নিকোলাস কোপার্নিকাস প্রথম আমাদের বলেছিলেন আমাদের বিশেষত্ব কিছুই নাই। সত্যটা অনেক কঠিন ছিল। তবে কোপার্নিকাস যে ক্ষেত্রের কথা বলেছিলেন সে ক্ষেত্রের বিচারে কথাটা সত্য। জানা মহাবিশ্বে প্রায় ৫৬ ট্রিলিয়ন গ্রহ আছে, প্রতি একজন মানুষের বিপরীতে ৮,০০০ গ্রহ আছে। সেই বিবেচনায় “বিশেষত্ব” এমন একটা আভিজাত্য যার জন্য আমরা যোগ্য না। হয়তো কেউই না। তবে অন্য হিসাবে আপনি একটা “মির্যাকল”, আমরা সবাই একেকটা অতি অসম্ভব মির্যাকল। এই লেখার শেষে আপনারা নিজেদের বিশেষত্ব খুঁজে পাবেন।
মির্যাকল হচ্ছে এমন একটা ঘটনা যা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব, তারপরও এগুলো ঘটে যায়। আবারো বলে নিচ্ছি- মহাবিশ্বের কাছে আপনার অস্তিত্ব কোনো ব্যাপার না, আপনি আমি আমরা শুধু ম্যাটারের একপ্রকার গঠন, অন্যান্য গঠনের চেয়ে আলাদা কিছুই না।
তবে আপনার অস্তিত্ব একটি মির্যাকল। কিভাবে? আলী বিনাজীর ব্যাখা করেন এভাবে-
ধরে নিই আপনার পিতামাতা ১৫-৪০ বছর বয়সের মধ্যে প্রতিদিন বিপরীত লিঙ্গের ১ জন করে মানুষের সাথে পরিচিত হচ্ছেন। সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১০,০০০ জনে। আবার মনে করি ১৫-৪০ বছর বয়সে তাঁরা পৃথিবীর ২০ বছর আগেকার (তাঁদের যৌবনকালের সময়কার) জনসংখ্যার ১/১০ মানুষের সাথে দেখা করা সম্ভবপর ছিল। ২০-৩০ বছর আগে পৃথিবীর জনসংখ্যা ধরে নিই ৪ বিলিয়ন, যার ১/১০ হচ্ছে ৪০০ মিলিয়ন। এই ৪০০ মিলিয়নের ৫০% ধরে নিই বিপরীত লিঙ্গের ছিলেন। তো তাঁদের দেখা হওয়ার সম্ভাব্যতা-
(১০৪/২) x ১০৮
=২ x ১০–৮ বা ২০,০০০ এ ১বার।
আপনার পিতামাতার দেখা হওয়ার সম্ভাব্যতা ২০,০০০ এ ১ বার।
এখন,
তাঁদের পরিচিত হওয়ার সম্ভাব্যতা ধরি ১০ বারে ১ বার। (দেখা হলেই যে পরিচিত হওয়া যায় তা কিন্তু নয়। 😉 )
পরিচিত হওয়ার পর তাদের ২য় সাক্ষাতের সম্ভাবনা ধরি আরো ১০ বারে ১ বার।
তাঁদের বিয়ে হওয়ার সম্ভাব্যতা আরো ১০ বারে ১ বার।
বিয়ে হওয়ার পর সন্তান নেয়ার সম্ভাবনা ২ বারে ১ বার।
দেখা হওয়া থেকে সন্তান নেয়ার সম্ভাবনা প্রতি ২,০০০ বারে ১ বার।
আপনার অস্তিত্বের সম্ভাবনা ইতিমধ্যে ৪০ মিলিয়নে (২০,০০০ x ২,০০০) ১ বার হয়ে গেছে।
এখন আমরা বিস্ময়কর হিসাবটা করবো-আপনার জ্বিনের ৫০% বহন করা শুক্রাণুর সাথে আপনার জ্বিনের ৫০% বহন করা ডিম্বাণুর মিলিত হওয়ার সম্ভাবনা হিসাব করবো।
একজন পুরুষ তার জীবনে প্রায় ১২ ট্রিলিয়ন শুক্রাণু উৎপাদন করতে পারেন, মহিলারা ১০০,০০০ ডিম্বাণু উৎপাদন করতে সক্ষম। বিভিন্ন কারণ বিবেচনায় আমরা ৪ ট্রিলিয়ন শুক্রাণু আমাদের হিসাবে নিবো।
তো আপনার জন্য দায়ী শুক্রাণু-ডিম্বাণুর মিলিত হওয়ার সম্ভাবনা-
১/ (১০০,০০০) x (৪ ট্রিলিয়ন)
= ১/ ১০৫ x (৪ x ১০১২)
= ৪ x ১০১৭
বা ৪০০ কোয়াড্রিলিয়নে ১ বার।
সঠিক শুক্রাণু–ডিম্বাণুর মিলিত হওয়ার সম্ভাবনা– ৪০০ কোয়াড্রিলিয়নে ১ বার।
কিন্তু এতো মাত্র শুরু। আপনার অস্তিত্বের শ্রেয় যায় আরেকটি অসাধারণ এবং ধারাবাহিক ঘটনায়। আপনার প্রত্যেক পূর্বপুরুষের বংশবিস্তার করা পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভাব্যতা- আর পূর্বপুরুষ বলতে দাদা পরদাদা না, এমন কি হোমো ইরেকটাস হোমো হাবিলিসও না, সেই ৪ বিলিয়ন বছর আগে শুরু হওয়া প্রাণ পর্যন্ত বোঝায়। আপনি বিবর্তনের একটা শাখা যা গত চার বিলিয়ন বছর ধরে চলে আসছে।
