ড. ইউভাল নোয়াহ হারারী, শিক্ষক, গবেষক ও লেখক। লিখেছেন স্যাপিয়েন্স ও হোমো ডিয়াস নামে দুটি জনপ্রিয় বই। প্রায় দুবছর আগে টেড টকে মানুষই কেন পৃথিবী শাসন করে সেটার উপর বক্তব্য রেখেছিলেন। উনারই সেই বক্তৃতার অনুবাদ তুলে ধরা হয়েছে এখানে।
আজ থেকে সত্তর হাজার বছর আগে, আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন একেবারেই গুরুত্বহীন এক প্রাণী। প্রাগৈতিহাসিক মানুষ যে একেবারেই নগণ্য এক প্রজাতী ছিলো সেটা জানাটাও খুব জরুরি। এই পৃথিবীর বুকে তাদের প্রভাব ঠিক ততটুকুই ছিলো, যতটা ছিলো একটা জেলিফিশের, মাছির বা কাঠঠোকরার। আজ বলতে গেলে আমরাই এই পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করি। প্রশ্ন হলো আমরা কিভাবে একটা গুরুত্বহীন প্রাণী থেকে এতটা প্রভাবশালী হলাম? কিভাবে আমরা আফ্রিকার এক কোণে কেবল নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকা এক এইপ (মানুষ ও প্রায় সমগোত্রীয়দের বুঝাতে ব্যবহৃত) থেকে গোটা পৃথিবীর শাসক হয়ে উঠলাম?
সাধারণত আমরা যখন আমাদের সাথে অনান্য প্রাণীর পার্থক্য খুঁজি, তখন আমরা আলাদা আলাদা ভাবে বেশ কিছু জিনিস চিন্তা করি। আমরা বিশ্বাস করি, কিংবা আমি বিশ্বাস করি বা আমরা/ আমি বিশ্বাস করতে পছন্দ করি যে আমার মধ্যে বিশেষ কিছু না কিছু আছেই – আমার শরীর, আমার মস্তিষ্ক, যেটা আমাকে একটা কুকুর বা শুয়োরছানা বা একটা শিম্পাঞ্জী থেকে আলাদা করেছে। কিন্তু সত্যটা হলো, একেবারে স্বতন্ত্র পর্যায়ে বা আলাদাভাবে দেখতে গেলে আমার আর একটা শিম্পাঞ্জীর ক্ষমতা প্রায় কাছাকাছিই।
আপনি যদি আমাকে আর একটা শিম্পাঞ্জীকে কোন এক নির্জন দ্বীপে ছেড়ে আসেন এটা দেখার জন্য যে কে কতটা সফলভাবে টিকে থাকতে পারে, তাহলে আমার বাজি ঐ শিম্পাঞ্জীর ওপরেই থাকবে, আমার নিজের উপরে নয়। আর এটা আমার ব্যক্তিগত অক্ষমতা নয় মোটেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমি আমার বদলে অন্য যে কাউকে দিয়েও পরীক্ষাটি করলেও, ফলাফল একই হবে। শিম্পাঞ্জীটাই এগিয়ে থাকবে।
মানুষ ও অনান্য প্রাণীর মধ্যে যে তফাৎ সেটাকে স্বতন্ত্র পর্যায়ে খুঁজলে পাওয়া যায় না। যেতে হয় সমষ্টিগতভাবে কে কতটুকু সামর্থ্য রাখে সেদিকে। মানুষ পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কারণ মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা বিভিন্ন রকমে এবং বিশাল সংখ্যায় একত্রে কাজ করতে পারে। হ্যাঁ, আর কিছু সামাজিক প্রাণী বা পতঙ্গ আছে যেমন মৌমাছি, পিঁপড়া যারা- যারা একই সময়ে বিশাল সংখ্যায় একসাথে কাজ করতে পারে, কিন্তু তাদের পারস্পরিক যে মিথস্ক্রিয়া সেটা বড়ই বৈচিত্রহীন। একটা মৌচাকের কার্যপরিধি একেবারেই একমুখী। সেখানে কোন বৈচিত্র্য নেই। নেই কোন ভয় বা নতুনত্বের সম্ভাবনা। মৌমাছিরা রাতারাতি নতুন সমাজ গড়তে অক্ষম। যেমন ধরুন, মৌচাকের মৌমাছিরা বিদ্রোহ ঘটিয়ে তাদের রাণীকে হটিয়ে নতুন সমাজবাদী বা একনায়কতান্ত্রিক মৌচাক গঠন করবে – এমনটা কিন্তু কখনোই ঘটবে না।
