Coprophagia অথবা Coprophagy বলতে বোঝায়, খাদ্য হিসেবে মল বা পায়খানা গ্রহণ করা।
অনেক প্রাণীর সাধারণ খাদ্যাভ্যাসে মল উপস্থিত থাকে আবার অনেকে নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে মলকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এই খাওয়াও আবার বিভিন্নভাবে ঘটে। যেমন – অন্য প্রজাতির মল খাওয়া, স্বজাতির মল খাওয়া বা নিজের মল খাওয়া।
শুনতে বিচ্ছিরি লাগলেও কেন প্রাণীরা মল খায়, সেটার পেছনের কারণগুলো যথেষ্ট যৌক্তিক! নীচের বর্ণনাটি পড়লে ব্যাপারটা স্পষ্ট বোঝা যাবে। যেমন –
অমেরুদণ্ডী প্রাণী
মলভূক পোকামাকড়রা বড় বড় প্রাণীদের মল খায় এবং পুনরায় হজম করে। কারণ এসব মলে প্রচুর পরিমাণে অর্ধ পরিপাককৃত খাদ্য থাকে। সবচেয়ে পরিচিত মলভূক প্রাণী হল মাছি।
মেরুদণ্ডী প্রাণী
মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে যে শূকর মল খায়, সেটা কমবেশী সবাই জানি। তবে আশ্চর্য হবেন শুনলে যে বাছুর, খরগোশ, গরিলা, শিম্পাঞ্জী, উল্লুক, বানর এবং গিনিপিগও খাদ্য হিসেবে মল গ্রহণ করে। এমনকি হাতি, কোয়ালা, পান্ডা এবং জলহস্তীর বাচ্চাকাচ্চারাও মল খেয়ে থাকে।
– শূকর তৃণভোজী প্রাণীর মল খেয়ে থাকে কারণ সেখানে প্রচুর পরিমাণে অর্ধ পরিপাককৃত খাদ্য উপাদান থাকে।
– আমেরিকায় বাছুরকে মুরগীর মল খেতে দেওয়া হয় কারণ এতে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন থাকে এবং এর দামও কম। যদি ৭১°C তাপমাত্রায় মুরগীর মলকে উত্তপ্ত করা হয়, তাহলে সেটা বাছুরের খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ হয়।
– খরগোশ নিজের মলই গ্রহণ করে থাকে। এদের মল আবার দুই প্রকার – একটা স্বাভাবিক মল, আরেকটা অর্ধ পরিপাককৃত খাদ্যের নরম দলা। দ্বিতীয় প্রকার মলকে ত্যাগ করার সাথে সাথে আবার খেয়ে ফেলা হয়। কারণ, এই মল থেকে তারা ভিটামিন বি১২ শোষণ করে। মনে প্রশ্ন আসতে পারে, পেটে থাকতেই কেন এই ভিটামিন শোষণ করে নাই হারামিগুলো? উত্তর হল, এই ভিটামিনটি খরগোশের অন্ত্রে কোবাল্ট লবণ হতে তৈরি হয়। আর যেহেতু খরগোশের অন্ত্র ভিটামিন বি১২ শোষণ করতে সক্ষম নয়, তাই মলের মাধ্যমে এই ভিটামিন দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়। পুনরায় মল গ্রহণের মাধ্যমে তারা মলকে পাকস্থলীতে পাঠায় যেন পাকস্থলী ঐ মল থেকে ভিটামিন বি১২ শোষণ করে নিতে পারে।
– হাতি, কোয়ালা, পান্ডা এবং জলহস্তীর বাচ্চাকাচ্চারা তাদের মা অথবা দলের অন্যান্যদের মল খেয়ে থাকে। কারণ জন্মের সময় এইসব বাচ্চার অন্ত্রে শাকসবজি হজম করার মতো ব্যাকটেরিয়া থাকে না। ফলে শাকসবজি হতে কোন পুষ্টি উপাদান শোষণ করার ক্ষমতাও তাদের থাকে না। হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এই ব্যাকটেরিয়াগুলো উপস্থিত থাকে মলে। তাই ঘাস-লতাপাতাকে হজম করার জন্যেই এরা মল খায়।
– গরিলারা নিজের মলের সাথে সাথে অন্য গরিলার মলও খেয়ে থাকে। একই ব্যাপার দেখা যায় শিম্পাঞ্জীদের ক্ষেত্রে। ধারণা করা হয়, যেসব বীজ, শস্য বা দানা তারা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, অন্ত্রে সেগুলো সম্পূর্ণভাবে হজম করে সবটুকু পুষ্টি উপাদান প্রথমবারে শোষণ করা সম্ভব হয় না। ফলে মলের মাধ্যমে বেরিয়ে যাওয়া বীজ, শস্য আর দানাকে দ্বিতীয়বার গ্রহণ করে পুনরায় সেগুলোকে হজম করে পুষ্টি উপাদান শোষণের জন্য এরা মল খেয়ে থাকে।
– গিনিপিগ আর হ্যামস্টার তাদের নিজেদের মল খেয়ে থাকে। কারণ এই মলে আছে ভিটামিন বি এবং কে। এই ভিটামিনগুলো ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে প্রাণীগুলোর অন্ত্রে উৎপন্ন হয়।
