গণিতশাস্ত্রের দুর্ধর্ষ ১০ – ৪র্থ পর্ব

(তৃতীয় পর্বের পর)

৪। কার্ল ফ্রিদরিখ গাউস (১৭৭৭ – ১৮৫৫)

জার্মান গণিতবিদ, পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী। ১৭৭৭ সালে জার্মানির ‘ব্রহনশোওয়িক (Braunschweig বা Brunswick)’ নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন কার্ল ফ্রিদরিখ গাউস। বেশ দরিদ্র পিতা-মাতার ঘরেই জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বাবা-মা ছিলেন পুরো নিরক্ষর। কে জানতো তাঁদের এই সন্তানই একদিন গণিতের জগতের শাসক হয়ে বসবেন? তাঁকে বর্তমানে ডাকা হয় ‘গণিতের রাজপুত্র’ বলে।

Carl_Friedrich_Gauss
কেন তিনি দুর্ধর্ষ?
তাঁর ছোটবেলার উদাহরণ দিয়েই শুরু করি। তাঁর জন্মদিন কবে সেটা কেউ জানতো না। জানবে কীভাবে? বাপ-মা দিন এনে দিন খেয়েই কূল-কিনার পান না, সেখানে আবার ছেলের জন্মদিনের হিসাব! কিন্তু গাউস নাছোড়বান্দা। তিনি তাঁর জন্মদিনের হিসাব বের করবেনই। তখন তাঁর মায়ের কাছ থেকে জানলেন ১৭৭৭ সালের ইস্টারের উৎসবের ৩৯ দিন পরে এক বুধবারে তিনি জন্মেছিলেন। এখন যদি আপনি জানেন যে ১৯৮০ সালের বাংলা নববর্ষের ৩৯ দিন পরে এক বুধবারে আপনার জন্ম, তাহলে সেই বুধবারে কতো তারিখ ছিলো সেটা কীভাবে বের করবেন? প্রথমে সুন্দর করে মোবাইলটা বের করবেন। তারপর ক্যালেন্ডার প্রোগ্রামে ঘুরে ঘুরে ১৯৮০ সালে গিয়ে উঠবেন। সেখানে দেখবেন ১৪ এপ্রিল থেকে ৩৯ দিন পরে প্রথম বুধবার হচ্ছে ২৮ মে। আপনার জন্মদিনের রহস্য সমাধান!

age-calculator-9

অনেকের অবশ্য জন্মদিন জানা থাকার পরেও বয়স কতো হলো সেটা জানতে সুপার কম্পিউটার লাগে!

কিন্তু গাউসের সময় তো আর মোবাইল-কম্পিউটার ছিলো না। তাই তিনি ঐ ছোট্ট বয়সেই নিজের জন্মদিন বের করার জন্যে বিশেষ এক গাণিতিক পদ্ধতি অবলম্বন করলেন। তিনি প্রথমে বের করলেন ১৭৭৭ সালে ইস্টার কত তারিখে পড়েছিলো। তারপরে বের করলেন সেই ইস্টার উৎসবের তারিখের থেকে ৩৯ দিন পরে কী বার পড়েছিলো। তারপরে বের করলেন ঐ বারটা হতে বুধবার কয়দিনের দূরত্বে ছিলো। সেখান হতে বের করলেন বুধবারে কোন মাসের কত তারিখ ছিলো। হিসেব করে তিনি পেলেন তাঁর জন্মদিন হচ্ছে ১৭৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল!

গাউসের বয়স যখন আট বছর, তখন স্কুলে একদিন তাঁর লাফ-ঝাঁপে বিরক্ত হয়ে অংকের শিক্ষক তাঁকে শাস্তি হিসেবে অতিরিক্ত হোম ওয়ার্ক দিলেন বাসা থেকে করে আনার জন্যে। হোম ওয়ার্কটা ছিলো ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সবগুলো সংখ্যা যোগ করে নিয়ে আসা। গাউস কতক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে হাতের করে গুণে গুণে কী যেন ভাবলেন। তারপর ওখানে দাঁড়িয়েই জবাব দিয়ে দিলেন উত্তর হচ্ছে- ৫০৫০। শিক্ষক অবাক হয়ে জানতে চাইলেন- এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে উত্তর বের করে ফেললো ছোট্ট গাউস? জবাবে গাউস জানালেন- এ তো সোজা ব্যাপার! ১০০ এর সাথে ১ যোগ করলে হয় ১০১। ৯৯ এর সাথে ২ যোগ করলে হয় ১০১। ৯৮ এর সাথে ৩ যোগ করলে হয় ১০১। ৯৭ এর সাথে ৪ যোগ করলে হয় ১০১। এভাবে ১ থেকে ১০০ এর মধ্যে ৫০টা জোড়া বানানো সম্ভব। এদের সবার যোগফলই ১০১। তাহলে ৫০টা জোড়ার সম্মিলিত যোগফল ১০১ x ৫০ = ৫০৫০।