অন্যান্য প্রানীরা , যেমন সামাজিক স্তন্যপায়ী প্রানীরা যেমন নেকড়ে, হাতি, ডলফিন, শিম্পাঞ্জী তারা আরেকটু বৈচিত্রময় জীবনযাপন করে, কিন্তু সেটা খুব অল্প সংখ্যায়। কারণ তাদের সম্পর্ক বা সহযোগিতার ব্যাপারটা গড়ে ওঠে একে অপরকে ভালোভাবে জানার উপরে। ধরুন, আমি একটা শিম্পাঞ্জী, আপনিও একটা শিম্পাঞ্জী। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক তখনই গড়ে উঠবে যখন আমরা দুজনকে ভালোভাবে জানবো, চিনবো। আপনি কি ভালো শিম্পাঞ্জী? আপনি কি বদমাশ শিম্পাঞ্জী? আপনি কি বিশ্বাস করার মতো? আপনাকে যদি আমি না চিনি, তাহলে কিভাবে আমি আপনাকে সাহায্য করব?
আমরা মানুষেরা, হোমো সেপিয়েন্সরাই, একমাত্র প্রাণী যারা বৈচিত্র্যময় উপায়ে এবং বিশাল সংখ্যায় একসাথে কাজ করে বা সহযোগিতা করে। একটি শিম্পাঞ্জী বনাম একজন মানুষ কিংবা দশজন মানুষ বনাম দশজন শিম্পাঞ্জীর যুদ্ধে হয়তো শিম্পাঞ্জীই জিতবে। কিন্তু একহাজার মানুষের সাথে এক হাজারটা শিম্পাঞ্জীর তুলনা করতে গেলে মানুষ নিঃসন্দেহে বিজয়ী হবে। কারণটা হলো এক হাজার শিম্পাঞ্জী মোটেও পারস্পরিক যোগাযোগ বা সহযোগীতা রক্ষা করে চলতে পারে না। ভাবুনতো, আপনি এক লাখ শিম্পাঞ্জী অক্সফোর্ড স্ট্রীটে বা ওয়েম্বলী স্টেডিয়ামে বা টিয়েনামেন স্কয়ার বা ভ্যাটিকানে জড়ো করেন, কী ঘটবে? একটা চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হবে। কল্পনা করুন কেবল, ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে লাখখানেক শিম্পাঞ্জী……। ফলাফল চূড়ান্ত মাত্রার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। অপরদিকে মানুষ ওইসব জায়গায় প্রায়শই হাজারে হাজারে সমবেত হন। সেখানে সচরাচর বিশৃংখলা নজরে আসে না। পারস্পরিক সহযোগিতার এক অনুপম নিদর্শন। ইতিহাসের বুকে মানুষের যতসব বড় অর্জন, যেটা হতে পারে পিরামিডের সৃষ্টি বা চাঁদের বুকে পদচিহ্ন আঁকা, কোনোটিই একক কৃতিত্ব নয়। এটা বিশাল সংখ্যক মানুষের একসাথে বিভিন্নভাবে কাজ করার ফলেই সম্ভব হয়েছে।
আমার এই লেকচারটার কথাই ভাবুন না, আমি এই যে তিনশো-চারশো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, আপনাদের কাউকেই কিন্তু আমি চিনি না। একইভাবে, এই ইভেন্টের সাথে যুক্ত অধিকাংশ মানুষকেই আমি চিনি না। যে বিমানে চড়ে এখানে এসেছি, তার পাইলট বা ক্রুদের কাউকেই আমি চিনি না। আমার গলায় লাগানো মাইক্রোফোন যা দিয়ে আপনারা শুনছেন, ক্যামেরা যা দিয়ে আমাকে দেখানো হচ্ছে , এগুলোর আবিষ্কারক বা বিপনন করছে কে, আমি কিন্তু কিছুই জানি না। যাদের বই আমি পড়েছি বা যাদের অর্জিত জ্ঞান আমি আমার লেকচারের সময় বলে বেড়াই, তাদের কারো সাথেই আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। যারা বুয়েন্স এইরেসে বা নয়াদিল্লিতে বসে ইন্টারনেটে এই লেকচারটা দেখবেন, তাদের কারো সাথে আমার দেখাও হবে না।
