গেইম অব থ্রোন্সের ড্রাগন গ্লাস/ অবসিডিয়ান
গেইম অব থ্রোন্স টিভি সিরিজ (এ সং অব আইস এন্ড ফায়ার বইয়ের টেলিভিশন ভার্সন) এর ড্র্যাগন গ্লাসের কথা মনে আছে? যেই ড্রাগন গ্ল্যাস দিয়েই শুধুমাত্র হোয়াইট ওয়াকারদের হত্যা করা সম্ভব (এরপর বেশী বললে স্পয়লার হয়ে যাবে তাই এইটুকই থাক) । ড্রাগন গ্ল্যাস হলো ড্রাগন ফায়ারে পাথর গলিয়ে তৈরি অস্ত্র। ড্রাগন ফায়ার হলো সবচাইতে তীব্র আগুন একমাত্র যার উত্তাপ পাথর গলাতে পারে। আবার বইয়ের কয়েক স্থানে একে জমানো আগুন (ফ্রোজেন ফায়ার) ও বলা হয়েছে
একটু জানিয়ে রাখি যে মূল বইতে ড্রাগন গ্ল্যাসের এর বদলে অবসিডিয়ান শব্দটিও ব্যবহার করা হয়েছে যে ড্রাগন গ্ল্যাস অবসিডিয়ানের তৈরি। গেইম অব থ্রোন্সে দেখানো হয় যে অবসিডিয়ান বা ড্রাগন গ্ল্যাস হল কালো রঙের কিন্তু কাচের মত চকচকে।
টিভি সিরিজে দেখানো হয়নি কিন্তু বইয়ে বলা আছে যে চিল্ড্রেন অব ফরেস্টরাই শুধু মাত্র অবসিডিয়ানের হতে অস্ত্র ও তৈজসপত্র তৈরি করতে পারতো। চিল্ড্রেন অব ফরেস্টদের জাত শত্রু ছিলো জায়ান্টরা। এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করতেই অবসিডিয়ানের তৈরি অস্ত্র বা ড্রাগন গ্ল্যাসের উদ্ভাবন করে চিলড্রেনরা।
চিল্ড্রেন অব ফরেস্ট এবং দৈত্য বা জায়ান্টরাই হলো ওয়েস্টেরসের প্রকৃত আদি বাসিন্দা। চিলড্রেন অব ফরেস্টদের সাথে প্রকৃতির একটা সুপান্যাচারাল কানেকশন ছিলো। পড়ে মানুষরা এসে সব চিল্ড্রেন অব ফরেস্টদের মেরে ফেলে বা তাড়িয়ে করে দেয় এবং বেশীর ভাগ জায়ান্টদের মেরে ফেলে এবং বাকিদের বন্দী করে দাস হিসেবে ব্যবহার করে। রবার্ট ব্যারাথিওনের ওয়েস্টরস দখলের ১২ হাজার বছর আগে প্রথম মানুষরা ওয়েস্টেরস দখল করে। চিল্ড্রেন অব ফরেস্টদের শেষ দেখা গেছে পাঁচ রাজার যুদ্ধে (The war of five kings) রবার্টের ওয়েস্টেরস দখলের ৬ হাজার বছর আগে।
এইজ অব হিরোস (Age of heros) তে বলা হয় যে প্রতি বছর চিল্ড্রেন অব দ্যা ফরেস্টরা ক্যাসেল ব্ল্যাকের ক্রো/ব্রাদারদের ১০০টি করে ড্রাগন গ্লাস দিতো হোয়াইট ওয়াকারদের হাত থেকে সুরক্ষা হিসেবে।
প্রাকৃতিক অবসিডিয়ান
প্রাকৃতিক অবসিডিয়ানের সন্ধানে আপনাদের যেতে হবে সুদূর আফ্রিকার ইথিওপিয়ায়। ইথিওপিয়ার একটা বিখ্যাত লেক, জিওয়ে (Ziway)তে। জিওয়ে লেকের পশ্চিমে অবস্থিত আগ্নেয়গিরিক রিফট উপত্যকার নাম গ্যাডেমোট্টা।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই গ্যাডেমোট্টা উপত্যকায় প্রায় আড়াই লাখ বছরের পুরোনো অবসিডিয়ানের তৈরি বর্শার ফলকের সন্ধান পান। এবং অবসিডিয়ানের তৈরি এই বর্শার ফলকই মানব নির্মিত সব চাইতে প্রাচীন কোন বস্তু। এর চাইতে প্রাচীন মানব নির্মিত কোন বস্তুর সন্ধান এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
