দ্যা ম্যাট্রিক্স ট্রিলজি, সায়েন্স ফিকশনের জগতে স্টার ওয়ারস এর পরেই বোধহয় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত নাম। ব্যবসার দিক থেকে Avatar এগিয়ে থাকলেও, এযুগের মননশীল দর্শকদের কাছে বোধহয় এটাই সবচেয়ে জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন। ১৯৯৯ এর পর যতগুলো ভালো সায়েন্স ফিকশন বের হয়েছে, কোনটাই ম্যাট্রিক্সের ছায়া এড়াতে পারেনি, এমনকি এভাটার’ও না, ইনসেপশন’ও না…… এটাতে তেমন কোনো স্পয়লার নেই, কিন্তু তারপরেও কেউ কেউ বাগড়া দিতে পারেন। তারা এখান থেকে চাইলে বিদায় নিতে পারেন। তবে এই লেখাটা মূলত সেই অধিকাংশ মানুষদের জন্য, যারা এই সিনেমাটা দেখেছে কিন্তু বোঝেনি, বা যাদের মনে অনেক প্রশ্ন।
THE MATRIX
২২০০ সাল, মেশিনদের সাথে বিগত একশ বছরের যুদ্ধ মানবজাতির অস্তিত্বকে ঠেলে দিয়েছে ধ্বংসের মুখোমুখি। ভূ-পৃষ্ঠ এখন আর মানুষের বসবাসের উপযোগী নেই। সূর্যের আলো এখন আর মাটিতে পৌঁছায়না ধূলিমেঘের জন্য। তাই কোন গাছপালা নেই, উত্তাপ নেই। মানুষকে তাই আশ্রয় নিতে হয়েছে মাটির অনেক নিচে, যেখানে এখনো কিছুটা উত্তাপ আছে। শেষ মানববসতি, যার নাম জায়ন।
মেশিনরা কিন্তু মানুষকে একেবারে ধ্বংস করতে চায়না। কারণ, মানুষই হচ্ছে তাদের এনার্জি সোর্স। একজন মানুষ তার প্রতিদিনের কাজকর্মের জন্য জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রচুর শক্তি উৎপাদন করে। নিত্যদিনের কাজগুলো যদি না করতে হত, তাহলে মানুষের শরীরে প্রচুর অতিরিক্ত শক্তি থেকে যেত। মেশিনরা সেই শক্তি সংগ্রহ করার উপায় পেয়ে গেছে। প্রচুর সংখ্যক মানুষকে তারা সংগ্রহ করেছে, প্রত্যেককে মজুত করেছে এক একটি চৌবাচ্চার মধ্যে, এবং তাদের বিপাকীয় শক্রি আহরণ করছে। নতুন মানুষ জন্ম নেয়ার জন্য এখন আর যৌনপ্রক্রিয়ার প্রয়োজন নেই, তারা ল্যাবরেটরীতেই মানুষ তৈরির উপায় পেয়ে গেছে। কিন্তু একটা সমস্যা রয়েই গেলো। মানুষের শরীর এবং মন যখন একসাথে থাকে, তখন সে হয়ে ওঠে অদম্য। চৌবাচ্চার মধ্যে তাদেরকে রেখে দিলেই খেলা শেষ হয়ে যায়না, তাদের মনকে বোঝানো দরকার- তারা এই চৌবাচ্চার ভেতরে নেই। তাই, মেশিনরা তৈরি করলো একটি Dream world সফটওয়্যার – THE MATRIX. চৌবাচ্চার প্রতিটি মানুষের ব্রেইনে সিগন্যাল দেয়া হলো, তারা এখনো ১৯৯৯ সালেই অবস্থান করছে, রেগুলার জীবনযাপন করছে, ঘুম থেকে উঠছে, চাকরি করতে যাচ্ছে, মুভি দেখছে, ক্লাবে নাচ-গান করছে।
কিন্তু যেহেতু ম্যাট্রিক্স একটি সফটওয়্যার, এটার মধ্যেও কিছু গরমিল (software bug) থাকবে। সাধারণ ইউজাররা না বুঝলেও হ্যাকাররা মাঝে মাঝে টের পায়, something is wrong. আমাদের কাহিনীর নায়ক নিও (Neo, অভিনয়ে Keanu Reeves) – এমন একজন হ্যাকার। সবসময় তার মাথায় প্রশ্নটা ঘুরপাক খায়, গরমিলটা কোথায়? উত্তর দিতে এগিয়ে আসে, মর্ফিয়াস (Morpheus)!
