আমরা বাস করি সেগানের মহাবিশ্বে- শ্রদ্ধায় মাথা নত করে দেয়া অনন্য বিশাল মহাবিশ্বে। এই মহাবিশ্ব, যা সেগান বারবার বলতেন, আমাদের উদ্দেশ্যে তৈরি নয়। আমরা এর ক্ষুদ্রতর উপাদান। আমাদের উপস্থিতি ক্ষণস্থায়ী- আঁধারের মহাসাগরে আলোর ক্ষণিক ঝলকের মত। অথবা হয়তো আমরা এখানে টিকে থাকতেই এসেছি; আমাদের কুপ্রবৃত্তি এবং প্রাচীন ঘৃণার উর্ধে উঠে হয়তো একদিন ছায়াপথে বিচরণকারী প্রজাতিতে পরিণত হতে পারবো। হয়তো একদিন আমরা অন্যদেরও পেয়ে যেতে পারি। হয়তো মিলিত হতে পারি দূরের অতি উন্নত সভ্যতার কারো সাথে- সেগান যেভাবে হয়তো বলতেন, প্রাচীন কারো সাথে।
আর কেউই সেগানের মত করে মহাশূন্যের অসাধারণ মহিমা ব্যাখ্যা করতে পারেনি। তিনি চলে গেছেন প্রায় দুই যুগ আগে। কিন্তু যারা কিছুটা বয়স্ক, যারা ঐ সময় তাঁকে দেখেছেন, তারা তাঁর কণ্ঠ মনে করতে পারবেন অনায়াসে। খুব সহজেই মনে করতে পারবেন, “বিলিয়নস” শব্দের প্রতি তাঁর প্রেম এবং যে মহাবিশ্বে বেঁচে থাকার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে তা বোঝার জন্য তাঁর প্রবল ছেলেমানুষী আগ্রহের কথা।
একাধিক পেশায় নিয়োজিত ছিলেন তিনি, এক চঞ্চল জীবন কাটিয়ে গিয়েছিলেন; যেন তিনি জানতেন তিনি বেশিদিন বাঁচবেন না। অন্যান্য কাজগুলোর পাশাপাশি, তিনি প্রধানত কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে জ্যোতির্বিদ্যার প্রফেসর হিসেবে কাজ করেছেন, লিখেছেন ডজনখানেক বই, কাজ করেছেন নাসার রোবোটিক মিশনগুলোয়, সম্পাদনা করেছেন “ইকারাস” নামক একটি বিজ্ঞান সাময়িকী এবং কোনো না কোনোভাবে বারবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর জন্য সময় বের করে নিয়েছিলেন । তিনি Johnny Carson এর “Tonight Show” এর নিয়মিত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। পঞ্চাশ পেরোনোর আগেই তিনি তেরো পর্বের পিবিএস সিরিজ কসমসের যুগ্মস্রষ্টা এবং উপস্থাপক হয়ে কোটি কোটি মানুষের ঘরে বিজ্ঞান পৌঁছে দেন। ১৯৮০ সালের এ প্রোগ্রামটি তাঁকে আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞানীতে পরিণত করেছিলো।
“ফ্যামিলি গাই” এর ক্রিয়েটর এবং ছোটোবেলা থেকেই মহাকাশপ্রেমী Seth McFarlane এবং সেগানের স্ত্রী Ann Druyan এর কল্যাণে কসমস আবার ফিরে এসেছে। তাঁরা দুজন মিলে এটার এক নতুন ভার্সন ২০১৪ এর ৯ই মার্চ ফক্স নেটওয়ার্কে প্রিমিয়ার করেন। McFarlane এর বিশ্বাস, টেলিভিশনে যা দেখায়, এমনকি বিজ্ঞানভিত্তিক চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞানচর্চার নামে যা হচ্ছে, তা বিজ্ঞান নয়। তিনি বলেন, “এটা অহেতুক বিজ্ঞানভীতির একটি লক্ষণ”। নিউইয়র্কের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের জ্যোতির্বিজ্ঞানী Neil deGrasse Tyson নতুন কসমসের উপস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন, যিনি আমাদের প্রজন্মের সেগান হবার সুযোগ পেয়েছেন। “কসমস মানে কিন্তু শুধু কার্ল সেগান নয়,” Tyson বলেন। “কসমসকে বোঝার এবং ব্যাখ্যা করার আমাদের যে ক্ষমতা, তা বিজ্ঞানের উপহার। এবং এটাই এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে পরিচালিত হচ্ছে। আমি যদি ওনার জায়গা নিতে যাই, পুরোপুরি ব্যর্থ হব। তবে আমি নিজের মত করে ঠিকই করতে পারবো”।
কসমসকে নতুন করে শুরু করা একটি উচ্চাকাঙ্খী পদক্ষেপ! যদিও অরিজিনাল কসমস মাত্র এক সিজন ধরে পাবলিক টেলিভিশনে চলেছিলো- এর সাংস্কৃতিক প্রভাব ছিলো ব্যাপক। প্রায় এক যুগ পরে Ken Burns “সিভিল ওয়ার” সিরিজ নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত কসমস ছিল পিবিএস এর ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেটিং পাওয়া সিরিজ। Druyan ওয়াশিংটনের ইউনিয়ন স্টেশনের এক কুলির গল্প বলতে ভালবাসেন, যে সেগানের কাছ থেকে লাগেজ বহনের মজুরি নিতে অস্বীকৃতি জানায় এই বলে, “আপনি আমাকে গোটা ব্রহ্মাণ্ডটাই দিয়েছেন”।
কসমসের পুনর্জন্মের সময়টাতেই সেগানের আরেকটা মাইলস্টোনপূর্ণ হলো – লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে তার সব জার্নাল পেপারগুলো সহজলভ্য হলো। ওরা Druyan এর কাছ থেকে McFarlane এর টাকায় আর্কাইভটা কিনে নিয়েছিলো। ফাইলগুলো ৭৯৮টা বাক্সে লাইব্রেরিতে এসে পৌঁছায়- সেগান মূলত সবকিছুই সংরক্ষণ করতেন- ১৭ মাস কড়া তত্ত্বাবধানে নেয়া প্রস্তুতির পর ২০১৩ সালের নভেম্বরে আর্কাইভটি গবেষকদের জন্য খুলে দেয়া হয়।
