লেষকরা। বর্তমানে তিনি আমেরিকার নাগরিক হলেও তার জন্ম তো আমাদের এই দেশেই, জীবনের প্রথম ১৮টি বছর তো বাংলাদেশের মাটিতেই ছিলেন! কে জানে ড মুহম্মদ ইউনুসের পর আরেকজন নোবেলবিজয়ী পেতে যাচ্ছি আমরা! আর তিনি যদি নাও পান, তবুও যতদিন তার আবিষ্কার টিকে থাকবে, ততদিন গোটা বিশ্ব স্মরণ করবে তার কথা। আর তার সাথে আমাদের দেশটার কথাও সকলে বলবে। এই প্রাপ্তিটুকু অমূল্য। অন্তত নানা সমস্যায় জর্জরিত এই দেশে জাহিদ হাসানের মত একজন বিজ্ঞানী জন্ম নেয়া সত্যিই অনেক আনন্দের। তার দীর্ঘায়ু কামনা করি। আশা করি তিনি তার গবেষণাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
তথ্যসূত্র ও ছবি –
১। বাংলাদেশ প্রতিদিন, প্রথম আলো, ডেইলি মেইল, ডেইলি মিরর, সায়েন্স টুডে, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, রয়টার্স
২। সংখ্যায়নিক বলবিদ্যা (BOOK)- বিডি গুপ্তা
৩। উইকিপিডিয়া
৪। বিজ্ঞানযাত্রা,জিরো টু ইনফিনিটি,কিশোর আলো ওয়েব।