কণাটার ভর নেই। এটা আমাদের ইলেকট্রনিক সামগ্রীতে ছুটোছুটি করতে পারবে অস্বাভাবিক গতিতে, আর এর মাধ্যমেই বাড়িয়ে দেবে আমাদের মোবাইল বা কম্পিউটারের মত যন্ত্রগুলোর গতি। একটা স্ফটিকের মধ্যে এরা অদ্ভুত একটা আচরণ দেখায় – এটা ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার (বস্তু ও প্রতিবস্তু) উভয় রকম আচরণ করতে পারে। কণাটার নাম ওয়েইল (বা উচ্চারণ ভেদে ভেইল) ফার্মিয়ন।
৮৫ বছর আগে এই কণার অস্তিত্বের কথা প্রস্তাব করা হয়েছিলো। প্রস্তাবটা করেছিলেন হারম্যান ওয়েইল, ১৯২৯ সালে। এরপর থেকে প্রায় ১ শতাব্দী ধরে এর সন্ধান করা হয়েছে। আর সেটা খুঁজে পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক, নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশের পদার্থবিজ্ঞানী জাহিদ হাসান। গত জুলাই ১৬তে সেটা ছাপা হয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক পত্রিকা সায়েন্স জার্নালে – সারাংশ, পুরো প্রবন্ধ, পড়ে নিতে পারেন লিংকগুলোতে ক্লিক করে।
প্রথম আলোকে জাহিদ হাসান বলেন, এই কণার অস্তিত্ব প্রমাণের মাধ্যমে দ্রুতগতির এবং অধিকতর দক্ষ নতুন যুগের ইলেকট্রনিকসের সূচনা হবে। এই আবিষ্কার কাজে লাগিয়ে তৈরি নতুন প্রযুক্তির মুঠোফোন ব্যবহারের সময় সহজে গরম হবে না। কারণ, এই কণার ভর নেই। এটি ইলেকট্রনের মতো পথ চলতে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে না।
জাহিদ হাসান জানালেন, মোট তিন ধরনের ফার্মিয়নের মধ্যে ডিরাক ও মায়োরানা নামের বাকি দুই উপদলের ফার্মিয়ন বেশ আগেই আবিষ্কৃত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা ভেবেছেন, নিউট্রিনোই সম্ভবত ওয়েইল ফার্মিয়ন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে নিউট্রিনোর ভরের ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে আবার ওয়েইল ফার্মিয়নের খোঁজ শুরু হয়। দীর্ঘদিন ধরে ফার্মিয়ন নিয়ে কাজ করছেন কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী আন্তন ভার্খব। আন্তর্জাতিক জার্নাল আইইইই স্পেকট্রামকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উচ্ছ্বসিত ভার্খব বলেন, তত্ত্বীয় জগতের জিনিসপত্র বাস্তব জগতে খুঁজে পাওয়ার মতো আনন্দের বিষয় আর কিছুই নেই।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া এট বার্কলে এর প্রফেসর অশ্বিন বিশ্বনাথ এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন যে, প্রফেসর হাসানের এই গবেষণা দিয়ে তত্ত্বীয় অনুমানকে প্রমাণ করেছে। এতো জলদি এটা বলা যাবে না যে এটার ব্যবহারিক প্রয়োগ আসলে কী কী হতে পারে। তবে এটা অবশ্যই বলা যায় যে, এই ওয়েইল ফার্মিয়ন কিন্তু গ্রাফিনের একদম সরাসরি ত্রিমাত্রিক সমমানের কণা। আর এটাকে বেশ কিছু সম্ভাবনাময় লক্ষ্যে কাজে লাগানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে হিগস-বোসন কণার নাম রাখা হয়েছিলো আরেক বাঙালি সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে । ৯১ বছর পর, আরেক বাঙালির নাম যুক্ত হলো, আরেকটি কণা আবিষ্কারের কাজে।