কার্ল সেগানের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্ব- Wonder and Skepticism (1996)

১৯৯৬ সালের ২৩ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত CSICOP (Committee for the Scientific Investigation of Claims of the Paranormal) এর “Wonder and Skepticism”  শীর্ষক বক্তব্য শেষ করার পর সেগান (একাধিক) সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। আমরা সেগানের বক্তব্যকে আমাদের ম্যাগাজিনে (Skeptical Inquirer) কভার আর্টিকেল হিসেবে জানুয়ারী/ফেব্রুয়ারী ১৯৯৫ সংখ্যায় প্রকাশ করেছিলাম। (সেগানের মৃত্যুর পর ডিসেম্বর ১৯৯৬তে আমরা এই বক্তব্যকে আবারো প্রথম অধ্যায় হিসেবে প্রকাশ করি আমাদের চারটা সাধারণ সংকলনের যা আমি নিজে করেছিলাম, Encounters with the Paranormal: Science, Knowledge, and Belief, Prometheus 1998, আমার নিজের বক্তব্য উপসংহার হিসেবে সহ)। প্রশ্নোত্তর পর্বটির প্রতিলিপি মূল বক্তব্যের সাথেই করা হয়েছিল, তবে বিভিন্ন কারণে সেটা প্রকাশ করা হয় নি। কিছুদিন আগে সেটা আমরা খুঁজে পেয়েছি, সেগানের স্ত্রী ও সহযোগী অ্যান ড্রুইয়ান সাথে সাথে এটা প্রকাশ করতে সম্মতি দেন। পুরো প্রশ্নোত্তর পর্বই এখানে আছে, কিছু অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা ছাড়া। কিছু কথা পুরোনো খবর মনে হতে পারে, অন্যান্যগুলো মনে হবে যেন আজকের সংবাদ ছিল। আর মূলভাবটা সবসময়ের জন্যই প্রযোজ্য। আমরা ৩৭তম পৃষ্ঠায় অ্যান ড্রুয়ানের লেখা একটি ক্রোড়পত্র “The Great Turning Away” প্রকাশ করি এর সাথে – কেন্ড্রিক ফ্রাজিয়ের, সম্পাদক, Skeptical Inquirer

(মূল আর্টিকেল দেখুন)

****

প্রশ্নঃ ডঃ সেগান, আপনি আপনার বক্তব্যে বলেছেন বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে আমাদের একান্ত বিশ্বাসগুলোকে মিথ্যা প্রমাণকারীদের পুরষ্কৃত করা। আপনি যদি দুই- চার প্রজন্ম ভবিষ্যতের কথা ভাবেন, তবে আপনার কি মনে হয় আমাদের কোনো একান্ত বিশ্বাসগুলোর মধ্যে কোনোটা মিথ্যা প্রমাণ হবার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে?

সেগানঃ হয়তো আমাদের সেই বিশ্বাস যে বিজ্ঞান আমাদের একান্ত বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে।

ভবিষ্যদ্বাণী একটা বিলুপ্ত শিল্প। আমার (বা কারো) পক্ষে সেটা সম্ভব না। আমি যদি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারতাম তবে ভাবুন আমাদের কতটা সময় আর শ্রম বেঁচে যেত। এই প্রশ্নটা আমি এতক্ষণ যা বলে আসছি তার বিরোধিতা করে, যে জিনিসগুলো আমরা নিশ্চিতভাবে সত্য হিসেবে জানি, সেগুলোও ভুল সাব্যস্ত হতে পারে। আমি ভুল ভ্রান্তির উর্ধ্বে নই। আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি- ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের। তখনকার শীর্ষ “ভবিষ্যবিদ” ছিলেন জুল ভার্ন। যদিও শব্দটা তখন ছিল না, আর এটা একটা ফালতু শব্দ। তাঁকে বলা হয়েছিল একশো বছর পর মানে ভবিষ্যতে কী হতে পারে, তা বলার জন্য। যানবাহনের কথা, বিশেষ করে, বিংশ শতকের যানবাহন কেমন হবে! জুল ভার্ন কিছুক্ষণ পর তাঁর উত্তর নিয়ে হাজির হলেন। তিনি যে উত্তর দিয়েছিলেন সেটা হচ্ছে ১৯৫০ সালের মধ্যে ভিক্টোরিয়ান শোবার ঘরগুলো লাল মখমলে ঘেরা অবস্থায় বাতাসে চলা গন্ডোলায় (ভেনিসের নৌকার মত নৌকা) করে ৭ দিনের মধ্যে আটলান্টিক পাড়ি দিতে সক্ষম হবে। সবাই তখন ভাবলো- “বাহ! জুল ভার্ন অনেক ভালো ভবিষ্যবিদ! তিনি ছাড়া আর কেই বা এমন জিনিস ভাবতে পারে?”। আমরা জানি তিনি ভুল ছিলেন, আর ভুলটা অনেক কুৎসিত মাপের ভুল ছিল। কিন্তু কেন তিনি ভুল ছিলেন? তিনি কি ভালো ভবিষ্যবিদ ছিলেন না? তিনি কি বোকা ছিলেন? না। তিনি বাতাসের চেয়ে ভারী উড়োজাহাজের কথা ভাবতে পারেননি, তাঁর সময়ে কেউই পারেনি। তাঁদের সময়ে বিমানের ধারণা আসাটা অসম্ভব ছিল। একইভাবে আমি আপনাকে যাই বলবো, সেটাও একই রকম। আমি বলতে পারি যে, আমরা মহাশূন্যে ঘুরে বেড়াবো। আমরা যদি নিজেদের ধ্বংস না ডেকে আনি, তাহলে বৈজ্ঞানিক ধারণা এবং উন্নয়নশীল প্রযুক্তিতে হয়তো সেটা অসম্ভব কিছু না – তবুও ঘটনাটা রয়েই যায় যে আমার ভবিষ্যত জানার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। তো আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি যে আপনার প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি দিতে পারলাম না।

প্রশ্নঃ উত্তরের জন্য ধন্যবাদ। আমি বিজ্ঞানের পুরষ্কার ব্যবস্থা অন্যান্য ক্ষেত্রের পুরষ্কার ব্যবস্থার চেয়ে ভিন্ন – এ কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে চাই। যদি কেউ কোনো সম্রাটকে সফলভাবে চ্যালেঞ্জ করে সে পরম পুরষ্কার পায়। যদি কোনো উদ্যোক্তা কোনো প্রযুক্তি বা অন্য কোনো উদ্যোক্তাকে সফলভাবে প্রতিস্থাপিত করতে পারে সেও পরম পুরষ্কারটি পায়। যদি কোনো বিজ্ঞানী অসফলভাবে তাঁর ক্ষেত্র প্রধানকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁর নিজের ক্যারিয়ার ধ্বংসের মুখোমুখি হয়ে যায়, ঠিক একটা ব্যর্থ সামরিক অভ্যূত্থানের মতো। ধন্যবাদ।