২১ বছর বয়সে যখন পোলাপানের ডানা গজায় আর তারা দু’বাহু মেলে আকাশে উড়তে শুরু করে (যাতে পরে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে বাকি সারা জীবন সেই ওড়াওড়ির জন্যে আফসোস করতে পারে), ঠিক সেই বয়সেই গাউস ১৭ বাহু বিশিষ্ট একটা ভুজকে কীভাবে শুধু কম্পাস এবং স্কেল দিয়ে আঁকতে হয়- সেটা বের করে ফেলেন। তাঁর সেই আবিষ্কারটা নিয়ে বেশ হৈ-চৈ শুরু হয় গণিত সমাজে। গ্রীক গণিতের স্বর্ণযুগের এক দীর্ঘ সময় পরে গাউসের এই আবিষ্কারটাকে জ্যামিতিতে সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সেই সময়। গ্রীসের গণিতবিদেরা জানতেন কীভাবে শুধু কম্পাস ও স্কেল দিয়ে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও পঞ্চভুজ আঁকা যায়। কিন্তু গাউস দেখালেন– n বাহু বিশিষ্ট যে কোনো ভুজই শুধু স্কেল ও কম্পাস দিয়ে আঁকা সম্ভব, যদি n হয় ২ এর যেকোনো ধনাত্মক সূচকবিশিষ্ট পূর্ণ সংখ্যার সাথে এক বা একাধিক আলাদা আলাদা ফার্মা প্রাইমের গুণফল। মানে হলো-

n = (2^k) x F1 x F2 x………x Fn, (যেখানে F1, F2……Fn ইত্যাদি হলো আলাদা আলাদা সব ফার্মা প্রাইম);

হলে সেই বহুভুজটা শুধু স্কেল এবং কম্পাস ব্যবহার করেই আঁকা যাবে। ফার্মা প্রাইম হচ্ছে তারাই, যারা 2^(2^n)+1 সূত্রটা অনুসরণ করে। সেই হিসেবে প্রথম ফার্মা প্রাইম হলো F0 = 3। তারপরের ফার্মা প্রাইমগুলো যথাক্রমে F1 = 5, F2 = 17, F3 = 257, F4 = 65537 ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাহলে উপরের হিসেব ধরে কোনো বহুভুজের বাহুর সংখ্যা যদি n = 3, 4, 5, 6, 8, 10, 12, 15, 16, 17, 20, 24, 30, 32, 34, 40, 48, 51, 60, 64, 68, 80, 85, 96…….. ইত্যাদি ইত্যাদি হয়, তবে সেসব বহুভুজ শুধু স্কেল এবং কম্পাস দিয়ে এঁকে ফেলা যাবে।

১৭৯৯ সালে গাউস ব্রহনশোওয়িক বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডিগ্রী অর্জন করেন। ব্রহনশোওয়িকের ডিউকের নজরে পড়ে যায় এসময় গাউসের অনন্য গাণিতিক প্রতিভা। তিনি গাউসের সকল পড়াশোনা এবং গবেষণার ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হন। ডিউকের পরামর্শে গাউস ‘হেলমস্টেট বিশ্ববিদ্যালয়’-এ একটা প্রবন্ধ জমা দেন ডক্টরাল ডিগ্রী লাভের জন্যে। সেখানে তিনি সাধারণ বীজগণিতের উপরে অনেক তত্ত্বের অবতারণা করেছিলেন। এই সময় তিনি সংখ্যা তত্ত্বের উপরেও অনেক যুগোপযোগী গবেষণা করেছিলেন। পরে এই পর্যন্ত করা গাউসের সমস্ত গাণিতিক গবেষণাকর্ম নিয়ে ১৮০১ সাল এ প্রকাশিত হয় বই ‘Disquisitiones Arithmeticae’.