যদিও আমরা একজন আরেকজনকে চিনি না, তবুও দেখুন না আমাদের বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক এই চিন্তাভাবনার আদান প্রদানে তেমন কোনো সমস্যাই হচ্ছে না। এই জিনিসটা একটা শিম্পাঞ্জী পারবে না। হ্যাঁ, তাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগটা হয়, কিন্তু একটা শিম্পাঞ্জী বহুদূরের একটা শিম্পাঞ্জী দলের কাছে গিয়ে কলা বা হাতি বা শিম্পাঞ্জীদের ভালো লাগে এমন কিছু বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করছে, এমনটা কখনো দেখা যায় না।
পারস্পরিক সহযোগিতা যে সবসময় ভালো কিছুর জন্ম দিয়েছে, ব্যাপারটা এমন নয়। এই পৃথিবীর বুকে আমরা যত বড়বড় নারকীয় ঘটনার জন্ম দিয়েছি তার জন্যও দায়ী এই পারস্পরিক সহযোগিতা। জেলখানা, কসাইখানা, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প ইত্যাদিও কিন্তু একধরনের নেতিবাচক অর্থে সহযোগিতার ফসল। শিম্পাঞ্জীরা কসাইখানা বা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য স্থানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না।
এখন, আমি ধরে নিচ্ছি যে আপনাদের সবাইকে আমি পারস্পরিক সহযোগিতার এই ব্যাপারটা বোঝাতে পেরেছি। প্রশ্ন করতে পারেন, আমরা এটা কিভাবে করি? কেন গোটা প্রাণীজগতের মধ্যে আমরাই কেবল এটা করতে পারি? উত্তরটা হলো আমাদের চিন্তাশক্তি বা কল্পনাশক্তি। আমরা সহজেই অগণিত অচেনা মানুষের সাথে যোগাযোগ বা সহযোগী হতে পারি। কারণ গোটা প্রাণীজগতে আমরাই একমাত্র প্রাণী যারা বিভিন্ন রকম গল্পে বিশ্বাস স্থাপন করি কিংবা নতুন কাহীনির জন্ম দেই। অনেক মানুষ যখন একসাথে একটা গল্পে বিশ্বাস রাখা শুরু করে দেয়, মানে, তখনই সবাই নির্ধারিত বিষয়গুলোতে নিয়ম মেনে কাজ করা শুরু করে দেয়।
অন্যসব প্রাণী তাদের ভাষা ব্যবহার করে বাস্তবে যা আছে বা চোখে যা দেখা সম্ভব সেগুলোকে বর্ণণা করার জন্য। যেমন একটা শিম্পাঞ্জী বলতে পারে, “দেখো, দেখো, একটা সিংহ, চলো পালাই”। বা “ দেখো, ওখানে একটা কলাগাছ আছে। চলো কলা খাই”।
মানুষরাও বাস্তবে আছে এমন কিছু বোঝাতে ভাষা ব্যবহার করে, তার পাশাপাশি নতুন বাস্তবতা সৃষ্টির কাজেও ব্যবহার করে, কাল্পনিক বাস্তবতা (ফিকশনাল রিয়ালিটি)। একজন মানুষই বলতে পারে, “দেখো, মেঘের উপরে সৃষ্টিকর্তা আছেন। আমি যা বলছি সেটা যদি না করো তাহলে মরার পরে সৃষ্টিকর্তা তোমাকে শাস্তি দিয়ে নরকে নিক্ষেপ করবেন”। যখন সবাই এই গল্পে বিশ্বাস করবে, সবাই তখন একসাথে একই কাজ করবে, একই নীতি মানবে এবং পারস্পরিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করবে।