জায়ন-এও মেশিনরা আক্রমণ করেছে। কিন্তু মানুষ সহজে হার মানার জাতি নয়। তারা সারভাইভ করেছে বেশ কয়েকটি আক্রমণ। তবে তারা জানে, কিছু একটা না করতে পারলে খুব দ্রুতই তাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মর্ফিয়াস বিশ্বাস করে, সেই কিছু একটা করার সামর্থ্য আছে শুধুমাত্র নিও এর কাছে। তবে নিও তার ক্ষমতা সম্পর্কে অজ্ঞাত, তার প্রোগ্রামকে নতুন করে লিখতে হবে সেই ক্ষমতা ব্যবহার করতে হলে। মর্ফিয়াস ২২০০ সালের মানুষ, কিন্তু মেশিন মেইনফ্রেম (যার মাধ্যমে ম্যাট্রিক্স সফটওয়্যার চালানো হয়, সেটাকে) হ্যাক করার মাধ্যমে সে ১৯৯৯ এর নিও’র সাথে কনট্যাক্ট করে। ওদিকে মেশিনরাও জানে, নিও’র কাছে ব্যাখ্যার অতীত কিছু শক্তি আছে। তাই তারা কিছু নতুন প্রোগ্রাম যোগ করে- এজেন্ট, যাদের কাজ নিওকে তাদের দলে নিয়ে আসা। এই টানাহ্যাঁচড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়, দ্যা গ্রেটেস্ট সায়েন্স ফিকশন এভার – THE MATRIX.
To me, this is the best of the trilogy. ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, প্রথমবারের মত বুলেট টাইম একশন সিন, অসাধারণ স্ক্রীনপ্লে এবং ডার্ক ন্যারেশন, Hugo weaving আর Lawrence Fishburne এর শক্তিমান অভিনয়, friendship and enmity, trust and betrayal, dialectic philosophy – সব মিলিয়ে কখনো না ভোলার মত অভিজ্ঞতা!
THE MATRIX RELOADED
নিও’র অসাধারণ ক্ষমতার পেছনের ব্যাখ্যাটা অনেকটা এরকম – যখন কোন সফটওয়্যার প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়, তখন ব্যালেন্সিং এর একটা ব্যাপার থাকে। ধরা যাক, গোটা সিস্টেমটার ভ্যালু একশ। অর্থাৎ, সফটওয়ারের বিভিন্ন প্রোগ্রাম’এর জন্য available energy আছে একশ ইউনিট। আশি পর্যন্ত এনার্জি ডিস্ট্রিবিউট করার পর দেখা গেলো বাকি বিশ পার্সেন্ট গ্রহণ করার মত প্রোগ্রাম নেই। কিন্তু ব্যলেন্সিং করাটা অপরিহার্য। তখন কিছু কিছু প্রোগ্রামকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি energy ব্যবহার করার ক্ষমতা দেয়া হলো। আমাদের এই ট্রিলজিতে সেই ব্যলেন্সিং প্রোগ্রাম – নিও, দ্যা ওয়ান! যদিও ২২০০ সালের নিও’র কাছে তেমন কোন ক্ষমতাই নেই, কিন্তু যখন সে প্রোগ্রামের ভেতর থাকে, তখন সে প্রোগ্রমের রুল ভাংতে পারে। যেমন, মহাকর্ষ-অভিকর্ষ তার ওপর কাজ করে না, প্রত্যেকটা জিনিসের প্রোগ্রামিং কোড সে দেখতে পারে এবং কোড চেঞ্জ করতে পারে……
The time is nigh, the need is dire now. মেশিনরা ভূ-পৃষ্ঠ খনন করার কাজ শুরু করেছে, তাদের টার্গেট – জায়ন! আগামী ৩৬ ঘন্টার মধ্যে তারা জায়নে পৌঁছে যাবে, এবং শুরু করবে তাণ্ডবলীলা। মানুষ এই আক্রমণ সারভাইভ করতে পারবে কি পারবে না, তা নিয়ে সন্দেহের শেষ নেই। রণকৌশল কি হবে, সেটা নিয়েও অন্তহীন বিতর্ক। একদল মর্ফিয়াসের মতাবলম্বী, তারা বিশ্বাস করে – নিও তাদেরকে উদ্ধার করবে। আরেক দল বিশ্বাস করে, নিও’র ওপর ভরসা করে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবেনা, প্রত্যেকটা রিসোর্স কাজে লাগাতে হবে আক্রমণ ঠেকাতে হলে। এখন সমস্যা হচ্ছে, জায়ন সিটিতে থেকে ১৯৯৯ সালে যাওয়া যায় না- অর্থাৎ ম্যাট্রিক্সে প্রবেশ করতে হলে মেশিন মেইনফ্রেমের কাছাকাছি যে টানেল আছে, সেখানে যেতে হয়। তারপর শরীরের প্রত্যেকটা সিগন্যাল পোর্টালের মাধ্যমে ট্রান্সফার করতে হয় ম্যাট্রিক্স প্রোগ্রামে।
ওরাকল (ভবিষ্যদ্বক্তা) নামের এক শক্তিশালী প্রোগ্রাম মর্ফিয়াসকে বলেছে, নিও-ই মানবজাতির শেষ সম্বল। মর্ফিয়াস চায়, একটা শিপ (বিশেষ প্রকৃতির উড়োজাহাজ) নিয়ে টানেলে যেতে, নিও-কে সুযোগ দিতে চায় তার ক্ষমতা দিয়ে এই সমস্যা থেকে উদ্ধার পেতে। এদিকে নিও নিজেই জানেনা, কী করতে হবে! এজেন্ট স্মিথ ভয়াবহ শক্তি লাভ করে রিলোডেড এ। মাঝে মাঝে কোন কোন প্রোগ্রাম তার নির্মাতার কন্ট্রোলে থাকেনা, যেমন- কম্পিউটার ভাইরাস; স্মিথ এমন এক ধরনের প্রোগ্রাম। ভাইরাস যেমন অন্য ফাইলকে কোরাপ্ট করতে পারে, স্মিথও তার আশেপাশের প্রোগ্রামদেরকে এটাক করে তাকেও আরেকটা স্মিথ বানিয়ে ফেলে।
সেইরকম কিছু একশন সিন দেখা যাবে এই মুভিতে, one of the best action scenes you have seen in your life. কিয়ানু রিভস এর এক্স ফ্যাক্টর, ক্যারি অ্যানি মসের সাথে রিভসের কেমিস্ট্রি, দুর্দান্ত গতির ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া – ধুন্ধুমার অবস্থা!