১৮০১ সালের ১ জানুয়ারি ইতালিয়ান জ্যোতির্বিদ পিয়াৎজি আবিষ্কার করেন আমাদের সৌরজগতের ছোট্ট বামন গ্রহ ‘সেরিজ (Ceres)’-কে। কিন্তু পিয়াৎজি গ্রহটাকে বেশিদূর পর্যন্ত অনুসরণ করতে পারেননি। এটার সম্পূর্ণ কক্ষপথ বের করার আগেই গ্রহটা আবার হারিয়ে যায়। তখন অনেক বিজ্ঞানীই বিভিন্নভাবে সেরিজের কক্ষপথের গাণিতিকভাবে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। গাউসও করেছিলেন এমন একটা ভবিষ্যদ্বাণী। কিন্তু তাঁর গণনাটা দেখা গেলো বাকি সবার গণনার ফলাফল হতে আলাদা। ফলে সেটা হালে পানি পায়নি। পরে ওই বছরেরই ৭ ডিসেম্বর যখন আবার সেরিজ ভেসে উঠলো পৃথিবীর আকাশে, তখন দেখা গেলো গাউস যে স্থানে সেরিজটাকে পাওয়া যাবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ঠিক ঐ স্থানেই সেটা ভেসে উঠেছে। পরে গাউসের গণনা হতে সেরিজের কক্ষপথ বের করা সম্ভব হয়।

গাউস ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন বেশ চাপা ও খুঁতখুঁতে স্বভাবের। তিনি সারা জীবনে মাত্র একবার বিজ্ঞানীদের সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ১৮২৮ সালে বার্লিনে। তিনি তাঁর জীবনে করা অনেক গবেষণাই জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি। যেগুলো করেছেন সেগুলোতেও দেখা গেছে প্রাপ্ত ফলাফল তিনি কীভাবে পেয়েছেন তার কোনো হদিস নেই। ফলাফলটা প্রমাণ হবার পরেই তিনি এর আগের সমস্ত লাইন মুছে ফেলেছেন, শুধু প্রমাণিত ফলাফলটা রেখে দিয়েছেন। ইতিহাসবিদ ‘এরিক টেম্পল বেল’ বলেন, “গাউস যদি তাঁর অধিকাংশ কাজগুলো প্রকাশ করতেন, তবে গণিতশাস্ত্র সেই সময়েই আরো ৫০ বছর এগিয়ে যেতো”।

গাউস চাইতেন না তাঁর সন্তানদের কেউ গণিতবিদ হোক। কারণ তারা গণিতবিদ হলে গাউসের বংশের মান-সম্মানের ভরাডুবি হবে। কিন্তু কেন? কারণ গাউসের বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিলো তিনি গণিতে যা রেখে যাচ্ছেন, তাঁর সন্তানেরা সেগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। এই ব্যাপারটা নিয়ে গাউস এবং তাঁর ছেলেদের মধ্যে কথা-কাটাকাটিও হয়েছিলো। পরে এক ছেলে রাগ করে আমেরিকায় চলে এসে হয়েছিলেন একজন সফল ভাষাবিজ্ঞানী। আরেক ছেলে চামড়ার জুতার ব্যবসা করে বেশ ধনী হয়ে গেছিলেন।

সায়েন্স ফিকশন লেখক ‘আইজ্যাক আসিমভ’ একবার এক লেখায় গাউসের জীবনের একটা ঘটনা উল্লেখ করেছিলেন। গাউসের প্রথম স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন ১৮০৮ সালে। তাঁর স্ত্রীর যখন বুঝলেন মৃত্যুর মুহূর্ত ঘনিয়ে আসছে, তখন তিনি একজনকে পাঠালেন গাউসকে ডেকে আনতে। গাউস তখন গণিতের একটা সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বার্তাবাহককে বললেন, “ওকে বলো একটু অপেক্ষা করতে। আমি হাতের সমস্যাটা সমাধান করে নিই”। পরে আসিমভ আরো উল্লেখ করেছিলেন- গাউস তাঁর প্রথম স্ত্রীকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন । তিনি চাচ্ছিলেন মৃত্যু ক্ষণে সামনাসামনি থাকাটা এড়িয়ে যেত। তাই এই অজুহাত তোলা। বাস্তবিক অর্থেই স্ত্রীর মৃত্যুতে তিনি ভেঙ্গে পড়েছিলেন। পরে যদিও আরেকটা বিয়ে তিনি করেছিলেন, কিন্তু তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন- সেটা ছিলো তাঁর সন্তানদের দেখভালের স্বার্থে।