সেগানের আর্কাইভ আমাদের মূলত এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীর উন্মত্ত অস্তিত্ব এবং বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বিজ্ঞান বিষয়ক চিন্তাধারার একটি ভালো ধারণা দেয়। কর্নেলে সেগানের কাছে সাধারণ মানুষের প্রচুর চিঠি আসতো। তারা সেগানকে তাদের বৈজ্ঞানিক বিশ্বস্ততার দ্বাররক্ষী হিসেবে দেখতো। তারা তাঁকে নিজেদের নিজস্ব তত্ত্ব-ধারণাগুলো, তাদের স্বপ্নগুলো বলতো। তারা মরিয়া হয়ে চাইতো সেগান তাদের কথা শুনুক। তাদের প্রয়োজন ছিলো সত্যিটা জানার, আর তিনি ছিলেন তাদের কাছে দেবতুল্য।
সেগানের ফাইলগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় ষাট এবং সত্তর দশকের সময়গুলোতে কত কত আবিষ্কার হয়েছিলো, এবং সেগান ছিলেন এই জ্ঞানচর্চার মধ্যমণি। তিনি ছিলেন অতি সূক্ষ্ণ বিশ্লেষক। যেমন, তিনি জানতেন UFO জিনিসটা ভিনগ্রহের প্রাণীদের মহাশূন্যযান ছিলো না। কিন্তু তিনি কখনো বিশ্বাসীদের চুপ করিয়ে দেননি। বরং তিনি ১৯৬৯ সালে এক বিরাট UFO সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, যেখানে সবাই নিজের মতামত তুলে ধরেছিলো।
স্পেসের রূপও যেন তখন আলাদা ছিলো। যখন সেগান এলেন, স্পেসের ধারণা সুস্পষ্টতর হতে লাগলো- আমাদের বহির্জগতকে জানার আকাঙ্খার কোন সীমা ছিলো না। টেলিস্কোপ, রোবোটিক প্রোব, এবং অ্যাপোলো নভোচারীদের বদৌলতে স্পেস সম্পর্কে পাওয়া নতুন নতুন তথ্য স্পেসকে মানুষের কাছে আরো স্পষ্ট করে তুলছিলো।
এরপরেও সবকিছু আশানুরূপ হয়নি। “মহাকাশকাল” এর ধারণাটা পুরনো হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র এই মূহুর্তে নভোযান পাঠাতে পারছে না। মহাশূন্য যদিও আমাদের লোভ দেখিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মহাবিশ্বের অন্যপ্রাণীদের সাথে যোগাযোগের ব্যাপারটা যেন অনেকে পাগলের প্রলাপ মনে করছে।
ম্যাকফারলেন, টাইসন, ড্রুয়ান আর সেগানের পরিবারের অন্য সদস্যরা ২০১৩ সালের নভেম্বরে কংগ্রেস লাইব্রেরীতে সেগান আর্কাইভের উদ্বোধনের দিন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি স্বাভাবিকভাবেই সেগানের সম্মানার্থে করা, মাঝে মাঝে সেগানকে দেবতুল্যও মনে হয়েছে সেখানে। অনুষ্ঠানের শেষে যখন সেগানের কণ্ঠে পড়া “Pale Blue Dot” এর উদ্ধৃতি বাজানো হয় তখন সবাই আবার জানলেন – সেগান কি মাপের অসাধারণ বক্তা ছিলেন।
১৯৯০এর প্রথম দিকে যখন ভয়েজার ১ মহাকাশযান সৌরজগতের সীমানার দিকে ধাবিত হচ্ছিলো, তখন সেগান আর কিছু বিজ্ঞানী নাসাকে ভয়েজারের ক্যামেরা পৃথিবীর দিকে ঘুরিয়ে দিতে বলেছিলেন। বিলিয়ন মাইল দূর থেকে সূর্যালোকে প্লাবিত ছোট্ট ধূসর একটা বিন্দুর মতো দেখা যাচ্ছিলো পৃথিবীকে। এটাকে সেগান তাঁর ভাষায় বর্ণনা করেন-
“এটাই পৃথিবী, আমাদের বসত, আমরা এটাই। এখানেই ওরা সবাই, যাদের আমরা ভালোবেসেছি, যতজনকে আমরা চিনি। যাদের যাদের কথা আমরা শুনেছি, তাদের সবাই এখানেই তাদের জীবন কাটিয়েছে। আমাদের সারা জীবনের যত দুঃখ কষ্ট, হাজার হাজার ধর্ম, আদর্শ আর অর্থনৈতিক মতবাদ, যত শিকারী আর লুন্ঠনকারী, যত সাহসী-ভীরু, সভ্যতার নির্মাতা-ধ্বংসকারী, যত রাজা আর প্রজা, যত প্রেমিক-প্রেমিকা, যত বাবা মা, স্বপ্নে বিভোর শিশু, আবিষ্কারক, পরিব্রাজক, যত নীতিবান শিক্ষক, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, যত “সুপারস্টার”, যত জাঁহাবাজ নেতা, মানব ইতিহাসের সকল সাধু আর পাপী, সবাই তাদের জীবন কাটিয়েছে আলোয় ভেসে থাকা ধূলোর ঐ ছোট্টো কণাটিতে”।
বেশ অল্পবয়সেই মেধার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেছিলেন তিনি। সেগানের আর্কাইভে হাতে লেখা, তারিখবিহীন একটা কাগজ আছে। কোনো গল্প? রচনা? ১৯৫০ এর শুরুর দিকে, সেগান যখন ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট করছিলেন, তখনই তার লেখায় বোঝা যাচ্ছিলো যে একদিন তিনি কেমন বিখ্যাত বিজ্ঞানী-লেখক হয়ে উঠবেন –
“এক অসীম অন্ধকার ছেয়ে আছে চারিদিকে। যেদিকেই যান না কেন, বিস্তৃতি চলবে নিরন্তর! গভীরতাটা উপলব্ধি করলে তাজ্জব বনে যেতে হয়। এই অন্ধকারের কোনো মৃত্যু নেই। যেখানে আলো আছে, সেখানে সে নিশ্চিতভাবেই বিশুদ্ধ, ঝলমলে, এবং আগ্রাসী! কিন্তু আলোর উপস্থিতি তো বলতে গেলে তেমন নেইই। আর পাশাপাশি, অন্ধকারও যে বিশুদ্ধ, ঝলমলে, এবং আগ্রাসী! আরো জরুরি ব্যাপারটা হচ্ছে, সেই অন্ধকারে বলতে গেলে তেমন কিছুই নেই, শুধু এখানে ওখানে আলোর আশেপাশে কয়েকটা ছোটো টুকরোর মত জিনিস ছাড়া। আর বাকি পুরো পাত্রটা, শূন্য!
চিত্রটা বেশ অদ্ভুতরকম ভয়ংকর! বেশ পরিচিত চিত্র যদিও – আমাদের ব্রহ্মাণ্ডেরই চিত্র!