সেগানঃ ধন্যবাদ, আপনি খুব ভালো একটি বিষয় তুলে এনেছেন। আমি দ্বিমত পোষণ করতে চাই। আপনার মনে থাকতে পারে টিভি সিরিজ Shogun এর কথা, যেখানে একজন ইংলিশ নাবিক দুর্ঘটনায় পড়ে জাপানে ভেসে ওঠে। সেখানে তাকে ভবিষ্যত শ্যোগান (shogun মানে হচ্ছে সামন্ততান্ত্রিক জাপানের সেনাবাহিনীর প্রধান) টোকানাগার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সামরিক বাহিনীর লোকদের মতই টোকানাগা বেশ কর্তৃত্বপরায়ণ, অগণতান্ত্রিক আর পদসচেতন। আর যখন সে জানতে পারে ডাচরা স্প্যানিশ মনিবদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, তখন সে স্প্যানিশদের পক্ষ নেয়। সে জীবনে কোনো স্প্যানিশ ব্যক্তিকে দেখে নি, তারপরও! কারণ তাঁরা মনিব সম্প্রদায় ছিলো, আর তাঁদের বিরুদ্ধে যারা যাবে তাঁরা নিশ্চয়ই ভুল করছে। নায়ক তখন বলে- “একমাত্র নির্বাপক শর্ত হচ্ছে ভুঁইফোঁড়রা জিতে” তখন টোকানাগা বলে “হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক বলেছ” আর পরে তাঁরা বন্ধু হয়ে গেল। আপনি ঠিক এ কথাটাই বলছেন।

এর মানে এই না যে ডাচদের বিদ্রোহে কোনো পুরষ্কার ব্যবস্থা ছিল। তাঁরা সফল হলেই সফল হতো – এটা একটা দ্বিরূক্তি। বিজ্ঞানে শুরু থেকেই পুরষ্কার ব্যবস্থা আছে। এর মানে এই না যে কেউ যদি নিউটনকে চ্যালেঞ্জ করে সে সাথে সাথে পুরষ্কৃত হয়ে যাবে। আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল। তিনি আপেক্ষিকতাবাদের জন্য নোবেলও পাননি, তিনি আলোক তড়িৎক্রিয়ার জন্য নোবেল পেয়েছিলেন, কারণ আপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে সন্দেহ ছিল তখনও। যাই হোক, অনেক বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কথার মূল্য বুঝতে পেরেছিলেন। আইনস্টাইন নিউটনকে চ্যালেঞ্জ করেননি, নিউটন মৃত ছিলেন তখন। আইনস্টাইন যা বলেছিলেন, সেটা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল, শুধু কেউ সেটাকে নিয়ে এর আগে ভাবেনি। যখনই মানুষ বুঝতে পারলো যে আসলে দুটো মত একইসাথে চলতে পারে না, তখন অনেকে জায়গায় দাঁড়িয়েই মত বদলে ফেলেন। আমি বলছি না সবাই মত পাল্টে ফেলেছিলো, আমি বলছি না যে মতটা তখনই একদম নিখুঁত ছিলো, কিন্তু এখানে পুরষ্কারের ব্যবস্থাটা সিস্টেমের মধ্যেই ছিলো। আপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে ১৯০৫ সালে গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশ করার কয়েক বছরের মধ্যেই আইনস্টাইন পূর্ণ অধ্যাপনা লাভ করেন, এবং নিজের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যান।

প্রশ্নঃ আপনি কি সত্যিই বলেছিলেন- “বিলিয়নস এন্ড বিলিয়নস…” (হাসি)

সেগানঃ কখনোই বলিনি। এটা জনি কারসনের কাজ। আমি তাঁকে একবার দেখেছি কর্ডের ফুল প্যান্ট- জ্যাকেট আর পরচুলা পরে আমাকে নকল করে বেড়াচ্ছে। আমিও বিলিয়নস এন্ড বিলিয়নস বলিনি আর আর্থার কোনান ডোয়েলও তার কোনো লেখায় শার্লক হোমসকে দিয়ে বলান নি “Elementary, my dear Watson”।

প্রশ্নঃ আমি অবাক হই যখন আপনি একই বাক্যে “বিজ্ঞান” আর “সত্য” একসাথে ব্যবহার করেন। আপনিই বলেছেন বিজ্ঞান পরম সত্য খোঁজে না, বরং সত্যের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করে। আমার মনে হয় সত্য ব্যাপারটা খুব মানবকেন্দ্রিক, সেটা মানুষের স্থান এবং সময়ের সাথে আপেক্ষিক। আমার মনে হয় বিজ্ঞান বাস্তবতাকে ভালোভাবে বুঝার পথ, সত্যকে নয়।

সেগানঃ আমি কথার চাতুরি করবো না। সত্যের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ব্যক্তিদের মত বাস্তবতার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ব্যক্তিও আছেন। আমি তাঁদেরকে বিতর্কে উৎসাহিত করি। (হাসি)

প্রশ্নঃ আমি স্থান-কালের দৃষ্টিকোণ থেকে আপেক্ষিকতাবাদ যতদূর বুঝেছি, তাতে মনে হয়েছে কার্যকারণ এবং ফলাফলজনিত কর্মকাণ্ডগুলো আগে-পরে চলে গেলে (causal violation হলে) কোনো প্যারাডক্স সৃষ্টি হবে না। আপনার কি মনে হয় আমরা কখনো স্থান-কালের জ্যামিতির ওপর ততটা নিয়ন্ত্রণ পাবো যেমনটা আমরা বিদ্যুতের ওপর পেয়েছি?

সেগানঃ এটা খুব ভালো একটা প্রশ্ন, আর এর উত্তরটা আমি জানি না! কিন্তু হ্যাঁ, মহাকর্ষীয় পদার্থবিদদের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে যে এমন প্যারাডক্স কি আসলে পদার্থবিদ্যার আইন বিরুদ্ধ নাকি আপনি যেমন বলেছেন এরকম একটা প্যারাডক্স নিয়ে আমাদের টিকে থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ফলাফল কি কারণের আগে আসতে পারে? এমন কথার বিপরীতে আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে হাত-পা ছুঁড়ে বলা- “কী যা তা বলছো? পাগল নাকি!” কিন্তু কিছু বিজ্ঞান আছে যা আমাদের বলে এমন ঘটনা শুধু যে ঘটতে পারে, তা নয়, বরং এরা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে, বিজ্ঞানের এমন শাখাগুলো এই কথাগুলো বলছে যেগুলো ছাড়া আমাদের বিজ্ঞান অচল। আমি বলছি না এটা সব ক্ষেত্রে সত্য, আমি বলছি যে আমাদের সাধারণ জ্ঞান সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য না।

প্রশ্নঃ রিচার্ড হ্যোগল্যান্ড কিছুদিন আগে কয়েকটি ছবি সংগ্রহ করেছেন – প্রায় বিশ বছর আগের চাঁদে অভিযানের সময় হ্যাসেলব্ল্যাড (hasselblad) দিয়ে তোলা কিছু ছবি। আর তিনি সেগুলোকে খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করছেন। তিনি কয়েক সপ্তাহ আগে ওহায়ো বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা বক্তৃতা করেছিলেন। তার সাথে ভিডিও ক্যামেরা ছিলো। ওখানে কিছু ভিডিও থাকারও কথা ছিল। আপনার কি এ ব্যাপারে কোনো ধারণা…

RIchard Hoagland

Richard Hoagland

সেগানঃ ভিডিওগুলোতে কী থাকার কথা ছিলো, তা বলতে ভুলে গেছেন।

একই প্রশ্নকর্তাঃচাঁদের ওপর তৈরিকৃত কিছু গঠনের।

সেগানঃ রিচার্ড হ্যোগল্যান্ড একজন গল্পকার। অন্য দিকে হ্যাসেলব্ল্যাডের ছবি সংগ্রহ করা খুব একটা কঠিন কাজ না, নাসা এই ছবিগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করে রেখেছে। এগুলো সরকারি ছবি, যে কেউ দেখতে পারে। আপনাকে খুব বিশেষ কিছু করতে হবে না এই ছবিগুলো সংগ্রহ করতে।