১৮৫৫ সালে জার্মানির ‘গ্যেটিঙ্গেন’ নামক স্থানে মারা যান গণিতের এই রাজপুত্র। গাউসের মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিলো গবেষণার জন্যে। পরে গবেষণায় পাওয়া গেছিলো তাঁর মস্তিষ্কের ওজন ১৪৯২ গ্রাম। মস্তিষ্কের সেরিব্রাল এলাকার ক্ষেত্রফল ছিলো ২১৯৫৮৮ বর্গ মিলিমিটার বা ৩৪০.৩৬২ বর্গ ইঞ্চি। মস্তিষ্কের কিছু কিছু স্থানে স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশীই প্যাঁচানো আকৃতি খুঁজে পাওয়া গেছিলো, যেটা শুধুমাত্র গাউসের অনন্য মেধাকেই নির্দেশ করে।

দুর্ধর্ষতা রেটিং
১০/১০। মস্তিষ্কের প্যাঁচের উপরে আর কোনো কথা নেই।

Gauss_Brain-724x420

৩। লিওনার্ড অয়লার (১৭০৭-১৭৮৩)


কে ছিলেন তিনি?
সুইস গণিতবিদ, পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং যুক্তিবিদ। ১৭০৭ সালের ১৫ এপ্রিল সুইজারল্যান্ডের ব্যাসেলে এক যাজকের ঘরে জন্ম লিওনার্ড অয়লারের। তাঁর প্রাথমিক লেখাপড়া সম্পন্ন হয় নানীর সাহচর্যে থেকে। মোটামুটি কয়েকটা দেশের সরকারী প্রতিষ্ঠানে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিলো তাঁর। তাঁর অনন্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে ঐসব দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে কাজ করবার জন্যে। ফলে সুইজারল্যান্ডে পড়ালেখা করলেও তাঁর কর্মজীবনের বেশীরভাগ অংশ তিনি কাটিয়ে দিয়েছিলেন রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবুর্গ এবং জার্মানির বার্লিনে (তৎকালীন প্রুশিয়ার রাজধানী)।

কেন তিনি দুর্ধর্ষ?
আরেক গণিত ও পদার্থবিদ লাপ্লাস গণিতবিদ অয়লারের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেছিলেন, “অয়লার পড়ো, আরো বেশী করে অয়লার পড়ো, কারণ তিনি হচ্ছেন আমাদের সবার গুরু”। গণিত জগতকে সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত করেছেন, এমন ৩-৪ জন ব্যক্তিদের মাঝে অয়লারকে ধরা হয় একজন। অয়লারের জীবনের সমগ্র কাজগুলোকে একত্র করলে সেটা মোটামুটি ৬০-৮০ ভলিউমের এক সংকলনে গিয়ে দাঁড়াবে! তুলনার সুবিধার্থে বলা যায়, ‘এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’-র ২০১০ সালের সংস্করণ ছিলো ৩২ ভলিউমের। মানে অয়লারের সমগ্র কর্ম সংকলনের সবচেয়ে নিম্ন হিসাবটারও অর্ধেক (৬০ ভলিউম)। তাঁর জীবনের এক পর্যায়ে এমন দশা হয়েছিলো যে, তিনি বাংলাদেশী সঙ্গীত শিল্পী মমতাজের সকালে একটা অ্যালবাম-বিকালে আরেকটা অ্যালবাম বের করার মতো তাঁর গণিত ও বিজ্ঞান নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা-ধর্মী লেখা সকালে ও বিকালে পাবলিশ করতেন (শিল্পী মমতাজের সাথে অয়লারের নাম নেয়ায় অনেকে লেখকের ফাঁসি চাওয়ার আগেই বলে রাখি, এটা আমাদের মতো পুঁটিমাছদের সামনে তাঁর চিন্তার ক্ষমতা ও বিশালত্ব উপলব্ধি করাতে উল্লেখ করা হয়েছে। আগুনের গোলার মতো একেকটা গবেষণা-ধর্মী লেখা বের হতো তাঁর কলম থেকে।)।

"পোলা তো নয় সে তো আগুনেরই গোলা রে........."