এমনকি এই যে নক্ষত্রগুলো, যেগুলো গুণতে গেলে অসংখ্য মনে হয় – এগুলো আসলে বালি বা ধুলোর কণার মত। এমনকি তার চেয়েও তুচ্ছ। মহাশূন্যের বিশালতার সাথে তুলনা করলে এগুলো কিছুই না! নেহাৎ কিছুই না! আমাদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই সমবেদনাযুক্ত এক ধরনের আতংক চলে আসে যখন আমরা প্যাসকেলের Pensees খুলে বসি আর পড়ি – ‘আমরা দুই জগতের মধ্যেকার ব্যাপক নীরবতা’!”
কার্ল এডওয়ার্ড সেগান, ১৯৩৪ সালে ব্রুকলিনে জন্ম নেন। তাঁর মা র্যাচেল বেশ ধার্মিক মহিলা ছিলেন, তাঁর বাবা স্যামুয়েল ছিলেন গার্মেন্ট শিল্প কর্মকর্তা। কৈশোরে পা দিয়েই সেগান বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর ভক্ত হয়ে পড়েন, Edgar Rice Burrogh এর John Carter of Mars ছিলো তাঁর প্রিয় বই। তাঁর পরিবার নিউ জার্সিতে চলে যায়, সেগান Rahway High School এর ক্লাসগুলোতে সর্বোচ্চ মেধাবী ছেলে হিসেবে পরিচত হন। ১৯৫৩ সালের নিজেকে নিজে যাচাই করার এক রিপোর্টে সেগান নিজেকে খেলাধুলায় আগ্রহের ক্ষেত্রে কম নাম্বার দেন, আবেগজনিত ব্যাপারে মোটামুটি, আর প্রভাবশীলতা আর চিন্তাশীলতায় সর্বোচ্চ নাম্বার দেন।
পূর্ণবয়স্ক সেগান বুদ্ধিদ্বীপ্ত ছিলেন, তবে ১৯৮১ সালে কসমস হিট হওয়ার পর সেগান বলেন- “আমার মনে হয় আমি সহজে বোঝাতে পারি, কারণ আমি নিজে সহজে বুঝতে পারিনি। অন্যরা যেটা সহজে বুঝতে পারতো আমার সেটা বুঝতে হলে খাটতে হতো। বেশী বুদ্ধিদ্বীপ্তদের সমস্যা হচ্ছে তারা সহজে বুঝতে গিয়ে বোঝার পদ্ধতিটাই বোঝেন না।”
ডক্টরেট ডিগ্রী পাওয়ার পর সেগান হার্ভার্ডে শিক্ষকতা শুরু করে, তরুণ বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি শুক্রে গ্রীন হাউসের প্রভাব ও সেখানে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করেন। পরে তিনি মঙ্গলপৃষ্ঠের পরিবর্তনের সাথে ধূলিঝড়ের সম্পর্ক থাকার কথা বলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজই মহাবিশ্বে প্রাণের প্রতি বৈরীভাবের কথা বলে!
তাঁর অনুমানপ্রবণ সত্তাটা সহকর্মীদের বিরক্ত করতো; যেমন – চন্দ্রপৃষ্ঠের নিচে প্রাণ থাকার সম্ভাবনার কথাটা। তিনি বেশ বেপরোয়া ছিলেন। তার কথাগুলো প্রায় সময়ই পত্রিকা বা সাময়িকীতে চলে আসতো। তিনি জনপ্রিয় প্রেসের মাধ্যমে বই ছাপিয়েছিলেন। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাতে প্রাণের (life এর) সংজ্ঞাটাও তার দেয়া। তিনি ১৯৬০এ ড্রেক সমীকরণ দিয়ে দেখান যে শুধুমাত্র আমাদের ছায়াপথেই এক মিলিয়ন সভ্যতা থাকা সম্ভব যাদের প্রযুক্তি আছে, যোগাযোগের সক্ষমতা আছে।
তারপরেও, সেগান মনে করতেন যে UFO জিনিসটা আসলে এক ধরনের বিভ্রম। তার আর্কাইভের মধ্যে নভেম্বর ১৯৬৭ সালের ওয়াশিটনে দেয়া একটা লেকচার ছিলো, যেখানে তিনি দর্শকের একটা প্রশ্ন পান- “UFO এর ব্যাপারে আপনার কী ধারণা? ওগুলো কি সত্যি?”
UFO বিষয়ে সন্দেহবাদী হওয়া সত্ত্বেও সেগান কিছু সংখ্যক অসনাক্তকৃত উড়ন্ত বস্তুর এলিয়েন মহাকাশযান হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেননি। প্রথমে তিনি বললেন, “এমন কোনো প্রমাণ নেই যে এগুলো ভিনগ্রহবাসীদের মহাকাশযান। কিছু অংশ হয়তো হতেও পারে”। আর এর পরেই তিনি বলা শুরু করলেন, মানুষ যে কত উপায়ে ধোঁকা খেতে পারে, সেগুলোর কথা। “উজ্জ্বল নক্ষত্র, শুক্র গ্রহ, অরোরা, উড়ন্ত পাখি, লেন্টিকুলার মেঘ, মেঘাচ্ছন্ন রাত, পাহাড়, পাহাড়ে উঠতে থাকা গাড়ীর হেডলাইটের আলো মেঘে প্রতিফলিত হয়ে সমান্তরাল উড়তে থাকা ২টা উড়ন্ত মহাকাশযানের মতো মনে হওয়া; বেলুন, অপরিচিত বিমান, পরিচিত বিমানের অপরিচিত লাইট প্যাটার্ন…এই লিস্টটা বিশাল।”
১৯৬৮ সালে সেগানকে হার্ভার্ড থেকে স্থায়ী চাকরির অনুমোদন (tenure) দেয়া হলো না। কর্নেল সেই সুযোগ লুফে নিলো। অধ্যাপনা ও লেখালেখির ফাঁকে, তিনি পাইওনিয়ার ১০ আর ১১ এর জন্য বার্তা প্লেট তৈরি করছিলেন, সেই প্লেটে একটা পুরুষ আর একটা মহিলার রেখাচিত্র আর পৃথিবীর দিক-নির্দেশনা দেয়া ছিলো। যদি কখনো পাইওনিয়ার ১ আর ২ কোনো মহাজাগতিক সভ্যতার কাছে যেয়ে পৌঁছায়, তখনকার জন্য।
