জিকা ভাইরাস পৃথিবীতে আবির্ভূত হওয়া নয়া মহামারী। এটি একটি মশাবাহিত রোগ। গত ৯ মাসে ব্রাজিলে ১৩ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এটি মেক্সিকোতে সংক্রমণ করে এখন যে কোনো মুহূর্তে আমেরিকায় ঢুকতে পারে। পহেলা ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিকা ভাইরাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে। যদিও এখনো এই রোগে কারো মৃত্যু ঘটেনি, তবু সাম্প্রতিক ইবোলার প্রাদুর্ভাবের মত একে বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বলে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যন আনুষ্ঠানিকভাবে সারা বিশ্বব্যাপী এক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু জিকা ভাইরাস কি? কেনই বা হঠাৎ এটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লো?
১৯৪৭ সালে একটি রেসাস বানরে সংক্রামক রোগ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে পাওয়া যায়। এটি উগান্ডার জিকা বনে পাওয়া গেছিল বলে এর নাম জিকা ভাইরাস। তবে সাম্প্রতিক সংক্রমণ ঘটে ২০০৭ এ , Federated States of Micronesia এর ইয়েপ দ্বীপে এর প্রথম মানব সংক্রমণ মহামারী আকারে ঘটে। তারপরে ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া, ইস্টার আইল্যান্ড হয়ে ২০১৫ মে মাসে ব্রাজিলে ঢোকে ভাইরাসটি। এরপরে গত ৯ মাসে মহামারীর সংক্রমণ ঘটিয়েছে ভাইরাসটি।
সিডিসি (CDC – Center for Disease Control) ১৩ লাখ সংক্রমণের হিসাব দিয়েছে ডিসেম্বরের ১০ তারিখে, এখন ল্যাটিন আমেরিকার ১৮ টি দেশে সংক্রমণ ঘটেছে। এজন্য অনেকের ধারণা সংখ্যাটা আরো বেশি। ২৯ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে যে, ৩০-৪০ লাখ মানুষ অচিরেই আক্রান্ত হতে পারে।
এর লক্ষণগুলো ডেঙ্গুর মতই – জ্বর, চুলকানি, গিরায় ব্যাথা, চোখ লাল হওয়া; সাথে পেশীতে ব্যথা, মাথা ব্যথা। এডিস মশা থেকেই সংক্রমণ ঘটে; তবে বড় পার্থক্য অন্য জায়গায়। এর ফলে নবজাতক শিশুর জন্মগত জটিলতা ধরা পড়ছে – এর নাম মাইক্রো-সেফালি বা ছোট মাথা নিয়ে জন্ম । তবে এটা জিকা ভাইরাসের কারণেই ঘটছে কিনা, তা বলা যাচ্ছে না নিশ্চিতভাবে। বিজ্ঞানীরা এই দুটোর মধ্যে সম্পর্ক খতিয়ে দেখছেন। জানুয়ারি ২০ তারিখ পর্যন্ত ৩৮৯৩ টি শিশুর জন্ম হয়েছে এই জটিলতা নিয়ে। অন্তত একটি আক্রান্ত বাচ্চার দেহে জিকা ভাইরাস পাওয়া গেছে। এজন্য ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশেষজ্ঞরা সন্তান নিতে বারণ করেছেন।
মা থেকে সন্তানে ঠিক কীভাবে জিকা ভাইরাস যাচ্ছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। সিডিসি একটি ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালনে ও যৌনসম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে। যদিও মশা ছাড়া মানুষ থেকে মানুষে ঠিক কীভাবে হচ্ছে, এটা এখনো স্পষ্ট না। এর কোনো প্রতিষেধক নেই।
একটি রিপোর্টে চিকুনগানিয়া ভাইরাসের উত্থানের পিছনে এল নিনো বা উষ্ণ সামুদ্রিক স্রোতকে দায়ীকরা হয়েছে, তবে জিকা ভাইরাসের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটছে কিনা জানা যায়নি। আমার নিজের ধারণা – এই দুইটা রোগের পিছনেই জলবায়ুর পরিবর্তন আসলে দায়ী। চিকুঙ্কাগুয়া ভাইরাসও একই ধরণের মহামারী আকারে রূপ নিয়েছে। বিষুবরেখা থেকে উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। ম্যাপে বাংলাদেশ দেখা যাচ্ছে।
সংস্থাটি বলছে, মশাবাহিত এই রোগটির সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। প্রায় ৭০ বছর আগে রোগটির অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও এর প্রকোপ কখনোই এতটা বেশি ছিলো না। আর তাই জিকার সাথে মাইক্রোসেফালির সম্পর্ক কতটা সে নিয়ে তেমন কোনো গবেষণাও নেই। যাই হোক, শেষ কথা, বেশি ভয় পাবার কিছু নেই। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। এক সপ্তাহের মধ্যেই বা তার চেয়ে একটু বেশি সময়ে রোগীরা সুস্থ হচ্ছে। আর বাংলাদেশের দিকে এখনো ভাইরাসের প্রকোপ পড়েনি। তাই, আতংকিত হবেন না। মশার কামড় থেকে বেঁচে থাকুন – এই পরামর্শ জিকা ভাইরাস ছাড়াও সত্য।