জ্যোতির্বিজ্ঞান ক্যাম্প ২০১৭

গত সপ্তাহান্তে শুক্রবার ও শনিবার (১৩ – ১৪ অক্টোবর, ২০১৭) ঢাকার অদূরে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবনে উদযাপিত হলো জ্যোতির্বিজ্ঞান ক্যাম্প। এই বছরের বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ (World Space Week) পালিত হয়েছিল ৪ থেকে ১০ অক্টোবর। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানপ্রেমী অনুসন্ধিৎসু মানুষেরা বিভিন্নভাবে পালন করেছে, আর তাদের দলে যোগ দিতে বাংলাদেশেও সপ্তাহের শেষে দুই দিনের ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এই ক্যাম্পের আয়োজনে সহযোগী হিসেবে ছিল বিজ্ঞানযাত্রা‘র দলও, আমাদের ফেসবুক পাতা ও দল থেকে আগেভাগেই সদস্য ও অনুসারীদের জানানো হয়েছিল এই উদ্যোগের কথা। সে আওয়াজেই সাড়া দিয়েছেন অনেকে। সব মিলিয়ে প্রায় তিরিশ চল্লিশ জন একত্রিত হয়েছিলাম। মূল ক্যাম্পটির উদ্যোগে ছিলেন একেবারেই তরুণ শিক্ষার্থীদের একটি দল। এদের মাঝে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাই বেশি। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসা সকলের একটাই মিল, তারা সবাই মহাকাশের বিস্তৃত বৈচিত্র্যকে ভালোবাসেন।

প্রাচীন কাল থেকেই রাতের আকাশে অজস্র তারার দিকে তাকিয়ে মানুষ এর রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা। পৃথিবীর বুকে আমাদের পূর্বপুরুষরা যখন গুটি গুটি পায়ে পাথর ঠুকে আগুন জ্বালাতে শিখেছে কিংবা গুহার দেয়ালে চিত্রশিল্প এঁকে ইতিহাস বর্ণনা করেছে, তারও আগে থেকেই রাতের তারাদের দিকে তারা প্রবল আগ্রহ নিয়ে তাকাতো। সেসব তারা দেখে তারা দিক চিনতো, ঋতু চিনতো, আর নানান রকম গল্প-কথার জন্ম দিতো। তাদেরই উত্তরসূরীরা সেসব রহস্যময় প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছে। রহস্য আর নেই। আমরা জানি এইসব তারাদের পরিচয়। এই ক্যাম্পের মূল উদ্দেশ্যও ছিল এটাই – পৃথিবীর বুকে বাস করেও আমরা কীভাবে এসব তারাদের কাছাকাছি হতে পারি তার চেষ্টা করা।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকাল দশটা থেকে ক্যাম্প শুরু হলো। সকাল থেকেই একে একে সবাই ভবনে আসতে শুরু করলেন। উদ্যোক্তারা তো আগে থেকেই ছিলেন, কেউ কেউ অতি উৎসাহে সকাল আটটারও আগে এসে চারপাশ ঘুরে দেখে সময় কাটাচ্ছিলেন। আমি যদিও কিছুটা দেরিতে পৌঁছেছি। তবে সময়ের কাঁটা তো আর কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাই যারা এসে পৌঁছেছেন, তাদের নিয়েই ক্যাম্প শুরু হয়ে গেল। দিন-রাতব্যাপী অনুষ্ঠান সূচিতে অনেকগুলো ক্লাস বা লেকচার নেয়া হয়েছে। ফাঁকে ফাঁকে অন্যান্য কার্যক্রম ছিল।