অবসিডিয়ান হলো কালো রঙের কাচ সদৃশ বস্তু যা আগ্নেয়গিরির লাভার খুব দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যাবার ফলে তৈরি হয়।
সাধারণত লাভা ঠান্ডা হয়ে ছাই তৈরি হয়। কিন্তু কিছু লাভার কেমিক্যাল কম্পাউন্ডে সিলিকা থাকে। ওদিকে আমরা কিন্তু জানি যে সিলিকা বা বালি গলে ঠান্ডা হলে কাচ তৈরি হয়। সুতরাং যে লাভায় গলিত সিলিকা থাকে, সেই লাভা খুব দ্রুত ঠান্ডা হয়ে গঠন করে অবসিডিয়ান। কিন্তু অবসিডিয়ান আবার কাচের মত হলেও প্রায় ধাতুর কাছাকাছি কঠিন। বিশেষ বিশেষ স্থানে আঘাত করে একে ভাঙ্গা যায়। একে সহজেই ঘষে ক্ষুরের মত ধারালো করা যায়। অর্থাৎ এর বৈশিষ্ট্য হল ধাতুর মতই শক্ত এবং কাচের মত ধারালো এবং সহজেই একে ইচ্ছামত আকৃতিতে আনা যায় (পাথরকে বর্শার ফলায় পরিণত করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার এবং ধাতুর তৈরি ফলক ব্যবহারের প্রশ্নই আসেনা কারণ ধাতুর ব্যবহার অনেক পরে শুরু হয়)। ফলে আড়াই লক্ষ বছর আগের আমাদের পূর্বপুরুষরা সবচাইতে সহজে অবসিডিয়ান হতে ধারালো অস্ত্র তৈরি করতে পারতো।
অবিসিডিয়ান হলো মুলত সিলিকা সমৃদ্ধ লাভা থেকে আসে। বেশীরভাগ সিলিকা সমৃদ্ধ লাভা ঠান্ডা হলে পাথরের মত কঠিন বস্তুতে পরিণত হয় (রায়োলাইট বা গ্রানাইট)। কিন্তু অবসিডিয়ান তৈরি হয় তখনই যখন লাভা এত দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায় যে রায়োলাইট বা গ্রানাইটের মত ক্রিস্টালাইজড (কেলাসিত) গঠন তৈরি করতে পারেনা। ফলে কাচের ন্যায় স্বচ্ছ হয়ে যায় কিন্তু এতে কঠিন পাথরের উপাদান বিদ্যমান থাকে। এবং কাচের রঙ কালো হয় আয়রন অক্সাইড থাকার কারণে।
এই অংশটুক লেখকের নিজস্ব মতামত। কোন ফ্যাক্ট নয়।
এখানে গেইম অব থ্রোন্স ও প্রাকৃতিক অবসিডিয়ানের কয়েকটি সদৃশ্য আছে। দেখতে হুবহু একইরকম, দুটিই প্রাচীনতম পূর্বপুরুষদের দ্বারা নির্মিত। এবং দুটি ক্ষেত্রেই সবচাইতে তীব্র আগুনের উত্তাপে সৃষ্টি হয় এই অবসিডিয়ান (গেইম অব থ্রোন্সে সবচাইতে তীব্র আগুন ড্রাগন ফায়ার, এবং পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের সবচাইতে উত্তপ্ত প্রাকৃতিক বস্তু হল লাভা) ।