“পোলা তো নয় সে তো আগুনেরই গোলা রে………”

তাঁকে চাইলে ‘ডেয়ারডেভিল গণিতবিদ’ হিসেবেও ডাকতে পারেন আপনারা। কী নিয়ে লিখেননি তিনি? গণিতে ক্যালকুলাস, গ্রাফ তত্ত্ব, সংখ্যা তত্ত্ব, ফাংশন, টপোলজি। পদার্থবিজ্ঞানে ফ্লুইড ডাইনামিকস, অপটিকস। সেই সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক গবেষণা। আর সাথে আছে সঙ্গীত ও গণিতের মাঝে নিবিড় সম্পর্ক তুলে ধরা অনেক কাজ। হ্যাঁ, সঙ্গীতকেও গণিতের আরেকটা শাখা বানিয়ে ছেড়েছিলেন এই গণিতবিদ! তবে তাঁকে ডেয়ারডেভিল ডাকার আরেকটা কারণ আছে। সেটায় আরেকটু পরে আসছি।

অয়লারকে ছোটবেলায় স্কুলে পাঠানো হয়েছিলো ধর্ম ও দর্শন তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনার জন্যে। যাতে তিনি তাঁর পিতার মতো একজন যাজক হতে পারেন। কিন্তু এদিকে ঘটেছিলো এক ঘটনা। অনেকে আরেক প্রতিভাবান গণিতবিদ বার্নৌলির নাম জেনে থাকবেন। বার্নৌলির পরিবার আর অয়লারের পরিবার ছিলো একে অপরের বন্ধু। এই বার্নৌলি প্রতি শনিবার বাসায় এসে পড়াতেন ছোট্ট অয়লারকে। মাত্র দিন কয়েকেই তিনি বুঝে ফেললেন অয়লারের গাণিতিক প্রতিভা সম্পর্কে। তখন তিনি অয়লারের বাবাকে অনেক বলে-কয়ে রাজি করালেন তাঁকে ধর্ম-আধ্যাত্মবাদ ইত্যাদি হাবিজাবি না পড়িয়ে স্কুলে গণিত ও বিজ্ঞান পড়াতে। পরে তাই করা হলো।

১৭২৭ সালে তিনি জীবনে প্রথমবারের মতো এক আন্তর্জাতিক গণিত প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন। প্যারিস একাডেমীর ১৭২৭ সালের প্রতিযোগিতার সমস্যা ছিলো- একটা জাহাজে কীভাবে সবচেয়ে কার্যকর উপায়ে মাস্তুল স্থাপন করা যায়? সেই প্রতিযোগিতায় নিজের তৈরি করা একটা গাণিতিক সমাধান পাঠিয়ে দিলেন অয়লার। কিন্তু সেই বছর তিনি প্রথম পুরষ্কার পাননি। হয়েছিলেন দ্বিতীয়। প্রথম পুরষ্কার পেয়েছিলেন ‘পিয়েরে বুয়েগে’ নামক এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে অবশ্য এই পিয়েরে ‘নেভাল আর্কিটেকচার’-এর জনক হিসেবে আবির্ভূত হন। যাই হোক, প্যারিস একাডেমীর সেই পুরষ্কারটাই পরে অয়লার নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে ছেড়েছিলেন। পুরো ১২ বার সেই পুরষ্কারটা নিজের ঝুলিতে নিয়ে ডজন পূর্ণ করে প্রথমবারের সেই না পাওয়ার ঝালটা মিটিয়েছিলেন তিনি।

পড়াশোনা শেষ করে ১৭২৭ সালের ১৭ মে তিনি পা রাখেন রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবুর্গে। সেখানে ‘ইম্পেরিয়াল রাশিয়ান একাডেমী অব সায়েন্স’-এর পক্ষ হতে তাঁকে ডাকা হয়েছিলো গণিত বিভাগে কাজ করার জন্যে। মূলত অয়লারের শিক্ষক বার্নৌলির এক ছেলের প্রস্তাবেই তাঁকে সেখানে ডাকা হয়েছিলো। বার্নৌলির সেই সন্তানও ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন আগে থেকেই। রাশিয়ায় অয়লারের পা রাখার দিন হতেই বেশ বিড়ম্বনা শুরু হয়ে গেলো। ঠিক ঐদিনেই মারা গিয়েছিলেন রাশিয়ার শাসক ‘রাণী প্রথম ক্যাথরিন’। তিনিই ছিলেন রাশিয়ান বিজ্ঞান একাডেমীর সমস্ত গবেষণার খরচের মূল যোগানদাতা। প্রথম ক্যাথরিন যখন মারা যান, তখন দ্বিতীয় পিটারের ক্ষমতায় বসা নিয়ে বেশ কাহিনী চলছিলো রাশিয়ানদের মাঝে। এর কারণ ছিলো উত্তরাধিকারী পিটারের বয়স তখন মাত্র বারো বছর। এতসব হৈ-হুল্লোড়ের মাঝে বিজ্ঞান একাডেমীর গবেষণাকর্মের জন্যে প্রয়োজনীয় ফান্ডের যোগান অনেক কমে গেলো। সেখানে কর্মরত বিদেশী বিজ্ঞানীদেরও কিছুদিন বেতন না পেয়ে না খেয়ে মরার দশা হয়েছিলো। ১৭৩১ সাল নাগাদ বার্নৌলির সেই সন্তান, যার প্রস্তাবে অয়লারকে ডেকে পাঠানো হয়েছিলো, বিজ্ঞান একাডেমীর উপরে বিভিন্ন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও অর্থ সংকটের কারণে গবেষণার দৈন্যদশায় বিরক্ত হয়ে রাশিয়া ছেড়ে নিজ দেশ সুইজারল্যান্ডে ফেরত চলে যান। ফলে গণিত বিভাগের প্রধানের পদটা খালি হয়ে যায়। তখন অয়লারকে দায়িত্ব দেয়া হয় সেই পদে।