সকালের ক্লাসের বিষয় ছিল ইন্টারস্টেলার বিজ্ঞান। ক্রিস্টোফার নোলানের বানানো বিখ্যাত চলচ্চিত্র ইন্টারস্টেলারের নাম অনেকেই শুনে থাকবেন। এর মূল কাহিনী হলো মহাকাশযাত্রা নিয়ে, এমন এক ভবিষ্যতের গল্প যে সময় পৃথিবীর বুকে ভুট্টা ছাড়া আর কোন ফসল জন্মায় না। মানুষ অনাহারে স্বল্পাহারে দিন গুনছে অনিবার্য মৃত্যুর। কারণ ভুট্টার ফলনও বন্ধ হয়ে গেছে খাদ্যের অভাবেই প্রাণিজগত ধ্বংস হয়ে যাবে। এজন্য মানুষের ভবিষ্যৎ বাসস্থান খুঁজতে মহাকাশে রওনা দেয় একদল নভোচারী বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী। এই ছবির পেছনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে এবারের নোবেলজয়ী পদার্থবিদদের একজন ড. কিপ থর্ন কাজ করেছিলেন। ছবির গল্পের এক পর্যায়ে একটি অতিপ্রকাণ্ড কৃষ্ণগহ্বর দেখানো হয়েছিল। দ্বিমাত্রিক পর্দায় কীভাবে এই কৃষ্ণগহ্বরকে ফুটিয়ে তুলতে হবে সে বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্দেশনা দিয়েছিলেন থর্ন। এছাড়াও দেখানো হয়েছে ওয়র্মহোল বা কীটগহ্বরের ভেতর দিয়ে মহাকাশযান যাওয়ার দুর্দান্ত একটি দৃশ্য। দেখানো হয়েছে কৃষ্ণগহ্বরে পড়ে যাওয়া মানুষ এক কাল্পনিক চার বা পাঁচমাত্রার জগতে চলে এসেছে। এই ছবি বানানোর পেছনে কাজ করতে করতেই আস্ত আস্ত দুইটা গবেষণা প্রবন্ধও ছাপিয়ে ফেলেছিলেন। এই ক্লাসে সেসবের খুঁটিনাটি, সময় পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত ইত্যাদি নিয়ে খুব চমৎকার আলোচনা হয়েছিল। আফসোসের বিষয়, এই আলোচনায় থাকতে পারি নি দেরিতে আসার কারণে। শেষে অন্যের মুখে ঝাল খেয়ে উপস্থিতদের প্রতিক্রিয়া শুনেই থাকতে হলো। উপস্থিতদের সকলের জন্যেই রাতে থাকার ব্যবস্থা ছিল, যে যেমনভাবে থাকতে চায় – কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ বন্ধুবান্ধবসহ ঘরে। কেউ কেউ আমার মতো সপরিবারে এসেছিল। ঘরে গিয়ে একটু সুস্থির হয়ে বাকি সবার সাথে দুপুরের খাওয়ায় যোগ দিলাম।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ আফরিন তানজিলা

খাওয়া-দাওয়ার একটু পরেই পরের ক্লাস – এবারের বিষয় সূর্য ঘড়ি। ক্লাস নিলেন শিবলী। সূর্য ঘড়ি কীভাবে কাজ করে তা বিস্তারিত বুঝিয়ে দিলেন। এত সহজে একটা A4 কাগজ দিয়েই যে এই ঘড়ি বানানো সম্ভব তা আগে জানতাম না। বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত বলে ঠিক কোনদিকে কত ডিগ্রি বাঁকিয়ে ঘড়িটা বানাতে হবে তাও খুব সহজ করে হাতে-কলমে বুঝিয়ে দিলেন। একটা ঘড়ি বানানোই ছিল। সেটাকে জানালার পাশে রেখে আমরা দেখলাম আসলেই সঠিক সময় দিচ্ছে! তখন বাজে বিকেল চারটার মতো, যা একদম মিলে গেল। এর পরে আমাদেরকে টেলিস্কোপ চিনিয়ে দেখালেন ফারহান। স্বভাবে বেশ লাজুক এই তরুণ আগে খুব বেশি দর্শকদের সামনে বক্তব্য দেন নি। তাই সজীব এসে একটু উপস্থাপনা করলো। আমরাও ফারহানকে উৎসাহ দিলাম। তারপর বেশ স্বচ্ছন্দেই তিনি কীভাবে টেলিস্কোপ দেখতে হয়, রাতে কী কী দেখা যাবে এসব নিয়েই কথা হলো। সন্ধ্যা সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত শনি গ্রহ দেখা যাবে, আর রাতে একটা থেকে দুইটার মধ্যে দেখা যাবে অন্যান্য নক্ষত্রমণ্ডল।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ আফরিন তানজিলা