এই ব্যাপারগুলোর সাথে মিল রেখে আমি সবসময় একটা ঘটনা বলি। মঙ্গল গ্রহে একটা জায়গা আছে সিডোনিয়া নামে, ভাইকিং ১৯৭৬ এর মিশনে এই জায়গাটির অনেক ছবি তোলা হয়, এই মিশনের সাথে আমি যুক্ত ছিলাম। একটা ছবিতে পাহাড় পর্বত মিলে এমন একটা জায়গা তৈরি করেছে যেটা দেখতে অবিকল একটা মানুষের চেহারার মতো মনে হয়, তিন কিলোমিটারের মতো প্রস্থ আর এক কিলোমিটার উচ্চতার একটা জায়গা। এটা মঙ্গল পৃষ্ঠে শুয়ে আছে, আর আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, এটার মাথায় একটা হেলমেটের মত কিছু দেখা যাচ্ছে, এর একটা চোখ আছে আরেকটা চোখ ছায়ায়, একটা নাকও আছে।

Face on Mars

Face on Mars

আপনার মনে হবে এটা কৃত্রিমভাবে বানানো। আর রিচার্ড হ্যোগল্যান্ড এই ছবি দেখে বলেন মঙ্গলে পুরোনো একটা এলিয়েন জাতি ছিল। তিনি তাঁদের একটা সময়কালও ধরে দেন, ৫০০,০০০ বছর আগে বা এর কাছাকাছি। ঐ সময়ে তো আমাদের পূর্বপুরুষরা মহাকাশ ভ্রমণে যেতে পারতেন না সেটা মোটামুটি নিশ্চিত, কিন্তু এটা থেকেই অনেকে অনেক ধরনের কল্পকাহিনী বানানো শুরু করেন। “আমরা মঙ্গল থেকে এসেছি” আর “অন্য একটা নক্ষত্র থেকে এলিয়েনরা এসে মঙ্গলে এই মূর্তি বানিয়েছিল আর আমাদের পৃথিবীতে রেখে গেছে”। তবে এদের কেউই বলতে পারেন না কেনো আমাদের সাথে শিম্পাঞ্জীর সক্রিয় জিনের  ৯৯.৬ ভাগ একই রকম। আমাদের যদি এখানে রেখেই যাওয়া হয়, তবে আমাদের সাথে শিম্পাঞ্জীদের এতো মিল কেনো? তাদের এই অবস্থানের ভিত্তি কী? সেই ভিত্তি কত মজবুত? আমি সাধারণত এসব তর্কের ক্ষেত্রে একটা ঘটনার কথা বলি। সাবেক রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের চেহারা সম্বলিত একটি বেগুনের গল্প। বেগুনটির একটি খাড়া নাকের মত অংশ আছে- আর রিচার্ড নিক্সনকে এই বেগুনে দেখার মত মানুষের কোনো অভাব নেই।

Nixon Eggplant

Nixon Eggplant

এই ঘটনা থেকে আমরা কী বুঝবো? এলিয়েনরা আমাদের বেগুন নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে? নাকি এটা কোনো অলৌকিক ঘটনা? না কি ঈশ্বর বেগুনের মাঝে করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন? অথবা, ইতিহাসে হয়তো হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ বেগুন ছিল যেগুলো দেখতে সাধারণ বেগুনের মতো ছিলো না, আর এই বড় সংখ্যার বেগুনের মাঝে ২/১টা বেগুন দেখে আমাদের মানুষের চেহারার মতো মনে হতেই পারে। আমরা মানুষরা চেহারা বুঝতে পারদর্শী। আমার মনে হয় পরের কারণটা যৌক্তিক। এবার মঙ্গলের চেহারাটা দেখা যাক…হাজার লক্ষ পাহাড় আর টিলার হাজার লক্ষ রকম বৈশিষ্ট্য আছে। আমরা এমন একটা দেখলাম যেটা মানুষের চেহারার মতো দেখতে। ছবির আলোকপাতের পরিবর্তন করলে দেখা যায় এটাকে আর চেহারা মনে হয় না। আবারো বলি, আমরা চেহারা চিনতে পারদর্শী। হাজার লক্ষ পাহাড়ের মাঝে একটা পাহাড় দেখতে মানুষের চেহারার মতো, এটা কি এলিয়েনদের অস্তিত্বের নিশ্চিত প্রমাণ? আমার মনে হয় না। আমি সেই লোকদের দোষ দিচ্ছি না যারা নাসার আর্কাইভ থেকে এসব ছবি খুঁজে বেড়ান, এটা বৈজ্ঞানিক মনোভাব। আমি তাদেরও দোষ দিচ্ছি না যারা এলিয়েনদের বা তাদের চিহ্ন খুঁজছেন, আমার মনে হয় এটা ভালো বুদ্ধি। কিন্তু আমার সমস্যা তাদের ক্ষেত্রে যারা অতিরঞ্জিত আর অপ্রতুল প্রমাণকে নিশ্চিত প্রমাণ বলে প্রচার করেন।

প্রশ্নঃ আমরা কি টেক্সাসের সুপারকন্ডাকটিং সুপারকলাইডারের বাতিলের ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে পারি?

সেগানঃ হ্যাঁ। অনেক পদার্থবিদই মনে করেন এটা দুঃখজনক। আমার মতে ব্যাপারটা ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি। আমরা এখানে বলছি ৮, ১০, ১২ বা ১৪ বিলিয়ন ডলারের কথা যা ব্যবহার হবে দুর্বোধ্য কিছু গবেষণায়- আমার মনে হয় না পদার্থবিদরা কংগ্রেসকে জিনিসটার ব্যাপারে ভালোভাবে বোঝাতে পেরেছেন কেনো বাজেটের একটা অংশ তাদের প্রজেক্টে দেয়ার জন্য বিবেচনা করা উচিত। এই প্রজেক্ট অস্ত্র উৎপাদন করে না, ঔষধও না, এটা এমন একটা প্রজেক্ট যা অনেকেই ভালো করে জানে না বা বোঝে না। কিসের ভিত্তিতে এই প্রজেক্টে এতো ডলার এই খাতে দেয়া উচিত? আমার মনে হয়, পদার্থবিদরা, সবাই না হলেও সম্মিলিতভাবে বড় অনুপাতে নিজেরাই এর জন্য দায়ী।

প্রশ্নঃএলিয়েনদের সম্পর্কে একটি প্রশ্ন। সন্দেহবাদী হিসেবে আমাদের মনে হয়, ফার্মির ধাঁধা খুব ভালো একটি ব্যাপার উপস্থাপন করে, যে যদি মহাবিশ্বে সভ্যতা গুরুত্বপূর্ণ হারে থেকে থাকে, আর ছায়াপথের প্রসারণের গতি আমরা যেহেতু কম বলেই জানি, তাহলে মহাবৈশ্বিক কোনো সভ্যতার জন্য পুরো গ্যালাক্সীকে নিজেদের কলোনি বানানোর মতো যথেষ্ট সময় ছিল। আপনার মতামত কি এ ব্যাপারে?