১৯৭৩ সালে “Cosmic Connection: An Extraterrestrial Perspective” বইটা বের হবার পর সেগানের ভক্ত সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই বইটা অনেকটা ‘কসমস’ বইটার পূর্বাভাস যেন! এই বইয়ের প্রচারণার জন্যেই তিনি প্রথমবারের মত কারসনের টিভি শোতে উপস্থিত হন। এর পরের দুই দশকে তিনি প্রায় ২ ডজন বার এসেছেন এই শোতে, কিন্তু ঐ বইয়ের উপলক্ষ্যেই এসেছিলেন প্রথমবারের মত। সেগানের আর্কাইভে একটা চিঠি আছে। ওটা সেগানের পক্ষ থেকে কার্সনের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠি। তিনি ওখানে বলেছিলেন যে, উনি কিন্তু কখনো নিজ মুখে ‘বিলিয়নস এন্ড বিলিয়নস” উচ্চারণ করেননি, অথচ এটাকে তার সাথে সম্পৃক্ত করা হয় ব্যাপকভাবে। তখন কার্সন উত্তর দিয়েছিলেন, “যদি না করে থাকো, করা উচিৎ ছিলো – জনি”।
*******
১৯৭৪ সালের এপ্রিল ফুল ডে’তে ফ্রাংক ড্রেইক আর সেগান ক্যালোফোর্নিয়া স্টেটের মানসিক হাসপাতালে টিমোথি লীরির সাথে দেখা করতে যান। টিমোথি লীরি ছিলেন LSD নামক ড্রাগ সেবনকারীদের মধ্যে সবচে বিখ্যাত! লীরি ঐ হাসপাতালে, অবৈধ মাদক রাখার দায়ে কারাগারে বন্দী ছিলেন।
ফ্র্যাংক ড্রেক, প্রায়ই সেগানের বিভিন্ন প্রজেক্টে একসাথে কাজ করেছেন। তিনি এলিয়েনদের রেডিও সিগন্যালের খোঁজে থাকা SETI এর অংশ, এবং কালজয়ী ড্রেইক সমীকরণের জনক ছিলেন। ড্রেক সমীকরণ মহাবিশ্বে উন্নত বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সভ্যতা থাকার যে বিশাল গাণিতিক সম্ভাবনা আছে তার কথা বলে। টিমোথি লীরি হার্ভার্ডের অধ্যাপক ছিলেন। পরে তিনি প্রথাবিরুদ্ধ সংস্কৃতির প্রচারক হয়ে ওঠেন। এরপর hallucinogens এর মানসিক ও আধ্যাত্মিক উপকার নিয়ে কাজ করেন। সেগানের Cosmic Connection পড়ে লীরি এতোই আসক্ত হয়ে পড়েন যে তিনি একটা নৌকা বানাতে শুরু করেছিলেন যেটা চড়ে ৩০০ জন মহাকাশে যেতে পারবে, অন্য নক্ষত্রের ভিন্ন গ্রহতে চলে যেতে পারবে!
ল্যারির সাথে সেগানের এই কৌতুহলোদ্দীপক সাক্ষাতের কথা সেগানের আর্কাইভে সরাসরি পাওয়া না গেলেও কিছু সূত্র পাওয়া যায়। ড্রেক আর সেগান ক্যালেফোর্নিয়া গিয়েছিলেন লীরিকে বোঝাতে যে এরকম প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। পরে, লীরি এক চিঠিতে নিজের ইচ্ছা আবার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন আমাদের শুধু গ্যালাক্সীর ম্যাপ, দীর্ঘায়ুর ওষুধ আর “বহিমনস্তাত্ত্বিক আর স্নায়ুরাজনৈতিক উৎসাহ” দরকার।
সেগানকে তিনি বলেন “আমি আপনার উপসংহারে মোটেও অভিভূত নই। আমি আপনার স্নায়ুতন্ত্রে এক ধরনের বাধা অনুভব করতে পারছি।”
********
সেগান তাঁর “Cosmos” এর নাম “Man and Cosmos” রাখতে চাচ্ছিলেন। সেটা শুনতে লিঙ্গবৈষম্যবাদী মনে হতো, সেগান বলেন। আর সেগান নিজেকে বেশ নারীবাদী মনে করতেন।
সেগানের আর্কাইভে ৩০ এপ্রিল, ১৯৭৮ এ লেখা একটা নোট পাওয়া গেছে-
“Man and Cosmos এর দুইটা সম্ভাব্য নাম-
১) There. (সাথে একটা উপ-শিরোনাম)
২) Cosmos. (সাথে উপ-শিরোনাম)
দুটো নামই সাবলীল”।
সৌভাগ্যক্রমে তিনি দ্বিতীয় নামটা পছন্দ করেছিলেন।
একটা সাক্ষাৎকারে, সেগানের সাথে Cosmos নিয়ে কাজ করার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ড্রুইয়্যান বলেন- “কসমসের জন্য কাটানো ঐ তিন বছর ছিলো অত্যন্ত পরিশ্রমের; পুরো পৃথিবী ঘুরে বেড়াতে হয়েছিলো, মনকেও অনেক বেশি উদার করতে হয়েছিলো। আগুন দিয়ে সোনা যাচাই করার মত পরিকল্পনা ছিলো এটা। এটাকে আমি বলি ‘কসমস পর্বত’ আরোহণের যাত্রা।”
“Cosmos” শুরু হয় ক্যালিফোর্নিয়া সৈকতে, সেগানের কন্ঠে- “কসমস হচ্ছে যা কিছু বর্তমান, যা অতীতে ছিলো, বা ভবিষ্যতে আসবে।”
বিশেষ গ্রাফিক্স তাকে ভ্রমণ করিয়েছিলো পুরো ব্রহ্মাণ্ডে, একটা কাল্পনিক মহাকাশযানে করে। নিয়ে গিয়েছিলো অতীতের আলেকজান্দ্রিয়ার পাঠাগারে। নামের মতোই বিশাল অনুষ্ঠান ছিলো কসমস। চন্দ্রাভিযান থেকে বিখ্যাত ধূমকেতু, জোতির্বিদ্যা, বিজ্ঞান, কুসংস্কার, মানবমস্তিস্ক, বহির্জাগতিক প্রাণী আর আমাদের অসহায়ত্ব নিয়ে বানানো হয়েছিলো কসমস।
ওয়াশিংটন পোস্টের টম শেইলস কে সেগান বলেছিলেন – “আমি মানুষকে হতবাক করে দিতে চাই”। শেইলস এটা দেখে বেশ পছন্দ করেছিলেন; বলেছিলেন- “অনুষ্ঠানটি বেশ জাঁকালো এবং অভিনব। নন্দনগত দিক থেকে বেশ আকর্ষণীয়, আর বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে (বিশেষ করে বিজ্ঞানের নতুন যাত্রীদের কাছে) বেশ প্রাণবন্ত এবং চাঞ্চল্যকর।”
এটা চরম সাফল্যের মুখ দেখেছিলো। শীঘ্রই তিনি বিলুপ্তপ্রায় এক প্রজাতির সদস্য হয়ে গেলেন- জনপ্রিয় বিজ্ঞানী!