বিকেলের ক্লাসের পর কিছুক্ষণের বিরতি। বাইরের চমৎকার পরিবেশে আমরা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পুরো এলাকা ঘুরতে বের হলাম। চারপাশে প্রচুর গাছপালা, ইট বিছানো মনোরম রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম পাশেই একটা স্কুল। স্কুলের মাঠে ছেলেপুলেরা প্রবল উৎসাহে ফুটবল খেলছে। আমাদেরই কেউ কেউ দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। হাজার হোক, ফুটবলের আকর্ষণ এড়ানো কঠিন। মাঠ পেরুতেই গ্রাম গ্রাম এলাকা! দুপাশে একটু দূরে দূরে পুকুর, আর বাড়িঘর দেখা যাচ্ছে গাছপাতার আড়ালে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনতে শুনতে সন্ধ্যা নেমে এলো চারপাশে। শহরের আলোভরা সন্ধ্যা না, গ্রামের নরম অন্ধকার ঘেরা সন্ধ্যা। আমরাও ক্যাম্পে ফিরলাম।

সন্ধ্যার পরে আরেক ক্লাস শুরু হলো। ঘন্টাখানেকের এই ক্লাসে আকাশের বিভিন্ন নক্ষত্র মণ্ডলের পরিচিতি দিলেন ওমর ফারুক। অতীতে এত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি আবিষ্কারের আগে মানুষ কীভাবে তারা দেখতো, দেখে কী কী বের করতো, সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত বললেন তিনি। খালি চোখে তারা দেখে বিভিন্ন আকৃতি আমরা কেন বের করতাম, বা সেগুলো এখনো সেরকমই আছে কিনা নাকি বদলে গেছে, তাই জানলাম। এর পরে সাতটা বাজতেই আমরা ভবনের ছাদে উঠে পড়লাম। টেলিস্কোপ ততক্ষণে তৈরি, আমরাও সুশৃঙ্খলভাবে একে একে দাঁড়িয়ে গেলাম শনি গ্রহ দেখার জন্য। ভবনের চারপাশেই গাছপালা, শুধু দুয়েকটা তিন-চার তলা ভবন আছে দূরে দূরে। এজন্য অন্ধকারে আকাশভরা নক্ষত্ররাজি খালি চোখেই দেখা যাচ্ছিল। টেলিস্কোপে চোখ দিলে আরো স্পষ্ট হয়ে গেল বলয়সহ শনি গ্রহটি। এর ফাঁকে ফাঁকে লেজার পয়েন্টার দিয়ে আকাশে মিটমিট করতে থাকা বিভিন্ন নক্ষত্র আর নক্ষত্রমণ্ডল চেনালেন ওমর ফারুক। ছাদের ওপর ঘুটঘুটে অন্ধকারে মৃদুমন্দ বাতাসে আড্ডাও জমে উঠলো কিছুটা।