সেগানঃ আপনি যা বললেন, ফার্মির ধাঁধা মূলত তাই বলে যে – যদি মহাবিশ্বে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সভ্যতা থেকে থাকে, আর তাঁরা যদি আলোর গতিতে ভ্রমণ করতে পারে, যেহেতু গ্যালাক্সী ১০০,০০০ আলোকবর্ষ জুড়ে আছে আর যেহেতু আমাদের ছায়াপথের বয়স ১০ বিলিয়ন বছর, সেহেতু তাদের আমাদের সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার কথা। আর যদি বলেন, আলোর গতিতে ভ্রমণ করা অসম্ভব, আলোর গতির ১০ ভাগের এক ভাগ গতিতেও যদি ভ্রমণ করে তাঁরা, এতোদিনে আমাদের সাথে দেখা করে ফেলার কথা। উইলিয়াম নিউম্যান আর আমি এ বিষয়ে একটা কাজ করেছিলাম, আর লেখা প্রকাশ করেছিলাম, যাতে আমরা বলেছি, মনে করুন একটা সভ্যতা আছে যার মহাবিশ্ব অন্বেষণের মত প্রযুক্তি আছে, আর তাঁরা অন্বেষণে বের হতে চাচ্ছে। আমরা কিসের কথা বলছি? তাঁরা কি ৪০০ বিলিয়ন মহাকাশযান পাঠাবে, ছায়াপথের প্রত্যেক নক্ষত্রের জন্য? মোটেও না। আন্তঃনাক্ষত্রিক যাত্রা কঠিন একটা ব্যাপার, তাঁরা বা আমরা, ধীরে ধীরে আগাতে থাকবো। আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রগুলো আগে দেখবো। প্রশ্নটা সহজ না, এর উত্তরটাও সহজ না। এর উত্তরটা বিকিরণের মত। সোজা পথে যাওয়া এক্ষেত্রে সোজা না, আমরা বলেছি ফার্মির মডেলটা একটা অযথার্থ মডেল। উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন যেকোনো সভ্যতার জন্যও মহাবিশ্ব অন্বেষণ সহজ ব্যাপার হবে না, আর ছায়াপথের বয়স পার হয়ে যাবে সবগুলো নক্ষত্রে অভিযান পাঠাতে।

প্রশ্নঃ ডঃ সেগান, আপনি বলেছেন বিজ্ঞানের রক্ষক হতে; যারা বিজ্ঞান কম বোঝে বা বিজ্ঞানকে কম মূল্য দেয়, তাদের মধ্যে বিজ্ঞানের বিস্ময় আর মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিতে। ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জিং, আর আমি ভাবছিলাম, বিশেষ করে, অনেক মানুষই আছে, অবশ্যই, এই রুমেও, যাদের শিক্ষার বিষয়ে বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমি বলছিলাম, যারা কলার ছাত্র বা মানবিক বিভাগের ছাত্র, তাদের মধ্যে বিজ্ঞান একটা ভয়ের জিনিস হয়ে আছে। আমি ভাবছিলাম এটা কি কোনো প্রতিকার আছে আপনার ভাবনায়?

সেগানঃ আমার মনে হয় একটা প্রতিকার আছে- বিজ্ঞান যেমন চোখ ধাঁধানো, যেমন উত্তেজনাকর, ঠিক সেভাবেই বিজ্ঞানকে উপস্থাপন করা; এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা যা মানুষের মাঝে শ্রদ্ধা আর বিস্ময় সৃষ্টি করে, যাতে বোঝনো যায় যে বিজ্ঞান এমন একটা জিনিস যার উপর আমাদের জীবন নির্ভর করে। বিজ্ঞানকে যদি এভাবে উপস্থাপন না করা হয়, বইয়ের মতো বাঁধাধরা পদ্ধতিতে যদি বিজ্ঞানকে উপস্থাপন করা হয়, তবে মানুষ ভয় পাবেই। যদি রসায়ন শিক্ষককে বাস্কেটবল শিক্ষকেরও কাজ করতে হয়, যদি স্কুল বোর্ড নতুন বিনিয়োগ আনতে না পারেন, যদি শিক্ষকদের বেতন (বিশেষ করে বিজ্ঞান শিক্ষকদের বেতন) কম হয়, যদি ছাত্রদের কাছ থেকে খুব কম সময় আশা করা হয় ক্লাসের আর হোমওয়ার্কের জন্য, যদি প্রত্যেক খবরের কাগজে রাশিচক্র প্রতিদিন থাকে, অথচ বিজ্ঞান নিয়ে সাপ্তাহিক কলামও না থাকে, যদি ছুটির দিনে পণ্ডিতরা বিজ্ঞান নিয়ে কথা না বলেন, যদি প্রত্যেক বাণিজ্যিক টিভি চ্যানেলে একজন করে রিপোর্টার না থাকেন যিনি শুধু বিজ্ঞান; শুধু বিজ্ঞান, মেডিসিন আর প্রযুক্তি না, নিয়ে রিপোর্ট করেন (এরা সবসময়ই পুরুষ হয়ে থাকেন), যদি কোনো রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞান নিয়ে কোনো বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কথা না বলেন, সকল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক যদি এমন একশন-এডভেঞ্চার সিরিজ না বানায় যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্ররা মহাবিশ্ব নিয়ে ভাবে, বিপরীত লিঙ্গের জন্য আবেদনময় জ্যাকেট যদি শুধু খেলাধুলায় ভালো ছাত্ররাই পায়, গণিত-রসায়ন-পদার্থ-বা জীববিজ্ঞানে ভালো ছাত্ররা না পায়…আমরা যদি এই সব করে রাখি তবে মানুষের বিজ্ঞানের প্রতি অনীহা আমাদের বিস্মিত করা উচিত না। এই বাক্যটা অনেক লম্বা হয়ে গেছে।

প্রশ্নঃ শুভ সন্ধ্যা, ডঃ সেগান। শুরুতেই একটা কথা বলে নিই, Canadian Broadcasting Corporation আর CTV private network দুইয়েরই মহিলা বিজ্ঞান রিপোর্টার আছেন।

সেগানঃ অসাধারণ। আমি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলছিলাম, আর আমি বুঝতে পারলাম আপনারা সিয়াটলে কানাডার চ্যানেলও দেখতে পারছেন।

একই প্রশ্নকর্তা– আমি নিজে কানাডীয়।

সেগানঃ শুনে খুব খুশী হলাম। ডেভিড সুজুকী কানাডীয় টেলিভিশনের জন্য অনেক বছর ধরে ভালো কাজ করে যাচ্ছেন।

একই প্রশ্নকর্তাঃ নিঃসন্দেহে। কোল্ড ফিউশনের ধ্বংসের পর, যাকে বলা যেতে পারে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির peer review আর নকল হওয়ার অথবা এসব কিছুর অনুপস্থিতির প্রমাণ, আপনি যদি শক্তির উৎস উন্নয়নে আগ্রহী হতেন যেগুলোতে ব্যয় আমাদের বর্তমানে ব্যবহৃত প্রযুক্তির তুলনায় কম এবং নিরাপত্তা বেশী আপনি কি ফিউশানের ক্ষেত্রেই কাজ করতেন? আর যদি না হয়, তবে আপনি কোথায় কাজ করতেন?

সেগানঃ কোল্ড ফিউশান না হট ফিউশান?