– দেহের জন্য প্রয়োজনীয় লবণ সংগ্রহের জন্য উল্লুক ঘোড়ার মল খেয়ে থাকে।
– বাঁদরকে খেতে দেখা গেছে হাতির মল।
উদ্ভিদ
ভাবছেন শুধু প্রাণীরাই এই কাজ করে? না হে, উদ্ভিদও এই অদ্ভুত উপায়ে পুষ্টি সংগ্রহ করে।
আমরা পিচার প্ল্যান্ট নামের যে মাংসাশী গাছকে চিনি, সেটা commensal প্রাণীদের মল থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে থাকে।
[commensal প্রাণীঃ যে প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য অপর একটি প্রাণীর উপর নির্ভরশীল কিন্তু অপর প্রাণীর উপর সেটি কোনো প্রভাব বিস্তার করে না]
এবার আসি মানুষের কথায়
চিকিৎসা বিজ্ঞানে মল ব্যবহার করে চিকিৎসা করার একটা গালভরা নাম আছে – Fecal bacteriotherapy। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, Clostridium difficile জীবাণুর আক্রমণে ঘটিত ডায়রিয়াকে (যেটা সহজে ভালো হতে চায় না) বশে আনার জন্য রোগীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা জীবনসঙ্গীর মল ব্যবহার করা হয়।
নাক দিয়ে নল ঢুকিয়ে, মলদ্বার দিয়ে অথবা ক্যাপসুলের মাধ্যমে এই মল রোগীর দেহে প্রবেশ করানো হয়। উদ্দেশ্য হল – অন্ত্রে পুনরায় স্বাভাবিক গাট ফ্লোরার (যারা আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া হিসেবে পরিচিত) উৎপাদন ঘটানো, যেন এরা ক্লস্ট্রিডিয়ামকে ধ্বংস করতে পারে।
মানুষের অন্ত্রনালীতে মল প্রবেশের মাধ্যমে বহিরাগত ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে দেওয়ার রীতিটি ulcerative colitis নামক রোগের ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়। যখন রোগীর নিজস্ব গাট ফ্লোরার সংখ্যা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহারের কারণে অস্বাভাবিক হারে কমে যায়, তখন এই উপায়ে গাট ফ্লোরার সংখ্যা বাড়ানো হয়।
মজার কিছু তথ্য
বেদুঈনরা বিশ্বাস করে, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত আমাশয়ের জন্য উটের তাজা-গরম মল খাওয়া খুবই উপকারী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আফ্রিকায় অবস্থানরত জার্মান সৈন্যরা নাকি Bacillus subtilis নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ধরাশায়ী হওয়ার পর এই উপায় অবলম্বন করে পার পেয়েছিলেন!
শতাব্দী আগে, যখন রোগীর মলমূত্র পরীক্ষা করার জন্য যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হয় নি, তখন চিকিৎসকরা তাদের রোগীদের মল টেস্ট করে রোগীর অবস্থা ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করতেন।
খাদ্য চাহিদা পূরণ ব্যতীত অন্য কাজের জন্যও অনেক প্রাণী মল খেয়ে থাকে। যেমন – মা বিড়াল তার সদ্যোজাত সন্তানদের মল খেয়ে থাকে যেন শিকারীরা বাচ্চাদের খোঁজ না পায় এবং তাদের আবাসস্থল পরিষ্কার থাকে। আরো কিছু স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী আছে যারা নিজেদের মল খেয়ে চিহ্নরেখা মুছে দেয় যেন শিকারীরা তাদের অনুসরণ করতে না পারে।
সবশেষে আসি, সবচেয়ে ভয়ংকর কথায়
১৯৯৫ সালের আগে শুধুমাত্র স্কিতজোফ্রেনিয়া, চরম হতাশা এবং পাইকা (Pica) রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মল খেতে দেখা গেছে। অর্থাৎ যারা কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল, তারাই খেতো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তিরাও সেক্সুয়াল ফেটিশ হিসেবে মল খেয়ে থাকে। এসকল ব্যক্তিরা coprophile হিসেবে পরিচিত। মনোবিজ্ঞানীরা এদের সেক্সুয়ালি পারভার্ট ক্যাটাগরিতে ফেলেছেন। এদের জন্য পর্নোগ্রাফিতেও Coprophagia দেখানো হয়ে থাকে।
Very informative post.💕💕💕💕