শনিগ্রহের বলয় দেখে আমরা আবার নিচে নামলাম। এবার ডিনারের পালা। ডিনার শেষে কিছুক্ষণ আবারও বিরতি। হাল্কা গল্পগুজব চলতে থাকলো। অনেকে সন্ধ্যার পরে ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন, তাদের সাথেও অল্পবিস্তর পরিচয় হলো। এরপর মধ্যরাতে দেখি কুইজ! এতক্ষণ যে তারা চিনলাম, সেই সব তারার মণ্ডল নিয়ে পরীক্ষা। ছেলেমেয়েবুড়ো সবাই মিলে ঝটপট মাথা গুঁজে কুইজ দেয়া শুরু করলো। কুইজের কিছুক্ষণ পর তাদেরকে পুরষ্কারও দেয়া হলো। সবার জন্য বই আর বিজ্ঞানচিন্তা পত্রিকা। পুরষ্কার বিতরণীর সময় দেখা গেল বড়দের টপকে দুই ক্ষুদে কিশোর প্রথম পাঁচে ঢুকে পড়েছে! আমরা সবাই তুমুল হাততালি দিয়ে তাদের এই কৃতিত্বে সামিল হলাম। এই বয়সেই তারা মহাকাশ আর বিজ্ঞান নিয়ে এত উৎসাহী হলে বড় হয়ে নিশ্চয়ই আরো অনেক অনেক দূর যাবে। প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারীকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। একজন বিজয়ী কনফারেন্স রুমের ঠিক বাইরে জানালার পাশে বসে ছিলেন। তার নাম ডাকা হচ্ছে শুনে জানালা খুলেই (!) রুমে ঢুকে পুরষ্কার নিলেন! এরকম নানান টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো অনেকদিন মনে থাকবে।

এর পরে আমরা আবার ছাদে চলে আসলাম। তারা দেখা পর্ব চলতে থাকলো। রাত দুইটার দিকে উঠলো ক্ষয়িষ্ণু হলুদ একটা চাঁদ। এইটা নতুন চাঁদ না পুরাতন চাঁদ, সেটা নিয়েও একটু মজা হয়ে গেল। একজন মজা করে বললেন যে পাকিস্তানের পতাকার মতো চাঁদ হলে সেটা ক্ষয়িষ্ণু হয়। পাকিস্তান বলে কথা! এর মাঝে ঝালমুড়ি চলে আসলো। সবাই মিলে ফানুস ওড়ালাম আমরা। অনেক বাতাস বইছিল বলে ফানুসে আগুন ধরিয়ে ওড়াতে গিয়ে বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি হলো। একটা ফানুস এই বাতাসের ধাক্কায় উঠতেই পারলো না। তবে বাকিগুলো ছাড়ার সাথে সাথেই উড়ে দূরে দূরে চলে গেল দু’ মিনিটের মধ্যেই। একপাশে আবার কয়েকজন মিলে চাঁদের আকৃতিতে প্রদীপ জ্বালাচ্ছিল। মৃদু আলো-ছায়ায় গিটার বাজিয়ে গানবাজনা শুরু হলো। এই আড্ডা চললো ভোর পর্যন্ত। আমি যদিও তার আগেই ক্ষান্ত দিয়েছি, ঘুমে-ক্লান্তিতে কিছুটা বিশ্রাম নেয়া দরকার ছিল।