একই প্রশ্নকর্তাঃ আমি যতদূর বুঝি- হট ফিউশানে উৎপাদিত শক্তির চেয়ে বেশী শক্তি ব্যবহৃত হয়।

সেগানঃ হ্যাঁ, তবে দূরত্বটা কমে আসছে। আমার হাতে হলে ব্যাপারটা কোল্ড ফিউশানের ভালো প্রমাণ দেয়ার সময় এখনই, যদি কোল্ড ফিউশান বলে কিছু থেকে থাকে, যেমন কম ব্যয়ে বিশাল পরিমাণ শক্তি, আমাদের এখনই সেটা দরকার। তো আমি বুঝি কেন অন্যান্য দেশে এই খাতে কম বিনিয়োগ হচ্ছে। আমার মনে হয় না এটা বিরাগের কারণ। এটা হয়তো কোনো ফল বয়ে আনবে না, কিন্তু যদি বিজ্ঞানীরা এই ব্যাপারে গবেষণা করতে চান, তাদের করতে দেয়া উচিত। তাঁরা হয়তো অন্য কিছু খুঁজে পাবেন।

হট ফিউশানের ব্যাপারে, আমি বলেছি সরবরাহকৃত আর উৎপাদিত শক্তির পার্থক্য কমে আসছে। তবে সেটা দিয়ে বিশ্বজুড়ে শিল্প বাণিজ্য চলবে, এমনটা ঘটতে হয়তো ২১ শতকের অনেকটা পেরিয়ে যাবে।

শক্তি সমস্যা যার কথা আমি বলছি সেটা হচ্ছে উষ্ণায়ন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। আমি প্রথমেই যেটা করবো সেটা হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানির মিতব্যয়ী ব্যবহারের উপর জোর দিবো, fluorescent বাতির পরিবর্তে incandescent ব্যবহার করে আপনি কিছু শক্তি বাঁচাতে পারবেন, বা অন্যভাবে বলতে গেলে, একই পরিমাণ ফোটন ব্যবহার করে আপনি তিন বা চার বা পাঁচগুণ কম কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে ছাড়ছেন। আর সেই টাকা আমি ব্যবহার করতাম গাড়ী কোম্পানীগুলোকে বেশী মাইলেজের গাড়ী বানাতে বাধ্য করতে, এক গ্যালনে ৭৫, ৮৫, বা ৯৫ মাইল। আমরা কেনো ২৫ মাইল প্রতি গ্যালনে খুশী থাকবো যেখানে আমরা নিরাপদ, সুন্দর, আর দ্রুতগতির গাড়ী পেতে পারি যা মিতব্যয়ীও হবে?

আর অন্যান্য ক্ষেত্রে আমি জীবাশ্ম জ্বালানীর পরিবর্তে অন্যান্য নন-নিউক্লিয়ার শক্তি উৎসের ব্যাপারে জোর দিতাম যেখানে আমি বিশেষ করে উদ্ভিদ থেকে আহরিত শক্তি, সৌরবিদ্যুৎ আর বায়ুবিদ্যুতের উপর বেশী জোর দিতাম, এই সব প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদাসীনতা উপেক্ষা করেও অনেক ভালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদের একটা রাজনৈতিক গল্প বলি। একসময় যুক্তরাষ্ট্রের এক রাষ্ট্রপতি ছিলেন জিমি কার্টার। তিনি শক্তিসংকট নিয়ে চিন্তিত ছিলেন আর এ ব্যাপারে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর cardigan sweater পরে ভাষণ দেন আর বলেন কিভাবে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। তিনি হোয়াইট হাউজের ছাদে সৌরবিদ্যুত প্যানেল ব্যবহার করে পানি ফুটানোর ব্যবস্থা করেন। পাওয়ার প্লান্ট ছাড়াই জিমি কার্টার তাঁর গোসলের পানি গরম পেতেন। তাঁর পরে ক্ষমতায় আসেন রোনাল্ড রেগান। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর প্রথম দিকের কাজ ছিলো রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে কার্টারের লাগানো সৌর বিদ্যুতের প্যানেলটি খুলে ফেলা। কারণ, তিনি আদর্শিকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানীর বিকল্প ব্যবস্থাগুলোর ঘোর বিরোধী ছিলেন। রেগান-বুশ আমলে আ্মাদের ১২ বছর বিকল্প জ্বালানীর গবেষণা বন্ধ রাখতে হয়েছে।

প্রশ্নঃ বিল নায়ি, ঐ ফিটফাট ভদ্রলোক, তাঁর টেলিভিশনে করা বিজ্ঞান শিক্ষার কাজগুলো নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের দাবিদার। আমি আপনাকেও ধন্যবাদ দিতে চাই রিচার্ড নিক্সন সংক্রান্ত আমার সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য, উত্তরগুলো আমার জন্য খুব সহায়ক ছিল। আপনি দর্শক সারিতে বয়সের ভিন্নতার প্রশংসা করেছেন। আমি ভাবছিলাম এখানে উপস্থিতদের মধ্যে বর্ণের বৈষম্য বা কিছু বর্ণের মানুষের অনুপস্থিতির ব্যাপারে আপনার কী মতামত, আর সাধারণ শিক্ষায় বিজ্ঞানেরর তাৎপর্য কী – সে ব্যাপারেও জানার ইচ্ছা ছিল।

Bill Nye The Science Guy

Bill Nye The Science Guy

সেগানঃ ধন্যবাদ। আমরা এই প্রশ্নও করতে পারি যে দর্শকদের মধ্যে অনেক মহিলা থাকা সত্ত্বেও ১০/১২ জন প্রশ্নকর্তার মধ্যে মহিলা মাত্র একজন কেন? এই প্রশ্নগুলো অনেক বিস্তৃত এবং কঠিন। আমার আর কোনো উত্তর দেবার নেই, এইটা ছাড়া যে আমার জানামতে এমন কোনো প্রমাণ নাই যে মহিলারা বা আমাদের এখানে যাদের বর্ণের লোক বলা হয় তাঁরা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বা উপকারী। আমার মনে হয় এর সাথে কিছুটা, কিছুটা না প্রায় পুরোটারই; সম্পর্ক আছে আমাদের সাধারণ শিক্ষায় লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাসের। মহিলারা, উদাহরণ হিসেবে, যাদের বলা হয় তাঁরা বিজ্ঞানের জন্য বোকা, যে বিজ্ঞান ওদের জন্য নয়, যে বিজ্ঞান একটি পুরুষতান্ত্রিক ব্যাপার, আর তাঁরা বিজ্ঞান থেকে সরে যান। এতো কিছুর পরও যখন মহিলারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে যান, সেখানে তাঁরা উপেক্ষা পান। “আপনি আমার ক্লাসে কি করছেন?” গণিত শিক্ষক হয়তো বলেন, গণিত ক্লাসের বাকি ৯৫% পুরুষরা হয়তো মহিলাদের ব্যাপারে খোলা মন রাখতে পারেন না, মহিলারা হয়তো কর্কশ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিজেদের ব্রাত্য মনে করেন, এই সব কিছুই বিজ্ঞান ছেড়ে দেয়ার জন্য সামাজিক চাপ। আমি একটা উপন্যাস লিখেছিলাম একবার, Contact, যেখানে আমি দেখাতে চেয়েছি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মহিলাদের কী কী উপেক্ষা সহ্য করতে হয়, যেটা পুরুষদের সহ্য করতে হয় না।

প্রশ্নঃ আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করবো আমার উত্তরটি বিদ্রুপ ছাড়া দিতে…

সেগানঃ প্রশ্ন ছুঁড়ুন।

একই প্রশ্নকর্তাঃ …যেমন ক্রপ সার্কেল বা রিচার্ড হ্যোগল্যান্ড কিংবা এলিয়েনদের দ্বারা অপহৃতদের ব্যাপারে।

Crop Circle

Crop Circle

সেগানঃ আমার মনে হয় না এ ব্যাপারে আমি কোনো বিদ্রুপ বা ব্যঙ্গ করেছি।

একই প্রশ্নকর্তাঃ আমার মনে হয় আপনি প্রচুর ব্যঙ্গ করেছেন, আমি প্রচুর ক্ষুব্ধ হয়েছি।

সেগানঃ নির্দিষ্টভাবে কোনটা নিয়ে?