THE MATRIX REVOLUTIONS
অদ্ভুত এক ট্রেন স্টেশনে ঘুম ভাঙ্গে নিও’র। এটা একটা কম্পিউটারের হিডেন ফোল্ডারের মত। তার প্রোগ্রামের কোডগুলোকে এই সিক্রেট ফোল্ডারে লুকিয়ে রেখেছে মেরোভিনজিয়ান নামের শক্তিশালী আরেক প্রোগ্রাম। তার শরীর পড়ে আছে ২২০০ সালে, এবং মন (শরীরের সকল সিগন্যাল) আটকে আছে এই ট্রেন স্টেশনে।
আর মেশিনরা গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে পৌঁছে গেছে জায়ন-এ। সর্বশক্তি দিয়ে মানুষ লড়া আরম্ভ করলো মেশিনদের সাথে। যার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, নিয়ে নেমে গেলো যুদ্ধক্ষেত্রে। শুরু হয়ে গেলো মেশিনদের সাথে মানুষদের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ…… আর নিও সেই যুদ্ধক্ষেত্রে নেই!
এর আগেও নিও’র মত ব্যালেন্সিং প্রোগ্রাম (দ্যা ওয়ান) ম্যাট্রিক্সে এসেছিলো। ফার্স্ট পার্টেই এটা বলা হয়, প্রথম ‘দ্যা ওয়ান’ নিজেকে এবন আরো কয়েকজনকে মেশিনদের চৌবাচ্চা থেকে মুক্ত করে, সবাইকে প্রকৃত সত্যটা দেখিয়ে দেয় যে তারা আসলে ১৯৯৯ সালে নেই। সে মারা যাওয়ার পর, একটা একটা করে এমন আরো বেশ কিছু ‘দ্যা ওয়ান’ এসেছিলো। তাদের কেউ কেউ লড়াই করতে করতে মারা যায়, কেউ সবকিছু ভুলে গিয়ে ম্যাট্রিক্সের ড্রিম ওয়ার্ল্ড এ স্বপ্ন দেখাটাকেই বেছে নেয়। কেউই শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ করতে সক্ষম হয়নি। কিভাবে নিও এই যুদ্ধ শেষ করবে, এখনো কিছুই ঠিক করে উঠতে পারেনি সে…… ওরাকল প্রোগ্রামের অনেকদিন সহায়তা করেছে নিও-মর্ফিয়াসকে, এখন সেও নেই। সবকিছুই নিও’র ঘাড়ে!
যার শুরু আছে, তার শেষও আছে- ম্যাট্রিক্স মুভির শেষে এই সত্যটা নতুন করে উপলব্ধি করা যায়। রিলোডেড আর রিভোলিউশন – দুটোই একটু তাড়াহুড়ো করে বানানো বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। স্ক্রীনপ্লে আরেকটু ভালো করা যেত, কিছু কিছু প্রধান চরিত্রের নিয়তি নিয়ে আমার আরো ভালো কিছু এক্সপেক্টেশন ছিলো। তারপরেও, এ ধরনের বিনোদনে সামান্য কিছু খুঁত গোণার মধ্যে আসবে না।
এখানেও বেশ কিছু ভালো একশন সিন আছে, আছে বেশ কিছু ডায়লগ – শেষ করার পর মনে হবে, আবার প্রথম থেকে শুরু করি! কয়বার যে দেখেছি এই ট্রিলজি, কে জানে! এটার চেয়ে ভালো শুধুমাত্র একটা ট্রিলজির কথাই বলতে পারবো, লর্ড অফ দ্যা রিংস!
আমি বুঝতে পারছি না যে এই ধরনের কল্পবিজ্ঞানের ভিত্তিটি কি? কিসের ওপর ভিত্তি করে এটি বানানো হলো? মেশিন কি সত্যি কোনদিন মানুষের ওপর আধিপত্য করবে? কেমনভাবে করবে?