এই কাজটা একমাত্র মানুষের দ্বারা সম্ভব। আপনি কখনো শিম্পাঞ্জীকে এটা বিশ্বাস করাতে পারবেন না যে, “প্লিজ আমাকে তোমার কলাটা দাও, এর বদলে তুমি মরার পর শিম্পাঞ্জীদের স্বর্গে যাবে এবং ওখানে অনেক অনেক কলা পাবে।“ কোনো শিম্পাঞ্জি এটা মানবে না। একমাত্র মানুষরা এভাবে বিশ্বাস করে এবং এজন্যই আমরা পৃথিবীকে শাসন করি, যেখানে শিম্পাঞ্জীরা বন্দী চিড়িয়াখানায় বা রিসার্চ ল্যাবে।
আশাকরি কী বুঝাতে চাচ্ছি সেটা ধরতে পেরেছেন। ধর্মীয় ক্ষেত্রে মানুষরা পরস্পরের কাছাকাছি আসে একই ধরনের কাহিনী বিশ্বাস করার মাধ্যমে। লক্ষলক্ষ লোক একত্রিত হয় কোন স্মরণসভায় বা মসজিদে বা ধর্মযুদ্ধে, জিহাদে কারণ তারা সবাই একই ধরনের গল্প জানে, যেখানে একজন ঈশ্বর আছেন, স্বর্গ ও নরক আছে। আমি যেটা বোঝাতে চাচ্ছি তা হলো, এই যে ধর্মীয় ব্যাপারে অনেক মানুষ যেমন এভাবে একসাথে একটা জিনিস মেনে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখে সেটা কিন্তু আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ঘটে।
ধরুন, উদাহরণ যদি দেই, যেমন আইনগত ব্যাপারগুলো। আজকের বিশ্বে যতরকম আইন চলছে তার সবই কিন্তু মানবাধিকার বা হিউম্যান রাইটস নামের একটা গল্পের উপর প্রতিষ্ঠিত। মানবাধিকার, ওই ঈশ্বর আর তার স্বর্গের গল্পের মতোই আরেকটা গল্প, যেটা আমরা বানিয়েছি। এটা কোনো বস্তুগত সত্য নয়। মানবাধিকার কিন্ত মানুষের শারীরবৃত্তীয় কিছু নয়। আপনি একটা মানুষকে কেটেকুটে পর্যবেক্ষণ করলে হৃদপিন্ড, ফুসফুস, বৃক্ক, নিউরন, হরমোন এগুলো পাবেন, কোথাও অধিকার জিনিসটা নেই। অধিকারের অস্তিত্ব কেবলই গল্পে, মানুষের মস্তিষ্কে যেটা আমরা গত কয়েক শতাব্দী ধরে ছড়াচ্ছি।
একই কথা খাটে রাজনীতির বেলায়ও। বিশ্ব রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলোর নাম দেশ, জাতি। কিন্তু দেশ বা জাতি আসলে কী? এরা কি কোনো দৃশ্যমান কিছু? পাহাড় দেখা যায়, সাগরের ঢেউও দেখা যায়, কিন্তু দেশ দেখা যায় কি? এগুলো আমরা বানিয়েছি।
অর্থনীতিতেও তাই। বৈশ্বিক অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কুশীলব হলো বড়বড় কোম্পানি ও কর্পোরেশন। আপনাদের অনেকেই এগুলোর সাথে যুক্ত, যেমন গুগল, টয়োটা, ম্যাকডোনাল্ডস। কিন্তু এগুলো আসলে কী? তারা আসলে উকিলদের ভাষায় আইনসিদ্ধ গল্প। এই গল্পগুলোর রচয়িতা ও এদের রক্ষণাবেক্ষণ করেন বিচক্ষণ কিছু লোক, যাদের আমরা উকিল বলে ডাকি। তো এই কর্পোরেশনগুলো করেটা কী? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের কাজটা হলো টাকা উপার্জন। এখন প্রশ্ন হলো টাকা কী? এটাও একটা গল্পের অংশ। এর বাস্তবিক কোনো মূল্য নেই। একটা কাগজের টুকরা, যার দ্বারা আপনার খাওয়া, পরা, পান করা কোনোটাই হবে না, তাও কিভাবে এটা এত গুরুত্বপূর্ণ?