একই প্রশ্নকর্তাঃ ক্রপ সার্কেল নিয়ে, আপনি যে কৌতুক দিয়ে শুরু করেছেন, রিচার্ড হ্যোগল্যান্ড নিয়ে আপনার উত্তরেও আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি।

সেগানঃ আচ্ছা। আমরা একটা নিয়ে কথা বলি। রিচার্ড হ্যোগল্যান্ড নিয়ে শুরু করি-

একই প্রশ্নকর্তাঃ আমি আপনাকে সাধারণভাবে বলবো ব্যঙ্গ বিদ্রুপের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে। এখানে অনেকে আছেন যারা মনে করেন এই ব্যাপারগুলো বিদ্রুপের দাবিদার। আপনি অনুকম্পার ব্যাপারে কথা বলেছেন, আপনাকে এখন আমি এই ব্যাপারে আদর্শ হিসেবে দেখতে চাইবো।

সেগানঃ আপনার কথাটা ভালো লেগেছে, আর আমি যদি নিজের কথামত কাজ না করে থাকি তবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে, আপনাকে বুঝতে হবে-

একই প্রশ্নকর্তাঃ আমি আপনার ক্ষমা গ্রহণ করলাম।

সেগানঃ ক্ষমা প্রার্থনার আগে একটা “যদি” ছিল। যা হোক আপনাকে বুঝতে হবে- কঠিন তর্ক বিতর্কের মধ্যে দিয়ে আমরা সত্য সন্ধান করি, আর জনাব হ্যোগল্যান্ডের ব্যাপারে, তিনি এখানে নাই- যদি না তিনি এখানে থেকে থাকেন কোথাও- এ ব্যাপারে আমার কিছু করা ছিল না। কেউ একজন একটা প্রশ্ন করেছিলেন, আমার যা মনে হয় আমি বলেছি। আমি জানতে পেরেছি হ্যোগল্যান্ড সাহেবকেও প্রশ্ন করা হয়, তিনি আমার অনুপস্থিতিতে আমার ব্যাপারে কথা বলেন, আমার মাঝেমধ্যে সেখানে থাকতে ইচ্ছা হয়-

একই প্রশ্নকর্তাঃআপনি কি তাঁকে আদর্শ মেনে নিতে পারবেন?

সেগানঃ প্রশ্নটা বুঝি নি। “আদর্শ মেনে নিতে” বলতে কি বুঝাচ্ছেন?

একই প্রশ্নকর্তাঃ আদর্শ। অনুকম্পার ক্ষেত্রে আদর্শ।

সেগানঃ আমি হ্যোগল্যান্ডকে অনেক বছর ধরে চিনি। আমার মনে হয় আমি অনুকম্পা/সহানুভূতির মাপকাঠি জানি। (হাসি)

প্রশ্নঃ আমি জানি না আগের প্রশ্নকর্তার (নারী) প্রশ্নের পর আমার প্রশ্নটা করা কি ঠিক হবে কি না। আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম- আমাদের স্কট পেক, মানসিক রোগের চিকিৎসক , ডঃ (ব্রায়ান) ওয়াইস- যিনি Many Lives, Many Masters লিখেছেন, ডঃ (জন) ম্যাক- হার্ভাডের মানসিক রোগের চিকিৎসক যিনি এলিয়েনদের দ্বারা অপহৃত বলা ভুক্তভোগী যারা বলেন তাঁরা সত্য ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন তাদের সাথে বিতর্ক করেছেন আর  এখানেও কথা বলেছেন গতকাল, ডঃ (রেমন্ড) মুডি- যারা অনেক ভালো চিন্তাবিদ। আপনার কেনো মনে হয় বা কোথায় তাঁরা ভুল করছেন বলে মনে হয়?

সেগানঃ আমাকে মানসিক রোগের ব্যাপারে মতামত দিতে বলা হচ্ছে- কঠিন কাজ। আপনি যাদের কথা বললেন তাদের অনেককে আমি ভালো করে চিনি, অনেকের সাথে দেখাই হয়নি। কেন তাদের সাথে আমার মত মিলে না, সেটা নিয়ে অনুমান করা আমার উচিত হবে বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় এ ব্যাপারে এতোটুকুই বলার আছে আমার। আমি আগেও জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করেছি যে বিতার্কিকের চরিত্র বা তাঁর জন্য আমাদের আবেগ কোনোটাই মুখ্য না, মুখ্য হচ্ছে তাঁর নিয়ে আসা বক্তব্য। এদের প্রত্যেকের জন্য, আমার মনে হয়, ব্যাপারটা হচ্ছে প্রমাণ আছে কি না? হ্যাঁ, ডঃ মুডি একজন M.D, কিন্তু তিনি আমার পিতামাতার স্মৃতিকে পরজীবনের প্রমাণ বলে সাব্যস্ত করতে চান। আমি জানি এই বক্তব্যটা কোন মূল্য রাখে না। আমি তাঁর চেয়ে ভালো জানি এসব স্মৃতি বা কন্ঠস্বর কী এবং কিসের ব্যাপারে, আর তাই, তার জের ধরে (extrapolation করে) আমি বলতে পারি তাঁর বক্তব্য অযৌক্তিক। বিতর্কের ব্যাপারে আমি শুধু এটুকু চেষ্টা করি – যা জানি বা দেখি সেগুলো কি ভালো প্রমাণ কিনা সেটা বিবেচনা করতে। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই- অপবিজ্ঞান আর ছদ্মবিজ্ঞানের এমনও অনেক বিষয় আছে যেগুলো সত্য বলে প্রমাণিত হতেও পারে। কিন্তু আমি মনে করি না শুধু এই কারণে এই ব্যাপারের সকল হালকা তথ্য প্রমাণ আমরা গ্রহণ করে নেবো।

যেমন, আগের প্রশ্নকর্তাকে আমি বলতে ভুলে গেছি, যখন মঙ্গলে অবজারভার উন্নত সরঞ্জাম আর ক্যামেরা নিয়ে মঙ্গলের পথে ছিল তখন আমার মনে হয়েছিল অন্যান্য জায়গার সাথে সাথে মুখমন্ডলের মতো জায়গাটাও আমাদের লক্ষ্য হিসেবে থাকা উচিত। যদি এটা মঙ্গলের বায়ুপ্রবাহের কোনো কারসাজি হয় সেটা আমাদের জানা উচিত। এটা যদি অন্য কোনো কারণে হয়ে থাকে সেটাও আমাদের জানা উচিত। নিক্সনের বেগুন গাছের উদাহরণ দিয়ে, মঙ্গলের মুখমন্ডলটা কী হতে পারে তা দিয়ে কী বোঝায়, আমি বুঝি। এর মানে এই না যে আমি চাই না কেউ গিয়ে জানুক এটা আসলে কী। আমি ভুলও হতে পারি। কিছু ছবির মাধ্যমে যদি আমরা জানতে পারি ব্যাপারটা কী, তাহলে চলুন, তাই করি! প্রত্যেকটা ব্যাপারই এরকম। জন ম্যাকের ব্যাপারে আমি বলবো- “গালগল্প না, আসুন বাস্তব প্রমাণ চাই”।

এলিয়েনদের দ্বারা অপহৃতদের ব্যাপারে- তাঁরা দাবি করেন এলিয়েনরা তাদের শরীরে বিশেষ করে নাকে এবং সাইনাসে যন্ত্র ঢুকিয়েছে, যেগুলো, হয়তো, নজরদারি যন্ত্র যা এলিয়েনদের জানাবে আমরা কোথায় যাই, কী করি, আমাদের শরীরে কী হচ্ছে। আমি বলি, আর আমি ম্যাককেও অনেকবার বলেছি, আমাকে এগুলো একটা দিন, আমরা পরীক্ষা করে দেখি, দেখি আমরা এলিয়েনদের প্রযুক্তি কিছু পাই কি না।