অয়লার ছিলেন বেশ শান্ত স্বভাবের। চারপাশের রাজনৈতিক ঝামেলায় গা দিতেন না। কিন্তু তিনিও এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন রাশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখে। ঠিক এই সময়ে আসলো সুযোগ। প্রুশিয়ার শাসক ‘ফ্রেডরিক দ্যা গ্রেট’ সরাসরি অয়লারকে ডেকে পাঠালেন ‘বার্লিন একাডেমী’-তে যোগদানের জন্যে। অয়লারও দেরি করলেন না। ১৭৪১ সালের ১৯ জুন গিয়ে হাজির হলেন বার্লিনে। পরে সেখানেই কাটিয়ে দেন জীবনের ২৫ টা বছর। এই বার্লিনেই তাঁর সবচেয়ে বড় গবেষণা কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছিলো। এই ২৫ বছরে তিনি গণিত ও বিজ্ঞানের উপরে ৩৮০টারও বেশী প্রবন্ধ প্রসব করেন। তাঁর ফাংশন এবং ক্যালকুলাসের উপরে করা গবেষণাগুলোকে জীবনের সবচেয়ে বড় দুটা কাজ ধরা হয়। এই দুটোই তিনি করেছিলেন বার্লিনে বসে।

ফ্রেডরিক অয়লারকে দায়িত্ব দেন তার ছোট্ট ভাগ্নি রাজকুমারী অ্যানল্টকে পড়াবার। অয়লার তখন ছোট্ট রাজকুমারীকে প্রায় ২০০ টারও বেশী চিঠি লিখেন বার্লিনে বসে। সেসব চিঠিতে ছিলো পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা। অয়লারের মৃত্যুর পরে সেসব চিঠি নিয়ে প্রকাশিত হয় বই, যার নাম ‘Letters of Euler on different subjects in natural philosophy addressed to a German princess’. এই বইটাকে ধরা হয় অয়লারের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে প্রকাশিত বেস্টসেলার বই। পুরো ইউরোপ এবং আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয়তা পায় বইটা।

কিন্তু এক পর্যায়ে অয়লারকেও ছাড়তে হয় বার্লিন। রাজা ফ্রেডরিখের দরবারে অনেক জ্ঞানী-গুণীরা ছিলেন, যাদের সাথে অয়লার তর্কে টিকতে পারতেন না। আসলে অয়লার তর্ক-বিতর্কে একটু কাঁচাই ছিলেন। শান্ত স্বভাবের হবার কারণে কারো সাথে তর্কে যেতে পছন্দ করতেন না। ব্যক্তি জীবনে ছিলেন বেশ ধার্মিকও। ফলে তৎকালীন অনেক দার্শনিকের টার্গেটও ছিলেন তিনি। এদের মধ্যে একজন ছিলেন ভলতেয়ার। বেচারা অয়লার জীবনে যে কতো পঁচানি খেয়েছেন ভলতেয়ারের কাছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কিন্তু ভলতেয়ারের ধারালো সেসব যুক্তির মার-প্যাঁচের বিপরীতে খুব কমই যুক্তিখণ্ডন করতে পেরেছিলেন অয়লার। ফলে রাজা ফ্রেডরিকের ধারণা হয়ে গেলো অয়লার গুটিকয় সূত্র আর সংখ্যার বাইরে আর কিছুই তেমন বুঝেন না। ফলে ফ্রেডরিক আর অয়লারের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটলো।