তবে খুব ভোরে উঠে ছাদে গিয়ে দেখি চারিদিক চুপচাপ শান্ত সুনিবিড়। আকাশে তখন ঘন মেঘ, সূর্যের আভা তবুও কিছুটা চলে আসছে। হালকা শীত শীত আমেজের বাতাস দিচ্ছে। মনটাই ভাল হয়ে গেল। নিচে গিয়ে দেখি শেষ ক্লাস ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে। পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি ও মানুষের বিবর্তনের ওপর ক্লাস নিলেন উচ্ছ্বাস। এমন তথ্যবহুল এবং একইসাথে প্রাণবন্ত লেকচার খুব কমই শুনেছি। প্রায় সবগুলো বিষয়ে কিছুটা জানাশোনা ছিল বলে বুঝতেও সুবিধা হয়েছে। এমনকি ছোট বাচ্চারাও বুঝবে, এমনভাবেই লেকচারটা দিয়েছিলেন তিনি। শ্মশ্রুময় পাঞ্জাবি-পরিহিত উচ্ছ্বাসকে দেখে ধারণা করা মুশকিল যে তার চিন্তাভাবনা এতটা পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। এজন্যেই হয়তো শেখ সাদীর সেই পোশাকের গল্পের শিক্ষাটা এত প্রয়োজন। এখনকার সময়ে আমরা যেমন যে কাউকে তার চেহারা-সুরত দেখেই বিচার করে ফেলি, সেটা যে কতটা ভুল তা আবারও প্রমাণিত হলো। লেকচারের শেষদিকে উচ্ছ্বাস নিজেই ধর্মবিশ্বাসের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করলেন। স্পষ্ট ভাষায় বললেন যে তিনি নিজে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশোনা করেছেন, নিজ চোখেই দেখেছেন অন্ধবিশ্বাস কতটা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ব্যক্তিগত অন্ধবিশ্বাস দূর করতে হবে প্রত্যেককেই। এমনকি যে কোন বিশ্বাসকেই বিজ্ঞানের যুক্তির কাছে হার মানতে হবে। ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কারণে বিজ্ঞানের প্রমাণিত সত্যকে ভুল মনে করা যাবে না। যেখানে বিজ্ঞান প্রমাণ করে দিচ্ছে যে মানুষের বিবর্তন ঘটেছে, ঘটছে এবং ঘটবেই, সেখানে আর দ্বিমতের কোন অবকাশই নেই। এমনকি হালকা চালে মজা করে উচ্ছ্বাস এটাও বললেন যে অমন যদি কোনকিছু ধরে নিতেই হয়, তাহলে কোয়ান্টাম ফিজিক্স আর জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটির স্ববিরোধী ব্যাপার-স্যাপারের বেলায় ধরে নেন। বিবর্তনের সত্যতার ব্যাপারে এমন অলৌকিক কিছু ধরে নেয়ার কোন সুযোগই নেই। লেকচারের পরপরই সকালের নাশতা খেতে খেতে এসব ব্যাপার নিয়েই গল্পগুজব হলো।

অবশেষে আরেকটি কুইজ হয়ে পুরো ক্যাম্পের আনুষ্ঠানিকতার শেষ হলো। সবাই ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিচে নামলাম। ক্যাম্পের ব্যানার আর বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ছবি তুললাম। সেলফিও নিয়ে নিলাম। এবার বিদায়ের পালা। যে যার ডেরায় ফিরে চললাম।

এই ক্যাম্পে রাত জেগে তারা দেখার অভিজ্ঞতাটুকু একান্তই ব্যক্তিগত সম্বল। ওটা ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন। প্রকৃতি থেকে আলাদা থাকতে থাকতে আমাদের অহঙ্কার আর আত্মম্ভরিতা বেড়ে যায়। এরকম ক্যাম্পে প্রকৃতি আর আকাশের মাঝে আসলে সেই মেকি অহমিকা ভেঙে যায়। এই মহাবিশ্বে আমরা তুচ্ছ ও নগণ্য। আমাদের জন্যে এগুলো তৈরি হয়নি, বরং আমরা এসবের অতি ক্ষুদ্র একটু অংশের বেশি না। এই বোধ ফিরে ফিরে আসে। অথচ এ জ্ঞান ভুলে আমরা প্রকৃতিরই ক্ষতি করছি। সকালের ক্লাসের বক্তা উচ্ছ্বাসের মতে, হোমো স্যাপিয়েনরা হলো সবচেয়ে নিষ্ঠুর প্রজাতির প্রাণি। এর ফলাফলও আবার আমাদেরই ভোগ করতে হচ্ছে। যথেচ্ছাচারে নিজেদের আবাস বিনষ্ট করে দিয়েছি আমরা। অচিরেই হয়তো বিলুপ্তিও হতে পারে আমাদের একমাত্র নিয়তি। প্রকৃতিই আমাদের তখন প্রত্যাখ্যান করবে অবলীলায়। সেটা ঠেকাতেই আমাদের উচিত আরো বেশি মানুষকে নিয়ে আরো ঘন ঘন এমন ক্যাম্পের উদ্যোগ হাতে নেয়া।

Comments

আপনার আরো পছন্দ হতে পারে...

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
জানান আমাকে যখন আসবে -
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x