পদার্থবিদ্যার এমন কোনো আইন আছে যা আমরা এখনো বুঝি না? পৃথিবীতে কোন কোন আইসোটোপের অনুপাত আমাদের জানা নাই? পৃথিবীর পরিবেশে থাকতে পারে না এমন কোনো ভারী মৌল আছে? অনেকগুলো কারণ আছে যার জন্য আপনি মনে করতেই পারেন এলিয়েনরা আমাদের চেয়ে প্রযুক্তিতে উন্নত আর তাদের প্রস্তুতকৃত যন্ত্রও উন্নতই হবে, তাঁরা আন্তঃনাক্ষত্রিক ভ্রমণ করে এসেছে- তাঁরা দেয়ালের মধ্য দিয়ে চলাচল করে, তাঁরা নিশ্চয়ই অনেক অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। চলুন আমরা সেগুলো দেখি। কখনো এমন কিছুই আমাদের দেয়া হয় না! সবসময়ই বলা হয় যে দেবে, সবসময়ই এমন একটা যন্ত্র পরীক্ষাগারে পাঠানোর কথা বলা হয়, সেটা কখনো পরীক্ষাগারে পৌঁছায় না।

আমরা ম্যাক আর অন্যদের থেকে কী গল্পটা পাই? এই যে অপহৃতরা তাদের দৈনন্দিন কাজ করে যাচ্ছিলেন, অনেক ক্ষেত্রে আকাশ থেকে একটা যন্ত্র পরে, ধুম। অপহৃতরা সেটাকে উদাসীনভাবে দেখে ময়লার বাক্সে ফেলে দেন! কখনোই- আর এটাই নিয়ম- এটাই আমার কথা প্রমাণ করবে- অপহৃতরা যন্ত্রটি কোন রসায়নবিদ বা পদার্থবিদের হাতে পৌঁছান না, যিনি কি না যন্ত্রটিকে এলিয়েন প্রযুক্তি প্রমাণ করতে পারেন। এই বিজ্ঞানীরা এমন কিছু পাওয়ার জন্য দাঁত চোখ দিতে রাজি। ওদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে এমন একটা কিছু পাওয়ার জন্য। কেন এমনটা কখনোই ঘটে না? আমার মনে হয় ঐসব গল্পের যুক্তি এই একটা জিনিসেই খণ্ডন হয়ে যায়।

প্রশ্নঃ ডঃ সেগান, আমরা এইচ আই ভি মহামারীর ১৪তম বছরে আছি, এইচ আই ভি মহামারী আমাদের দেশে আছে, আর বৈজ্ঞানিকভাবে আমরা কোনো ঔষধ বা কোনো টীকাও আবিষ্কার করতে পারছি না, যদিও এ খাতে অনেক ডলার খরচ হচ্ছে। আর দৃশ্যত আগের এন্টি বায়োটিকসের সাথে নতুন ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাসরাও খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। আপনি আপনার ছেলে মেয়ে আর নাতী নাতনীর সময়ের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। আমি জানতে আগ্রহী, আপনি কী কী প্রভাব দেখতে পান মানুষের উপর- যারা মনে করছিল আমরা সব জিতে নিচ্ছি- এই সব রোগ আর ভাইরাসের প্রভাব কি হতে পারে?

সেগানঃ এটা প্রাকৃতিক নির্বাচন যে কাজ করছে তার প্রমাণ। আমরা যদি নিজেদের মাত্রাতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক্স দিয়ে দিই, তাহলে আমরা সেসব অণুজীবদের মেরে ফেলতে পারবো যারা এই ঔষধ সহ্য করতে পারবে না, আর যারা খাপ খাইয়ে নিতে পারবে তারা কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়াই শক্তিশালী হয়ে উঠবে। ক্রমান্বয়ে আমরা ব্যাপারগুলোকে এমনভাবে সাজাই যে অণুজীবদের সবাই- রোগ বহনকারীরাও একসময় এন্টিবায়োটিক্সে খাপ খাইয়ে নেয়। তো মাত্রাতিরিক্ত এন্টিবায়োটিকস নেয়া, যেটা ডাক্তাররা বোধগম্য কারণে করতে বলেন, একটা মারাত্মক ভুল। সমাধান হচ্ছে – মাত্রার চেয়ে বেশী এন্টিবায়োটিক না নেয়া, আর নতুন এন্টি বায়োটিক আবিষ্কার করা। এ ব্যাপারে অনেক বড় পদক্ষেপ দরকার।

এইডসের ব্যাপারে, আমার ধারণা হচ্ছে যখন এর কোন ঔষধ বা টীকা নাই, এর বিপরীতে আছে এই ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি, আমি এটাকে আশার আলো হিসেবে মনে করি, তবে একজন এইডস রোগী জীবনকালে এইটা খুব একটা আশাজনক না। এই হিসেবে এটা অনেক ধীর গতির। আমার মনে হয় না এটা অর্থ সংক্রান্ত ব্যাপার। আমার মনে হয় না এই খাতে যথেষ্ট বিনিয়োগ নাই। আমার ধারণা এই খাতে যথেষ্ট বিনিয়োগ আছে, তবে কিছু ব্যাপার ভালো মতো সমর্থন করা হচ্ছে না, বস্তুত ব্যাপারটা কম জ্ঞানের, সঠিক পরীক্ষা না হওয়ার, যথেষ্ট অগ্রগতি না হওয়ার আর ভালোমতো কাজ না করার। এইচ আই ভি ভাইরাস জাদুকরী কিছু না। এটার ঔষধও এক সময় আসবে। আমি চাইবো, আপনার উল্লিখিত কারণের জন্য, ঔষধটা জলদি আবিষ্কার হোক।

প্রশ্নঃ ডঃ সেগান, আমার প্রশ্নটা ছিলো সংশয়বাদের ব্যাপারে।

সেগানঃ ধন্যবাদ। খুব ভালো একটা বিষয়ে অনুষ্ঠানের উপসংহার টানা যাবে।

একই প্রশ্নকর্তাঃ আমাদের বর্তমানে যে দায়িত্ব আছে সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার মনে হয়। সংশয়বাদী আন্দোলন হাজার বছর ধরে চলে আসছে। প্রথমেই আমি এখানে সংশয়বাদী আন্দোলনের নেতা আর বক্তাদের জন্য হাততালি দিতে চাইবো। তবে তৃণমূল থেকে কাজ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ, যুক্তির, কার্যকারণের আর সংশয়বাদী মনোভাব ধরে রাখার নিয়মের ঐক্যমতের দরকার। আমরা এমন একটা সময়ে আছি যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আর গত কয়েক বছর ধরে SKEPTICAL INQUIRER ম্যাগাজিন আর অন্যান্য বই পুস্তক পড়ে আমি অভিভূত হয়েছি, আমি পল কার্টজের উল্লেখ করা বিষয়গুলোর মত অন্যান্য বিষয়ে তদন্ত দেখে অনেক খুশী হয়েছি। এমন শত শত ব্যাপার আছে- ক্রিস্টালের ক্ষমতা, পিরামিডের ক্ষমতা, লক নেস দানব…আরও কত কি, আমি বলতেই থাকতে পারি। শেষ পর্যন্ত কার্যকর হওয়ার ব্যাপারটা আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।

সেগানঃ কোন ব্যাপারটা?

একই প্রশ্নকর্তাঃ যুক্তি আর কারণের ব্যবহারের মাধ্যমে সংশয়বাদী চিন্তার বিকাশে কার্যকর হওয়া। আমি এই ব্যাপারগুলোকে আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে, তবে আরো বড়ো ক্ষেত্র হচ্ছে, যেখানে আমাদের নজর দেয়া উচিৎ- পৃথিবীতে থাকা বড় ধর্মগুলোকে নিয়ে ভাবা।

সেগানঃ আমরা এখন আসল কথায় এসেছি। আচ্ছা।

একই প্রশ্নকর্তাঃ বিলিয়ন বিলিয়ন লোক এই ধর্মগুলোকে মেনে চলে- আমার মনে হয় আমরা সংশয়বাদিতা নিয়ে-

সেগানঃ আপনার প্রশ্নের সারাংশ দাঁড়াচ্ছে- আমাদের ধর্মের ব্যাপারেও সংশয়বাদ দেখাতে হবে?