"অয়লার একটা ছাগু, লোল!!" - ভলতেয়ার

“অয়লার একটা ছাগু, লোল!!” – ভলতেয়ার

এদিকে ১৭৬৬ সাল নাগাদ রাশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি ঘটলো। সম্রাজ্ঞী ‘ক্যাথরিন দ্যা গ্রেট’ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পরে ডাণ্ডা মেরে সব ঠাণ্ডা করে ফেললেন। পরে তিনি মনোযোগ দিলেন রাশিয়ায় বিজ্ঞান শিক্ষা বিস্তারের। সেটার আওতায় তিনি ডেকে নিয়ে এলেন অয়লারকে পুনরায় বিজ্ঞান একাডেমীতে কাজ করার জন্যে।

শুরুর দিকে যে তাঁকে ডেয়ারডেভিল গণিতবিদ বলে ডেকেছিলাম, মনে আছে? সে প্রসঙ্গেই আসছি। ১৭৩৮ সাল নাগাদ প্রচণ্ড জ্বরে ভুগে অয়লারের ডান চোখ অন্ধ হয়ে যায়। বাকি এক চোখ দিয়েই তিনি নিরলস গণিত ও বিজ্ঞান সাধনা করে গেছিলেন। রাজা ফ্রেডরিক এ কারণে তাঁকে ‘সাইক্লোপস’ নামেও ডাকতেন। কিন্তু ১৭৬৬ সাল নাগাদ অয়লারের বাঁ চোখেও ফোঁড়া উঠে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। পুরো অন্ধ হয়ে যাওয়া এই গণিতবিদ তাতে একটুও দমেননি। বরং উনার গাণিতিক প্রতিভা যেন পুরো অন্যমাত্রায় চলে গেলো তাতে। পুরো কমিক বুক চরিত্র ডেয়ারডেভিলের মতো, যে অন্ধ হয়েও দিব্যদৃষ্টিতে অনুভব করতো তার জগতটাকে। এই পুরোপুরি অন্ধত্বের সময় হতেই ১৭৭৫ সাল নাগাদ তিনি প্রতি সপ্তাহে একটা করে গাণিতিক বিশ্লেষণধর্মী পেপার প্রকাশ করতে লাগলেন, যেখানে বছরে একটা পেপার প্রসব করতেই বাকিদের ঘাম ছুটে যেতো!

অয়লারই সূত্রপাত করেছিলেন গাণিতিক ফাংশনের ধারণার। তিনিই ফাংশনকে f(x) দিয়ে প্রকাশের সিস্টেম চালু করেন। পরে সেটাকে পরিণত রূপ দিয়েছিলেন আরেক দুর্ধর্ষ গণিতবিদ ‘এভারিস্ট গ্যালোয়া’। অয়লারই প্রথম চালু করেছিলেন গ্রীক অক্ষর ‘সিগমা’ দিয়ে যোগ করা এবং রোমান হরফ ‘ i’ দিয়ে কাল্পনিক সংখ্যাদের প্রকাশের সিস্টেমকে। পাইয়ের প্রতীক হিসেবে π লেখার সূত্রপাত আরো বহু আগে থেকেই হলেও, সেটার জনপ্রিয়করণ করেছিলেন তিনিই। তদুপরি তিনি গণিতের সবচেয়ে সুন্দর সংখ্যাদের মধ্যে দুই-দুইটা সংখ্যা e (অয়লার সংখ্যা, যার মান = ২.৭১৮২৮) এবং γ (অয়লার ধ্রুবক, যার মান = ০.৫৭৭২১)-এর জনক।

গণিতের সবচেয়ে সুন্দর সূত্রটাও অয়লারের দখলে। অয়লার এক ফর্মুলায় দেখিয়েছিলেন, যেকোনো বাস্তব সংখ্যা φ (রেডিয়ানে) এর সাথে জটিল সংখ্যার সূচকবিশিষ্ট কোনো ফাংশনের (Complex exponential function) সম্পর্ক হবে নিম্নরূপ-

untitled 1

কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে উপরোক্ত সূত্রটা দাঁড়ায় নিচের মতো দেখতে-