*******
কসমসের পর সবাই কার্ল সেগানের পেছনে ছুটতে লাগলো। তারা সাক্ষাৎকার, বইয়ের ব্যাপারে মন্তব্য, বক্তব্য আর মত বিনিময় সভায় অংশ নেয়ার অনুরোধ নিয়ে সেগানের কাছে আসতো। বেশির ভাগই আসতো তাদের বক্তব্যের সাথে সেগান একমত কিনা জানার জন্য। অনেকে সেগানকে ঈশ্বর আর বাস্তবতার চরিত্র বিষয়ক মতবাদ শোনাতে আসতো।
কর্নেলে সেগানের অফিসে উদ্ভট মানুষদের লেখা চিঠির বন্যা বয়ে যেতো। তিনি সেগুলোর অনেক গুলোকেই F/C ক্যাটাগরিতে ফেলে দিতেন। এটা ছিলো Fissured Ceramics এর সংক্ষিপ্ত রুপ, যেটা সেগানের ভাষায় – উন্মাদ।
কেউ কেউ সেগানের নাস্তিক্যবাদের বিরোধিতা করতো (সেগান নিজেকে সংশয়বাদী বলতেন যদিও, ঈশ্বরের অনস্তিত্ব বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করতে পারেননি বলে)। অনেকে আবার এলিয়েন দ্বারা অপহরণের ব্যাপারে সেগানকে দীর্ঘ বক্তব্য ঝাড়তেন। আর কিছু ছিলো ফিজিক্সের আইনের নতুন ব্যাখা নিয়ে চিঠি।
“আমি আমার বাসার বেইসমেন্টে একটা এলিয়েন বন্দী করে রেখেছি। সে আপনার সাথে দেখা করতে চায়। আপনি বললে আমি সব ব্যবস্থা করতাম।”
আরেকজন লিখেছিলেন- “আমি মাধ্যাকর্ষণ নিয়ে পরীক্ষা করছিলাম। আমি আপনাকে দেখাতে পারবো, এটা কিভাবে কাজ করে আর এটা কিসের তৈরি।”
এবং আরেকজন- “আমি আমার আগের দুই চিঠিতে লিখেছি – পৃথিবী আর শুক্রের মাঝে একটা গ্রহ আবিষ্কার করেছি। এটাও লিখেছিলাম যে, আমি এটিকা সংশোধনালয়ে(কারাগারে) আছি, এবং আপনার সাহায্য ছাড়া কাজটা এগিয়ে নিতে পারছি না।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশেষে সেগানকে ফোন রেকর্ডিংয়ের সুবিধা দেয়। ৫ই মে, ১৯৮১ সালে জেমস নামে একজন ফোন করেন। সেগানের অক্লান্ত পরিশ্রমী সেক্রেটারী শার্লি আর্ডেনের সাথে তার কথোপকথনের কিছু অংশ এখানে দেয়া হলো।
আর্ডেন – “আপনার কী মনে হয়, সেগান কী করে বেড়াচ্ছেন?”
জেমস- “আসলে তিনি মানুষের মস্তিস্ক নিয়ে খেলছেন, তাদের বোকা বানাচ্ছেন, বিশেষ করে মস্তিস্কের ডান গোলার্ধ নিয়ে।”
আর্ডেন- “আর আপনার মতে তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত?”
জেমস- “তাঁর ডান হাত কেটে ফেলা উচিৎ। এরপর তিনি বাম হাতের ব্যবহার শিখবেন। তিনি বাঁহাতি হয়ে যাবেন।”
আর্ডেন অন্য সদস্যদের বলে দিয়েছিলেন যে এলার্ম চাপলে কী করতে হবে। “এলার্মের শব্দ হলে তাৎক্ষণিক ভাবে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। ওরা যাতে সাথে সাথে কোনো অফিসার পাঠায়।”
********
সেগান মৌখিক বর্ণনার প্রতি চরম আসক্ত ছিলেন। নিজের সব চিন্তা রেকর্ড করে রাখতেন তিনি। রেকর্ডারটা যেন কখনোই তার ঠোঁট থেকে দূরে থাকতো না। তার লেখার মধ্যে যে কথোপকথনের সুরটা স্পষ্ট, এটার মূল কারণ হচ্ছে এটাই – তিনি লিখতেন না, বলতেন বেশির ভাগ সময়, আর তাঁর সেক্রেটারীরা পরে সেটা রেকর্ডার শুনে লিখে নিতেন। তিনি মারিজুয়ানা পছন্দ করতেন। মাঝে মধ্যে রেকর্ডিং আর মারিজুয়ানা একসাথে চলতো, এতে তিনি কাজ করার উৎসাহ পেতেন। মস্তিষ্কে ওঠা একটা ঝড়ে তিনি ঝড়ের বেগে এক রুম থেকে অন্য রুমে গিয়ে রেকর্ডারের সাথে কথা বলতে বসে যেতেন। সেগানের জীবনী লেখক ক্যেডেভিডসনকে এটা জানিয়েছিলেন সেগানের বন্ধু লেস্টার গ্রীনস্পুন।
কোন কাজগুলো মারিজুয়ানা নেয়া অবস্থায় করা, কোনোটা না নেয়া অবস্থায় করা – সেগানের আর্কাইভে এমন কোনো শ্রেণীবিভাগ নেই। তবে “Ideas Riding” নামে একটা অদ্ভুত বিভাগ আছে তাঁর আকার্ইভে। এই বিভাগ মুক্ত-ভাবনার বিষয়ে ভরপুর- তাঁর চিন্তার বেলুন- সেগুলো সেগানের মুখঃনিসৃত এবং সেক্রেটারীর দ্বারা লিখিত।
উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৮ সালে লেখা একটা ট্রান্সক্রিপ্ট আছে “নারকেল গাছ লম্বা হয় কেনো? হবে নাই বা কেন? এই প্রজাতির গাছের বীজগুলো এতো বড় হয় যে বাতাস-পাখি-পোকামাকড় সেগুলা নিয়ে যেতে পারেনা। বীজ নিক্ষেপের স্থান যত উঁচু হবে, ততই ভালো। গাছ যত উঁচু হবে, বীজ দূরে পড়ার সম্ভাবনা তত বাড়বে। সূতরাং, নারকেলের এই উচ্চতা থেকে তাদের প্রতিযোগিতারও একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এরা এমন এক পরিবেশে জন্মায় যেখানে অন্যান্য প্রজাতির সাথে তেমন প্রতিযোগিতা নেই। নিক্ষিপ্ত বস্তুর দূরত্ব সবচেয়ে বেশি হবার জন্য নারকেলের আকার হতে হবে গোলাকৃতি, এবং ঘটেও তাই।”
