প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব, তৃতীয় পর্ব, চতুর্থ পর্ব, এবং পঞ্চম পর্ব – এই মোট পাঁচ পর্বে বিগ ব্যাং থেকে ক্রমবিকাশের ধারায় বর্তমান মানব সভ্যতা পর্যন্ত সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী সংক্ষেপে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে এই সিরিজের ষষ্ঠ ও শেষ পর্বে এই বিষয়ের নতুন বিশেষ কিছুই থাকছে না; বিগত পাঁচ পর্বে যা ছিল সেগুলোর সারমর্ম থাকবে। যারা এই সিরিজের ছয়টি পর্ব পড়ার ধৈর্য রাখতে পারেননি তাদের জন্য এই একটি পর্বেই থাকছে গত পাঁচ পর্বের সবকিছু অতি সংক্ষিপ্ত আকারে।
যদি মহাবিশ্বের জন্ম থেকে বর্তমান পর্যন্ত সময়কে এক বছর ধরা হয় তবে এই স্কেলে মহাবিশ্বের ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী সময়ানুক্রমিকভাবে সাজানো হলে কালের পরিক্রমায় আমাদের অবস্থান সহজেই অনুমেয় হবে। কার্ল সেগান তাঁর The Dragons of Eden গ্রন্থে মহাবিশ্বের পুরো বয়সকে এভাবে এক বছরের স্কেলে বেঁধে ফেলেন। এর নাম দেন কসমিক ক্যালেন্ডার বা মহাজাগতিক পঞ্জিকা। এই ক্যালেন্ডারে সময়ের স্কেলের একটা ধারণা নেয়া যাক।
- এখানে প্রতি মাস মহাবিশ্বের প্রায় ১২৫ কোটি বছরের সমান
- প্রতি দিনের সময় হিসাবে করা যায় প্রায় ৪ কোটি বছরের সমান
- আর প্রতি সেকেন্ড ৫০০ বছর নির্দেশ করে
তো সেই কসমিক ক্যালেন্ডার থেকেই দেখা যাক মহাবিশ্বের ঘটনাক্রম।
- ১ জানুয়ারি : বিগ ব্যাং (প্রথম সেকেন্ড)
- ১ মে : আমাদের ছায়াপথ বা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সৃষ্টি
- ৯ সেপ্টেম্বর : আমাদের এই সৌরজগতের সৃষ্টি
- ১৪ সেপ্টেম্বর : পৃথিবীর প্রাথমিক গঠন তৈরি
- ২৫ সেপ্টেম্বর : পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের উদ্ভব
- ১ নভেম্বর : অণুজীবদের মধ্যে যৌন-প্রজনন এর উৎপত্তি
- ১৫ নভেম্বর : নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট প্রথম আদি-কোষ এর উদ্ভব
- ৩১ ডিসেম্বরের ঘটনাগুলো বিস্তারিত বলা হচ্ছে –
- দুপুর ১:৩০ : মানুষ এবং এইপ এর আদি ‘পূর্বপুরুষ’ এর আবির্ভাব
- রাত ১০:৩০ : প্রথম মানুষের উৎপত্তি
- রাত ১১:৩০ : মানুষ প্রথম পাথরের অস্ত্র ব্যবহার করতে শেখে
- রাত ১১:৪৬ : মানুষ প্রথম আগুন জ্বালাতে শেখে
- রাত ১১:৫৯:২০ : কৃষিকাজের আবিষ্কার
- রাত ১১:৫৯:৩৫ : মানুষের প্রথম সভ্যতা গড়ে ওঠে, গড়ে ওঠে প্রথম শহর
- রাত ১১:৫৯:৫০ : জোতির্বিজ্ঞান আবিষ্কার
- রাত ১১:৫৯:৫১ : প্রথম লিখিত বর্ণমালা প্রস্তুত করে মানুষ
- রাত ১১:৫৯:৫৩ : মানুষ ব্রোঞ্জ যুগে প্রবেশ করে, কম্পাস আবিষ্কৃত হয়
- রাত ১১:৫৯:৫৪ : মানুষের লৌহ যুগে প্রবেশ
- রাত ১১:৫৯:৫৭ : ভারতীয় গণিতে শূন্যের ব্যবহার
- রাত ১১:৫৯:৫৮ : মায়ান সভ্যতা, প্রথম যুদ্ধ