তাও হিসাবে সুবিধার্থে আমরা শুধু হোমিনিডদের সহ হিসাব করবো। হোমিনিডরা (মানব বা মানবসদৃশ প্রাণী) প্রায় ৩ মিলিয়ন বছর ধরে আছে, প্রত্যেক প্রজন্ম যদি ২০ বছর করে হিসাব করি তবে আমরা পাচ্ছি ১৫০,০০০ প্রজন্ম। ধরে নিই হোমিনিডদের ইতিহাসে বংশধররা বংশবিস্তার করা পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভাব্যতা ৫০%। এই হিসাবে আপনার প্রত্যেক পূর্বপুরুষের বংশবিস্তার করার সম্ভাবনা ১০৪৫,০০০ বারে ১ বার।
এখানেই শেষ নয়- শুক্রাণু-ডিম্বাণুর হিসাবটা মনে আছে? আপনার পূর্বপুরুষদের ১৫০,০০০ প্রজন্মও তো সেই সম্ভাব্যতার হিসাবের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, তাই না?
আপনার জন্ম পর্যন্ত আসতে আপনার প্রত্যেক পূর্বপুরুষের সঠিক শুক্রাণু সঠিক ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়ার সম্ভাব্যতা ১২০০ ট্রিলিয়নে ১, আবারো হিসাবের সুবিধার জন্য আমরা সংখ্যাটাকে ১০০০ ট্রিলিয়ন বা ১ কোয়াড্রিলিয়ন ধরে নিচ্ছি।
তো ১৫০,০০০ পূর্বপুরুষের জন্য সে সংখ্যাটা দাঁড়ায়- আপনার পিতামাতার শুক্রাণু ডিম্বাণু মিলিত হওয়ার সম্ভাব্যতার ১৫০,০০০ গুণ। বা-
[৪ x ১০১৭]১৫০,০০০
বা ১০২,৬৪০,০০০
যা হচ্ছে ১ এর পর ২,৬৪০,০০০ শূন্য বসালে যে সংখ্যা পাবেন ঠিক ততোবারে একবার।
সবশেষ মোট সম্ভাব্যতা জানতে শুধু এই সংখ্যাটিকে ১০৪৫,০০০, ২০০০ আর ২০,০০০ দিয়ে গুণ করলেই হবে, সহজ।
(১০২,৬৪০,০০০) x ( ১০৪৫,০০০) x (২,০০০) x (২০,০০০)= ১০২,৬৮৫,০০৭ বা ১ এর পর ২৬ লক্ষ ৮৫ হাজার শুন্য বসালে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে সেটার বিপরীতে একবার। বা- সেটাকে শূন্য ধরে নেয়া যায়।
To put things in perspective – আপনার শরীরে গড়ে অণু আছে ১০২৭ টি, জানা মহাবিশ্বে অণুর সংখ্যা ১০৮০ টি।
বিজ্ঞান কি নিজের বিরুদ্ধাচারণ করছে? ঠিক সেটা না, বিজ্ঞানের প্রতিপাদ্য ঠিকই আছে- আমাদের প্রজাতি বা গ্রহের কোনো বিশেষত্ব নাই। আমরা শুধু সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করেছি, যার সিংহভাগ বিজ্ঞানসম্মত।
তো আপনার মধ্যে অনেকখানি বিশেষত্ব আছে- একই পরিমাণ বিশেষত্ব ছিল বিন লাদেন বা হিটলারেরও। এই বিশেষত্বকে কিভাবে ব্যবহার করবেন সেটা আপনার ব্যাপার। কার্ল সেগানের Pale Blue Dot এর একটি উক্তির অংশবিশেষ মনে করিয়ে দেয়- “…আমার কাছে এটা অন্যদের সাথে দয়ালু ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তাকে বিশেষায়িত করে…”। তবে এই হিসাব সবাইকে দিতে যাবেন না, কারণ ব্যাখ্যা করার মাঝপথে হয়তো সেই ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়বেন। তাছাড়া এই হিসাব ব্যবহার করে কাউকে ছোট করতে যাবে না্ কারণ বস্তুত তিনিও আপনার মতই বিশেষ!
***এটি বৈজ্ঞানিক সত্য না, এটি বড়জোর একটি পরিসংখ্যান।
onek onek valo laglo.
but page background ta khub disturbing.