একই প্রশ্নকর্তাঃ জ্বি, ভালো বলেছেন।

সেগানঃ এই প্রশ্নটা অনেক ভালো হয়েছে, আর আমি জানি রিচার্ড ডকিন্স এ ব্যাপারটা নিয়ে বছর খানেক আগে কথা বলেছিলেন- আর তিনি উপসংহার টেনেছিলেন যে অনেক ধর্ম আর অপবিজ্ঞান আর ছদ্মবিজ্ঞানের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো পার্থক্য নাই। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন – কেনো আমরা একটাকে ভ্রু কুঁচকে দেখবো আরেকটা কে দেখবো না। তিনি বলতে চেয়েছেন, আমরা আমাদের সংশয়বাদকে আরো সার্বজনীন করা উচিত। আমি উত্তরটা এভাবে দিবো- পৃথিবীতে সকল সংস্কৃতিরই একটা ধর্ম আছে। এটা হওয়ার কারণে বুঝা যায় ধর্ম খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, আমরা কি একটু সাবধানতা অবলম্বন করবো না এমন একটা কিছুকে মিথ্যা প্রমাণ করতে? উদাহরণ হিসেবে- ধরুন আমি এমন একজনের সাথে কথা বলছি যার সদ্য কেউ মারা গিয়েছেন। আমার মনে হয় না আমার তাঁকে বলা উচিত হবে- “জানো মৃত্যু পরবর্তী জীবনের ধারণার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নাই”। যদি ঐ মানুষটা কিছু সান্ত্বনা পায় এটা ভেবে যে তার প্রিয় লোকটি স্বর্গে গেছেন, আর তাদের আবারো দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আছে উনার মৃত্যুর পর। সেটা বলা হবে অসহানুভূতিশীল আর বোকামী। বিজ্ঞান আমাদের অনেক কিছু দেয়, তবে কিছু জিনিস আমরা বিজ্ঞান থেকে পাই না। ধর্ম এই ব্যাপারে একটি চেষ্টা, সত্য হোক আর মিথ্যা হোক, এই সমস্যাগুলোর একটা সমাধান। মানুষের মরণশীলতা এমন একটা ক্ষেত্র যেখানে বিজ্ঞান কোনো সাহায্য দিতে পারেনি। হ্যাঁ, মহাবিশ্ব মহান এবং বিশাল, হ্যাঁ এটার অংশ হতে পারা অনেক বড় ব্যাপার, হ্যাঁ আমার জন্মের আগে আমার অস্তিত্ব ছিল না, তাই আমরা আশা করি আমরা মারা যাবার পরও বেঁচে আসবো। আমরা জানবো না এই বিষয়ে। এই ব্যাপারটা অনেক বড়। কিন্তু অনেকের জন্য আশাপ্রদ না।

বাইবেলের কথা ধরুন। বাইবেল আমার মতে কবিতার একটা অসাধারণ কাজ, এতে কিছু ইতিহাসও আছে, কিছু নৈতিকতার শিক্ষাও আছে- কিন্তু সব জায়গায় না, যশুয়ার অধ্যায়টা একটা ভয়ানক অধ্যায়- উদাহরণস্বরূপ- আর এই সব ক্ষেত্রে এটা আমাদের সম্মানের দাবিদার। অন্যদিকে জেনেসিস লেখা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকে যখন ইহুদীরা ব্যাবিলনীয়দের হাতে বন্দী ছিল। ব্যাবিলনীয়রা তখনকার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ছিল। তখনকার সেরা বৈজ্ঞানিক মতবাদগুলো ইহুদীরা জেনেসিসে ঢুকায়, কিন্তু গত দুই বা আড়াই হাজার বছরে আমরা অনেক কিছু জেনেছি, আর বাইবেলের কথা আক্ষরিকভাবে বিশ্বাস করা আর বাইবেলের বিজ্ঞান মেনে নেয়া যৌক্তিক না। আমি জানি বাইবেল বিশারদরা মনে করেন বাইবেলের সবকিছুই ঈশ্বরের কথা, সতর্ক আর নির্ভুল একজন শ্রুতিলেখককে দেয়া, যেখানে সময় বা উপমা বা রূপকের কোনো ব্যাপার নাই- সব আক্ষরিক সত্য। আমি জানি মানুষ এটা ভাবে। আমার কাছে এটা অসম্ভব মনে হয়। আমি মনে করি বাইবেল পড়ার সময় আমাদের নিজের মাথাও একটু খাটানো উচিত। বাইবেলে অনেক ভালো জিনিস আছে। আমি ঘটনাক্রমে বলছি। যেখানে ধর্ম বৈজ্ঞানিক হওয়ার অভিনয় করে না সেখানে আমার মনে হয়ে ভালো চিন্তার ব্যাপারে আমাদের খোলা মন রাখা উচিত। আমার মনে হয় না আপনি “হয়” থেকে “হবে” বের করতে পারেন, তাই বিজ্ঞান আমাদের বলে না আমাদের কিভাবে আচরণ করা উচিত, যদিও বিজ্ঞান ভিন্ন ভিন্ন আচরণের কারণের ব্যাপারে কথা বলে। সেখান থেকে আমরা আমাদের আইনগত  ব্যাপারগুলো সাজিয়ে নিয়েছি। তো ধর্মের উপর সবার এমন আক্রমণ করাটা আমার মনে হয় বোকামিই হবে। এর মানে কিন্তু এই না যে বাইবেলের আক্ষরিক অনুবাদকে আমরা সংশয়বাদের নজরে দেখতে পারবো না, আমার মনে হয় এটা খুব ভালো বুদ্ধি। কিন্তু এটা করা হচ্ছে, গত এক শতক ধরে বাইবেল বিশারদরাই এটা করছেন। আমার মনে হয় না বাইবেলকে সন্দেহ নিয়ে পরীক্ষা করতে কোনো বিশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে। অন্যান্যরা খুব ভালোভাবেই কাজটি করে যাচ্ছেন।

আমি আশা করবো এই মধ্য অবস্থান আপনার প্রশ্নের উত্তরের চেয়ে বেশী দূরে অবস্থান করছে না, কিন্তু আমি অবশ্যই মনে করি না ধর্ম ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে। আমি মনে করি না যে কোনো কিছুই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা উচিত। আমাদের উচিত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করা। বিল অফ রাইটসে মূল কথাই এটা। আর এই চিন্তায়ই, আরো অনেক চিন্তায়ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান, বিশেষ করে বিল অফ রাইটস, বিশেষ করে প্রথম সংশোধনী আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে একে অন্যের সহায়ক। দুইটাই কর্তৃপক্ষের কথা শুনতে বাধ্য হওয়ার বিপদকে বুঝে।

****

Comments

আপনার আরো পছন্দ হতে পারে...

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
জানান আমাকে যখন আসবে -
guest
2 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
ইব্রাহীম রিয়াদ
8 বছর পূর্বে

এক কথায়, অসাধারণ ভালো অনুবাদ করেছেন। কার্ল সাগান সম্পর্কে কি বলবো??? শালা মাল একটা 🙂

ফরহাদ হোসেন মাসুম
Reply to  ইব্রাহীম রিয়াদ
8 বছর পূর্বে

সেগান* – উচ্চারণটা ফেইসবুকের মত, সেইগান। আসুন, অন্তত সেগান লিখি।

2
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x