- রাত ১১:৫৯:৫৯ : পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণভিত্তিক বিজ্ঞান গবেষণার প্রসার, শিল্প বিপ্লব, মহাকাশ গবেষণা, চন্দ্র বিজয়, প্রথমবারের মত মহাকাশে বুদ্ধিমান প্রাণীর সন্ধানে বিজ্ঞানীরা
- বর্তমান মানব সভ্যতা : নতুন বছরের প্রথম সেকেন্ড
কার্ল সেগান তাঁর কসমস সিরিজের প্রথম পর্বেই এই মহাজাগতিক পঞ্জিকার কথাটা উপস্থাপন করেছিলেন।
এখানে শেষের দিকে তিনি যা বলেছিলেন, তা অনুবাদকদের আড্ডার আয়োজনে করা অনুবাদ থেকে তুলে দিচ্ছি –
আমরা মানুষেরা, পঞ্জিকাতে এতো নতুন যে, আমাদের লিখিত ইতিহাস শুধুমাত্র ৩১শে ডিসেম্বরের, শেষ মিনিটের শেষ কয়েক সেকেণ্ডের। কালের যে বিশাল মহাসাগর এই পঞ্জিকা নির্দেশ করে, আমাদের সকল স্মৃতির অবস্থান, তার এই ছোট্টো বর্গের মধ্যে। আমরা যতজনের কথা শুনেছি, তাদের প্রত্যেকে এখানেই কোথাও বসবাস করেছে। যত রাজা, সংগ্রাম, আর দেশছাড়ার গল্প, যত আবিষ্কার, যুদ্ধ আর প্রেমের গল্প…ইতিহাস বইয়ের সবকিছু…ঘটেছে এখানে…মহাজাগতিক পঞ্জিকার শেষ ১০ সেকেণ্ডে। পৃথিবীর মানুষেরা জেগে উঠেছে মাত্র, স্থান আর কালের এই বিস্তীর্ণ মহাসাগর থেকে…যেখানে আমাদের উৎপত্তি। আমরা, ১৫ বিলিয়ন বছর ধরে চলা মহাজাগতিক বিবর্তনের ফসল। আমাদের সামনে সুযোগ আছে, প্রাণ রক্ষা করে সেই ব্রহ্মাণ্ডকে জানা, যা আমাদেরকে তৈরি করেছে। অথবা ছুঁড়ে ফেলতে পারি ১৫ বিলিয়ন বছরের উত্তরাধিকার, নিজেদেরকে ধ্বংস করে। পরবর্তী মহাজাগতিক পঞ্জিকার প্রথম মুহূর্তে কী হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের আজকের কৃতকর্মের ওপর, আমাদের বুদ্ধিমত্তার ওপর, কসমস নিয়ে আমাদের জ্ঞানের ওপর।
এইবার একটু স্বজনপ্রীতি করা যাক। যারা আমার মত ক্ষেত্রবিশেষে অলস প্রকৃতির, মাঝে মধ্যে মাউসের হুইল ঘুরাতেও চান না, তাদের জন্য আরো কিছুটা বিস্তৃত পরিসরে হিস্ট্রি চ্যানেলের প্রায় দেড় ঘণ্টার এই তথ্যচিত্রটি এই সিরিজের মোটামুটি অনেক তথ্যের পরিপূরক হিসাবে কাজ করবে।
সবশেষে এই অর্ধ ডজন পর্বের সিরিজটিতে থাকা তথ্যের তথ্যসূত্রের তালিকা –
১. Book: The Dragons of Eden by Carl Sagan
২. Book: A Descriptive History of the Steam Engine – Robert Stuart
৩. বই: মহাকাশে কী ঘটছে – আব্দুল্লাহ আল মুতী
৪. টিভি সিরিজ: কসমস – কার্ল সেগান
৫. mesopotamia.co.uk
৬. ancient.eu
৭. metmuseum.org
৮. bbc.co.uk
৯. History.com
২৪ ডিসেম্বর ডাইনোসর সৃষ্টির কথা লিখেন নি
অসাধারণ লিখেছেন, সবগুলো পর্ব পড়েছি।
এই ৬ টি অধ্যায় .pdf করে কোন ক্লাউডে আপলোড রাখলে সহজেই শেয়ার করা যাবে।
যেভাবে ভিডিও সহ পোষ্ট করা হয় সেভাবে তো আসলে PDF করা যায় না তাই দেয়া হয়নি।
আপনি http://www.printfriendly.com/ ব্যবহার করতে পারেন।
যেকোন URL থেকে সেটার PDF তৈরি করে নিতে পারবেন।