সেগান নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে চিঠির মাধ্যমে খুব একটা প্রকাশ করতেন না। তবে তাঁর “Ideas Riding” এর মধ্যে মাঝেমধ্যেই তিনি কিছুটা খোলামেলা কথা বলতেন। উদাহরণস্বরূপ জুলাই ১৯৮১ এর- “পিতা হারানোর যন্ত্রণা ছাড়াই আমি সাধারণভাবে আমার বাবার কথা চালিয়ে যেতে পারি। তবে আমি যদি তাঁকে ঠিকমত স্মরণ করার চেষ্টা করি- তাঁর রসবোধ, তাঁর সাম্যবাদী মনোভাব- এইগুলো মনে পড়লে আমার খোলস ভেঙ্গে পড়ে, আমার কাঁদতে ইচ্ছা করে। ভাষায় ভাবপ্রকাশ করতে পারাটা আমাদেরকে আবেগ থেকে মুক্ত করে- এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। হয়তো আবেগে নিমজ্জিত না হয়ে নিজের ভাব প্রকাশ করতে দেয়াটাই ভাষার কাজ। যদি তাই হয়- তাহলে ভাষার আবিষ্কার একইসাথে আশীর্বাদ এবং অভিশাপ।”
***********
বিজ্ঞান জনপ্রিয়কারী হিসাবে সেগানের আবির্ভাব তাঁর সহকর্মীদের ভালো লাগেনি। সেগানের মতে বিজ্ঞানের অধিকাংশ বিষয়ই প্রকৃতির বিধিনিষেধ নিয়ে, কোনটা প্রকৃতিতে সম্ভব, কোনটা সম্ভব না, তা নিয়ে। যেমন- আলোর গতির অধিক বেগে ভ্রমণ করা অসম্ভব; এমন আরো অনেক। তাছাড়া, বিজ্ঞানীদেরও সামাজিক এবং রাজনৈতিক সত্তা আছে, এবং তাই, সেখানেও কিছু প্রচলিত এবং পরিষ্কার (হয়তো অলিখিত) কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। যেমন- কিছু অনুমান করতে পারবে না, নিজের গবেষণা ক্ষেত্রের বাইরে কিছু বলতে পারবেনা আর মধ্যরাতের আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করা যাবে না।
সেগানকে নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে বিভাজন চরম আকার ধারণ করে ১৯৯২ সালে। সেগান তখন ন্যাশনাল একাডেমী অফ সাইন্সের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হবার তালিকায় ছিলেন। প্রতিযোগিতার ৬০ জনের মধ্যে তার নামও ছিলো। সেগান বিরোধীরা বলতে থাকেন, গবেষণার ক্ষেত্রে সেগানের যথেষ্ট অর্জন নেই। সেগানের সমর্থকেরা তার গবেষণার সাফল্য নিয়ে বললেন। দুই পক্ষের মাঝে তুমুল বিতর্কের পর ৬০ জন প্রার্থীর তালিকা থেকে সেগানের নাম বাদ দেয়া হয়। উত্তেজিত হয়ে সহকর্মীরা সেগানকে বেশ কিছু স্বান্তনা পত্র পাঠিয়েছিলেন। কয়েকবছর পর সেগান এক সাক্ষাতকারে জানান যে এটা কোনো ব্যাপার না, তিনি জানতেন যে তিনি নির্বাচিত হবেন না। তবে তাঁর স্ত্রী এন ড্রুয়ান আমাকে বলেছিলেন- “ঘটনাটা বেশ দুঃখজনক ছিলো। সিদ্ধান্তটা কিছুটা অনাকাঙ্ক্ষিত অপমানের মত ছিলো।” ১৯৯৪ সালে, একাডেমী সেগানকে বিজ্ঞান জনপ্রিয়কারীর সম্মানে ভূষিত করে এবং সম্মানসূচক মেডেল দিয়ে ক্ষতে মলম দেয়ার চেষ্টা করে।
********
১৯৯৪ সালে, সেগান myelodysplasia (রক্তজনিতরোগ) এ আক্রান্ত হন এবং অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন অপারেশন করান। ৬০ বছর বয়স্ক সেগান সবাইকে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, অকাল মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে এসেও তিনি পরকালের প্রচলিত বিশ্বাসের মধ্যে স্বস্তি খুঁজবেন না।
১৯৯৬ সালে সেগানের কাছে স্বর্গের দূরত্ব জানতে চেয়ে একটা চিঠি আসে। তিনি উত্তরে লিখেন- “চিঠির জন্যে ধন্যবাদ। খ্রিস্টান ধর্মে বয়ান করা স্বর্গের সদৃশ কোনোকিছুই ১০ বিলিয়ন আলোকবর্ষের (এক আলোকবর্ষ= ৬ ট্রিলিয়ন মাইল) মধ্যে পাওয়া যায়নি। ভালো থাকবেন।”
এক ধার্মিক দম্পতি একবার ফলে যাওয়া ভবিষ্যৎ বাণীর ব্যাপারে সেগানকে চিঠি লিখলেন, ১৯৯৬ সালের মে মাসে। উত্তরে সেগান লিখেন- “যদি ফলে যাওয়া ভবিষ্যৎ বাণীই আপনার বিশ্বাসের মানদণ্ড হয়, তাহলে বস্তুবাদী বিজ্ঞানে ভরসা রাখছেন না কেন? এটার দেয়া এবং ফলে যাওয়া ভবিষ্যদ্বাণীর সংখ্যার সাথে তো আর কারোই তুলনা চলে না -সূর্যগ্রহণ আর চন্দ্রগ্রহণের কথাই ধরুন।”
বিখ্যাত সন্দেহবাদী মার্টিন গার্ডনারের বই পড়ে সেগান বিক্ষুদ্ধ হন। যদিও ৫০ এর দশকে গার্ডনারকে পছন্দ করতেন সেগান। বইটির বক্তব্য ছিল এরকম- হয়তো একক কোনো ঈশ্বর মহাবিশ্বকে চালাচ্ছেন, হয়তো মৃত্যুপরবর্তী জীবন থাকার সম্ভাবনাও আছে।
১৯৯৬ সালে সেগান গার্ডনারকে এক চিঠিতে লিখেন- “এগুলো বলার একমাত্র কারণ হচ্ছে এগুলো ভাবতে আমাদের ভালোলাগে। আপনার মত কেউ কিভাবে এমন কথা লিখলো যা শুধুমাত্র আবেগীয় দিক থেকে সন্তোষজনক? কেন এমন কথা লিখলেন যা শক্ত প্রমাণের ধার ধারে না? সেটা যতই অস্বস্তিকর হোক না কেন!”