কারণ মহাজ্ঞানী অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, সরকার আপনাকে একটা গল্প শুনিয়েছেন, “দেখো বাবা, এটার নাম দশ টাকা, এই দশ টাকা মানে দশটা কলা” । আপনি বিশ্বাস করেছেন, আপনার আশেপাশে সবাই এটাতে বিশ্বাস এনেছে তার মানেই হলো একটা মূল্যহীন কাগজ হঠাত করে দামী হয়ে গেলো। গল্পের জাদু কাজ করা শুরু করে দিলো। একটা শিম্পাঞ্জী যদি আরেকটা শিম্পাঞ্জীকে বলে যে “দেখ, এইটা দশ টাকা, আমারে দশটা কলা দে” তখন আরেকটা শিম্পাঞ্জী নির্ঘাত বলবে “ অ্যাহ, একটা কাগজের লাইগা তরে আমি কলা দিমু ক্যান? তুই কি আমারে মানুষের মতো হাবা ভাবছত?”
প্রকৃতপক্ষে মানুষের মস্তিস্কপ্রসূত টাকার এই গল্পটা এই দুনিয়ার সবচেয়ে সফল গল্প। কারণ এই গল্পটা সবাই মানে। সবাই ঈশ্বর মানে না, মানবাধিকার মানে না, জাতীয়তাবাদ মানে না, কিন্তু সবাই টাকার গল্প মানে। ওসামা বিন লাদেন, যিনি কিনা আমেরিকা ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ছিলেন, যুদ্ধ করেছেন, তিনিও কিন্তু আমেরিকার ডলারে কোনো আপত্তি জানান নি। উলটো তার অধিকাংশ লেনদেন হতো ডলারে।
পরিশেষে, আমরা মানুষরা পৃথিবী এজন্যই শাসন করি কারণ আমরা একইসাথে দুই ভুবনের বাসিন্দা। অন্যান্য প্রাণীরা এমন একটা জগতে বাস করে যেখানে সবকিছুই দৃশ্যমান। যেখানে নদী আছে, হাতি, সিংহ, গাছগাছালি ইত্যাদি আছে। আমাদের মানুষদেরও এই ব্যাপারগুলো আছে। কিন্তু আমাদের আরেকটা জগত আছে, অগণিত গল্পের জগত, এবং গত কয়েক শতাব্দীতে এই জগতের আমরা বহু পরিবর্তন এনেছি। কি অদ্ভুত দেখুন , এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্ররাই সবচেয়ে শক্তিশালী, যেমন টাকা, কোম্পানি। হাতি অথবা সিংহ আর শক্তিশালী কিছু নয়। ওদের ভাগ্য এখন আমাদের ইচ্ছা, আমাদের গল্পের উপর নির্ভরশীল যেমন আমেরিকা, যেমন গুগল কিংবা বিশ্বব্যাংক, যাদের অস্তিত্ব কেবল আমাদের কল্পনায়, কাহিনীতে।
ধন্যবাদ।
পুরো ভিডিওটি দেখতে পারেন এখান থেকে । কিংবা পুরো বক্তব্যটা পড়তে পারেন এখান থেকে
এই লেখকের আরও লেখা অথবা বক্তৃতার অনুবাদ চাই। ভালো লেগেছে।