untitled

এটাকেই ধরা হয় গণিতের সবচেয়ে সুন্দর সূত্র। বিজ্ঞানী রিচার্ড পি ফেইনম্যান নিজে স্বয়ং এই সূত্রের ভক্ত ছিলেন। তাঁর মতে, “এমন মহা কাব্যিক সৌন্দর্যের অধিকারী সূত্র গণিতে আর দ্বিতীয়টা খুঁজে পাওয়া যাবে না”। কারণ অয়লার একই সূত্রে যোগ, গুণ, সূচক এবং সমান চিহ্ন ব্যবহার করেছেন। সেই সাথে ব্যবহৃত হয়েছে গণিতের সর্বাধিক পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ (পড়ুন- “দুর্ধর্ষ”) সংখ্যা 0, 1, e, i এবং π. ১৯৯৮ সালের এক জরিপে এই সূত্রটাকে সারা বিশ্বের মানুষ গণিতের সবচেয়ে সুন্দর সূত্র বলে ভোট দিয়েছেন।

486px-Euler's_formula.svg

অয়লারের তৈরি করা গণিতের সবচেয়ে সুন্দর সূত্রের জ্যামিতিক উপস্থাপন

এছাড়াও নাম্বার থিওরি ও গ্রাফ থিওরিতে আছে তাঁর বিশাল অবদান। সমতল গ্রাফ তত্ত্বের V – E + F = 2 বিখ্যাত সূত্রটার জনকও তিনি। এছাড়া নিউটনের অপটিকস তত্ত্বের উপরেও অনেক কাজ করেছিলেন তিনি। ১৭৪০ সালে অপটিকসের উপরে লিখিত অয়লারের পেপারের কাছে অনেকাংশেই ঋণী আধুনিক আলোর তরঙ্গ-চরিত্রের তত্ত্ব। এছাড়া ফ্লুইড ডাইনামিকসের উপরে ছিলো তাঁর অনেক কাজ। তবে অয়লারের সবচেয়ে সৃষ্টিশীল কাজগুলোর আরেকটা মনে হয় ‘মিউজিক থিওরি’। দৃষ্টি হারিয়ে তিনি ডেয়ারডেভিলের মতোই কান দিয়ে অনুভব করতে শুরু করেছিলেন জগতের সৌন্দর্যকে। এর পেছনের গাণিতিক রহস্যকে। সঙ্গীতও তাদের একটা। অয়লার দেখিয়েছিলেন সঙ্গীতের একেকটা ধারা (Genre) আসলে গাণিতিক সংখ্যাদের ছন্দময় খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়।

১৭৮৩ সালে এক দুপুরে লাঞ্চের পরে এক ঘরোয়া আড্ডায় তিনি সেই সময় সদ্য আবিষ্কৃত গ্রহ ইউরেনাস ও তার কক্ষপথ নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তাঁর আলোহীন চোখ দুটো থেকে তখন ঠিকরে বেরুচ্ছিল যেন জ্ঞানের দ্যুতি। আড্ডায় উপস্থিত সবাই তন্ময় হয়ে শুনছিলেন তাঁর কথাগুলো। ঠিক সেই সময় ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান গণিতের এই ডেয়ারডেভিল ‘লিওনার্ড অয়লার’। তাঁর শেষকৃত্যের সময় ফ্রেঞ্চ বিজ্ঞান একাডেমী প্রকাশিত শোক-লিপিতে বলা হয়েছিলো, “তিনি অবশেষে বেঁচে থাকা এবং গণনা করার কাজ হতে ক্ষান্ত দিলেন”।

দুর্ধর্ষতা রেটিং
১১/১০। অধিকাংশ দেশের ব্যাংক একটু গুরুত্ব দিয়ে ১০ টাকা/ডলার/রিয়াল/ইয়েন/(পছন্দমতো নাম বসিয়ে নিন) মুদ্রা মানের নোটটা ছাপায়। কারণ এটা সাধারণ মানুষের হাতে হাতে ঘোরে বেশী। সুইজারল্যান্ডের ১০ ফ্রাংকের নোটে লিওনার্ড অয়লারের ছবি ছাপানো আছে। এতোই গুরুত্বপূর্ণ তিনি তাঁর কাজের জন্যে। সুতরাং দশের কম তিনি কোনোভাবেই পান না। সেই সাথে গণিতের সবচেয়ে সুন্দর সূত্রের জন্যে বোনাস এক পয়েন্ট দেয়া হলো তাঁকে।

c6e6de5a8f9af57b47e512a6b8325bc6

(শেষ পর্ব)

Comments

আপনার আরো পছন্দ হতে পারে...

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
জানান আমাকে যখন আসবে -
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x