গার্ডনার জবাবে লিখেন- “আমারও মনে হয় ঈশ্বর বা পরজীবনের পক্ষে কোনো প্রমাণ নাই। এটাও মনে হয় যে আপনার যুক্তিই ঠিক- আপনার অবস্থানই ঠিক। আমি আপনার কোনো বইয়ে এমন কিছু পাইনি যার সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের পার্থক্য শুধু একটা জায়গায় – কেবল বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে অপ্রমাণিত কোনো কিছুকে মেনে নেয়ার যৌক্তিকতায়।”
আমি সেই বসন্তে, সিয়াটল শহরে সেগানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। ওনার তখন চিকিৎসা চলছিলো। যদিও কেমোথেরাপি ওনার শরীরের ওপর ভয়ানক অত্যাচার চালিয়েছিলো, তবুও ওনার বাকচাতুর্যে সেটার বিন্দুমাত্র কোনো প্রভাব পড়েনি; বিজ্ঞান, যুক্তি, কসমস নিয়ে বিস্ময়ের ক্ষমতা – এগুলোর ওপরেও নয়। উনি বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, রোগের সাথে লড়াইয়ে তিনিই জিতবেন।
আমরা সেদিন ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে অনেক আলোচনা করেছিলাম। উনি বলেছিলেন, “আমি চাই, আমার জীবনকালেই যেন এলিয়েন পাওয়া যায়। জানার আগেই মারা গেলে বেশ কষ্ট পাবো।”
সিয়াটলে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তাঁর সেক্রেটারী সেগানের কাছে আসা ফ্যাক্স-মেইল-বক্তব্যের দাওয়াত-সাক্ষাতকার দেওয়ার অনুরোধ বা লেখার অনুরোধ ড্রুয়ানের কাছে ফ্যাক্স করে পাঠাতেন। মাঝে মধ্যে সেগান এসবের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতেন। তাঁর সময় ফুরিয়েএসেছিলো- তিনি লেখা শেষ করতে পারতেন না।
ডিসেম্বর ২০, ১৯৯৬ সালের মধ্যরাতের কিছু পরে সেগান শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন, তাঁর বয়স তখন ছিল ৬২!
*********
সেগানের কিছু মূলবিশ্বাস ছিলো। তিনি মনে করতেন, মহাবিশ্বের সবকিছু নিয়মমাফিক ও যুক্তিতে বাঁধা। তিনি বিশ্বাস করতেন, মহাবিশ্ব একটা মমতাপূর্ণ জায়গা, প্রাণধারণের এমন কি বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রাণীর বিকাশের উপযুক্ত জায়গা। ওনার দৃষ্টিতে কসমস ছিলো আত্মসচেতনতায় পরিপূর্ণ একটা স্থান। তিনি বিশ্বাস করতেন, আমরা একদিন মহাজগতের অন্য প্রাণীদের সাথে যোগাযোগের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি (আর নিঃসন্দেহে, একজন নির্দিষ্ট ব্রুকলিনবাসীই ওদের সাথে কথা বলবে)। সত্যি বলতে তিনি এই বিশেষ সময়টাতে বসবাস করতে পেরে গর্ববোধ করতেন। এই ধারণাটা অবশ্য কোপার্নিকাসের মতবিরুদ্ধ! সেই মত বলে যে, পৃথিবী সৌরজগতের কেন্দ্র নয় এটা দিয়ে বোঝায় যে আমাদের কখনোই এমনটা ধরে নেয়া উচিৎ নয় যে, আমরা স্থান ও কালের কোনো বিশেষ মুহূর্তে আছি। যে কারণেই হোক- কসমসের অন্য প্রান্ত থেকে অন্যান্য প্রাণীদের সাথে যোগাযোগ করার ব্যাপারে সেগানের ইচ্ছা পূরণ হয়নি।
ওরা সবাই কোথায়? – এই প্রশ্নটাকে ফার্মির ধাঁধা বলে। ১৯৫০ সালে লস আলামোসে পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মি হঠাৎ করে এই প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়ে এই প্যারাডক্সের জন্ম দেন। যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করেও মহাজগতে প্রাণ খুঁজে পাচ্ছেনা কেনো? যদি পেয়েও থাকে তারা আমাদের পৃথিবীতে আসছেনা কেনো? (UFO দেখার রিপোর্ট হিসাব ভুক্ত নয়)। মজার ব্যাপার হলো, বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহের সন্ধান পাওয়ার পর থেকে ফার্মি প্যারাডক্স আরো জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
২০১৩ সালের শেষ দিকে, নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপের ২০১৩ সালের রিপোর্ট-এর ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা বললেন, আমাদের ছায়াপথে এমন ৪০ বিলিয়ন গ্রহ থাকতে পারে যেগুলোর আকার প্রায় পৃথিবীর মত, এবং সূর্য থেকে ওদের দূরত্বও এমন যেটাকে আমরা বাসযোগ্য হিসেবে ধরি। এই তথ্যে যদি দশমিকের অবস্থান এক ঘর বা দুই ঘরও এদিক ওদিক হয়, তারপরেও আকাশগঙ্গা ছায়াপথে পৃথিবীসদৃশ গ্রহের সংখ্যা বিস্ময়করভাবে বিশাল হবে। আর নিঃসন্দেহে, আকাশগঙ্গা ছায়াপথ তো “billions and billions” ছায়াপথের মধ্যে মাত্র একটা।
কিন্তু আমাদের মহাশূন্য পর্যবেক্ষণ প্রকল্প, অর্থাৎ হাবল টেলিস্কোপ, কেপলার টেলিস্কোপ, আর পৃথিবীপৃষ্ঠে স্থাপিত অনেক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র – কোনোটাই এখনো কোথাও এমন কিছু খুঁজে পায়নি যা দেখতে বানানো মনে হয়; কোনো বার্তা বা কোনো তথ্যও না।
ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোতির্বিজ্ঞানী জেফ মারসি সৌরজগতের বাইরে অনেক গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। তিনি উপাত্তগুলোর মধ্যে তন্নতন্ন করে কৃত্রিম কিছুর সন্ধান করেছেন। তিনি বলেছেন যে, এই নীরবতা নাকি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “যদি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো আকাশগঙ্গা ছায়াপথে বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রাণ থেকেই থাকে- তবে এতোদিনে আমরা ওদের উপস্থিতি সম্পর্কে জেনে যাওয়ার কথা! ওদের পাঠানো মহাকাশযান আশেপাশের হাজারো নক্ষত্রে পৌঁছে যাওয়ার কথা। মিউজিয়ামের সিকিউরিটি সিস্টেমের মত লেজার রশ্মির জাল দিয়ে গ্যালাকটিক ইন্টারনেট শুরু করে দেওয়ার কথা। তাদের ব্যবহৃত শক্তি উৎস থেকে উৎপন্ন বর্জ্য হিসেবে প্রচুর অবলোহিত রশ্মি পাওয়ার কথা।”
নীল টাইসন বলেন, “সেগানের মত আমারও মনে হয় – মহাবিশ্বে প্রাণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিন্তু সেগান যেটাকে সভ্যতা বলেছেন সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান। সেটা নির্ভর করে প্রাপ্ত তথ্যকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করছেন তার উপর।”
সেগান কোনো দ্বিধা ছাড়াই স্বীকার করতেন যে তাঁর কাছে মহাবিশ্বের অন্য কোথাও প্রাণ থাকার সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই- বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রাণ তো আরো অনেক দূরের ব্যাপার! এটা তাঁর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রতি শ্রদ্ধা বা বিনয় বলতে পারেন – তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে তিনি যা খুঁজছেন, তা পাননি।
**********
সেই ডিসেম্বরে, আমি সানফ্রান্সিসকোতে আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের শরৎকালীন সম্মেলনে সেগানের বক্তব্য শোনার জন্য যোগ দেই। সেখানে মূল বক্তা ছিলেন গ্রহবিজ্ঞানী ডেভিড গ্রিনস্পুন। তিনি সেগানকে “সেগান চাচা” বলে ডাকতেন। তার বাবা লেস্টার গ্রীনস্পুন ছিলেন সেগানের বন্ধু এবং হার্ভার্ডের সাইকায়াট্রি’র প্রফেসর। তরুণ গ্রিনস্পুন একটা চমৎকার বক্তব্য দিলেন, যেখান বেশ ভদ্র ভাষায় সেগানের দৃষ্টিভঙ্গির একটা মূল বিষয় নিয়ে কড়া সমালোচনা করলেন।
সেগান কয়েকটি Great Demotion বা মহাপতনের কথা লিখেছিলেন তাঁর নিজের বইতেই। মানবজাতি অত্যন্ত কষ্ট নিয়ে এটা মানতে শিখেছে যে তারা মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু নয় – এছাড়াও অনেক মানবকেন্দ্রিক আবেগের পতন হয়েছে। সেগানের মতে আমরা মহাবিশ্ব সৃষ্টির কারণ নই – কোনো মহান সত্তা আমাদের জন্য মহাবিশ্ব বানাননি। বরং আমরা প্রাণে পরিপূর্ণ এই জটিল বিশ্বে বিবর্তনের ফলাফল মাত্র – অচেতন প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফসল মাত্র। আমরা যদি কখনো বহির্জাগতিক বুদ্ধিমান কোনো প্রাণীদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই, তারা হয়তো আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান হবে। তাদের প্রযুক্তি হবে উন্নততর, তাদের সভ্যতার বয়স হবে বেশী। এটাই যৌক্তিক উপসংহার। মানুষের মামুলিপনার ব্যাপারে সেগানেরএই দৃষ্টিভঙ্গিটার নাম হচ্ছে “principle of mediocrity”।
তবে তরুণ গ্রীনস্পুন এখানে এসে মানবকেন্দ্রিকতার কথা বলছিলেন,। অর্থাৎ, যে মতবাদ দিয়ে বোঝায় যে আমরা পৃথিবীকে অত্যন্ত দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছি, এবং আমাদের উপস্থিতি ভূতাত্ত্বিক নিদর্শনের অংশ হিসেবে রয়ে যাচ্ছে। আমরা বলতে পারি না যে এমন কিছু হচ্ছেনা। পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা শিখতে হবে আমাদেরকে। গ্রীনস্পুন এটা বোঝাতে গিয়ে একটা উপমা দেন- “আমরা যেন হঠাৎ জেগে উঠে দেখলাম যে আমরা অজানা এক রাস্তায় একটা বাসের চালকের আসনে বসে আছি। আর আমরা অনুভব করলাম যে, বাসটা চালানোর কায়দা আমাদের জানা নেই। দুর্যোগ এড়ানোর জন্য, বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরকে জানতে হবে- এই বাস কিভাবে চালাতে হয়।” গ্রীনস্পুন জিজ্ঞেস করেন “শুনতে কি এমন মনে হচ্ছে না যে আমরা নিজেদেরকে মহাউন্নতির পুরষ্কারে ভূষিত করে দিচ্ছি?”
“হ্যাঁ, এটা মহাউন্নতির পর্যায়ে পড়ে- আর এটা শংকাজনক। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, আমরা তাহলে আর মহাজাগতিকভাবে অপ্রয়োজনীয় নই- আমরা গ্রহ পরিবর্তনকারী প্রজাতি। “তবে বিজ্ঞানের মূলনীতি কিন্তু আমাদেরকে আবেগীয় দিক থেকে সন্তোষজনক গল্পে বিশ্বাস করার অনুমতি দেয়না।”তিনি বলেন, “বিজ্ঞান মানবকেন্দ্রিকতাকে অগ্রাহ্য করতে পারেনা, কারণ আমরা একটা ভূতাত্ত্বিক শক্তিতে পরিণত হবার পর থেকে পৃথিবীর চেহারা আস্তে আস্তে অচেনা হয়ে উঠছে।”
সেগান কি পারতেন, তাঁর মহাপতন মতবাদকে এই নতুন মানবকেন্দ্রিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে? নিঃসন্দেহে, এই ব্রহ্মাণ্ড আমাদের ব্যাপারে পুরোপুরি উদাসীন! পৃথিবী হচ্ছে মহাবৈশ্বিক সমুদ্রতটে পড়ে থাকা একটা বালুকণা মাত্র! কিন্তু এই মামুলি পাথুরে গ্রহটাতেই আমাদেরকে তাঁবু খাটাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন বিজ্ঞান আর যুক্তি, সাহসিকতা আর দূরদৃষ্টি। তাই সেই গ্রীনস্পুনই “Uncle Carl” এর ব্যাপারে বলেছিলেন, “ঈশ্বর জানেন, সেগানকে আমাদের এখন কতটা দরকার”।
-Joel Achenbach,
Staff writer, Washington Post
Original Article in English
অনুবাদ – শোভন রেজা, আদৃতা হাবীব, ফরহাদ হোসেন মাসুম
(লেখাটি ইতোপূর্বে অনুবাদকদের আড্ডায় প্রকাশিত)
Thanks a lot to shovon vai,Forhad vai and Adrita apu for presenting this inspiring article in Bengali